নিউইয়র্ক ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শতকোটি ডলারের মানুষও ভালোবাসার কাঙাল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৭ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  বিশ্বের সেরা ধনী তারা। নামের আগে যোগ হয়েছে বিলিয়নিয়ার। অর্থাৎ কয়েক শত কোটি ডলারের মালিক। তাদের দাপটে বাঘ-মহিষে একঘাটে পানি পান করে। তাদের চারপাশে এত্ত এত্ত মানুষ। কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ নেই। তারা মন থেকে ভালোবাসবেন, তারা যেমন চান, তেমন কেউ নেই। ফলে তাদেরকে বলা হয় ভালোবাসার ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবান বা দুর্ভাগ্যবতী। এর মধ্যে আছেন ইলন মাস্ক, ম্যাকেঞ্জি স্কট থেকে কিম কারদাসিয়ান, টেইলর পেরি।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন একটি প্রতিবেদন লিখেছে। তাতে বলা হয়েছে, বিটলস আমাদের শিখিয়ে গেছে- অর্থ দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না। এই একটি কথা দিয়ে সদ্য পেছনে ফেলে আসা ভ্যালেন্টাইনস দিবসেও এসব ধনীরা নিজেদেরকে সিঙ্গেল মনে করেছেন। কেউ কেউ বিচ্ছেদের অনলে জ্বলেছেন। অন্যরা বছরের পর বছর ধরে বহুগামিতায় মত্ত। ‘আমেরিকাস মোস্ট ইলিজিবল বিলিয়নিয়ারস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তাদের সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন ১৮৭২০ কোটি ডলারের মালিক ইলন মাস্ক। তিনি প্রথম তেসলার মডেল এস, থ্রি, এক্স, ওয়াই মডেলের চারটি গাড়ি বাজারে আনেন। কিন্তু তাকে একটি বিষয় মনে রাখতে হয়। তা হলো তিনি ১০টি সন্তানের পিতা। তিনবার বিচ্ছেদ হয়েছে তার বিবাহিত জীবনের। একই নারীর সঙ্গে দু’বার বিচ্ছেদ হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় এই শীর্ষ ধনী তারপরও এখনো ভালোবাসা খুঁজছেন। ২০১৭ সালে তিনি রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, যদি আমি কারও সঙ্গে প্রেমে না থাকি, যদি কারও সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে সঙ্গী হিসেবে না থাকি, তাহলে সুখী হতে পারি না। কাউকে পাশে না পাওয়া পর্যন্ত কখনোই আমি সুখী হবো না। একা একা ঘুমাতে যাওয়া, বার বার আমাকে খুন করে। কিন্তু ৫১ বছর বয়সী ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রেম করতে গেলে অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হবে। একটি বিষয় হলো যখন আপনি টুইটার প্রধানের সঙ্গে প্রাইভেট জেটে আরোহণ করবেন, তখন টুইট করতে পারবেন না যে, আপনারা কোথায় অবতরণ করবেন। আরেকটি বিষয় হলো- মঙ্গলগ্রহে বসবাস করা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী।

আরোও পড়ুন। ভালোবাসার মাসে প্রেমিকের কাণ্ড!

আরেকজন বিলিয়নিয়ার হলেন জ্যাক ডরসি। তার নিট অর্থের পরিমাণ ৪৯০ কোটি ডলার। বয়স ৪৬ বছর। তিনি টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। অনেক বছর ধরে অনেক নারীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তবে নিজের ভালোবাসার জীবন সম্পর্কে একেবারেই প্রাইভেট তিনি। যখন তিনি প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসা আর পরিচালনা করছেন না, তখন জ্যাক ডরসি প্রতিষ্ঠা করেছেন পেমেন্ট বিষয়ক কোম্পানি ‘ব্লক’। একই সঙ্গে ম্যাসাজ থেরাপিস্ট হিসেবে লাইসেন্স পেয়েছেন। ফ্যাশন ডিজাইন সম্পর্কে ক্যারিয়ার গড়ারও পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু তার ডেটিং নিম্নমুখী হয়েছে। রোমান্টিক কোনো ডেটিংয়ে গেলেও তিনি দিনে একবার মাত্র সন্ধ্যায় খাবার খান।

