নিউইয়র্ক ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দীর্ঘতম শাটডাউন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫৫:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ৭২৩ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের শাটডাউন তথা আংশিক অচলাবস্থা গেল বৎছরের ২২ ডিসেম্বর হইতে চলিতেছে। নূতন বর্ষে আসিয়া আজ তাহা ২৪তম দিনে পড়িলেও সহসা এই অচলাবস্থা নিরসনের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। এমনকি দেশটির ইতিহাসে ইহাই সবচাইতে বড় শাটডাউনের ঘটনা হইলেও ইহা নিয়া ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইগোর রাজনীতির অবসান হইতেছে না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একটি শক্তিশালী দেশ। এমন দেশে সরকারের এই অচলাবস্থায় অনেকেই বিস্মিত। ইহার কারণে প্রত্যক্ষভাবে অন্তত ৭৭টি দিক হইতে ক্ষতির সম্মুখীন হইতেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কৃষি, বাণিজ্য, বিচার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আবাসন ও নগর উন্নয়ন, অর্থমন্ত্রণালয় এবং পরিবহন বিভাগের আট লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা বেতনে চাকুরি করিতে হইতেছে। অনেক সরকারি সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ হইয়া গিয়াছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ইহাতে বেকারত্বের হার বাড়িয়া দাঁড়াইবে শতকরা চার ভাগে। অর্থ বত্সরের প্রথমভাগে প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক ২৫ হইতে দুই ভাগে নামিয়া আসিতে পারে।
তৃতীয় বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশেও সরকারের এমন শাটডাউন কল্পনাতীত। কিন্তু যাহারা নিজেদের অর্থনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদিতে সর্বেসর্বা বলিয়া দাবি করেন, তাহাদের দেশের সরকারের এই দশা দেখিয়া অনেকেই হতবাক। ইহাতে কি প্রমাণিত হয় না যে, গরিব দেশগুলির সরকার অনেক ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলির সরকারের চাইতেও বেশি শক্তিশালী! এইসব দেশের সরকারপ্রধানগণ সহজে যাহা পারেন, তাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও পারেন না! এইসব দেশে সরকারের এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি হইলে বল প্রয়োগ করিয়া হইলেও তাহার দ্রুত সমাধান করা তাহাদের পক্ষে অসম্ভব নহে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্বে ক্ষমতা ও শৌর্যে-বীর্যে অতুলনীয়, তেমনি তাহার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ব্যবস্থাও অভিনব। সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগের মধ্যে ব্যালেন্স অব পাওয়ার বা ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করিবার নীতি থাকিবার কারণেই আমেরিকায় মাঝেমধ্যে এই ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় যাহার সূত্রপাত হয় ১৯৭৬ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের আমলে। ইহাতেও সূক্ষ্ম রাজনীতির খেলা আছে এবং যেই দল যুক্তি দিয়া নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করিতে পারিবেন, পরবর্তী নির্বাচনে জনমত সেইদিকেই ঝুঁকিয়া পড়িবার সম্ভাবনা দেখা দিবে। কিন্তু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহীদের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকিবার কারণে নিজ দেশে তাহাদের চাইতে শক্তিশালী আর কেহ হইতে পারেন না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিও এইসব দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হইয়া থাকে দুর্বল প্রকৃতির।
গতকাল প্রকাশিত সিএনএন-এর একটি জরিপে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক প্রতিবেশী মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের বিরুদ্ধে, ইহার পক্ষে রহিয়াছে ৩৯ শতাংশ মানুষ। তাহারপরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাহার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণে অবিচল ও অনড়। কিন্তু এইজন্য ৫৭০ কোটি ডলারের নেওয়া প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ মঞ্জুর করিতেছে না হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস তথা মার্কিন কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধীদল ডেমোক্র্যাট দল। আর এই দ্বন্দ্বের ফলেই তৈরি হইয়াছে এই প্রশাসনিক অচলাবস্থা। এখন প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়া এবং সেনাবাহিনীর বাজেট হইতে অর্থ লইয়া তাহার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে পারেন, কিন্তু এইক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নও উঠিতে পারে। অতএব, এখন আলাপ-আলোচনা করিয়া সমাধান বাহির করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই বললেই চলে। (দৈনিক ইত্তেফাক)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দীর্ঘতম শাটডাউন

