মেহেরপুরে মহিবুলের রসগোল্লা রসে টইটুম্বুর
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০১৭
- / ১৬৫১ বার পঠিত
মেহেরপুর: রসগোল্লার ওজন দুই কেজি। রসে টইটম্বুর এই গোল্লা দেখে জিভে পানি চলে আসবে যেকারো। এই গোল্লার স্বাদ পাওয়া যায় মেহেরপুরের শ্যামপুর গ্রামের বাজারে। এই গ্রামের বাজারে ‘মহিবুল মিষ্টান্ন ভান্ডার’। সেখানেই তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে আধা কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের এক একটি রসগোল্লা। গত চার বছর ধরে এমন রসগোল্লা বানাচ্ছেন মহিবুল ইসলাম। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন তাঁর দোকানে আসে। নতুন আত্মীয়রা তাঁর দোকান থেকে মিষ্টি কিনে স্বজনের বাড়ি যায়। এ দেখে এই বাজারে বড় বড় মিষ্টি তৈরির দোকান দিয়েছিল কয়েকজন। কিন্তু, বড় মিষ্টি ভালোভাবে বানাতে না পেরে দোকান বন্ধও করে দিয়েছে। জেলা শহরের অনেক নামিদামি মিষ্টি দোকানের কারিগররা তাঁর কাছে থেকে বড় গোল্লা তৈরির কৌশল শিখতে ছুটে যায়।
সরেজমিনে শ্যামপুরে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আধা কেজি ও এক কেজি ওজনের বেশ কিছু রসগোল্লা দুটি পাত্রে রয়েছে। দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা দুপুরের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। বড় আকারের মিষ্টির চাহিদা বেশি থাকায় সেগুলো তৈরির পরপরই বিক্রি হয়ে যায়। দোকানে ঝোলানো মূল্য তালিকা দেখে জানা যায়, আধা কেজি ৯০ টাকা, এক কেজি ২০০ টাকা এবং দুই কেজি ওজনের একটি রসগোল্লার দাম ৫০০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন দামে চমচম, রসমালাই, কালোজাম পাওয়া যায়।
দোকানে থাকতেই আযম সরকার নামের এক ক্রেতা হাজির রসগোল্লা খাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘এত বড় রসগোল্লা আর কোথাও পাওয়া যায় কি না আমি শুনিনি। মহিবুলের গোল্লার স্বাদ একবারে আলাদা। এ কারণে মাঝেমধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসে আগে নিজে খাই। ফিরে যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য নিয়ে যাই।’ মহিবুলের মতো আর কেউ এত ভালো রসগোল্লা বানাতে পারে না বলে দাবি করলেন ওই বাজারের চা বিক্রেতা মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গোল্লা বড় হলে তার ভেতর দানা বা গুটি বেঁধে যায়। কিন্তু, মহিবুল দুই কেজি ওজনের গোল্লা বানালেও এর ভেতর কোনো গুটি বা দানা বাঁধে না। সৃষ্টিকর্তা তাঁর হাতে যেন জাদু দিয়েছেন। ’
মহিবুলের দোকান দেখাশোনা করেন তাঁর বাবা আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, চার বছর আগে চাষাবাদ করতাম। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ ছিল না। এখন চাষাবাদের পাশাপাশি ছেলের দোকানে বসেন। মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলার লোকজন এখানে মিষ্টি খেতে আসে। আবার অনেকে কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি রসগোল্লা বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ‘বংশের কেউ কখনো মিষ্টির কাজ করেননি। কিন্তু ছেলে নিজের চেষ্টায় বড় বড় রসগোল্লা বানানো শিখেছে। এটা বানাতে গিয়ে সে কত চিনি আর দুধের ছানা নষ্ট করেছে, এর হিসাব নেই। কিন্তু এখন তার কাছ থেকে শহরের অনেক মিষ্টি ব্যবসায়ী বড় গোল্লা বানানো শিখতে আসে। বাবা হিসেবে তাকে নিয়ে এখন আমার গর্ব হয়। ’
মহিবুল ইসলাম জানান, চার বছর আগে গ্রামের হাটে সবজি বিক্রি করতেন। প্রতিদিন সবজি বিক্রি শেষে রাতে গাংনীর একটি মিষ্টি কারখানায় যেতেন। কিভাবে মিষ্টি তৈরি করে তা মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। দেখে দেখে মনে রাখতেন কোনটার পর কোনটা করতে হয়। ওখানে দেখতেন আর বাড়িতে এসে দুধের ছানা কিনে নিজে তৈরি করার চেষ্টা করতেন। এভাবে শিখতে গিয়ে প্রায় এক লাখ টাকা নষ্ট করেছেন। নষ্ট করতে করতে একটা সময় বড় গোল্লা তৈরি কৌশল রপ্ত করেন।