বিলিয়নিয়ার লরা পাওয়েল জবস। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১২৫০ কোটি ডলার। ১৯৯১ সালে তিনি বিয়ে করেছিলেন মাইক্রোসফটের স্টিভ জবসকে। ২০১১ সালে মারা যান স্টিভ জবস। তারপর থেকে নিজের কাজে মন দেন লরা। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিনিয়োগ বিষয়ক কোম্পানি ইমরাসন কালেক্টিভ। এর চেয়ারপারসনও তিনি। স্টিভ জবসের সঙ্গে তার আছে তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। তারপরও ২০১১ সালে স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর বেশ কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে ডেটিং দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আছেন বস্টনের সাবেক মেয়র আদ্রিয়ান ফেনটি, ইলেভেন ম্যাডিসন পার্কের শেফ ডানিয়েল হাম। এদের সঙ্গে ডেটিং মারলেও তিনি এখন পর্যন্ত সিঙ্গেল। খেলাধুলার ভীষণ ভক্ত লরা জবস। মনুমেন্টাল স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের আছে তার শতকরা ২০ ভাগ শেয়ার। এ ছাড়া তিনি ১২ কোটি ডলার মূল্যের একটি সুপার ইয়াট বা প্রমোদতরী ‘ভেনাস’-এর মালিক। এর ডিজাইনার ফিলিপ স্টার্ক। আরেকজন বিলিয়নিয়ার ব্রায়ান চেস্কি। ৪১ বছর বয়সী এই ধনকুবেরের নিট অর্থের পরিমাণ ৯১০ কোটি ডলার। তিনি এয়ারবিএনবি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সাবেক বডিবিল্ডার প্রতিযোগী। তিনি নিজের প্রিয় কুকুর সোফি সুপারনোভাসহ নিজের ছবি পোস্ট করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি আর্টিস্ট এলিসা প্যাটেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এখনো তিনি শয্যা শেয়ার করতে রাজি নন, কোম্পানির স্বার্থে। মজা করতে গত বছর তিনি সান ফ্রান্সিসকোকে এয়ারবিএনবিতে একটি রুম অফার করেন। আহ্বান জানান, আমার সঙ্গে অবস্থান করো। আমার সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।

আরোও পড়ুন। বসন্ত দিনে ভালোবাসার আভা

মেলিন্ডা ফ্রেঞ্জ গেটসের নিট সম্পদের পরিমাণ ৬৭০ কোটি ডলার। ১৯৯৪ সালে তিনি বিয়ে করেন বিল গেটসকে। মাইক্রোসফটে মাল্টিমিডিয়া প্রোডাক্ট ডেভেলপার হিসেবে সফল এক ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন। তাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়ার পর কোম্পানির কাজ ছেড়ে দেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে কাজে মন দেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ দাতব্য সংগঠন। ২৭ বছর বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ২০২১ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলেও এই যুগল অব্যাহতভাবে যৌথভাবে জনহিতৈষী কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে ওরাকলের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক হার্ডের বিধবা স্ত্রী পলা হার্ডের সঙ্গে ২০২২ সালের শেষের দিকে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বিল গেটসের। অন্যদিকে মেলিন্ডাও চুপচাপ বসে নেই। তিনি ফক্স নিউজের সাবেক প্রতিনিধি জন ডু প্রে’র সঙ্গে ডেটিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনো ‘কবুল’ বলেননি আবার। সম্ভবত তিনি ভালোবাসাটাকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে দেখছেন। তিনি লিখেছেন- ‘দ্য মোমেন্ট অব লিফট’। এটা নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে লেখা তার বেস্টসেলার। এতে তিনি বলেছেন, আমার কাছে একটি প্রশ্নের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু মনে হয় না। তা হলো- আপনার প্রাইমারি রিলেশনশিপটা কি ভালোবাসার, শ্রদ্ধার এবং পরস্পরের প্রতি একই রকম ছিল, টিমওয়ার্ক ছিল, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির ওপর ছিল? আমি মনে করি আমাদের সবারই এই প্রশ্নটি একবার নিজের কাছে করা উচিত।

