নিউইয়র্ক ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সংঘাত দীর্ঘায়িত করিবেন না

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৪৩ বার পঠিত

শনিবার (২৮ অক্টোবর) ‘সমাবেশের নগরী’ ঢাকা শেষ পর্যন্ত যেইভাবে ‘সংঘাতের নগরী’ হইয়া উঠিল, উহাতে হতাশ না হইয়া উপায় নাই। দিনটি লইয়া পক্ষকাল ধরিয়া ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যাইতেছিল, শুক্রবার উহা যেন ফুৎকারে নিভিয়া গিয়াছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তো বটেই, নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীও প্রার্থিত স্থানেই জনসমাবেশ করিবার ‘অনুমতি’ পাইবার পর দেশবাসীর সহিত আমরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়াছিলাম। পুলিশের পক্ষে শর্ত এবং দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পক্ষেই ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচির প্রতিশ্রæতি সত্তে¡ও নাগরিকদের মধ্যে যতটুকু শঙ্কা ছিল, শনিবার সকাল হইতে উভয় পক্ষের ‘উৎসবমুখর’ প্রস্তুতি দেখিয়া উহাও দৃশ্যত দূরীভূত হইয়াছিল। কিন্তু দুপুর গড়াইতেই শান্তির বাতাবরণ ছিন্ন হইয়া যায়। কাকরাইল মোড়ে সূচিত সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শান্তিনগর মোড় ও বিজয়নগর হইয়া সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ছড়াইয়া পড়ে এবং এক পর্যায়ে নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশটি পন্ড হইয়া যায়। অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভ লিখিবার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগ ঘটিতেছিল।
আমরা মনে করি, শনিবার কমবেশি সকল পক্ষই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হইয়াছে। বিশেষত কাকরাইল মোড়ে যেই ঘটনা সংঘর্ষের ‘স্ফুলিঙ্গ’ তৈয়ারি করিয়াছিল, উহা দৃশ্যত ‘তুচ্ছ’ ছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটি দল বায়তুল মোকাররমে যাইবার সময় বিএনপির একটি মিছিলের সহিত বাগ-বিতন্ডা ও হাতাহাতি হয় বলিয়া সমকাল অনলাইনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাইতেছে। উভয় দলের উপস্থিত নেতাকর্মী ধৈর্যের পরিচয় দিলেই উহা ঘটিত না। কয়েকটি এলাকায় বিএনপি কর্মীদের সহিত পুলিশের সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী যেইভাবে যোগ দিয়াছেন, উহাও অগ্রহণযোগ্য। পুলিশও ঠিক কী কারণে কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘মারমুখী’ হইয়া উঠিয়াছিল, এখনও স্পষ্ট নহে। বিএনপির বিশাল ও বিস্তৃত সমাবেশে এক প্রান্তে উত্তেজনার কারণে সমগ্র সমাবেশ পন্ড হইল কেন, উহাও বড় প্রশ্ন হইয়া থাকিবে। অবশ্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিক্ষোভের মাত্রা স্পষ্ট হইয়াছে দৈনিক বাংলা মোড়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যের প্রাণহানি ও অন্তত ৪১ জন আহত হইবার মধ্য দিয়া। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চত্বরে যেইভাবে অ্যাম্বুলেন্সসহ সাতটি গাড়ি পোড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে, উহাও কোনো বিবেচনাতেই সমর্থনযোগ্য নহে।
ইহাও আমরা সমর্থন করিতে পারি না যে, শনিবারের বিভিন্ন সমাবেশ ঘিরিয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিবার পরিবর্তে দুই প্রধান দলই রোববারও হরতাল ও শান্তি সমাবেশ ডাকিয়া বসিয়াছে। ইহার অর্থ হইতেছে, সংঘাত ও সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে। অথচ আমরা প্রত্যাশা করিয়াছিলাম, শনিবারের অঘটনগুলিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসাবে ধরিয়া লইয়া দুই পক্ষই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ থাকিবে। সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি লইয়া সংলাপের সময় এখনও অবশ্য ফুরাইয়া যায় নাই। পুলিশের প্রতিও আমাদের আহŸান থাকিবে, উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যাহাতে সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া হয়। কারণ সংঘাত দীর্ঘায়িত হইলে ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, প্রশাসন, পুলিশ– কাহারও ক্ষতি বৈ লাভ নাই। (দৈনিক সমকাল)

