নিউইয়র্ক ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সম্পাদকীয় : যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে বড় ধাক্কা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৬৫ বার পঠিত

বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে সুখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে এক অভাবনীয় ঘটনা। এক কথায় বললে, বিশ্ববাসীর কাছে এ ঘটনা ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসকে করেছে কলঙ্কিত। পুলিশের নিরাপত্তা ব্যূহ ভেঙে কয়েকশ উগ্রবাদী সশস্ত্র ট্রাম্প-সমর্থক রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবনে চালিয়েছে তান্ডব। এই তান্ডব চলাকালে হয়েছে গোলাগুলি, ভাঙচুর, লুটপাট; নিহত হয়েছেন চার ব্যক্তি। বুধবার (৬ জানুয়ারী) ছিল ইউএস কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেনের আনুষ্ঠানিক জয় প্রত্যয়নের দিন। কিন্তু এই প্রত্যয়ন কিছুতেই মানতে পারছিলেন না নির্বাচনে পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুদিন আগে থেকে তিনি বাইডেনের আনুষ্ঠানিক জয় প্রত্যয়নের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছিলেন। ওয়াশিংটনে নিজ সমর্থকদের শোডাউনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
তার এই উসকানিমূলক ঘোষণার পরই রাজধানীতে জড়ো হতে থাকে তার সমর্থকরা। বাইডেনের জয় সত্যায়নে যথাসময়েই শুরু হয় কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন। অধিবেশনে নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন ট্রাম্প-সমর্থক কয়েজন কংগ্রেসম্যান। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা চালান কয়েক হাজার ট্রাম্প-সমর্থক। তাদের অনেকেই ছিলেন সশস্ত্র। হামলার সময় গোটা ক্যাপিটল বিল্ডিং কয়েক ঘণ্টা ধরে কার্যত জিম্মি করে রাখেন তারা। কংগ্রেসের অধিবেশন কক্ষ ও সিনেটরদের কক্ষের দরজা ও জানালায় ভাঙচুর চালান।
এ সময় গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বাঁচেন সিনেটররা। হামলা চালানো হয় সাংবাদিকদের ওপরও। তাদের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলা হয়। অত্যাশ্চর্য, হামলাকারীদের নিন্দা না করে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য পরে চাপে পড়ে তিনি হামলাকারীদের শান্ত থাকার আহŸান জানিয়েছেন।
ক্যাপিটল হিলের ঘটনাটি মোটেও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৪ বছর যে বর্ণবাদী রাজনীতি করেছেন, তারই চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। বস্তুত বর্ণবাদী রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিভাজিত সমাজে পরিণত করেছে। আর এই বিভাজন এতটাই প্রকট যে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, তাতেও আঘাত হানা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এখন মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে। ক্যাপিটল হিলের ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতে সময় লাগবে বেশ। হৃত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গদের ‘সাদারাই শ্রেষ্ঠ’-এই আপ্তবাক্য ছেড়ে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। দেশটির ‘ফাউন্ডিং ফাদাররা’ গণতন্ত্রের যে পথনকশা এঁকেছিলেন, সেই পথেই হাঁটতে হবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তার তালবাহানা থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গণতন্ত্রীদের শিক্ষা নিতে হবে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হচ্ছে জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখানো। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই এক সময়কার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন: ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সরকারই হচ্ছে গণতন্ত্র।’ আমরা চাইব, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; পুরো বিশ্বের তাবৎ রাজনীতিক ট্রাম্পের অগণতান্ত্রিক রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে এই পৃথিবীর সৌন্দর্যবর্ধনে ভূমিকা রেখে চলবেন। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সম্পাদকীয় : যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে বড় ধাক্কা

প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১

বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে সুখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে এক অভাবনীয় ঘটনা। এক কথায় বললে, বিশ্ববাসীর কাছে এ ঘটনা ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসকে করেছে কলঙ্কিত। পুলিশের নিরাপত্তা ব্যূহ ভেঙে কয়েকশ উগ্রবাদী সশস্ত্র ট্রাম্প-সমর্থক রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবনে চালিয়েছে তান্ডব। এই তান্ডব চলাকালে হয়েছে গোলাগুলি, ভাঙচুর, লুটপাট; নিহত হয়েছেন চার ব্যক্তি। বুধবার (৬ জানুয়ারী) ছিল ইউএস কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেনের আনুষ্ঠানিক জয় প্রত্যয়নের দিন। কিন্তু এই প্রত্যয়ন কিছুতেই মানতে পারছিলেন না নির্বাচনে পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুদিন আগে থেকে তিনি বাইডেনের আনুষ্ঠানিক জয় প্রত্যয়নের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছিলেন। ওয়াশিংটনে নিজ সমর্থকদের শোডাউনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
তার এই উসকানিমূলক ঘোষণার পরই রাজধানীতে জড়ো হতে থাকে তার সমর্থকরা। বাইডেনের জয় সত্যায়নে যথাসময়েই শুরু হয় কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন। অধিবেশনে নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন ট্রাম্প-সমর্থক কয়েজন কংগ্রেসম্যান। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা চালান কয়েক হাজার ট্রাম্প-সমর্থক। তাদের অনেকেই ছিলেন সশস্ত্র। হামলার সময় গোটা ক্যাপিটল বিল্ডিং কয়েক ঘণ্টা ধরে কার্যত জিম্মি করে রাখেন তারা। কংগ্রেসের অধিবেশন কক্ষ ও সিনেটরদের কক্ষের দরজা ও জানালায় ভাঙচুর চালান।
এ সময় গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বাঁচেন সিনেটররা। হামলা চালানো হয় সাংবাদিকদের ওপরও। তাদের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলা হয়। অত্যাশ্চর্য, হামলাকারীদের নিন্দা না করে ‘মহান দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য পরে চাপে পড়ে তিনি হামলাকারীদের শান্ত থাকার আহŸান জানিয়েছেন।
ক্যাপিটল হিলের ঘটনাটি মোটেও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৪ বছর যে বর্ণবাদী রাজনীতি করেছেন, তারই চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। বস্তুত বর্ণবাদী রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিভাজিত সমাজে পরিণত করেছে। আর এই বিভাজন এতটাই প্রকট যে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, তাতেও আঘাত হানা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এখন মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে। ক্যাপিটল হিলের ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতে সময় লাগবে বেশ। হৃত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গদের ‘সাদারাই শ্রেষ্ঠ’-এই আপ্তবাক্য ছেড়ে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। দেশটির ‘ফাউন্ডিং ফাদাররা’ গণতন্ত্রের যে পথনকশা এঁকেছিলেন, সেই পথেই হাঁটতে হবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তার তালবাহানা থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গণতন্ত্রীদের শিক্ষা নিতে হবে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হচ্ছে জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখানো। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই এক সময়কার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন: ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সরকারই হচ্ছে গণতন্ত্র।’ আমরা চাইব, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; পুরো বিশ্বের তাবৎ রাজনীতিক ট্রাম্পের অগণতান্ত্রিক রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে এই পৃথিবীর সৌন্দর্যবর্ধনে ভূমিকা রেখে চলবেন। (দৈনিক যুগান্তর)