বেলাশেষে আমেরিকায় জয়ী হবে গণতন্ত্র
- প্রকাশের সময় : ০১:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ নভেম্বর ২০২০
- / ৫০ বার পঠিত
অঙ্কে ভুল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভেবেছিলেন উগ্র জাতীয়তাবাদ তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। তাই আমেরিকাকে দুনিয়া থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। হোয়াইট সুপ্রিমেসিকে উস্কে দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন। আমেরিকার রাজনীতির সব ট্র্যাডিশন উল্টে দিয়ে নিজের খেয়ালখুশিমতো কৌশল নিয়েছিলেন। যা কিনা রিপাবলিকানরাই পছন্দ করেন নি। এখন এটা আরো খোলাসা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রিপাবলিকান মিডিয়া হিসেবে পরিচিত ফক্স নিউজও পাল্টে গেছে।
তারা তাদের সম্পাদকীয় নীতি বদল করেছে। বলেছে- সত্যের পাশেই তারা থাকবে। অত্যন্ত শক্তিশালী এই চ্যানেলটি ভোটের দিন থেকেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। ট্রাম্প জয়ী হয়ে গেছেন, এমন কাল্পনিক দাবির সঙ্গে তারা ভিন্নমত পোষণ করে প্রকাশ্যে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগকে বানোয়াট বলে বর্ণনা করে। দালিলিক কোনো প্রমাণছাড়া এই অভিযোগকে জাতির সঙ্গে মশকরা বলেই উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকান মিডিয়া। এবিসি, সিবিএস ও এনবিসি দুনিয়ায় নতুন এক নজির স্থাপন করেছে। ভোট জালিয়াতির অভিযোগের পর ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন থেকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় তারা। প্রমাণছাড়া অভিযোগকে ভাষ্যকাররা অসত্য বলে উড়িয়ে দেন।
সিএনএন, এমএসএনবিসি সম্প্রচারের সময় বলে দেয় প্রেসিডেন্ট কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করছেন। ফক্স নিউজের হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা জন রবার্টস দর্শকদের খোলাখুলিভাবে বলে দেন, নির্বাচন জালিয়াতির কোনো প্রমাণ নেই। প্রেসিডেন্ট যা বলছেন, তার কোনো সত্যতা নেই। আমেরিকান সমাজে ট্রাম্প প্রথমদিক থেকেই বিতর্কিত ছিলেন। তার নানা মন্তব্যে দুনিয়াব্যাপী অনেক কৌতুকেরও জন্ম হয়েছিলো। নির্বাচনের ফলাফল মানবেন না, এটা নতুন কোনো কথা নয়। দু’সপ্তাহ আগে থেকেই বলে আসছিলেন, আদালতেই ফয়সালা হতে হবে। সুপ্রিম আদালতে একজন বিচারক নিয়োগ দেয়ার পর উল্লাস করেছিলেন। বলেছিলেন, বাইডেনরা এবার যাবে কোথায়? আদালত তো অন্ধ নয়। জনমতের বাইরে কি আদালত যাবে? অন্তত মার্কিন সমাজে। ভোটে কারচুপির কোনো প্রমাণ না দিয়ে জোর গলায় বললেই কি আদালত তার পক্ষে রায় দিয়ে দেবে? ভোটের ফল আটকে দেবার চেষ্টা করে ট্রাম্প ব্যর্থ হন। আদালত তার আর্জিতে সায় দেননি। তামাম দুনিয়ায় এই নির্বাচন নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। কারণ কেউ ভাবেননি ট্রাম্প নির্বাচনী বক্তৃতায় যাই বলুন না কেন, ফলাফল নিয়ে কাল্পনিক কোনো দাবি করবেন। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই তিনি নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন। অনেকে বলছেন, এটা এক ধরনের পাগলামি।
কেউ কেউ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তারা এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য খুঁজছেন। ট্রাম্প কি ট্যাক্সসহ নানা অনিয়মের পরিণতির কথা ভেবে দরকষাকষি করছেন? তিনি নিশ্চিত জানেন, ট্যাক্স ফাঁকি দেবার কারণে তাকে জেলে পর্যন্ত যেতে হতে পারে। তাই নির্বাচনকে বিতর্কিত করে নিজের জন্য কোনো ফায়দা তুলতে চাচ্ছেন। ফ্লোরিডায় জিতে গিয়ে ট্রাম্প ভেবেছিলেন আমেরিকার জনগণ তাকেই বেছে নিয়েছে। বারবার কী একই খেলা হয়? কারো সঙ্গে পরামর্শ না করে মিডিয়ার সামনে এসে বললেন, আমিই প্রেসিডেন্ট। মার্কিন জনগণ এতে লজ্জা পেলেও, ট্রাম্প পাননি। ট্রাম্প উদ্ভট কথা বলতেই পছন্দ করেন বেশি। মার্কিন সমাজতত্ত¡বিদ অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি ট্রাম্পকে ইতিহাসের অত্যন্ত খারাপ মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন।
এখন তাহলে কি হবে? ট্রাম্প কি জনমতের প্রতি সম্মান দেখাবেন না? শুরুতে এটা মনে হলেও এখন আর তা মনে হচ্ছে না। তার একান্তজনেরাও ইতিমধ্যেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ট্রাম্পের নীতিনির্ধারকরা শুরুতে কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলেন। সময় যত গড়াচ্ছে ততই তারা মই সরিয়ে ফেলছেন। জো বাইডেনকে অনেকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক, এটাই রীতি। বাস্তবতা হচ্ছে আমেরিকায় উগ্র জাতীয়তাবাদ হেরেছে। লক্ষণীয় যে, অনেক রাজ্যে রিপাবলিকান গভর্নর থাকা সত্তে¡ও ট্রাম্পের অযৌক্তিক কথায় তারা সায় দেননি। কোনো রক্তচক্ষুর কাছে তারা টলেননি।
এখন দেখা যাক, জো বাইডেন কি করেন? তার সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে বিভক্ত সমাজ অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের রেখে যাওয়া জঞ্জাল কীভাবে সামাল দেন?
শেষ কথা: বেলাশেষে আমেরিকায় গণতন্ত্রের জয় হবে। দুনিয়া চেয়ে আছে সেদিকেই।
(দৈনিক মানবজমিন, সম্পাদকীয় নোট)