কেন গ্রিফিনের নিট সম্পদের পরিমাণ ৩২৮০ কোটি ডলার। সিটাডেল এডভাইজরস পরিচালনা করার মাধ্যমে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ১৯৯০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে, তার শখ হলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রফি সংগ্রহ করা। ৫৪ বছর বয়সী গ্রিফিন দু’বার বিচ্ছেদের শিকার হয়েছেন। নিউ ইয়র্কে আছে তার বেশ কয়েকটি এপার্টমেন্ট। এর মধ্যে ম্যানহাটানে আছে ২৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পেন্টহাউজ। মিয়ামিতে আছে বেশ কিছু অভিজাত সম্পদ। আছে অ্যাসপেন, হাওয়াই, লন্ডন এবং হ্যাম্পটনসে। এর বাইরে পাম বিচে আছে তার সমুদ্রমুখী ৪৫ কোটি ডলারের কম্পাউন্ড।

ম্যাকেঞ্জি স্কটের নিট সম্পদের পরিমাণ ২৬৮০ কোটি ডলার। তার বয়স ৫২ বছর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনে আছে তার শতকরা ৪ ভাগ শেয়ার। তিনি একজন ঔপন্যাসিক। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সাবেক স্বামী জেফ বেজোস। ২৫ বছরের সংসার ছিল তাদের। কিন্তু ২০১৯ সালের বহু কোটি ডলারের বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। সিয়াটলে তার সন্তানদের স্কুলের সাবেক বিজ্ঞান শিক্ষক ড্যান জিওয়েটকে বিয়ে করেন ২০২১ সালে। তখন দৃশ্যত ভালোবাসার কাছে তিনি অর্থ সঁপে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- এই যুগলের বিচ্ছেদ ঘটে জানুয়ারিতে। বর্তমানে ম্যাকেঞ্জি স্কট তার জীবন উৎসর্গ করেছেন জনহিতৈষীমূলক কাজে। দুই বছরের মধ্যে তিনি প্রায় ১৬০০ দাতব্য সংস্থায় দান করেছেন কমপক্ষে ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন প্লানড প্যান্টেহুডে। ৫৭ কোটি দিয়েছেন ইউনাইটেড ওয়ে’কে।

আরোও পড়ুন। যাদের আত্মত্যাগে এলো ভালোবাসা দিবস

৩১০ কোটি ডলারের মালিক নিকোলাস বারগুয়েন। ২০০০-এর দশকের শুরুতে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘হোমলেস বিলিয়নিয়ার’ হিসেবে। ওই সময় তিনি বিলাসবহুল হোটেলে জীবন কাটানোর জন্য নিউ ইয়র্ক এবং মিয়ামিতে থাকা এপার্টমেন্টগুলো বিক্রি করে দেন। গর্ভ ভাড়া নেয়ার মাধ্যমে ২০১৬ সালে তিনি দুটি সন্তানের পিতা হয়েছেন। এখনো বিয়ে করেননি। বয়স ৬১ পেরিয়েছে। তিনি একজন সম্পদশালী আর্ট কালেক্টরের সন্তান। পরিচালনা করছেন বারগ্রুয়েন ইনস্টিটিউট। এর কাজ হলো ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ নিয়ে কাজ করা। ২০২১ সালে তিনি ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারে বেভারলি হিলসে বিলাসবহুল হার্সট এস্টেট কেনেন। এর কয়েক মাস পরে এরই পাশে এক কোটি ২৩ লাখ ডলার দিয়ে কেনেন ৬৩০০ বর্গফুটের একটি প্রপার্টি।