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সংঘাত দীর্ঘায়িত করিবেন না

প্রকাশের সময় : ১০:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

শনিবার (২৮ অক্টোবর) ‘সমাবেশের নগরী’ ঢাকা শেষ পর্যন্ত যেইভাবে ‘সংঘাতের নগরী’ হইয়া উঠিল, উহাতে হতাশ না হইয়া উপায় নাই। দিনটি লইয়া পক্ষকাল ধরিয়া ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যাইতেছিল, শুক্রবার উহা যেন ফুৎকারে নিভিয়া গিয়াছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তো বটেই, নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীও প্রার্থিত স্থানেই জনসমাবেশ করিবার ‘অনুমতি’ পাইবার পর দেশবাসীর সহিত আমরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়াছিলাম। পুলিশের পক্ষে শর্ত এবং দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পক্ষেই ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচির প্রতিশ্রæতি সত্তে¡ও নাগরিকদের মধ্যে যতটুকু শঙ্কা ছিল, শনিবার সকাল হইতে উভয় পক্ষের ‘উৎসবমুখর’ প্রস্তুতি দেখিয়া উহাও দৃশ্যত দূরীভূত হইয়াছিল। কিন্তু দুপুর গড়াইতেই শান্তির বাতাবরণ ছিন্ন হইয়া যায়। কাকরাইল মোড়ে সূচিত সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শান্তিনগর মোড় ও বিজয়নগর হইয়া সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ছড়াইয়া পড়ে এবং এক পর্যায়ে নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশটি পন্ড হইয়া যায়। অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভ লিখিবার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগ ঘটিতেছিল।
আমরা মনে করি, শনিবার কমবেশি সকল পক্ষই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হইয়াছে। বিশেষত কাকরাইল মোড়ে যেই ঘটনা সংঘর্ষের ‘স্ফুলিঙ্গ’ তৈয়ারি করিয়াছিল, উহা দৃশ্যত ‘তুচ্ছ’ ছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটি দল বায়তুল মোকাররমে যাইবার সময় বিএনপির একটি মিছিলের সহিত বাগ-বিতন্ডা ও হাতাহাতি হয় বলিয়া সমকাল অনলাইনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাইতেছে। উভয় দলের উপস্থিত নেতাকর্মী ধৈর্যের পরিচয় দিলেই উহা ঘটিত না। কয়েকটি এলাকায় বিএনপি কর্মীদের সহিত পুলিশের সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী যেইভাবে যোগ দিয়াছেন, উহাও অগ্রহণযোগ্য। পুলিশও ঠিক কী কারণে কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘মারমুখী’ হইয়া উঠিয়াছিল, এখনও স্পষ্ট নহে। বিএনপির বিশাল ও বিস্তৃত সমাবেশে এক প্রান্তে উত্তেজনার কারণে সমগ্র সমাবেশ পন্ড হইল কেন, উহাও বড় প্রশ্ন হইয়া থাকিবে। অবশ্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর বিক্ষোভের মাত্রা স্পষ্ট হইয়াছে দৈনিক বাংলা মোড়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যের প্রাণহানি ও অন্তত ৪১ জন আহত হইবার মধ্য দিয়া। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চত্বরে যেইভাবে অ্যাম্বুলেন্সসহ সাতটি গাড়ি পোড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে, উহাও কোনো বিবেচনাতেই সমর্থনযোগ্য নহে।
ইহাও আমরা সমর্থন করিতে পারি না যে, শনিবারের বিভিন্ন সমাবেশ ঘিরিয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিবার পরিবর্তে দুই প্রধান দলই রোববারও হরতাল ও শান্তি সমাবেশ ডাকিয়া বসিয়াছে। ইহার অর্থ হইতেছে, সংঘাত ও সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে। অথচ আমরা প্রত্যাশা করিয়াছিলাম, শনিবারের অঘটনগুলিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসাবে ধরিয়া লইয়া দুই পক্ষই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ থাকিবে। সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি লইয়া সংলাপের সময় এখনও অবশ্য ফুরাইয়া যায় নাই। পুলিশের প্রতিও আমাদের আহŸান থাকিবে, উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যাহাতে সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া হয়। কারণ সংঘাত দীর্ঘায়িত হইলে ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, প্রশাসন, পুলিশ– কাহারও ক্ষতি বৈ লাভ নাই। (দৈনিক সমকাল)