নিউইয়র্ক ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের বিপদ বাড়ছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০৫:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬
  • / ১৪৭২ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণা, হিংসা ও বিদ্বেষের পাশাপাশি মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনাও আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এটা সাধারণ কোনো খবর নয় বরং দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর এক পরিসংখ্যান থেকেই এ বিষয়ে জানা গেছে। এফবিআই জানিয়েছে, বিগত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার মতো অপরাধ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। এফবিআই-এর রিপোর্টে তুলনামূলক পরিসংখ্যানের জন্য সূচনার সময় হিসেবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরকে তথা নাইন-ইলেভেনকে বেছে নেয়া হয়েছে, যেদিন ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস হয়েছিল এবং যেদিন থেকে মুসলিমবিরোধী হামলা ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে মুসলিমদের ওপর হামলার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪৭৯টি। কিন্তু ২০১৫ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০টি। এই হিসাবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়লেও নাইন-ইলেভেনপূর্ব সময়ের তুলনায় প্রকৃত বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশে।
২০০০ সাল পর্যন্ত মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতো খুব কমই। কিন্তু ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস করার জন্য মুসলিমদের ওপর দোষ চাপানো হয় এবং তখন থেকেই মুসলিমরা আক্রান্ত হতে থাকেন। হামলার সে অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। তার ওপর প্রেসিডেন্ট পদে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হয়ে ওঠার আশংকা দেখা দিয়েছে। সব খবর প্রকাশিত হতে না দেয়া হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং মুসলিম নেতাদের কাছে এ বিষয়ে জানা যাচ্ছে। বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্যের সকল শহরেই মুসলিমদের ওপর নতুন পর্যায়ে হামলা শুরু হয়েছে। সম্ভবত একই কারণে এফবিআই-এর মতো শক্তিশালী সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে এ সম্পর্কিত রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ করতে হয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্যারিস, সানবারনারডিনো এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায় চাপিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়তে শুরু করেছিল। এমন অবস্থায় আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার কাজটি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় মুসলিম বিরোধী প্রচুর বক্তব্য রেখেছেন এবং অন্য বিদেশীদের পাশাপাশি বিশেষ করে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এতেই প্রশ্রয় পেয়েছে দৃষ্কৃতকারীরা। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে। এর ফলে প্রতিদিন আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শত শত মুসলিম। অনেকের এমনকি মৃত্যুও ঘটছে। জানা গেছে, আহতরা কোথাও চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে জন্মগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ অধিকাংশ মুসলিমকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সেই সব মুসলিমকেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না, রিপাবলিকান পার্টির সদস্য বা সমর্থক হিসেবে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। হামলার সময় শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীরা চিৎকার করে জানান দিচ্ছে, আমেরিকা কেবলই আমেরিকানদের। এদেশে অন্য কাউকে বসবাস করতে দেয়া হবে না।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসহ মুসলিম স্বার্থ রক্ষার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মসজিদে হামলা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারেও জানানো হয়েছে। সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বিগত এক বছরে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মসজিদগুলোর ওপর। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা তো বটেই মুসলিম বিরোধী হামলায় অংশ নিচ্ছে নিগ্রো তথা কালো মার্কিনীরাও। তাদের সঙ্গে রয়েছে হিস্পানিক বা ল্যাটিনোরাও। অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমরা যৌন হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন। অ্যান্টি ডিফ্যামেশন লীগ ধরনের কিছু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত ছয় বছরে মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ১৭ ভাগই মুসলিমদের ওপর হামলা সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট এফবিআই-এর কাছে পাঠায়নি। এখনো পাঠাচ্ছে না। একই কারণে এফবিআই-এর পরিসংখ্যান ও রিপোর্ট সম্পর্কেও সংশয়ের কথা জানিয়েছেন তথ্যাভিজ্ঞরা। সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টারের মতো গবেষণা সংস্থাগুলো বলেছে, একজন সেলিব্রিটি বা পাবলিক ফিগার হয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেভাবে ঘৃণা ছড়িয়েছেন এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেখেছেন তার ফলেই সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে গেছে। জয়ী হওয়ার পর নতুন প্রেসিডেন্ট অবশ্য চাতুরিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন। এবিসি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কথা তিনি কখনো শোনেননি। এরকম শুনলে তিনি মনঃক্ষুণœ হবেন জানিয়ে ট্রাম্প আরো বলেছেন, আমি বলছি এ ধরনের হামলা বন্ধ করুন!
