নিউইয়র্ক ০৮:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পতিত স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী ভারতের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৫৯ বার পঠিত

গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে লাখো প্রাণের বিনিময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনে পরিনত হয়েছিল। এরই ফলে উত্তুঙ্গ জনপ্রিয় শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের ম্যান্ডেট ও আস্থা হারিয়েছিলেন। ব্যক্তির চেয়ে দেশ অনেক বড়। দল ও সরকারের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাচারি ভূমিকার কারণে দল, দেশের সামগ্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ট্রাজিক ঘটনা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আওয়ামী লীগের নেতারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের সেই ব্যর্থতার কারণে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে এসে দেশের ছাত্র-জনতাকে হাজার হাজার মানুষের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে আবারো জাতিকে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করতে হয়েছে। ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান সত্যিকার অর্থেই জাতির জন্য নতুন স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে। আওয়ামী স্বৈরতন্ত্র ও ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির ধ্বংসাত্মক, অশুভ নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতির মুক্তির স্বাধীনতা। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দিল্লীতে বসে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিসি তার ভারতীয় দোসরদের নীলনকশায় দেশের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দলীয় সন্ত্রাসী এবং সংখ্যালঘুদের নিয়ে দেশে একটি গোলমাল পাকিয়ে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থান ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছেন। ফের চাইছেন ভারতীয় আধিপত্যবাদ পুষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের ক্ষমতায় পুর্নবাসিত করার নানাবিধ চক্রান্ত একের পর এক প্রকাশিত হচ্ছে। সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ১৫ আগস্টের তথাকথিত জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এর অনেক আগেই ১৫ আগস্টকে ঘিরে ঢাকায় বড় গণজমায়েতসহ একটি প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রের তথ্য গণমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় হাজার কোটি টাকা বাজেট নিয়ে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে থাকা দু’জন কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। ইতিপূর্বে জুডিসিয়াল ক্যুয়ের একটি অপপ্রয়াসও সচেতন ছাত্র-জনতা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনাসহ তার হত্যা-গুমের ৭ কুশীলবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। শহীদের সঠিক সংখ্যা এখনো অজানা। অনেক মানুষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মর্গে অনেক বেওয়ারিশ লাশ। কবরস্থানে অনেক বেওয়ারিশ লাশের দাফন হয়েছে। হাজার হাজার আহত, গুলিবিদ্ধ, পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। রাজপথে রক্তের দাগ শুকায়নি। শত শত শিশু-কিশোরের মৃত্যুতে শোকের আর্তনাদ থামেনি। এ সময়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা ৫০ বছর আগের হত্যাকান্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে ঢাকায় প্রতিবিপ্লব সংগঠিত করার পাঁয়তারা করছে। প্রায় ১৭ বছর ধরে দেশের একশ্রেণীর গণমাধ্যম একচেটিয়াভাবে ভারতীয় হেজিমনিক এজেন্ডা এবং স্বৈরাচারের মিথ্যা উন্নয়ন ও অপপ্রচারে লিপ্ত থেকেছে। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী হত্যার মর্মান্তিক ঘটনাগুলো চেপে রেখে মেট্টোরেল, সেতুভবন কিংবা বিটিভি ভবনে নাশকতার ঘটনাগুলো নিয়ে মায়াকান্না কাঁদতে দেখা গেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধ কিংবা গণআন্দোলনে কোল্যাটারাল ড্যামেজকে গণহত্যার চেয়ে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। এক শ্রেণীর অপসাংবাদিক ও টকশোর চাপাবাজ এত বছর ধরে নির্লজ্জ দালালি করে গেছে। মোজাম্মেল বাবু, নাইমুল ইসলাম, প্রভাষ আমিন, ফারজানা রুপা, সুবাস সিংহ, মুন্নি সাহাদের মত দালাল সাংবাদিকরা দেশের মানুষের স্বার্থের চেয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদী স্বার্থকে বড় করে দেখিয়েছে এবং তা রক্ষায় শেষ সময় পর্যন্ত সরব ভূমিকা পালন করেছে। এসব চিহ্নিত দালাল সাংবাদিকরা গা ঢাকা দিলেও তাদের অনুচর এবং অলিগার্ক মিডিয়া মালিকরা এখনো তাদের অশুভ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতীয় সেবাদাসি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতীয় মিডিয়াগুলো আন্দোলনে কথিত নাশকতা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা কল্পকাহিনী সাজিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মাঠে নামানোর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসি ও ছাত্র-জনতাকে সদা সতর্ক-সজাগ থেকে রাজপথে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখতে হবে।

