গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা জরুরি
৩৫ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
- প্রকাশের সময় : ০৯:৪৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪
- / ৩১০ বার পঠিত
দেশের ৩৫ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গর্ভবতী ৮৩ শতাংশ নারীই জানেন না যে, গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হয়। আগে থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না হলেও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এই সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। দেশে গর্ভাবস্থায় আক্রান্তের এই উচ্চ হার থাকা সত্ত্বেও এ সম্পর্কে নেই সচেতনতা। অন্তঃসত্ত্বা নারীর ৭৯ শতাংশ নিজে ও তার পরিবারের অন্য স্বজন—মা, স্বামী, শাশুড়ি কিংবা অন্য সদস্যরা এ সম্পর্কে জানেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের ওজন বেশি, কায়িক শ্রম কম করেন, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন। গর্ভকালীন প্রথম পরীক্ষায় ডায়াবেটিস না থাকলেও গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে আবারও পরীক্ষা করতে হবে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা ও গর্ভের সন্তানকে নানা জটিলতার মধ্যে ফেলে। এছাড়া জীবনও ঝুঁকিতে ফেলে। গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার সময় ও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে, যাতে শুরুতেই সমস্যা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নিতে হবে। তবে গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন একমাত্র ও নিরাপদ চিকিৎসা। তারা বলেন, অন্যান্য ডায়াবেটিসের সঙ্গে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের পার্থক্য আছে। এক্ষেত্রে মা ও শিশুকে নিরাপদে রাখতে শর্করা কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের গ্রামে ৮ শতাংশ ও শহরে প্রায় ১৩ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮-এর উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ৩৫ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আক্রান্তের এই উচ্চ হার থাকলেও অন্তঃসত্ত্বা নারী নিজে, তার মা, স্বামী, শাশুড়িসহ পরিবারের প্রায় ৭৯ শতাংশ সদস্য এ সম্পর্কে জানেন না। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার কথা জানেন না ৮৩ শতাংশ।
সচেতনতা জরুরি :জনসচেতনতা খুব জরুরি। নতুন দম্পতিকে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতন হতে হবে। পরিবারগুলোকে বোঝাতে হবে, মা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সন্তানও ঝুঁকিতে পড়ে। যাদের ডায়াবেটিস আগে ছিল, কিন্তু এখন নেই বা যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জানতে হবে, কখন নিরাপদে গর্ভধারণ করা যাবে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মায়ের প্রি-একলাম্পসিয়া, একলাম্পসিয়া, গর্ভে পানির আধিক্য বা পানির অভাব, চোখ ও অন্যান্য জটিলতা হতে পারে। গর্ভের শিশু আকারে অস্বাভাবিক বড়, জন্মগত ত্রুটি, সময়ের আগে জন্ম, এমনকি গর্ভে নবজাতকের মৃত্যুও হতে পারে।
মার্কস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমা আক্তার বলেন, কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীর খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৫ দশমিক ১ মিলিমোল/লিটার এবং গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ দশমিক ৫ মিলোমোল/লিটার এলে তার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কারণে গর্ভস্থ শিশু আকারে অস্বাভাবিক বড়, শিশুর জন্মগত ত্রুটি, সময়ের আগে জন্ম ও গর্ভেই মৃত্যু হতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থেকে কিছু মায়ের স্থায়ী ডায়াবেটিস হতে পারে। আবার অনেক মা ও সন্তানের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চঝুঁকি থাকে। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ মিলিমোল/লিটার এবং গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ১১ দশমিক ১ মিলোমোল/লিটার হলে ধরে নেওয়া হয় গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিস ছিল বলে ধরে নেওয়া হয়।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যেন না হয়, সে কারণে গোড়ায় নজর দিতে হবে। কিশোরী বয়স থেকে সচেতন হতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ মায়ের পুষ্টিহীনতা থেকে অপুষ্ট সন্তান জন্ম ও পরবর্তী জীবনে ঐ সন্তানের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। পরিকল্পিতভাবে গর্ভধারণের মাধ্যমে মা ও সন্তান সুস্থ থাকতে পারে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, পরিমিত খাবার খেতে হবে, শরীরচর্চা করতে হবে। সূত্র: ইত্তেফাক।