বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ পায় মাত্র ৩ শতাংশ রোগী

- প্রকাশের সময় : ০৪:৫০:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১
- / ৬৮ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক : দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাত্র তিন শতাংশ রোগী ওষুধ এবং ১৪.৯ শতাংশ রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা পেয়ে থাকেন। অধিকাংশ রোগীকে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেবা নিতে হয়।
এর ফলে রোগীর ব্যয় বেড়ে যায় এবং প্রায়ই রোগী আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন।
আজ রবিবার (২১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণাপত্রের অবহিতকরণের ওপর দুটি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। বলা হয়, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা অর্থ কোনও প্রকার আর্থিক দুরবস্থায় না পড়ে সমাজের প্রতিটি মানুষ যেন তার প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্মত স্বাস্থসেবা গ্রহণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এর তিনটি দিক রয়েছে। প্রথমটি হলো- স্বাস্থ্য সেবা প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া; প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্মত স্বাস্থসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের কারণে সৃষ্ট আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা।
প্রথম দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতির ফলে সূচকে দেখা গেছে অভাবনীয় সাফল্য, মিলেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কিন্তু তৃতীয় ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বাংলাদেশ বহুদূর পিছিয়ে রয়েছে।
২০১২ সালে বাংলাদেশে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় ছিল ৬৪ ভাগ, যা ২০৩২ এর মধ্যে তা ৩২ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশল : ২০১২-২০৩২ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে এ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ ভাগ। তাই বলা চলে, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদেশের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে উচ্চ হারে রোগীর পকেট থেকে ব্যয়।
গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়, রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয়ের প্রধান উৎস হলো ওষুধ খাতে ব্যয়, যা প্রায় ৬৪ ভাগ। হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে সেবা নেওয়ার মাধ্যমে যথাক্রমে ১২ ও ১১ ভাগ ব্যয় হয়। এছাড়া রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা খাতে ব্যয় হয় ৮ ভাগ।
গ্রামপর্যায়ে বিস্তৃত সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় এবং শহর এলাকায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকায় রোগী বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রাম পর্যায়ে বাধ্য হন। তাছাড়া সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ ওষুধ দেওয়া হয় না এবং রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগও থাকে না।
ড. শাহাদৎ বলেন, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এন্টিবায়োটিকসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধ ক্রয়ের সুযোগ থাকায় এবং ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিপণনের ফলে স্বীকৃত ডাক্তারদের পাশাপাশি পল্লি ও হাতুড়ে ডাক্তাররাও ব্যবস্থাপত্রে অতিমাত্রায় ওষুধ লিখে থাকেন। যার কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করা হয় এবং একজন রোগীর ব্যয় বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, জরুরি ওষুধের তালিকা সংশোধন ও সম্প্রসারণ এবং ব্যবস্থাপত্রে প্রটোকল অনুসরণ করে কোম্পানির ওষুধের ‘ব্র্যান্ড নাম’ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘জেনেরিক নাম’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে এ ব্যায়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাক্রিডিটেশন পদ্ধতি না থাকা এবং সেবা মান ও মূল্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় সেবাগ্রহণকারী জনগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেবা বিষয়ে রোগীদের অসন্তুষ্টি ও কখনও কখনও আস্থার ঘাটতি তাদের দেশের পরিবর্তে বিদেশ থেকে সেবাগ্রহণে উৎসাহিত করে। এভাবে চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অনেক মানুষ ভিটে-জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘নিজ পকেট থেকে গৃহস্থালি ব্যয় সংকোচনের কৌশল’ শীষক টেকনিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। আজ সেই রিপোর্টের অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতের যোগানের দিক শক্তিশালী করার পাশাপাশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) বা সামাজিক স্বাস্থ্যবিমা চালু ও সম্প্রসারণের মাধ্যমেও রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় কমানো সম্ভব বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবুল। আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।খবর সাম্প্রতিক দেশকাল