নিউইয়র্ক ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হানাহানির দায় কে লইবে?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৫৪:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৭১ বার পঠিত

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ‘শান্তি সমাবেশ’ ও বিরোধীদলীয় জোটের ‘শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ’ শেষ পর্যন্ত কেবল অশান্তই হয় নাই; মর্মান্তিকভাবে চারটি মূল্যবান প্রাণও ঝরিয়া গিয়াছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরোক্ষভাবেও অন্তত দুইজন প্রাণ হারাইয়াছেন। আমরা জানি, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজ যদ্রæপ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করিতেছিলেন; মুগদা থানার ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবদল নেতা শামীম মোল্লা তদ্রæপ বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসিয়াছিলেন। আর রাজনৈতিক সংঘর্ষে পুলিশ কিংবা সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি আমাদের দেশে বিরলও নহে। কিন্তু সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া নিজ গৃহ হইতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসিবার পথে সেগুনবাগিচা এলাকায় কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে রিকশা হইতে পড়িয়া প্রাণ হারাইলেন; উহার জবাব কী? ডেমরায় পার্ক করিয়া রাখা বাসে অগ্নিসংযোগে ভিতরে ঘুমন্ত ‘হেলপার’ দগ্ধ হইয়া প্রাণ হারাইবার দায় কে লইবে? ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়িতে তল্লাশিকালে তাঁহার স্ত্রী এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তারের খবরে তাঁহার পিতার মৃত্যুও ‘স্বাভাবিক’ হইতে পারে না। এই দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরেও আরেকটি অপমৃত্যু লইয়া পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি চলিতেছে।
প্রথমত, রাজনীতি কেন সংঘাতপূর্ণ হইয়া উঠিল? শনিবার ‘সমাবেশের নগরী’ ঢাকা যাহাদের কারণে ‘সংঘর্ষের নগরী’ হইয়া উঠিয়াছিল এবং এখনও উহার জের চলিতেছে, তাহাদের সকলকেই এই সকল প্রাণহানির দায় লইতে হইবে। দ্বিতীয়ত, সংঘর্ষের সূত্রপাতের জন্য দায়ী কাহারা? তৃতীয়ত, রাজনৈতিক অস্থিরতাকালে দিন আনা দিন খাওয়া পেশাজীবীরাই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া থাকে। বাসের ভিতর দগ্ধ হইয়া প্রাণ হারানো মানুষটির কী অপরাধ? আবার সংঘর্ষ ও প্রাণহানির জের ধরিয়া কাহারও বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক’ ব্যবস্থা লইতে গিয়া তাঁহার স্বজনের মৃত্যুর কারণ হইবার ‘অধিকার’ কোথা হইতে আসেÑ উহাও বড় প্রশ্ন।
অবিলম্বে প্রতিটি প্রাণহানির সুষ্ঠু তদন্ত হইতে হইবে। পুলিশ বা বিএনপি কর্মীদের মধ্যে কাহারা হঠকারী ভূমিকায় ছিলেন, তাহারও সত্যিকার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক আদর্শ বা পেশাগত পরিচয় নির্বিশেষে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনের ন্যায্য বিচার পাইবার অধিকার রহিয়াছে। আর বিচারের পূর্বে তদন্তকার্য যদ্রূপ গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের দেশে পুলিশি তদন্তের পরিস্থিতিও তদ্রূপ সকলের জানা। বিশেষত একজন পুলিশ সদস্য যখন প্রাণ হারাইয়াছেন, ঐ ঘটনায় পুলিশের নিকট নির্মোহ তদন্ত আশা করা উচিত হইবে না। অপরদিকে যুবদল নেতার প্রাণহানি কিংবা ফরিদপুরের বিএনপি ও সাতক্ষীরার ছাত্রদল নেতার স্বজনের মৃত্যুর তদন্তেও ন্যায্যতা জরুরি। সকল কিছু বিবেচনায় আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহŸান জানাই।
সকল কিছুর মূলে ছিল সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাহার প্রাক্কালে এই রকম সংঘাত নির্বাচনের পরিবেশ শুধু নয়, নির্বাচনের পাত্রপাত্রীদের দূরত্ব আরও বাড়াইয়া দিল। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য ইহার সহিত জড়িত। সরকারের ভিতর, বিরোধী দলের কাতারে এবং দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে কি কেহই নাই, যিনি সংঘাতের শক্তিকে সমঝোতার শক্তিতে রূপান্তরিত করিতে পারেন? (দৈনিক সমকাল)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হানাহানির দায় কে লইবে?