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৫:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের শাটডাউন তথা আংশিক অচলাবস্থা গেল বৎছরের ২২ ডিসেম্বর হইতে চলিতেছে। নূতন বর্ষে আসিয়া আজ তাহা ২৪তম দিনে পড়িলেও সহসা এই অচলাবস্থা নিরসনের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। এমনকি দেশটির ইতিহাসে ইহাই সবচাইতে বড় শাটডাউনের ঘটনা হইলেও ইহা নিয়া ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইগোর রাজনীতির অবসান হইতেছে না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একটি শক্তিশালী দেশ। এমন দেশে সরকারের এই অচলাবস্থায় অনেকেই বিস্মিত। ইহার কারণে প্রত্যক্ষভাবে অন্তত ৭৭টি দিক হইতে ক্ষতির সম্মুখীন হইতেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কৃষি, বাণিজ্য, বিচার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আবাসন ও নগর উন্নয়ন, অর্থমন্ত্রণালয় এবং পরিবহন বিভাগের আট লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা বেতনে চাকুরি করিতে হইতেছে। অনেক সরকারি সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ হইয়া গিয়াছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ইহাতে বেকারত্বের হার বাড়িয়া দাঁড়াইবে শতকরা চার ভাগে। অর্থ বত্সরের প্রথমভাগে প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক ২৫ হইতে দুই ভাগে নামিয়া আসিতে পারে।
তৃতীয় বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশেও সরকারের এমন শাটডাউন কল্পনাতীত। কিন্তু যাহারা নিজেদের অর্থনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদিতে সর্বেসর্বা বলিয়া দাবি করেন, তাহাদের দেশের সরকারের এই দশা দেখিয়া অনেকেই হতবাক। ইহাতে কি প্রমাণিত হয় না যে, গরিব দেশগুলির সরকার অনেক ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলির সরকারের চাইতেও বেশি শক্তিশালী! এইসব দেশের সরকারপ্রধানগণ সহজে যাহা পারেন, তাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও পারেন না! এইসব দেশে সরকারের এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি হইলে বল প্রয়োগ করিয়া হইলেও তাহার দ্রুত সমাধান করা তাহাদের পক্ষে অসম্ভব নহে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্বে ক্ষমতা ও শৌর্যে-বীর্যে অতুলনীয়, তেমনি তাহার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ব্যবস্থাও অভিনব। সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগের মধ্যে ব্যালেন্স অব পাওয়ার বা ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করিবার নীতি থাকিবার কারণেই আমেরিকায় মাঝেমধ্যে এই ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় যাহার সূত্রপাত হয় ১৯৭৬ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের আমলে। ইহাতেও সূক্ষ্ম রাজনীতির খেলা আছে এবং যেই দল যুক্তি দিয়া নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করিতে পারিবেন, পরবর্তী নির্বাচনে জনমত সেইদিকেই ঝুঁকিয়া পড়িবার সম্ভাবনা দেখা দিবে। কিন্তু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহীদের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকিবার কারণে নিজ দেশে তাহাদের চাইতে শক্তিশালী আর কেহ হইতে পারেন না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিও এইসব দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হইয়া থাকে দুর্বল প্রকৃতির।
গতকাল প্রকাশিত সিএনএন-এর একটি জরিপে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক প্রতিবেশী মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের বিরুদ্ধে, ইহার পক্ষে রহিয়াছে ৩৯ শতাংশ মানুষ। তাহারপরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাহার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণে অবিচল ও অনড়। কিন্তু এইজন্য ৫৭০ কোটি ডলারের নেওয়া প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ মঞ্জুর করিতেছে না হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস তথা মার্কিন কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধীদল ডেমোক্র্যাট দল। আর এই দ্বন্দ্বের ফলেই তৈরি হইয়াছে এই প্রশাসনিক অচলাবস্থা। এখন প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়া এবং সেনাবাহিনীর বাজেট হইতে অর্থ লইয়া তাহার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে পারেন, কিন্তু এইক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নও উঠিতে পারে। অতএব, এখন আলাপ-আলোচনা করিয়া সমাধান বাহির করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই বললেই চলে। (দৈনিক ইত্তেফাক)