নেতারা যেভাবে একা হয়ে যান
- প্রকাশের সময় : ০২:৫৫:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
- / ৩৭ বার পঠিত
মানুষ কখন একা হয়? এই প্রশ্নের জবাব হয়তো এক রকম হবে না। কারণ, মানুষ তো কথা বলে থাকে তাঁর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞানের আলোকেই। তবে একটা কথাতো আমরা বলতেই পারি যে, মানুষতো একা থাকার জন্য সমাজবদ্ধ হয়নি কিংবা রাষ্ট্রের নাগরিক হয়নি। তারপরও মানুষ একা হয়ে যায়। এর ব্যক্তিগত কারণ যেমন আছে, তেমনি আছে সামাজিক কারণও। এর সাথে যুক্ত হতে পারে রাজনৈতিক এবং বৈশ্বিক কারণও। তবে মানুষের একা হয়ে যাওয়াটা কোনো আনন্দের বিষয় নয়, কাঙ্খিত বিষয়ও নয়। এতক্ষণ আমরা মানুষের একা হওয়ার কথা বললাম। কিন্তু রাষ্ট্রও যে একা হয়ে যেতে পারে, সে কথা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আসলে রাষ্ট্র একা হয়ে যায় কোনো রাষ্ট্রের অনাকাক্সিক্ষত নীতি ও আচরণের কারণে। এর দায় বর্তায় সংশ্লিষ্ট সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর।
রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছে প্রখ্যাত আমেরিকান গণমাধ্যম সিএনএন। বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বন্ধুদের কাছে অবিশ্বস্থ আর করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র একটি অরক্ষিত অঞ্চল। যেখানে ছোট ও গরিব দেশগুলো করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সফল, সেখানে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের নাকানিচুবানি খাওয়া দেখে দেশটির প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধা উঠে যাচ্ছে। বিশ্লেষণে আরো বলা হয়, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাড়ে তিন বছর ধরে ক্ষমতায়। এই সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার সময় ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি দেন তিনি। সেই নীতির কারণেই হয়তো ‘একঘরে’ হতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতা নেয়ার তিনদিনের মাথায় গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি ত্যাগ করেন ট্রাম্প। সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এছাড়া ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে মিত্রতার বন্ধন আলগা করতে থাকেন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ট্রাম্প। তখনকার ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ইউরোপের নেতাদের কাছে চিঠি লিখে বলেন, ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক পরিবর্তন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কঠিন সংকটে ফেলেছে, যা আমেরিকার ৭০ বছরের পররাষ্ট্রনীতিতে দেখা যায়নি। ট্রাম্পের ‘একা চলো’ নীতিতে ইউরোপের নেতারাও গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল তো বলেই দেন, ইউরোপের ভাগ্য ইউরোপের হাতেই। অন্য কারো হাতে নয়। ন্যাটোতে অর্থ সহায়তা নিয়ে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন শুরু হয় ট্রাম্পের হাত ধরেই। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে তিন বছর পর ন্যাটোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগতভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করছে, ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে ন্যাটোকে ‘পুরোপুরি অকার্যকর’-এর দিকেই নিয়ে যাবেন তিনি।
পর্যবেক্ষকরা এখন মনে করছেন, ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতি ও বর্ণবাদ সমস্যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল থেকে সরে গেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা ভাইরাস মহামারির মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সময় অনাকাঙ্খিত বক্তব্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানুষের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করেছেন। এর ফলাফল লক্ষ্য করা গেছে গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার একটি বৈঠকে। সেখানে করোনার উৎপত্তি ও তা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে চীনের ওপর আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের পক্ষ নিয়ে সেই দাবিতে ভেটো দেয়। ভুল নীতির কারণে দেশেও সমর্থন হ্রাস পাচ্ছে ট্রাম্পের। গত ২৬ জুন ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাকে দেশের অনেক মানুষই ভালোবাসেন না। আর এ কারণেই হয়তো বা আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’ ট্রাম্পের এমন মন্তব্য থেকে প্রশ্ন জাগে, একলা চলো নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে কি তিনি একা হয়ে গেলেন? (দৈনিক সংগ্রাম)