বলার অপেক্ষা রাখে না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার খবর অত্যন্ত আশংকাজনক। আমরা বেশি উদ্বিগ্ন আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে। কারণ, নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তিনি মুসলিম মাত্রকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে ঘোষণা করেছিলেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যারা বৈধ বা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তাদের সকলকেও বহিষ্কার করবে তার সরকার। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ট্রাম্প বুঝিয়ে ছেড়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি কেবলই শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীদের দেশে পরিণত করবেন।
সেটা তিনি চাইতেই পারেন কিন্তু মুসলিম বিরোধী হামলা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে। কারণ, এই হামলা বাড়ার পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও কিছু বিষয়ে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে শুরু করেছেন। ব্রেইটার নিউজ ওয়েবসাইটের কর্ণধার স্টিভেন ব্যাননকে হোয়াইট হাউজের প্রধান স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভীতি ও আশংকা অনেক বাড়িয়েছেন। কারণ, এই স্টিভেন ব্যানন ‘আমেরিকা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের দেশ’ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন এবং তাকে মুসলিম ও বহুমাত্রিক সংস্কৃতি বিরোধী ব্যক্তি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। অমন একজন চিহ্নিত মুসলিম বিরোধীকেই ট্রাম্প তার প্রধান স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া মুসলিমদের ওপর হামলা বন্ধ বা প্রতিহত করার ব্যাপারে এফবিআইসহ কোনো সংস্থাকেও এখনো তেমন তৎপর দেখা যাচ্ছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিমদের বিপদ বেড়ে চলেছে।
আমরা আশা করতে চাই, বিষয়টির প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেবেন এবং কেবলই সন্ত্রাসী মার্কিনীদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরিবর্তে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হবেন। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৭ নভেম্বর’২০১৬)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের বিপদ বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ১১:০৫:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণা, হিংসা ও বিদ্বেষের পাশাপাশি মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনাও আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এটা সাধারণ কোনো খবর নয় বরং দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর এক পরিসংখ্যান থেকেই এ বিষয়ে জানা গেছে। এফবিআই জানিয়েছে, বিগত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার মতো অপরাধ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। এফবিআই-এর রিপোর্টে তুলনামূলক পরিসংখ্যানের জন্য সূচনার সময় হিসেবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরকে তথা নাইন-ইলেভেনকে বেছে নেয়া হয়েছে, যেদিন ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস হয়েছিল এবং যেদিন থেকে মুসলিমবিরোধী হামলা ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে মুসলিমদের ওপর হামলার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪৭৯টি। কিন্তু ২০১৫ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০টি। এই হিসাবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়লেও নাইন-ইলেভেনপূর্ব সময়ের তুলনায় প্রকৃত বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশে।
২০০০ সাল পর্যন্ত মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতো খুব কমই। কিন্তু ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংস করার জন্য মুসলিমদের ওপর দোষ চাপানো হয় এবং তখন থেকেই মুসলিমরা আক্রান্ত হতে থাকেন। হামলার সে অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। তার ওপর প্রেসিডেন্ট পদে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হয়ে ওঠার আশংকা দেখা দিয়েছে। সব খবর প্রকাশিত হতে না দেয়া হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং মুসলিম নেতাদের কাছে এ বিষয়ে জানা যাচ্ছে। বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্যের সকল শহরেই মুসলিমদের ওপর নতুন পর্যায়ে হামলা শুরু হয়েছে। সম্ভবত একই কারণে এফবিআই-এর মতো শক্তিশালী সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে এ সম্পর্কিত রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ করতে হয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্যারিস, সানবারনারডিনো এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায় চাপিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়তে শুরু করেছিল। এমন অবস্থায় আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার কাজটি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় মুসলিম বিরোধী প্রচুর বক্তব্য রেখেছেন এবং অন্য বিদেশীদের পাশাপাশি বিশেষ করে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এতেই প্রশ্রয় পেয়েছে দৃষ্কৃতকারীরা। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে। এর ফলে প্রতিদিন আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শত শত মুসলিম। অনেকের এমনকি মৃত্যুও ঘটছে। জানা গেছে, আহতরা কোথাও চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে জন্মগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ অধিকাংশ মুসলিমকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সেই সব মুসলিমকেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না, রিপাবলিকান পার্টির সদস্য বা সমর্থক হিসেবে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। হামলার সময় শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীরা চিৎকার করে জানান দিচ্ছে, আমেরিকা কেবলই আমেরিকানদের। এদেশে অন্য কাউকে বসবাস করতে দেয়া হবে না।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসহ মুসলিম স্বার্থ রক্ষার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মসজিদে হামলা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারেও জানানো হয়েছে। সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বিগত এক বছরে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মসজিদগুলোর ওপর। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা তো বটেই মুসলিম বিরোধী হামলায় অংশ নিচ্ছে নিগ্রো তথা কালো মার্কিনীরাও। তাদের সঙ্গে রয়েছে হিস্পানিক বা ল্যাটিনোরাও। অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমরা যৌন হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন। অ্যান্টি ডিফ্যামেশন লীগ ধরনের কিছু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত ছয় বছরে মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ১৭ ভাগই মুসলিমদের ওপর হামলা সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট এফবিআই-এর কাছে পাঠায়নি। এখনো পাঠাচ্ছে না। একই কারণে এফবিআই-এর পরিসংখ্যান ও রিপোর্ট সম্পর্কেও সংশয়ের কথা জানিয়েছেন তথ্যাভিজ্ঞরা। সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টারের মতো গবেষণা সংস্থাগুলো বলেছে, একজন সেলিব্রিটি বা পাবলিক ফিগার হয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেভাবে ঘৃণা ছড়িয়েছেন এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেখেছেন তার ফলেই সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে গেছে। জয়ী হওয়ার পর নতুন প্রেসিডেন্ট অবশ্য চাতুরিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন। এবিসি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কথা তিনি কখনো শোনেননি। এরকম শুনলে তিনি মনঃক্ষুণœ হবেন জানিয়ে ট্রাম্প আরো বলেছেন, আমি বলছি এ ধরনের হামলা বন্ধ করুন!
বলার অপেক্ষা রাখে না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার খবর অত্যন্ত আশংকাজনক। আমরা বেশি উদ্বিগ্ন আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে। কারণ, নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তিনি মুসলিম মাত্রকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে ঘোষণা করেছিলেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যারা বৈধ বা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তাদের সকলকেও বহিষ্কার করবে তার সরকার। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ট্রাম্প বুঝিয়ে ছেড়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি কেবলই শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীদের দেশে পরিণত করবেন।
সেটা তিনি চাইতেই পারেন কিন্তু মুসলিম বিরোধী হামলা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে। কারণ, এই হামলা বাড়ার পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও কিছু বিষয়ে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে শুরু করেছেন। ব্রেইটার নিউজ ওয়েবসাইটের কর্ণধার স্টিভেন ব্যাননকে হোয়াইট হাউজের প্রধান স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভীতি ও আশংকা অনেক বাড়িয়েছেন। কারণ, এই স্টিভেন ব্যানন ‘আমেরিকা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের দেশ’ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন এবং তাকে মুসলিম ও বহুমাত্রিক সংস্কৃতি বিরোধী ব্যক্তি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। অমন একজন চিহ্নিত মুসলিম বিরোধীকেই ট্রাম্প তার প্রধান স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া মুসলিমদের ওপর হামলা বন্ধ বা প্রতিহত করার ব্যাপারে এফবিআইসহ কোনো সংস্থাকেও এখনো তেমন তৎপর দেখা যাচ্ছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিমদের বিপদ বেড়ে চলেছে।
আমরা আশা করতে চাই, বিষয়টির প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেবেন এবং কেবলই সন্ত্রাসী মার্কিনীদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরিবর্তে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হবেন। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৭ নভেম্বর’২০১৬)