নিউইয়র্ক ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

৩৩ লাখ বই উদ্বৃত্ত, এবার ছাপা কমছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৮৬ বার পঠিত

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য গত বছর ছাপা হওয়া ৩৩ লাখ পাঁচ হাজার ৬৫৮টি পাঠ্য বই উদ্বৃত্ত পড়ে আছে। সরকারি হিসাবে প্রতিটি বই ছাপতে খরচ হয়েছে গড়ে ৩৩ টাকা। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত বইয়ের মোট দাম প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৪ টাকা।

কালের কণ্ঠ দেশের ৬৪ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে বই উদ্বৃত্ত থাকার তথ্য সংগ্রহ করেছে।

তাতে এই চিত্র উঠে এসেছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও বই বিতরণ করা হয়। তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই বই ছাপা ও বিতরণ করা হয়।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক লুত্ফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর চাহিদার আড়াই শতাংশ বেশি বই ছাপানো হয়। বিভিন্ন কারণে কিছু বই নষ্ট হওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে বাড়তি বই ছাপতে হয়। তবে এক বছরে এতসংখ্যক বই উদ্বৃত্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে সম্ভবত তিন বছরের বই আছে।

চাহিদার চেয়ে বাড়তি বই ছাপানোর বিষয়ে কোনো আইনি কাঠামো নেই জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ছাপানো থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত কিছু বই নষ্ট হতে পারে। এটা ধরে নিয়ে এক থেকে দেড় শতাংশ বই বেশি ছাপানো যেতে পারে।

উদ্বৃত্ত বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন যোগদান করার কারণে আপাতত সঠিক তথ্য তাঁর জানা নেই।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮২২। এসব শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ২৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই ছাপা হয় গত বছর। গত বছরের ডিসেম্বরে এসব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়। জানুয়ারিতে বিতরণ করা হয়। কিন্তু এনসিটিবি বা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা বিতরণ করা বইয়ের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তবে কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে দেখা যায়, ৬৪ জেলায় ৯ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ২০৪টি বই বিতরণ করা হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র বলেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রতিটি বই ছাপতে খরচ হয় ৩২ টাকা। আবার তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপার খরচ ৩৪ টাকা। গড়ে প্রতি বইয়ের ছাপা খরচ ৩৩ টাকা।

বেশি বই ছেপে বিপুল অর্থের অপচয়ের কারণ সম্পর্কে শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে জানতে চাইলে বলা হয়, কভিডজনিত কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর (ড্রপ আউট) হার বেড়েছে। অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে মাদরাসায় চলে গেছে। ফলে বই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ড্রপ আউটের হার ১৪.১৫ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বই পেয়েছে। আরেকটি অংশ আছে, যারা শুরু থেকেই স্কুলে আসেনি। তবে মূলত যারা বছরের শুরুতে বই নেয়নি তাদের বই-ই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।

বিভিন্ন জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, অনলাইনে বইয়ের চাহিদা নিরূপণে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে চাহিদা বেশি দেখিয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বইয়ের চাহিদা বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা আছে। তাই এত বই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই উদ্বৃত্ত রয়েছে ঢাকা বিভাগে। কালের কণ্ঠ’র পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৯১। আর জেলার হিসাবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বই উদ্বৃত্ত রয়েছে, তা হলো তিন লাখ পাঁচ হাজার ৩৫৬টি। তবে ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১২টি জেলায় বই উদ্বৃত্ত নেই বলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, তালিকা তৈরির সময় করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় সঠিক তালিকা করা যায়নি। বহু শিক্ষার্থী অন্য স্কুল ও মাদরাসায় চলে গেছে। সে কারণে বই রয়ে গেছে। তবে এবার সঠিক তালিকা হয়েছে। বইয়ের চাহিদাও কমেছে। চট্টগ্রামে নতুন বছরের জন্য ৪৪ লাখের মতো বই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গত বছর তারা বরাদ্দ চেয়েছিল ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩টি বই।

কিশোরগঞ্জের নিকলীর ২৭ নম্বর আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, প্রাথমিকে এমনিতে আসন ফাঁকা থাকে। নির্ধারিত সময়ের পরও অনেকে এসে ভর্তি হয়। তাই বইয়ের চাহিদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, তাঁর স্কুলে এবার শিক্ষার্থী আছে ২১৬ জন। কিন্তু বই এসেছে ৩৬ সেট বেশি। সংখ্যায় প্রায় ২০০ বই।

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেছেন, অনলাইনে বইয়ের চাহিদা দেওয়ার সময় বাড়তি তালিকা দেওয়া হয়। উপজেলা পর্যায় থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই করে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে বই উদ্বৃত্ত থাকে। তথ্যদাতাদের সঠিক তালিকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের পুরনো বই ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এটি সরকারের বড় রকম আর্থিক ক্ষতি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বই ছাপানো হয়। তবে অনেক কারণেই বই উদ্বৃত্ত থাকে। অনেক বাচ্চা (শিক্ষার্থী) বই নেয় না। আবার অনেকে ঝরে (ড্রপ আউট) পড়ে। এনজিওগুলোও বই নেয়। তারাও কিছু বাড়তি চাহিদা দিতে পারে। ’

উদ্বৃত্ত বইয়ের বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, নতুন যোগদান করায় এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কভিডজনিত ড্রপ আউটের কারণে এত বই উদ্বৃত্ত রয়েছে। শিক্ষায় কভিডের ক্ষতি নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষা থেকে এ ধারণা পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান বলেন, তবে গতবারের চেয়ে সার্বিক ক্ষতি কমিয়ে আনার চিন্তা থেকে নতুন বছরের জন্য বই কম ছাপা হচ্ছে।

 

