নিউইয়র্ক ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নারীদের মেনোপজ কখন ও কী কী কারণে হয়?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৩১ বার পঠিত

অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বেগম: বেশিরভাগ নারী মেনোপজের দিকে এগিয়ে যান ৪০- ৫০ বছর বয়সের সময়ে। কিন্তু অনেক প্রকরণ হতে হতে পারে। কেউ কেউ একটু আগেও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। পেরিমেনোপজে অনিয়মিত মাসিক ও হটফ্লাশ উল্লেখযোগ্য। মাসিক মাসের মধ্যে ২/৩ বার হতে পারে, ২/৩ মাস পরপর হতে পারে পরিমানে অল্প/বেশি আগের চেয়ে বেশি দিন থাকতে পারে।
হটফ্লাশ- কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ গরম অনুভব করা, লাল হয়ে যাওয়া হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া হতে পারে। আবার হঠাৎ ঠান্ডা অনুভব কটতে পারেন।
রাতে অনেক ঘেমে ঘুম থেকে জেগে ওঠতে পারেন। এগুলো ১-৫ মিনিট সময় থাকতে পারে। দিনে কয়েকবার হতে পারে/মাসে একবার অথবা কারোও নাও হতে পারে। কারো আবার অনেক দিন ধরে এ সমস্যাগুলো থাকতে পারে।
সাময়িক মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে যেমন ভুলে যাওয়া, দুশ্চিন্তাকরা অথবা ডিপ্রেশনে পরা, যাদি আগে থেকেই এগুলো থাকে তাহলে আরও বেশী হতে পারে। কারো কারো কিছু সেক্সুয়াল সমস্যা হতে পারে।
শারিরীক কিছু পরিবর্তন হতে পারে যেমন ওজন বাড়তে পারে, চুল শুসক লাগতে পারে গিরায় ব্যাথা হতে পারে। মেনোপজ বেলি হতে পারে। মেনোপজ নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন একজন নারী হয়ে উঠেন দক্ষ, যোগ্য, যিনি দিতে পারেন পারিবারকে, সামাজকে এবং জাতিকে অনেক কিছু। তাই এ সময়ে সুস্থ থাকা অথবা রাখা অনেক জরুরি।

মেনোপজ কী?
ডিম্বাশয় নারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। এখান থেকে যে হরমোন নিসৃত হয় তার কাজ মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করা। ডিম্বাশয়ের আরও একটি কাজ ডিম তৈরি করা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিমের পরিমান কমে যায় তথা হরমোনের পরিমানও কমতে থাকে। একসময়ে পরিমান এতটাই কমে যায় যা মাসিক চক্র আর নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে এক নাগাড়ে ১২ মাস মাসিক চক্র বন্ধ থাকলে এ অবস্থাকে মেনোপজ বলে। তাই মেনোপজ একটি প্রকৃতিগত বিষয়। এইটি কোন রোগ নয়।

বিশ্বব্যাপী মেনোপজের অবস্থা
১৯৯০ সালের জরিপ অনুযায়ী ৪৭৬ মিলিয়ন নারী মেনোপজ পরবর্তী সময়ে আছেন। এর ৪০% শিল্প উন্নত বিশ্বে। ২০৩০ সালে এর সংখ্যা হবে ১২০০ মিলিয়ন। উন্নয়নশীল দেশে এর পরিমান বৃদ্ধি হয়ে ৭৬% হবে। বাংলাদেশের গড় আয়ু বাড়াতে নারীর গড় আয়ু ৭৪.১১ বছর। পুরুষের ৭০.৪৮ বছর। ৫০ বছরের বয়সের উপরের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১২%। ৬০ বছর বয়সের উর্ধে নারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩.৮৮%.। মোট জনসংখ্যার প্রতি ৫ জনে ১ জন মেনোপজ বয়সের নারী আছেন।

কোন বয়সে মেনোপজ হয়?
প্রাকৃতিক কারণে মেনোপজ হওয়ার সময় অনেক শর্তের ওপর নির্ভর করে। এখন সাধারণত গড় বয়স ৫১ বছর।

প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও আর কী কী কারণে মেনোপজ হয়?
চিকিৎসার কারণে মেনোপজ হতে পারে। জরায়ু অপারেশনের সময় যদি ডিম্বাশয় কেটে ফেলা হয়। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি অথবা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় তখন মেনোপজ হয়। এ ছাড়াও ৪০ বছর বয়সের আগে ডিম্বাশয় হরমোন তৈরীতে অক্ষম হয় তখন মেনোপজ হতে পারে যা প্রিমাচিউর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি বলে। এই টির হার ১%।

