অযত্নে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় দেড় লাখ বই
- প্রকাশের সময় : ১১:২৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৬২ বার পঠিত
শাহবাগ জাদুঘরের পাশের লাল সিঁড়ির সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারটির পুরোনো ভবন ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন দালান। এ প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা হয় ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনে। ভাড়া নেওয়া হয়েছে এই ভবনের ১২ ও ১৩ নম্বর ফ্লোর।
গত বছরের জানুয়ারিতে স্থানান্তরের পর এপ্রিলে গণগ্রন্থাগারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পাঠকের জন্য। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৫২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইইবি ভবনেই থাকছে গণগ্রন্থাগার। তবে স্থানান্তরের পর থেকেই গ্রন্থাগারের দশা করুণ। এই দুই ফ্লোরে নেই বই সংরক্ষণে পর্যাপ্ত জায়গা ও ব্যবস্থা। স্থানাভাবে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে অনেক পুরনো ও দুর্লভ বই।
নতুন জায়গায় কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার পাঠকের সমাগম হলেও এখন আসছেন ৫০০ জনেরও কম। গ্রন্থাগার খোলা থাকছে সাত ঘণ্টা। আগের চেয়ে সময় কমেছে ৬ ঘণ্টা। গণগ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা জানান, পাঠক কমার কারণ তিনটি। বসার স্থান ১০০, সংগ্রহে থাকা বইয়ের এক-তৃতীয়াংশই বস্তা ও কার্টনবন্দি এবং স্থানটি যাতায়াতের জন্য সুবিধাজনক নয়।
গত সপ্তাহে দুদিন গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঠকক্ষে ২০-২৫ জনের বেশি পাঠক নেই। শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা দুটি টেবিল থাকলেও সেই স্থান শূন্য। গ্রন্থাগারের সংগ্রহে থাকা ২ লাখ ২৪ হাজার ৬০৬ বইয়ের মধ্যে ৬৫ হাজার ৪৯৪টি তাকে রাখা সম্ভব হয়েছে। তাই সাময়িকভাবে সংগ্রহে থাকা এক-তৃতীয়াংশ বই পড়তে পারবেন না পাঠক, যার সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। এ ছাড়া সঠিক ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় অনেক দুর্লভ বই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমন মাহমুদ বলেন, পাঠাগারের পরিবেশ ভালো। বিশ্বকোষ, বাংলাপিডিয়া বা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। আলমারিতে রাখা আছে অনেক বই, কিছু বস্তা ও কার্টনবন্দি। এতে ইঁদুর ও পোকার বই কাটার আশঙ্কা থেকেই যায়। আবার আলো-বাতাস ও যত্নের অভাবে ছত্রাক পড়েও নষ্ট হতে পারে। শাহবাগে থাকতে লাইব্রেরিতে ফটোকপি করার ব্যবস্থা থাকলেও এখানে নেই।
গণগ্রন্থাগারের এক নিয়মিত পাঠক জানান, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি প্রায়ই অকেজো থাকে। আগে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকত। তবে এখন বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। বিকেলের দিকে অনেক পাঠক এসে ফিরে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফারসি কবি আবুল কাশেম ফেরদৌসী রচিত ‘শাহনামা’, হাতে তৈরি কাগজে লেখা জামীর ‘ইউসুফ-জুলেখা’, শেখ সাদীর ‘কুল্লিয়াতে সাদী’, নিজাম গঞ্জবির লেখা ‘শিরি ফরহাদের’ মতো বই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এ তালিকায় আরও রয়েছে অক্ষয়কুমার মৈত্রের ‘মীর কাসিম’, দুর্গাদাস লাহিড়ীর উপন্যাস ‘রাজা রামকৃষ্ণ’ ও ‘রাণী ভবানী’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন ৩য় বর্ষ’, রজনীকান্ত গুপ্তের ‘সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাসের’ (২য় ভাগ) মতো ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের ১০০-২০০ বছরের পুরনো কপি। আছে উনিশ ও বিশ শতকের ইংরেজি ভাষার দুর্লভ কিছু বই।
গ্রন্থাগারিক সেলিনা ইসলাম জানান, এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ পাঠক আসছেন। শিশু-কিশোর পাঠক খুবই কম। গ্রন্থাগারে বাইরের বই নিয়ে প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। প্রধান গ্রন্থাগারিক (উপপরিচালক) ফিরোজা পারভীন বলেন, গণগ্রন্থাগার শাহবাগে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি আসতেন। এখন পাঠক কমেছে। নতুন স্থানে আসার পর বিজ্ঞপ্তি এবং ওয়েবসাইটে পাঠককে তা জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামীতে পাঠক বাড়বে।
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, সতর্কভাবে বই স্থানান্তর করা হয়েছিল, যেন কোনো বই নষ্ট না হয়। স্থানাভাবে এখানে সব বই প্রদর্শন করা যাচ্ছে না। বেশি গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো আলাদা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অনেক দুর্লভ বই রয়েছে। সেগুলো আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। গ্রন্থাগার কম সময় খোলা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ভবনের দুটি ফ্লোর ভাড়া করা। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সন্ধ্যার পর খোলা রাখা যাচ্ছে না। সূত্রঃ কালেবলা