নিউইয়র্ক ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
বৈশ্বিক ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ জারি

এমপক্স কী, যেভাবে ছড়ায়

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৯১ বার পঠিত

এক অস্থিতিশীল সময়ে আবার মহামারির শঙ্কা। এমপক্স উদ্বেগের কারণ এখনও দেশের কাছাকাছি দেশগুলোতে সংক্রমণের ওপর নির্ভর করছে। এমপক্স (মাঙ্কিপক্স) নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে শনিবার (১৭ আগস্ট)।

মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬২৬৩ ও ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমেদ।

মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কী
এমপক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এমপক্স জলবসন্ত বা গুটিবসন্ত থেকে আলাদা ধরনের একটি পক্স ভাইরাস। এমপক্সের প্রধান দুইটি ধরন আছে ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। দুইটি ধরনের মধ্যে আবার সাব ডিভিশন এ আর বি রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, কঙ্গোতে দীর্ঘদিন এমপক্স প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল ক্লেড ১ ভাইরাস আর ইউরোপে ছড়িয়েছে ক্লেড ২ ভাইরাস। ক্লেড ২ ভাইরাসে মৃত্যুহার কম। কিন্তু আফ্রিকায় যেটা ছড়িয়েছিল ক্লেড ১, সেটার মৃত্যুহার বেশি। ক্লেড ১ ধরনটি গুরুতর। এর মৃত্যুহার ১০০ জনের মধ্যে ৪ জন।

সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে এমপক্স ভাইরাস সংক্রমণ। আফ্রিকার কঙ্গোতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আশপাশের দেশে ছড়িয়েছে এবং ইউরোপ ও এশিয়া যেমন পাকিস্তানে ছড়িয়েছে। ২০২২ সালের পর মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কীভাবে ছড়ায়
এমপক্স ভাইরাসের উদ্ভব বন্যপ্রাণী থেকে। বর্তমানে এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এজন্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে।
সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
এমপক্স আক্রান্ত বন্যপ্রাণী শিকার করা, চামড়া তোলা, মাংস কাটা এমনকি রান্নার সময়, কম তাপে রান্না করা খাবার খেলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক, তোয়ালে, বিছানার চাদর, যেকোনো ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করলে
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুঁই অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করালেও এমপক্স হতে পারে।
সন্তানসম্ভবা নারী এমপক্স আক্রান্ত হলে অনাগত সন্তানও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এমপক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফোসকার আবরণ যদি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
এমপক্স

লক্ষণ
ব্যক্তির শরীরে খুব ব্যথা হয়, জলবসন্তের চেয়েও বেশি ব্যথা হয় এমপক্সে।
পায়ের সন্ধিস্থল, গলা, বগলের নিচে থাকা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা হয়।
ব্যথায় ফুলে যাওয়ার কারণে জ্বর হয়।
ত্বকে পানি ভর্তি ফুসকুড়ি বা ফোসকা হয় এবং সেখানে চুলকানি ও ব্যথা হয়।
এমপক্সের চিকিৎসা
এমপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। সরাসরি কোনো ওষুধ নেই এই রোগের। ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে পরীক্ষামূলক কিছু ওষুধ আছে। রোগীকে আইসোলেশনে রেখে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে। ফুসকুড়ি বা ফোসকার ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথার ওষুধ দিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। জলবসন্তের রোগীর মতো করেই এমপক্সের রোগীর যত্ন নিতে হবে। রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। যেহেতু এমপক্স ছোঁয়াচে তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ভাইরাস না ছড়ায়।

প্রতিরোধ
এমপক্স আক্রান্ত হলে সবাইকে তা জানাতে হবে। বিনা প্রয়োজনে যেন কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চিকিৎসক বা অন্য কেউ রোগীর সংস্পর্শে আসলে অবশ্যই গ্লাভস ও মাস্ক পরতে হবে এবং যথাসম্ভব সুরক্ষা নিয়ে রোগীর চিকিৎসা ও সেবা দিতে হবে।
আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।
পক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুসকুড়ির আবরণ যেন যেখানে সেখানে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। শরীরে গুটি বা ফুঁসকুড়িগুলো ঢেকে রাখতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া মলমের মাধ্যমে।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বৈশ্বিক ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ জারি