আরেক বিলিয়নার হলেন সেলিব্রেটি কিম কারদাশিয়ান। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার। তিনি খুল্লামখুল্লা জীবন কাটান। কোনো কিছুই গোপন রাখেন না। প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ট্যাবলয়েড পত্রিকায় তিনি নিজের জীবনকে ফুটিয়ে তুলতে ভালোবাসেন। অর্থ আসবে এমন ইভেন্টে যোগ দেন। তার অতীতের প্রেম ভালো কাটেনি। তিনবার বিচ্ছেদ ঘটেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি বিচ্ছেদ ঘটেছে পপ গায়ক কেনি ওয়েস্টের সঙ্গে। হাইপ্রোফাইল বিচ্ছেদ ঘটে সাবেক এসএনএল তারকা পিটি ডেভিডসনের সঙ্গে। ৪২ বছর বয়সী কিম কারদাশিয়ান এখনো ভালোবাসা খুঁজছেন। তিনি এখন যা চান, তা হলো মস্তিষ্ক সমৃদ্ধ একজন পুরুষ।

এই তালিকায় আরও আছেন ১০০ কোটি ডলারের মালিক টেইলর পেরি। ২০২০ সালে তিনি ফোরবস ম্যাগাজিনের ৪০০ জনের তালিকায় উঠে আসেন। একই বছরে ৫৩ বছর বয়সী এই পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক এবং নাট্যকার তার দীর্ঘদিনের গার্লফ্রেন্ড গেলিলা বেকেলে থেকে আলাদা চলে যান। তার সঙ্গে একসঙ্গে কাটিয়েছেন ১১টি বছর। আছে একটি সন্তান। তারপর থেকে এখন অবধি আছেন সিঙ্গেল। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মারকেল যখন যুক্তরাষ্ট্রে তখন তাদেরকে তিনি তার লস অ্যানজেলেসের বাড়িতে থাকতে দেন। ২০২৩ সালে তিনি যদি ভালোবাসা ফিরে পান তাহলে তাই দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব। সূত্র : মানবজমিন

সুমি/হককথা

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

শতকোটি ডলারের মানুষও ভালোবাসার কাঙাল

প্রকাশের সময় : ০১:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  বিশ্বের সেরা ধনী তারা। নামের আগে যোগ হয়েছে বিলিয়নিয়ার। অর্থাৎ কয়েক শত কোটি ডলারের মালিক। তাদের দাপটে বাঘ-মহিষে একঘাটে পানি পান করে। তাদের চারপাশে এত্ত এত্ত মানুষ। কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ নেই। তারা মন থেকে ভালোবাসবেন, তারা যেমন চান, তেমন কেউ নেই। ফলে তাদেরকে বলা হয় ভালোবাসার ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবান বা দুর্ভাগ্যবতী। এর মধ্যে আছেন ইলন মাস্ক, ম্যাকেঞ্জি স্কট থেকে কিম কারদাসিয়ান, টেইলর পেরি।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন একটি প্রতিবেদন লিখেছে। তাতে বলা হয়েছে, বিটলস আমাদের শিখিয়ে গেছে- অর্থ দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না। এই একটি কথা দিয়ে সদ্য পেছনে ফেলে আসা ভ্যালেন্টাইনস দিবসেও এসব ধনীরা নিজেদেরকে সিঙ্গেল মনে করেছেন। কেউ কেউ বিচ্ছেদের অনলে জ্বলেছেন। অন্যরা বছরের পর বছর ধরে বহুগামিতায় মত্ত। ‘আমেরিকাস মোস্ট ইলিজিবল বিলিয়নিয়ারস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তাদের সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন ১৮৭২০ কোটি ডলারের মালিক ইলন মাস্ক। তিনি প্রথম তেসলার মডেল এস, থ্রি, এক্স, ওয়াই মডেলের চারটি গাড়ি বাজারে আনেন। কিন্তু তাকে একটি বিষয় মনে রাখতে হয়। তা হলো তিনি ১০টি সন্তানের পিতা। তিনবার বিচ্ছেদ হয়েছে তার বিবাহিত জীবনের। একই নারীর সঙ্গে দু’বার বিচ্ছেদ হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় এই শীর্ষ ধনী তারপরও এখনো ভালোবাসা খুঁজছেন। ২০১৭ সালে তিনি রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, যদি আমি কারও সঙ্গে প্রেমে না থাকি, যদি কারও সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে সঙ্গী হিসেবে না থাকি, তাহলে সুখী হতে পারি না। কাউকে পাশে না পাওয়া পর্যন্ত কখনোই আমি সুখী হবো না। একা একা ঘুমাতে যাওয়া, বার বার আমাকে খুন করে। কিন্তু ৫১ বছর বয়সী ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রেম করতে গেলে অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হবে। একটি বিষয় হলো যখন আপনি টুইটার প্রধানের সঙ্গে প্রাইভেট জেটে আরোহণ করবেন, তখন টুইট করতে পারবেন না যে, আপনারা কোথায় অবতরণ করবেন। আরেকটি বিষয় হলো- মঙ্গলগ্রহে বসবাস করা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী।