স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে আত্মগোপন বা ঘাপটি মেরে থাকা তাদের লেসপেন্সার ও দোসররা সক্রিয় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পঁচাত্তুরের ১৫ আগস্টের আড়াই মাসের মাথায় ৩রা নভেম্বর ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি একটি প্রতিবিপ্লব সংঘটিত করেছিল। তারই প্রতিক্রিয়ায় ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের নবযাত্রা সূচিত হয়েছিল। সেই দ্বিতীয় স্বাধীনতাও আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নকদের ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ব্যর্থ হয়ে যায়। আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে নবম জাতীয় সংসদের ফল নির্ধারণ এবং ভারতের প্রত্যক্ষ প্রভাবে পরবর্তী তিনটি প্রহসনের নির্বাচন মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার, বিচারপ্রাপ্যতা, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমের যোগসাজশে ঢাকার শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সাজিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা গেছে। পিলখানায় জাতির শ্রেষ্ঠ সৈনিকদের হত্যা, মধ্যরাতে বাতি নিভিয়ে শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী হত্যার মত নৃশংস ঘটনাগুলোকে ন্যক্কারজনকভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলেছে। দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ করে বিদেশে পাচারের ঘটনাগুলো কখনো পাদপ্রদীপের আলোয় আসেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মানুষ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে। হাসিনার দু:শাসনে গুম-খুনের শিকার, আয়নাঘরে নির্যাতনের শিকার হাজার হাজার পরিবার এখন স্বজনের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিচারের নামে অবিচার এবং বিচার বর্হিভুত সব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত বিচার এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। খুনি হাসিনা, তার দোসর এবং পৃষ্ঠপোষকরা এসব অগণিত গুম-খুন, প্রকাশ্যে রাজপথে গুলি করে আন্দোলন দমানোর ঘৃণ্য অপরাধের দায় এড়াতে পারবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও দখলদারিত্ব মুক্তির স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে যত চেষ্টাই ভারত ও তার তাঁবেদাররা করুক না কেন, ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ রেজিসট্যান্স সব অপপ্রয়াস ব্যর্থ করে দেবে ইনশাআল্লাহ। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত মুক্তিকামী মানুষকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে মাঠে থাকতে হবে। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

পতিত স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী ভারতের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে লাখো প্রাণের বিনিময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনে পরিনত হয়েছিল। এরই ফলে উত্তুঙ্গ জনপ্রিয় শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের ম্যান্ডেট ও আস্থা হারিয়েছিলেন। ব্যক্তির চেয়ে দেশ অনেক বড়। দল ও সরকারের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাচারি ভূমিকার কারণে দল, দেশের সামগ্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ট্রাজিক ঘটনা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আওয়ামী লীগের নেতারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের সেই ব্যর্থতার কারণে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে এসে দেশের ছাত্র-জনতাকে হাজার হাজার মানুষের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে আবারো জাতিকে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করতে হয়েছে। ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান সত্যিকার অর্থেই জাতির জন্য নতুন স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে। আওয়ামী স্বৈরতন্ত্র ও ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির ধ্বংসাত্মক, অশুভ নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতির মুক্তির স্বাধীনতা। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দিল্লীতে বসে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিসি তার ভারতীয় দোসরদের নীলনকশায় দেশের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দলীয় সন্ত্রাসী এবং সংখ্যালঘুদের নিয়ে দেশে একটি গোলমাল পাকিয়ে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থান ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছেন। ফের চাইছেন ভারতীয় আধিপত্যবাদ পুষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের ক্ষমতায় পুর্নবাসিত করার নানাবিধ চক্রান্ত একের পর এক প্রকাশিত হচ্ছে। সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ১৫ আগস্টের তথাকথিত জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এর অনেক আগেই ১৫ আগস্টকে ঘিরে ঢাকায় বড় গণজমায়েতসহ একটি প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রের তথ্য গণমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় হাজার কোটি টাকা বাজেট নিয়ে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে থাকা দু’জন কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। ইতিপূর্বে জুডিসিয়াল ক্যুয়ের একটি অপপ্রয়াসও সচেতন ছাত্র-জনতা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনাসহ তার হত্যা-গুমের ৭ কুশীলবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। শহীদের সঠিক সংখ্যা এখনো অজানা। অনেক মানুষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মর্গে অনেক বেওয়ারিশ লাশ। কবরস্থানে অনেক বেওয়ারিশ লাশের দাফন হয়েছে। হাজার হাজার আহত, গুলিবিদ্ধ, পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। রাজপথে রক্তের দাগ শুকায়নি। শত শত শিশু-কিশোরের মৃত্যুতে শোকের আর্তনাদ থামেনি। এ সময়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা ৫০ বছর আগের হত্যাকান্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে ঢাকায় প্রতিবিপ্লব সংগঠিত করার পাঁয়তারা করছে। প্রায় ১৭ বছর ধরে দেশের একশ্রেণীর গণমাধ্যম একচেটিয়াভাবে ভারতীয় হেজিমনিক এজেন্ডা এবং স্বৈরাচারের মিথ্যা উন্নয়ন ও অপপ্রচারে লিপ্ত থেকেছে। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী হত্যার মর্মান্তিক ঘটনাগুলো চেপে রেখে মেট্টোরেল, সেতুভবন কিংবা বিটিভি ভবনে নাশকতার ঘটনাগুলো নিয়ে মায়াকান্না কাঁদতে দেখা গেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধ কিংবা গণআন্দোলনে কোল্যাটারাল ড্যামেজকে গণহত্যার চেয়ে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। এক শ্রেণীর অপসাংবাদিক ও টকশোর চাপাবাজ এত বছর ধরে নির্লজ্জ দালালি করে গেছে। মোজাম্মেল বাবু, নাইমুল ইসলাম, প্রভাষ আমিন, ফারজানা রুপা, সুবাস সিংহ, মুন্নি সাহাদের মত দালাল সাংবাদিকরা দেশের মানুষের স্বার্থের চেয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদী স্বার্থকে বড় করে দেখিয়েছে এবং তা রক্ষায় শেষ সময় পর্যন্ত সরব ভূমিকা পালন করেছে। এসব চিহ্নিত দালাল সাংবাদিকরা গা ঢাকা দিলেও তাদের অনুচর এবং অলিগার্ক মিডিয়া মালিকরা এখনো তাদের অশুভ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতীয় সেবাদাসি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতীয় মিডিয়াগুলো আন্দোলনে কথিত নাশকতা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা কল্পকাহিনী সাজিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মাঠে নামানোর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসি ও ছাত্র-জনতাকে সদা সতর্ক-সজাগ থেকে রাজপথে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখতে হবে।

স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে আত্মগোপন বা ঘাপটি মেরে থাকা তাদের লেসপেন্সার ও দোসররা সক্রিয় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পঁচাত্তুরের ১৫ আগস্টের আড়াই মাসের মাথায় ৩রা নভেম্বর ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি একটি প্রতিবিপ্লব সংঘটিত করেছিল। তারই প্রতিক্রিয়ায় ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের নবযাত্রা সূচিত হয়েছিল। সেই দ্বিতীয় স্বাধীনতাও আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নকদের ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ব্যর্থ হয়ে যায়। আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে নবম জাতীয় সংসদের ফল নির্ধারণ এবং ভারতের প্রত্যক্ষ প্রভাবে পরবর্তী তিনটি প্রহসনের নির্বাচন মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার, বিচারপ্রাপ্যতা, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমের যোগসাজশে ঢাকার শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সাজিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা গেছে। পিলখানায় জাতির শ্রেষ্ঠ সৈনিকদের হত্যা, মধ্যরাতে বাতি নিভিয়ে শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী হত্যার মত নৃশংস ঘটনাগুলোকে ন্যক্কারজনকভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলেছে। দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ করে বিদেশে পাচারের ঘটনাগুলো কখনো পাদপ্রদীপের আলোয় আসেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মানুষ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে। হাসিনার দু:শাসনে গুম-খুনের শিকার, আয়নাঘরে নির্যাতনের শিকার হাজার হাজার পরিবার এখন স্বজনের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিচারের নামে অবিচার এবং বিচার বর্হিভুত সব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত বিচার এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। খুনি হাসিনা, তার দোসর এবং পৃষ্ঠপোষকরা এসব অগণিত গুম-খুন, প্রকাশ্যে রাজপথে গুলি করে আন্দোলন দমানোর ঘৃণ্য অপরাধের দায় এড়াতে পারবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও দখলদারিত্ব মুক্তির স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে যত চেষ্টাই ভারত ও তার তাঁবেদাররা করুক না কেন, ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ রেজিসট্যান্স সব অপপ্রয়াস ব্যর্থ করে দেবে ইনশাআল্লাহ। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত মুক্তিকামী মানুষকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে মাঠে থাকতে হবে। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।