একজন মমিনুলের কথা : এ ধরনের বর্বরতা বন্ধ হোক
- প্রকাশের সময় : ০৬:০২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০
- / ৫৯ বার পঠিত
মমিনুল ইসলাম, আঠারো বছরের তরুণ। সামাজিক গণমাধ্যমে তোলপাড় তাঁকে নিয়ে। খবরটি গণমাধ্যমেও এসেছেÑকালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বিষয়ে প্রতিবেদন। গণমাধ্যমের খবর কেন হলেন তিনি? এ কথা মনে হলে স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় পুলিশের নির্যাতনে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের কথা মনে পড়ে যায়, যাকে নিয়ে এখনো তোলপাড় চলছে। মমিনুলও অনুরূপ নির্যাতনের শিকার। তবে পুলিশের হাতে নয়; বরং সামাজিকভাবে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীদের হাতে।
ঘটনাটি খুলেই বলা যাক। ঘরে রয়েছে তাঁর বৃদ্ধা মা। অসুস্থ। তাঁর ওষুধ দরকার। ওষুধ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন মমিনুল। ছিলেন হোটেল শ্রমিক, এখন বেকার। এই করোনাকালে অনেক সাধারণ, নিম্ন-আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন; তিনিও। ওষুধের সন্ধানে বেরিয়েছেন। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। মাকে তো বাঁচাতে হবে! তা করতে গিয়েই ছোটখাটো একটি অপরাধ করতে হয়েছে তাঁকে। একটি অটোরিকশা থেকে দুই লিটার তেল চুরি করেন তিনি। কিন্তু ধরা পড়ে যান চালকের হাতে। চালক নির্মম আচরণ করেননি; যা স্বাভাবিক এ পরিস্থিতিতে তা-ই করেছেন, দুটি চড় দিয়েছেন। তারপর ছেড়ে দিয়েছেন। ঘটনাটির এখানেই সমাপ্তি হতে পারত। কিন্তু হলো না।
ঘটনাটি যার মার্কেটের সামনে ঘটেছেÑআশরাফ আলী লাল তাঁর নাম, জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সভাপতি; তিনি দেখালেন প্রতাপের চরম দৃষ্টান্ত। মমিনুলকে রড দিয়ে পেটালেন। এক পায়ে মাথা আরেক পায়ে হাত চেপে ধরে নির্মম নির্যাতন করলেন। কেন করলেন? অটোচালক যাঁকে ছেড়ে দিলেন তাঁকে তো তাঁর কিছু বলার ছিল না। আসলে তিনি দাপট দেখালেন। আমাদের দেশে প্রভাবশালীদের কত দাপট!
নির্যাতন করার ভিডিও সামাজিক গণমাধ্যমে দেখে পুলিশ মমিনুলকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায়। নির্যাতনের কাহিনি শোনে। পুলিশের আশ্বাসেই আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আশরাফ ও সহযোগীরা এখন জেলে। গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠ’র লালমনিরহাট প্রতিনিধির কাছে ঘটনার বিষয়ে আলাপ করার সময় তিনি আরো কিছু তথ্য জানালেন, যা পত্রিকায় আসেনি। মমিনুল লালমনিরহাট সদর উপজেলার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকেন। মমিনুলের মা তাঁর গর্ভধারিণী নন, মাতৃত্ববোধের জন্য সেটা কোনো সমস্যা নয়। ছোটবেলায় রেলস্টেশনে মমিনুলকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন তিনি। নিজের মা-বাবা কে জানেন না মমিনুল; মা-ও জানেন না তাঁদের। মা-ছেলের সংসার। সেই মায়ের জন্যই ওষুধ জোগাড়ে বের হয়েছিলেন তিনি।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। মমিনুলকে উদ্ধার করান তিনিই। কাল গিয়েছিলেন মমিনুলদের বাড়ি। সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। খাবারও দিয়েছেন। আমরাও দেখতে চাই তথাকথিত প্রতাপশালীরা শাস্তি পাচ্ছে, যা দেখে অন্য প্রতাপশালীরা সতর্ক হবে।