৯৪% মানসিক রোগী চিকিৎসা পায় না

- প্রকাশের সময় : ০৬:৩৫:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৬২ বার পঠিত
দেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ চিকিৎসা নিলেও ৯৪ শতাংশ চিকিৎসাসেবার বাইরে।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল ২০২০-৩০’-এর অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে সভায় কি-নোট বক্তা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ।
বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি সাধনা ভগবত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর প্রমুখ।
সাধনা ভগবত বলেন, বিশ্বে প্রতি আটজনে একজনের মানসিক সমস্যা। এর মধ্যে ৪৭.৬ শতাংশ পুরুষ ও ৫২.৪ শতাংশ নারী। কিশোর-কিশোরী রয়েছে ১৪ শতাংশ। মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে একজন আত্মহত্যা করছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ ৫০ বছরের আগে আত্মহত্যা করছে।
সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা মানসিক রোগে ভুগছে—এর মধ্যে ৯২ থেকে ৯৪ শতাংশ চিকিত্সাসেবার বাইরে রয়েছে। এর অনেক কারণ রয়েছে। তা হলো কুসংস্কার, চিকিত্সকসংকট ও পর্যাপ্ত সেবার ব্যবস্থা না থাকা। ’
তিনি বলেন, ‘এই কর্মকৌশল বাস্তবায়নে একটা বডির প্রয়োজন। যা বাংলাদেশ অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) মাধ্যমে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দরকার। এগুলোতে এখনো ঘাটতি রয়েছে। গত দুই বছরে আত্মহত্যা বেড়েছে। কিভাবে এটি রোধ করা যায়, সেই কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে। ’
তাঁর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮.৪ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে। শিশুদের মধ্যে এই হার ১৩ শতাংশ। এই সমস্যা থেকে বছরে আত্মহত্যা করছে ১০ থেকে ১৪ হাজার মানুষ। এর বিপরীতে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী রয়েছে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (সাইকিয়াট্রিস্ট) ৩৫০ জন, মনোবিজ্ঞানী (সাইকোলজিস্ট) পাঁচ শতাধিক; অন্যদের মধ্যে রয়েছেন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার।
সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ৪০০ শয্যা, পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৫০০ শয্যা; এর বাইরে চিকিৎসার জন্য ৪০টি করে শয্যা রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিএমএইচ, কাউন্সিলিং স্কুল সাইকোলজি বেসরকারি সংস্থা, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে দক্ষ জনবল বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেকে চাকরি হারায়, দেশের প্রডাক্টিভিটি কমে যায়, অপরাধের মাত্রা বাড়ে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে বাজেট মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ, যা অনেক কম। এটি কিভাবে বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করা হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবার থেকে পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে সায়মা ওয়াজেদ বলেন, ‘একজন মানুষের মানবিকতা দিয়ে আরেকজন মানুষের মানসিক কষ্টের কথা বিবেচনা করলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাহীন মানুষগুলো আরেকটু ভালো সেবা পাবে। দেশে এখন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রয়োজনীয় সব রকম আইন করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখন সেগুলো কাজে প্রয়োগ করতে হবে। ’
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, ‘আমাদের শারীরিক চিকিত্সায় নানা কর্মকৌশল থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ছিল না। এ জন্য নানা পরিকল্পনা আমরা করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটা উন্নত পরিবেশ দরকার। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই হবে না, আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই এটি চালু করতে হবে। ’
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘সেবার ব্যবস্থাপনা, মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, ই-মেন্টাল হেলথ, গবেষণাসহ কিছু কাজ হচ্ছে। আন্তর্জাতিকমানের একটি ইনস্টিটিউট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ট্রেনিং দেওয়া হবে সেখানে। ২০২০ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আট বিভাগে যেসব নতুন মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে, সেখানেও মানসিক স্বাস্থ্য চিকিত্সার বিষয়টি রাখা হয়েছে। ’
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিশুদের মাধ্যমে এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।