আরোও পড়ুন। ভালোবাসার মাসে প্রেমিকের কাণ্ড!

আরেকজন বিলিয়নিয়ার হলেন জ্যাক ডরসি। তার নিট অর্থের পরিমাণ ৪৯০ কোটি ডলার। বয়স ৪৬ বছর। তিনি টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। অনেক বছর ধরে অনেক নারীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তবে নিজের ভালোবাসার জীবন সম্পর্কে একেবারেই প্রাইভেট তিনি। যখন তিনি প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসা আর পরিচালনা করছেন না, তখন জ্যাক ডরসি প্রতিষ্ঠা করেছেন পেমেন্ট বিষয়ক কোম্পানি ‘ব্লক’। একই সঙ্গে ম্যাসাজ থেরাপিস্ট হিসেবে লাইসেন্স পেয়েছেন। ফ্যাশন ডিজাইন সম্পর্কে ক্যারিয়ার গড়ারও পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু তার ডেটিং নিম্নমুখী হয়েছে। রোমান্টিক কোনো ডেটিংয়ে গেলেও তিনি দিনে একবার মাত্র সন্ধ্যায় খাবার খান।

বিলিয়নিয়ার লরা পাওয়েল জবস। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১২৫০ কোটি ডলার। ১৯৯১ সালে তিনি বিয়ে করেছিলেন মাইক্রোসফটের স্টিভ জবসকে। ২০১১ সালে মারা যান স্টিভ জবস। তারপর থেকে নিজের কাজে মন দেন লরা। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিনিয়োগ বিষয়ক কোম্পানি ইমরাসন কালেক্টিভ। এর চেয়ারপারসনও তিনি। স্টিভ জবসের সঙ্গে তার আছে তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। তারপরও ২০১১ সালে স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর বেশ কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে ডেটিং দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আছেন বস্টনের সাবেক মেয়র আদ্রিয়ান ফেনটি, ইলেভেন ম্যাডিসন পার্কের শেফ ডানিয়েল হাম। এদের সঙ্গে ডেটিং মারলেও তিনি এখন পর্যন্ত সিঙ্গেল। খেলাধুলার ভীষণ ভক্ত লরা জবস। মনুমেন্টাল স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের আছে তার শতকরা ২০ ভাগ শেয়ার। এ ছাড়া তিনি ১২ কোটি ডলার মূল্যের একটি সুপার ইয়াট বা প্রমোদতরী ‘ভেনাস’-এর মালিক। এর ডিজাইনার ফিলিপ স্টার্ক। আরেকজন বিলিয়নিয়ার ব্রায়ান চেস্কি। ৪১ বছর বয়সী এই ধনকুবেরের নিট অর্থের পরিমাণ ৯১০ কোটি ডলার। তিনি এয়ারবিএনবি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সাবেক বডিবিল্ডার প্রতিযোগী। তিনি নিজের প্রিয় কুকুর সোফি সুপারনোভাসহ নিজের ছবি পোস্ট করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি আর্টিস্ট এলিসা প্যাটেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এখনো তিনি শয্যা শেয়ার করতে রাজি নন, কোম্পানির স্বার্থে। মজা করতে গত বছর তিনি সান ফ্রান্সিসকোকে এয়ারবিএনবিতে একটি রুম অফার করেন। আহ্বান জানান, আমার সঙ্গে অবস্থান করো। আমার সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।