এমপক্স কী, যেভাবে ছড়ায়

প্রকাশের সময় : ০১:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

এক অস্থিতিশীল সময়ে আবার মহামারির শঙ্কা। এমপক্স উদ্বেগের কারণ এখনও দেশের কাছাকাছি দেশগুলোতে সংক্রমণের ওপর নির্ভর করছে। এমপক্স (মাঙ্কিপক্স) নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে শনিবার (১৭ আগস্ট)।

মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬২৬৩ ও ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমেদ।

মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কী
এমপক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এমপক্স জলবসন্ত বা গুটিবসন্ত থেকে আলাদা ধরনের একটি পক্স ভাইরাস। এমপক্সের প্রধান দুইটি ধরন আছে ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। দুইটি ধরনের মধ্যে আবার সাব ডিভিশন এ আর বি রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, কঙ্গোতে দীর্ঘদিন এমপক্স প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল ক্লেড ১ ভাইরাস আর ইউরোপে ছড়িয়েছে ক্লেড ২ ভাইরাস। ক্লেড ২ ভাইরাসে মৃত্যুহার কম। কিন্তু আফ্রিকায় যেটা ছড়িয়েছিল ক্লেড ১, সেটার মৃত্যুহার বেশি। ক্লেড ১ ধরনটি গুরুতর। এর মৃত্যুহার ১০০ জনের মধ্যে ৪ জন।

সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে এমপক্স ভাইরাস সংক্রমণ। আফ্রিকার কঙ্গোতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আশপাশের দেশে ছড়িয়েছে এবং ইউরোপ ও এশিয়া যেমন পাকিস্তানে ছড়িয়েছে। ২০২২ সালের পর মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কীভাবে ছড়ায়
এমপক্স ভাইরাসের উদ্ভব বন্যপ্রাণী থেকে। বর্তমানে এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এজন্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে।
সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
এমপক্স আক্রান্ত বন্যপ্রাণী শিকার করা, চামড়া তোলা, মাংস কাটা এমনকি রান্নার সময়, কম তাপে রান্না করা খাবার খেলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক, তোয়ালে, বিছানার চাদর, যেকোনো ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করলে
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুঁই অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করালেও এমপক্স হতে পারে।
সন্তানসম্ভবা নারী এমপক্স আক্রান্ত হলে অনাগত সন্তানও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এমপক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফোসকার আবরণ যদি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
এমপক্স

লক্ষণ
ব্যক্তির শরীরে খুব ব্যথা হয়, জলবসন্তের চেয়েও বেশি ব্যথা হয় এমপক্সে।
পায়ের সন্ধিস্থল, গলা, বগলের নিচে থাকা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা হয়।
ব্যথায় ফুলে যাওয়ার কারণে জ্বর হয়।
ত্বকে পানি ভর্তি ফুসকুড়ি বা ফোসকা হয় এবং সেখানে চুলকানি ও ব্যথা হয়।
এমপক্সের চিকিৎসা
এমপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। সরাসরি কোনো ওষুধ নেই এই রোগের। ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে পরীক্ষামূলক কিছু ওষুধ আছে। রোগীকে আইসোলেশনে রেখে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে। ফুসকুড়ি বা ফোসকার ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথার ওষুধ দিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। জলবসন্তের রোগীর মতো করেই এমপক্সের রোগীর যত্ন নিতে হবে। রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। যেহেতু এমপক্স ছোঁয়াচে তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ভাইরাস না ছড়ায়।

প্রতিরোধ
এমপক্স আক্রান্ত হলে সবাইকে তা জানাতে হবে। বিনা প্রয়োজনে যেন কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চিকিৎসক বা অন্য কেউ রোগীর সংস্পর্শে আসলে অবশ্যই গ্লাভস ও মাস্ক পরতে হবে এবং যথাসম্ভব সুরক্ষা নিয়ে রোগীর চিকিৎসা ও সেবা দিতে হবে।
আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।
পক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর ফুসকুড়ির আবরণ যেন যেখানে সেখানে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকতে হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। শরীরে গুটি বা ফুঁসকুড়িগুলো ঢেকে রাখতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া মলমের মাধ্যমে।