নিউইয়র্ক ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস চালুসহ ৮টি বিষয়ে শতাধিক সুপারিশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৩২:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৯ বার পঠিত

পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা না রাখা, প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস চালুসহ ৮টি বিষয়ে শতাধিক সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন কমিটি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশমালা প্রণয়নের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মূল ১৪টি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। কমিশন প্রধান মনজুর আহমেদ সুপারিশগুলো তুলে ধরেন।

এরমধ্যে অন্যতম শিশুদের বাংলা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব দেয়া, পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমে (PEDP5) অন্তত ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এবং দশ বছরের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে এক শিফট চালু করা যেতে পারে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য শ্রেণির ভেতরে ও বাইরে নিরাময়মূলক সহায়তা দিতে হবে। এজন্য স্থানীয়ভাবে প্যারা-টিচার (শিক্ষা-সহায়ক) নিয়োগ দিতে পারে, ধারাবাহিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন দ্বারা প্রত্যেক শিশুর শিখন-অগ্রগতি যাচাই করতে হবে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা এ ধরনের পরীক্ষার পরিবর্তে এন.এস.এ. (National Student Assessment)-এর আদলে (তবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য) মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে প্রতি বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী সবুজ-হলুদ-লালে চিহ্নিত করা হবে, দ্রুত সম্ভব মিড-ডে-মিল প্রবর্তন, খাতা-কলম-ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বর্ধিত হারে অর্থ সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে, শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট আশু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে।

এতে প্রস্তাবানুসারে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি বিলুপ্ত হবে; ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে আছেন এবং প্রধান শিক্ষকের জন্য সরকার ১১তম গ্রেড প্রদান করেছে। প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে পদায়নের দাবি উচ্চ আদালতে সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করেছে। সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কমিটির অন্তর্বর্তী সুপারিশ। শিক্ষক পদে প্রবেশ ১২তম গ্রেডে, দুই বছর পর স্থায়ীকরণ, আরও দুই বছর পর ১১তম গ্রেডে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি। প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে সুপারিশ। সরকারের প্রিভিউ আবেদন প্রত্যাহার ও প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড নির্ধারণ এবং সকল প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়মানুসারে উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য হবেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে দায়িত্ব ভাতাসহ পদায়ন করা যেতে পারে।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য পদসমূহ ও শূন্যপদ আশু পূরণ, সমন্বিত গ্রেডেশন, পারস্পরিক বদলি, আঞ্চলিক অফিস স্থাপন এবং প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যালয়-বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের কার্যসূচির জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ও দক্ষ এনজিওদের সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যকর মডেল তৈরি করতে হবে।

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের প্রি-সার্ভিস শিক্ষা ও যোগ্যতা অর্জন এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিরন্তর পেশাগত উন্নয়ন (Continuous Professional Development)-এর সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষাখাতের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ (Education Consultative Council) গঠিত হতে পারে। পরে তা স্থায়ী শিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রশ্নের জবাবে বলেন, আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের বিষয়ে আদালতে নিয়োগ পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আপিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষকরা একমত থাকলে বেতন কাঠামো ঠিক করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, কিছু সুপারিশ আমরা নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে পারবো। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তা মানার নৈতিক দায় আমাদের রয়েছে কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষা সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : মানবজমিন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস চালুসহ ৮টি বিষয়ে শতাধিক সুপারিশ

প্রকাশের সময় : ০৩:৩২:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা না রাখা, প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস চালুসহ ৮টি বিষয়ে শতাধিক সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন কমিটি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশমালা প্রণয়নের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মূল ১৪টি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। কমিশন প্রধান মনজুর আহমেদ সুপারিশগুলো তুলে ধরেন।

এরমধ্যে অন্যতম শিশুদের বাংলা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব দেয়া, পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমে (PEDP5) অন্তত ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এবং দশ বছরের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে এক শিফট চালু করা যেতে পারে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য শ্রেণির ভেতরে ও বাইরে নিরাময়মূলক সহায়তা দিতে হবে। এজন্য স্থানীয়ভাবে প্যারা-টিচার (শিক্ষা-সহায়ক) নিয়োগ দিতে পারে, ধারাবাহিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন দ্বারা প্রত্যেক শিশুর শিখন-অগ্রগতি যাচাই করতে হবে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা এ ধরনের পরীক্ষার পরিবর্তে এন.এস.এ. (National Student Assessment)-এর আদলে (তবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য) মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে প্রতি বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী সবুজ-হলুদ-লালে চিহ্নিত করা হবে, দ্রুত সম্ভব মিড-ডে-মিল প্রবর্তন, খাতা-কলম-ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বর্ধিত হারে অর্থ সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে, শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট আশু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে।

এতে প্রস্তাবানুসারে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি বিলুপ্ত হবে; ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে আছেন এবং প্রধান শিক্ষকের জন্য সরকার ১১তম গ্রেড প্রদান করেছে। প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে পদায়নের দাবি উচ্চ আদালতে সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করেছে। সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কমিটির অন্তর্বর্তী সুপারিশ। শিক্ষক পদে প্রবেশ ১২তম গ্রেডে, দুই বছর পর স্থায়ীকরণ, আরও দুই বছর পর ১১তম গ্রেডে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি। প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে সুপারিশ। সরকারের প্রিভিউ আবেদন প্রত্যাহার ও প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড নির্ধারণ এবং সকল প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়মানুসারে উচ্চতর স্কেল পাওয়ার যোগ্য হবেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে দায়িত্ব ভাতাসহ পদায়ন করা যেতে পারে।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য পদসমূহ ও শূন্যপদ আশু পূরণ, সমন্বিত গ্রেডেশন, পারস্পরিক বদলি, আঞ্চলিক অফিস স্থাপন এবং প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যালয়-বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের কার্যসূচির জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ও দক্ষ এনজিওদের সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যকর মডেল তৈরি করতে হবে।

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের প্রি-সার্ভিস শিক্ষা ও যোগ্যতা অর্জন এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিরন্তর পেশাগত উন্নয়ন (Continuous Professional Development)-এর সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষাখাতের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ (Education Consultative Council) গঠিত হতে পারে। পরে তা স্থায়ী শিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রশ্নের জবাবে বলেন, আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের বিষয়ে আদালতে নিয়োগ পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আপিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষকরা একমত থাকলে বেতন কাঠামো ঠিক করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, কিছু সুপারিশ আমরা নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে পারবো। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তা মানার নৈতিক দায় আমাদের রয়েছে কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষা সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : মানবজমিন।