প্রকাশের সময় : ০১:৫৪:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ‘শান্তি সমাবেশ’ ও বিরোধীদলীয় জোটের ‘শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ’ শেষ পর্যন্ত কেবল অশান্তই হয় নাই; মর্মান্তিকভাবে চারটি মূল্যবান প্রাণও ঝরিয়া গিয়াছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরোক্ষভাবেও অন্তত দুইজন প্রাণ হারাইয়াছেন। আমরা জানি, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজ যদ্রæপ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করিতেছিলেন; মুগদা থানার ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবদল নেতা শামীম মোল্লা তদ্রæপ বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসিয়াছিলেন। আর রাজনৈতিক সংঘর্ষে পুলিশ কিংবা সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি আমাদের দেশে বিরলও নহে। কিন্তু সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া নিজ গৃহ হইতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসিবার পথে সেগুনবাগিচা এলাকায় কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে রিকশা হইতে পড়িয়া প্রাণ হারাইলেন; উহার জবাব কী? ডেমরায় পার্ক করিয়া রাখা বাসে অগ্নিসংযোগে ভিতরে ঘুমন্ত ‘হেলপার’ দগ্ধ হইয়া প্রাণ হারাইবার দায় কে লইবে? ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়িতে তল্লাশিকালে তাঁহার স্ত্রী এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তারের খবরে তাঁহার পিতার মৃত্যুও ‘স্বাভাবিক’ হইতে পারে না। এই দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরেও আরেকটি অপমৃত্যু লইয়া পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি চলিতেছে।
প্রথমত, রাজনীতি কেন সংঘাতপূর্ণ হইয়া উঠিল? শনিবার ‘সমাবেশের নগরী’ ঢাকা যাহাদের কারণে ‘সংঘর্ষের নগরী’ হইয়া উঠিয়াছিল এবং এখনও উহার জের চলিতেছে, তাহাদের সকলকেই এই সকল প্রাণহানির দায় লইতে হইবে। দ্বিতীয়ত, সংঘর্ষের সূত্রপাতের জন্য দায়ী কাহারা? তৃতীয়ত, রাজনৈতিক অস্থিরতাকালে দিন আনা দিন খাওয়া পেশাজীবীরাই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া থাকে। বাসের ভিতর দগ্ধ হইয়া প্রাণ হারানো মানুষটির কী অপরাধ? আবার সংঘর্ষ ও প্রাণহানির জের ধরিয়া কাহারও বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক’ ব্যবস্থা লইতে গিয়া তাঁহার স্বজনের মৃত্যুর কারণ হইবার ‘অধিকার’ কোথা হইতে আসেÑ উহাও বড় প্রশ্ন।
অবিলম্বে প্রতিটি প্রাণহানির সুষ্ঠু তদন্ত হইতে হইবে। পুলিশ বা বিএনপি কর্মীদের মধ্যে কাহারা হঠকারী ভূমিকায় ছিলেন, তাহারও সত্যিকার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক আদর্শ বা পেশাগত পরিচয় নির্বিশেষে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনের ন্যায্য বিচার পাইবার অধিকার রহিয়াছে। আর বিচারের পূর্বে তদন্তকার্য যদ্রূপ গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের দেশে পুলিশি তদন্তের পরিস্থিতিও তদ্রূপ সকলের জানা। বিশেষত একজন পুলিশ সদস্য যখন প্রাণ হারাইয়াছেন, ঐ ঘটনায় পুলিশের নিকট নির্মোহ তদন্ত আশা করা উচিত হইবে না। অপরদিকে যুবদল নেতার প্রাণহানি কিংবা ফরিদপুরের বিএনপি ও সাতক্ষীরার ছাত্রদল নেতার স্বজনের মৃত্যুর তদন্তেও ন্যায্যতা জরুরি। সকল কিছু বিবেচনায় আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহŸান জানাই।
সকল কিছুর মূলে ছিল সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাহার প্রাক্কালে এই রকম সংঘাত নির্বাচনের পরিবেশ শুধু নয়, নির্বাচনের পাত্রপাত্রীদের দূরত্ব আরও বাড়াইয়া দিল। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য ইহার সহিত জড়িত। সরকারের ভিতর, বিরোধী দলের কাতারে এবং দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে কি কেহই নাই, যিনি সংঘাতের শক্তিকে সমঝোতার শক্তিতে রূপান্তরিত করিতে পারেন? (দৈনিক সমকাল)