মেনোপজ সচেতনতা
অক্টোবর মাস মেনোপজ সচেতনতার মাস। ১৮ অক্টোবর মেনোপজ সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রিমাচুউর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি’। দিবস/মাস পালনের উদদেশ্য হলো এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সুস্থ থাকার উপায় বলে দেয়া, মেনোপজ নারীদের সংগে যোগা যোগ স্থাপন করে সহায়তা করা, উপসর্গ গুলির সমস্যা কমিয়ে আনা ও সহযোগিতা করার জন্য গ্রæপ তৈরি করা।

মেনোপজের ধাপ
ইস্টরোজেন হরমোন কমতে থাকার শুরুতে কিছু অসস্থি দেখা দিতে পারে এসময় টিকে পেরিমেনোপজ বলে। মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়াকে মেনোপজ এবং পরের ধাপ পোস্ট মেনোপজ বলে। সবগুলো ধাপের সময় কাল ৩-৫ বছর হতে পারে। উপসর্গ গুলি সাধারণত ৪৫-৫৫ বছর বয়সের সময় হয়। উপসর্গ গুলি সবার সমান ভাবে হয়না। কারো কারো কোন উপসর্গ নাও হতে পারে। কষ্টের মাত্রাও একেকজনের একেকরকম।

উপসর্গগুলি কি কি হতে পারে?
পেরিমেনোপজে- অনিয়মিত মাসিক, ওজন বাড়া, একটুতেই রেগে যাওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় ও ঘাম বেশি হয়। মেনোপজের সময় হট ফ্ল্যাশিং দিনে কয়েকবার হতে পারে। তাছাড়া আগের উপসর্গ গুলি আরও একটু বাড়তে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদি কি সমস্যা হতে পারে?
১. হার্টের রোগ হওয়া
২. হাড় ক্ষয় হওয়া
৩. ওজন বাড়া।
৪. প্র¯্রাবের কিছু সমস্যা হওয়া।
৫. মেটাবলিক সিনড্রোম
৬. ক্যানসার হওয়া।
৭. মানসিক সমস্যা হওয়া।

লেখক: প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
(দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

নারীদের মেনোপজ কখন ও কী কী কারণে হয়?

প্রকাশের সময় : ০৭:০১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১

অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বেগম: বেশিরভাগ নারী মেনোপজের দিকে এগিয়ে যান ৪০- ৫০ বছর বয়সের সময়ে। কিন্তু অনেক প্রকরণ হতে হতে পারে। কেউ কেউ একটু আগেও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। পেরিমেনোপজে অনিয়মিত মাসিক ও হটফ্লাশ উল্লেখযোগ্য। মাসিক মাসের মধ্যে ২/৩ বার হতে পারে, ২/৩ মাস পরপর হতে পারে পরিমানে অল্প/বেশি আগের চেয়ে বেশি দিন থাকতে পারে।
হটফ্লাশ- কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ গরম অনুভব করা, লাল হয়ে যাওয়া হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া হতে পারে। আবার হঠাৎ ঠান্ডা অনুভব কটতে পারেন।
রাতে অনেক ঘেমে ঘুম থেকে জেগে ওঠতে পারেন। এগুলো ১-৫ মিনিট সময় থাকতে পারে। দিনে কয়েকবার হতে পারে/মাসে একবার অথবা কারোও নাও হতে পারে। কারো আবার অনেক দিন ধরে এ সমস্যাগুলো থাকতে পারে।
সাময়িক মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে যেমন ভুলে যাওয়া, দুশ্চিন্তাকরা অথবা ডিপ্রেশনে পরা, যাদি আগে থেকেই এগুলো থাকে তাহলে আরও বেশী হতে পারে। কারো কারো কিছু সেক্সুয়াল সমস্যা হতে পারে।
শারিরীক কিছু পরিবর্তন হতে পারে যেমন ওজন বাড়তে পারে, চুল শুসক লাগতে পারে গিরায় ব্যাথা হতে পারে। মেনোপজ বেলি হতে পারে। মেনোপজ নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন একজন নারী হয়ে উঠেন দক্ষ, যোগ্য, যিনি দিতে পারেন পারিবারকে, সামাজকে এবং জাতিকে অনেক কিছু। তাই এ সময়ে সুস্থ থাকা অথবা রাখা অনেক জরুরি।