আরোও পড়ুন। বসন্ত দিনে ভালোবাসার আভা

মেলিন্ডা ফ্রেঞ্জ গেটসের নিট সম্পদের পরিমাণ ৬৭০ কোটি ডলার। ১৯৯৪ সালে তিনি বিয়ে করেন বিল গেটসকে। মাইক্রোসফটে মাল্টিমিডিয়া প্রোডাক্ট ডেভেলপার হিসেবে সফল এক ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন। তাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়ার পর কোম্পানির কাজ ছেড়ে দেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে কাজে মন দেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ দাতব্য সংগঠন। ২৭ বছর বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ২০২১ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলেও এই যুগল অব্যাহতভাবে যৌথভাবে জনহিতৈষী কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে ওরাকলের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক হার্ডের বিধবা স্ত্রী পলা হার্ডের সঙ্গে ২০২২ সালের শেষের দিকে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বিল গেটসের। অন্যদিকে মেলিন্ডাও চুপচাপ বসে নেই। তিনি ফক্স নিউজের সাবেক প্রতিনিধি জন ডু প্রে’র সঙ্গে ডেটিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনো ‘কবুল’ বলেননি আবার। সম্ভবত তিনি ভালোবাসাটাকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে দেখছেন। তিনি লিখেছেন- ‘দ্য মোমেন্ট অব লিফট’। এটা নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে লেখা তার বেস্টসেলার। এতে তিনি বলেছেন, আমার কাছে একটি প্রশ্নের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু মনে হয় না। তা হলো- আপনার প্রাইমারি রিলেশনশিপটা কি ভালোবাসার, শ্রদ্ধার এবং পরস্পরের প্রতি একই রকম ছিল, টিমওয়ার্ক ছিল, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির ওপর ছিল? আমি মনে করি আমাদের সবারই এই প্রশ্নটি একবার নিজের কাছে করা উচিত।

কেন গ্রিফিনের নিট সম্পদের পরিমাণ ৩২৮০ কোটি ডলার। সিটাডেল এডভাইজরস পরিচালনা করার মাধ্যমে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ১৯৯০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে, তার শখ হলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রফি সংগ্রহ করা। ৫৪ বছর বয়সী গ্রিফিন দু’বার বিচ্ছেদের শিকার হয়েছেন। নিউ ইয়র্কে আছে তার বেশ কয়েকটি এপার্টমেন্ট। এর মধ্যে ম্যানহাটানে আছে ২৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পেন্টহাউজ। মিয়ামিতে আছে বেশ কিছু অভিজাত সম্পদ। আছে অ্যাসপেন, হাওয়াই, লন্ডন এবং হ্যাম্পটনসে। এর বাইরে পাম বিচে আছে তার সমুদ্রমুখী ৪৫ কোটি ডলারের কম্পাউন্ড।

ম্যাকেঞ্জি স্কটের নিট সম্পদের পরিমাণ ২৬৮০ কোটি ডলার। তার বয়স ৫২ বছর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনে আছে তার শতকরা ৪ ভাগ শেয়ার। তিনি একজন ঔপন্যাসিক। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সাবেক স্বামী জেফ বেজোস। ২৫ বছরের সংসার ছিল তাদের। কিন্তু ২০১৯ সালের বহু কোটি ডলারের বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। সিয়াটলে তার সন্তানদের স্কুলের সাবেক বিজ্ঞান শিক্ষক ড্যান জিওয়েটকে বিয়ে করেন ২০২১ সালে। তখন দৃশ্যত ভালোবাসার কাছে তিনি অর্থ সঁপে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- এই যুগলের বিচ্ছেদ ঘটে জানুয়ারিতে। বর্তমানে ম্যাকেঞ্জি স্কট তার জীবন উৎসর্গ করেছেন জনহিতৈষীমূলক কাজে। দুই বছরের মধ্যে তিনি প্রায় ১৬০০ দাতব্য সংস্থায় দান করেছেন কমপক্ষে ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন প্লানড প্যান্টেহুডে। ৫৭ কোটি দিয়েছেন ইউনাইটেড ওয়ে’কে।