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

৩৩ লাখ বই উদ্বৃত্ত, এবার ছাপা কমছে

প্রকাশের সময় : ০৫:১৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য গত বছর ছাপা হওয়া ৩৩ লাখ পাঁচ হাজার ৬৫৮টি পাঠ্য বই উদ্বৃত্ত পড়ে আছে। সরকারি হিসাবে প্রতিটি বই ছাপতে খরচ হয়েছে গড়ে ৩৩ টাকা। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত বইয়ের মোট দাম প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৪ টাকা।

কালের কণ্ঠ দেশের ৬৪ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে বই উদ্বৃত্ত থাকার তথ্য সংগ্রহ করেছে।

তাতে এই চিত্র উঠে এসেছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও বই বিতরণ করা হয়। তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই বই ছাপা ও বিতরণ করা হয়।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক লুত্ফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর চাহিদার আড়াই শতাংশ বেশি বই ছাপানো হয়। বিভিন্ন কারণে কিছু বই নষ্ট হওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে বাড়তি বই ছাপতে হয়। তবে এক বছরে এতসংখ্যক বই উদ্বৃত্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে সম্ভবত তিন বছরের বই আছে।

চাহিদার চেয়ে বাড়তি বই ছাপানোর বিষয়ে কোনো আইনি কাঠামো নেই জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ছাপানো থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত কিছু বই নষ্ট হতে পারে। এটা ধরে নিয়ে এক থেকে দেড় শতাংশ বই বেশি ছাপানো যেতে পারে।

উদ্বৃত্ত বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নতুন যোগদান করার কারণে আপাতত সঠিক তথ্য তাঁর জানা নেই।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮২২। এসব শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ২৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই ছাপা হয় গত বছর। গত বছরের ডিসেম্বরে এসব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়। জানুয়ারিতে বিতরণ করা হয়। কিন্তু এনসিটিবি বা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা বিতরণ করা বইয়ের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তবে কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে দেখা যায়, ৬৪ জেলায় ৯ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ২০৪টি বই বিতরণ করা হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র বলেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রতিটি বই ছাপতে খরচ হয় ৩২ টাকা। আবার তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপার খরচ ৩৪ টাকা। গড়ে প্রতি বইয়ের ছাপা খরচ ৩৩ টাকা।

বেশি বই ছেপে বিপুল অর্থের অপচয়ের কারণ সম্পর্কে শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে জানতে চাইলে বলা হয়, কভিডজনিত কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর (ড্রপ আউট) হার বেড়েছে। অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে মাদরাসায় চলে গেছে। ফলে বই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রাথমিক শিক্ষার্থী ড্রপ আউটের হার ১৪.১৫ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বই পেয়েছে। আরেকটি অংশ আছে, যারা শুরু থেকেই স্কুলে আসেনি। তবে মূলত যারা বছরের শুরুতে বই নেয়নি তাদের বই-ই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।

বিভিন্ন জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, অনলাইনে বইয়ের চাহিদা নিরূপণে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে চাহিদা বেশি দেখিয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বইয়ের চাহিদা বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা আছে। তাই এত বই উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই উদ্বৃত্ত রয়েছে ঢাকা বিভাগে। কালের কণ্ঠ’র পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৯১। আর জেলার হিসাবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বই উদ্বৃত্ত রয়েছে, তা হলো তিন লাখ পাঁচ হাজার ৩৫৬টি। তবে ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১২টি জেলায় বই উদ্বৃত্ত নেই বলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, তালিকা তৈরির সময় করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় সঠিক তালিকা করা যায়নি। বহু শিক্ষার্থী অন্য স্কুল ও মাদরাসায় চলে গেছে। সে কারণে বই রয়ে গেছে। তবে এবার সঠিক তালিকা হয়েছে। বইয়ের চাহিদাও কমেছে। চট্টগ্রামে নতুন বছরের জন্য ৪৪ লাখের মতো বই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গত বছর তারা বরাদ্দ চেয়েছিল ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩টি বই।

কিশোরগঞ্জের নিকলীর ২৭ নম্বর আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, প্রাথমিকে এমনিতে আসন ফাঁকা থাকে। নির্ধারিত সময়ের পরও অনেকে এসে ভর্তি হয়। তাই বইয়ের চাহিদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, তাঁর স্কুলে এবার শিক্ষার্থী আছে ২১৬ জন। কিন্তু বই এসেছে ৩৬ সেট বেশি। সংখ্যায় প্রায় ২০০ বই।

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেছেন, অনলাইনে বইয়ের চাহিদা দেওয়ার সময় বাড়তি তালিকা দেওয়া হয়। উপজেলা পর্যায় থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই করে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে বই উদ্বৃত্ত থাকে। তথ্যদাতাদের সঠিক তালিকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের পুরনো বই ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এটি সরকারের বড় রকম আর্থিক ক্ষতি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বই ছাপানো হয়। তবে অনেক কারণেই বই উদ্বৃত্ত থাকে। অনেক বাচ্চা (শিক্ষার্থী) বই নেয় না। আবার অনেকে ঝরে (ড্রপ আউট) পড়ে। এনজিওগুলোও বই নেয়। তারাও কিছু বাড়তি চাহিদা দিতে পারে। ’

উদ্বৃত্ত বইয়ের বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, নতুন যোগদান করায় এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কভিডজনিত ড্রপ আউটের কারণে এত বই উদ্বৃত্ত রয়েছে। শিক্ষায় কভিডের ক্ষতি নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষা থেকে এ ধারণা পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান বলেন, তবে গতবারের চেয়ে সার্বিক ক্ষতি কমিয়ে আনার চিন্তা থেকে নতুন বছরের জন্য বই কম ছাপা হচ্ছে।