মেনোপজ কী?
ডিম্বাশয় নারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। এখান থেকে যে হরমোন নিসৃত হয় তার কাজ মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করা। ডিম্বাশয়ের আরও একটি কাজ ডিম তৈরি করা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিমের পরিমান কমে যায় তথা হরমোনের পরিমানও কমতে থাকে। একসময়ে পরিমান এতটাই কমে যায় যা মাসিক চক্র আর নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে এক নাগাড়ে ১২ মাস মাসিক চক্র বন্ধ থাকলে এ অবস্থাকে মেনোপজ বলে। তাই মেনোপজ একটি প্রকৃতিগত বিষয়। এইটি কোন রোগ নয়।

বিশ্বব্যাপী মেনোপজের অবস্থা
১৯৯০ সালের জরিপ অনুযায়ী ৪৭৬ মিলিয়ন নারী মেনোপজ পরবর্তী সময়ে আছেন। এর ৪০% শিল্প উন্নত বিশ্বে। ২০৩০ সালে এর সংখ্যা হবে ১২০০ মিলিয়ন। উন্নয়নশীল দেশে এর পরিমান বৃদ্ধি হয়ে ৭৬% হবে। বাংলাদেশের গড় আয়ু বাড়াতে নারীর গড় আয়ু ৭৪.১১ বছর। পুরুষের ৭০.৪৮ বছর। ৫০ বছরের বয়সের উপরের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১২%। ৬০ বছর বয়সের উর্ধে নারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩.৮৮%.। মোট জনসংখ্যার প্রতি ৫ জনে ১ জন মেনোপজ বয়সের নারী আছেন।

কোন বয়সে মেনোপজ হয়?
প্রাকৃতিক কারণে মেনোপজ হওয়ার সময় অনেক শর্তের ওপর নির্ভর করে। এখন সাধারণত গড় বয়স ৫১ বছর।

প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও আর কী কী কারণে মেনোপজ হয়?
চিকিৎসার কারণে মেনোপজ হতে পারে। জরায়ু অপারেশনের সময় যদি ডিম্বাশয় কেটে ফেলা হয়। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি অথবা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় তখন মেনোপজ হয়। এ ছাড়াও ৪০ বছর বয়সের আগে ডিম্বাশয় হরমোন তৈরীতে অক্ষম হয় তখন মেনোপজ হতে পারে যা প্রিমাচিউর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি বলে। এই টির হার ১%।

মেনোপজ সচেতনতা
অক্টোবর মাস মেনোপজ সচেতনতার মাস। ১৮ অক্টোবর মেনোপজ সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রিমাচুউর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি’। দিবস/মাস পালনের উদদেশ্য হলো এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সুস্থ থাকার উপায় বলে দেয়া, মেনোপজ নারীদের সংগে যোগা যোগ স্থাপন করে সহায়তা করা, উপসর্গ গুলির সমস্যা কমিয়ে আনা ও সহযোগিতা করার জন্য গ্রæপ তৈরি করা।

মেনোপজের ধাপ
ইস্টরোজেন হরমোন কমতে থাকার শুরুতে কিছু অসস্থি দেখা দিতে পারে এসময় টিকে পেরিমেনোপজ বলে। মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়াকে মেনোপজ এবং পরের ধাপ পোস্ট মেনোপজ বলে। সবগুলো ধাপের সময় কাল ৩-৫ বছর হতে পারে। উপসর্গ গুলি সাধারণত ৪৫-৫৫ বছর বয়সের সময় হয়। উপসর্গ গুলি সবার সমান ভাবে হয়না। কারো কারো কোন উপসর্গ নাও হতে পারে। কষ্টের মাত্রাও একেকজনের একেকরকম।

উপসর্গগুলি কি কি হতে পারে?
পেরিমেনোপজে- অনিয়মিত মাসিক, ওজন বাড়া, একটুতেই রেগে যাওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় ও ঘাম বেশি হয়। মেনোপজের সময় হট ফ্ল্যাশিং দিনে কয়েকবার হতে পারে। তাছাড়া আগের উপসর্গ গুলি আরও একটু বাড়তে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদি কি সমস্যা হতে পারে?
১. হার্টের রোগ হওয়া
২. হাড় ক্ষয় হওয়া
৩. ওজন বাড়া।
৪. প্র¯্রাবের কিছু সমস্যা হওয়া।
৫. মেটাবলিক সিনড্রোম
৬. ক্যানসার হওয়া।
৭. মানসিক সমস্যা হওয়া।

লেখক: প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
(দৈনিক যুগান্তর)