আরোও পড়ুন। যাদের আত্মত্যাগে এলো ভালোবাসা দিবস

৩১০ কোটি ডলারের মালিক নিকোলাস বারগুয়েন। ২০০০-এর দশকের শুরুতে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘হোমলেস বিলিয়নিয়ার’ হিসেবে। ওই সময় তিনি বিলাসবহুল হোটেলে জীবন কাটানোর জন্য নিউ ইয়র্ক এবং মিয়ামিতে থাকা এপার্টমেন্টগুলো বিক্রি করে দেন। গর্ভ ভাড়া নেয়ার মাধ্যমে ২০১৬ সালে তিনি দুটি সন্তানের পিতা হয়েছেন। এখনো বিয়ে করেননি। বয়স ৬১ পেরিয়েছে। তিনি একজন সম্পদশালী আর্ট কালেক্টরের সন্তান। পরিচালনা করছেন বারগ্রুয়েন ইনস্টিটিউট। এর কাজ হলো ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ নিয়ে কাজ করা। ২০২১ সালে তিনি ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারে বেভারলি হিলসে বিলাসবহুল হার্সট এস্টেট কেনেন। এর কয়েক মাস পরে এরই পাশে এক কোটি ২৩ লাখ ডলার দিয়ে কেনেন ৬৩০০ বর্গফুটের একটি প্রপার্টি।

আরেক বিলিয়নার হলেন সেলিব্রেটি কিম কারদাশিয়ান। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার। তিনি খুল্লামখুল্লা জীবন কাটান। কোনো কিছুই গোপন রাখেন না। প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ট্যাবলয়েড পত্রিকায় তিনি নিজের জীবনকে ফুটিয়ে তুলতে ভালোবাসেন। অর্থ আসবে এমন ইভেন্টে যোগ দেন। তার অতীতের প্রেম ভালো কাটেনি। তিনবার বিচ্ছেদ ঘটেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি বিচ্ছেদ ঘটেছে পপ গায়ক কেনি ওয়েস্টের সঙ্গে। হাইপ্রোফাইল বিচ্ছেদ ঘটে সাবেক এসএনএল তারকা পিটি ডেভিডসনের সঙ্গে। ৪২ বছর বয়সী কিম কারদাশিয়ান এখনো ভালোবাসা খুঁজছেন। তিনি এখন যা চান, তা হলো মস্তিষ্ক সমৃদ্ধ একজন পুরুষ।

এই তালিকায় আরও আছেন ১০০ কোটি ডলারের মালিক টেইলর পেরি। ২০২০ সালে তিনি ফোরবস ম্যাগাজিনের ৪০০ জনের তালিকায় উঠে আসেন। একই বছরে ৫৩ বছর বয়সী এই পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক এবং নাট্যকার তার দীর্ঘদিনের গার্লফ্রেন্ড গেলিলা বেকেলে থেকে আলাদা চলে যান। তার সঙ্গে একসঙ্গে কাটিয়েছেন ১১টি বছর। আছে একটি সন্তান। তারপর থেকে এখন অবধি আছেন সিঙ্গেল। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মারকেল যখন যুক্তরাষ্ট্রে তখন তাদেরকে তিনি তার লস অ্যানজেলেসের বাড়িতে থাকতে দেন। ২০২৩ সালে তিনি যদি ভালোবাসা ফিরে পান তাহলে তাই দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব। সূত্র : মানবজমিন

সুমি/হককথা