নিউইয়র্ক ০৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হোয়াইট হাউসে করোনার হানা, গণ ভবন নিরাপদ তো?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০
  • / ১২৭ বার পঠিত

সালাহউদ্দিন আহমেদ: প্রাণঘাতক করোনাভাইরাস এখন সমগ্র মানবজাতির সবচেয়ে আতঙ্কের নাম। অচেনা, অজানা, অদেখা করোনা ভাইরাস মাত্র ৬/৭ মাসেই সমগ্র বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ প্রাণ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর খবর- শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজারে। অপরদিকে নিউইয়র্কেও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখ ৫৯ হাজার ১৭ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৬ জনের। বিশ্বে একক দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র। রোববার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭০ হাজার ১৬৫ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৬ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটিতে রোববার সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ২১৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৫৮ জনের। এরপরই রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালী। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৬৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৪০ জনের। মৃত্যুর দিক থেকে ইতালির পরই চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে লাতিন আমেরিকা দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪০ জন, যা আক্রান্তের বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৮৩৪ জনের।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া দেশের মধ্যে রয়েছে ইউরোপের আরও দুই দেশ- ফ্রান্স ও স্পেনও। ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৭৭৪ জন। আর স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২২৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ১২৫ জনের। গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৮৮টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৬৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে আরও ২৮ জনের। সবমিলিয়ে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ৪৪ হাজার ৬০৮ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৬১০ জনের। আর সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৯ হাজার ৩৭৫ জন।
উল্লেখিত তথ্যই বলে দিচ্ছে করোনার করাল আক্রমণে মানবজাতি তথা বিশ্বের কি করুণ অবস্থা। সবচেয়ে অশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বেও সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-এর অফিস কাম বাস হোয়াইট হাউসে-ও করোনা ছোবল মেরেছে। অথচ হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা নিয়ে কতই না হাস্যকর কথা বলেছেন। যাই হোক ‘সাদা ভবনে’ বড় ধরণের অঘটন না ঘটলেও সেখানকার কেউ যে ভালো আছেন, বা চরমভাবে চিন্তিত নন তা বলা যাবে না। অঘটন না ঘটার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। চলতি বছর আমেরিকার নির্বাচনের বছর। করোনার করাল গ্রাস উপক্ষো করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সকল দৃষ্টি এখন আগামী নভেম্বরের নির্বাচন। কিন্তু হোয়াইট হাউস-কে নিরাপদ আর আমেরিকানদের অনিরাপদ রেখে ‘আমেরিকান ফাস্ট’-এর শ্লোগানধারী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে পারবেন? শুধু ক্ষমতায় নয়, সকল ক্ষেত্রেই আমেরিকা-কে ফাস্ট হবে হবে। করোনাভাইরাস-এর আক্রমণ মোকাবেলায় আমেরিকা কি সেই ফাস্ট হতে পেরেছে?
হোয়াইট হাউস

করোনাভাইরাস নিয়ে খোঁজ যুক্তরাষ্ট্র তথা হোয়াইট হাউস চরমভাবে চিন্তিত, সেখানে বাংলাদেশের করোনার তথ্য কি বলছে। উল্লেখিত তথ্য মোতাবেক করোনার করাল গ্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটুক প্রস্তুত? হোয়াইট হাউজে করোনার হানা, আমার প্রশ্ন গণ ভবন নিরাপদ তো? করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই আটান্টিকের এপার থেকে আজ পর্যন্ত হ-য-ব-র-ল অবস্থা লক্ষ্য করছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় দেশে হাসপাতালগুলোর কি চরম অব্যবস্থাপনার খবর। অন্যদের কথা বাদ-ই দিলাম করোনায় আক্রান্ত ডাক্তার, সরকারের সচিব পর্যায়ের মানুষকেও চরম অবহেলায়, বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিতে হচ্ছে! সেখানে আমজনতার কি হবে তা বলাই বাহুল্য। জন্মগতভাবে একজন বাংলাদেশী হওয়ায় অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের মতো মাতৃভূমির জন্য আমারও প্রাণ কাঁদে, কষ্ট লাগে। করোনায় মৃত্যুপুরী হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারী নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাস করেও দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভাবনায় রাত-দিন কাটে। সরকারের দাবী অনুযায়ী বাংলাদেশ যেখানে উন্নয়নশীল দেশের পথে সেখানে স্বাস্থ্য সেবা সহ অন্যান্য নাগরিক সেবার মান দেখে মনে হয় না বাংলাদেশ কাংখিত পর্যায়ে এগুচ্ছে। মনে হচ্ছে সবই চাপাবাজী। তা নাহলে সাংবাদিক সাগর-রুনী দম্পতি হত্যার বিচার কই, কোটি কোটি অর্থ পাচারকারীদের খবর কই, প্রথম-দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেনীর নেতা-নেত্রী নয় জেলা পর্যায়ের নেত্রী পাপিয়াদের দাপট বাড়ে কিভাবে, হত্যা করার মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্বেও এক রাতের মধ্যে সিকদার গ্রæপের দুই ভাই ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে দেশ ত্যাগ করে কি করে? এক ঘটনার বিচার হতে না হতেই আরেক ঘটনায় আগের ঘটনাগুলো গুম হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে দেশটির আইনের শাসন নিয়ে। উন্নত দেশ আর অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখানেই পার্থক্য যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেটুকু আইন আছে তার প্রয়োগ আছে। আর অনুন্নত বা উন্নয়রশীল দেশগুলোতে যেটুকু আইন আছে তার প্রয়োগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়েপোলিস শহর পুলিশ হেফাজতে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর জেরে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে গত ৩/৪দিন ধওে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মিনিয়েপোলিস শহর এখন উত্তাল। লাগাতার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশের পুলিশ বাধায় বিক্ষোভকারীরা একটি থানায় ও দুটি ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিনিয়েপোলিস ও পার্শ্ববর্তী সেইন্ট পল শহরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভের মুখে হত্যার ঘটনায় জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। চলছে আইনী প্রক্রিয়া।
গণ ভবন

খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়েপোলিস শহরে গত ২৫ মে সোমবার পুলিশ হেফাজতে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। তিনি একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এই ঘটনার একটি ভিডিও’তে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। সে সময় ফ্লয়েড বলতে থাকেন, প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, আমাকে মারবেন না। এক পথচারী সে সময় ফ্লয়েডকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ফ্লয়েডের পরিবার জড়িত চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছে। আর এই ঘটনায় সেখানকার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমানোর পাশাপাশি ফ্লয়েড হত্যার দু:খ প্রকাশ করে ব্যতিক্রমী কায়দায় (ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় মাটিতে হাটু গেড়ে মাথা নীচে করে) জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছেন। তারপরও পরিস্থিতি স্বাবাবিক হচ্ছে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। কেনোনা, এমন মৃত্যু কোন সভ্য দেশের পুলিশের কাছে আশা করা যায় না।
ফ্লয়েড হত্যা ঘটনার পর আমেরিকান পুলিশের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে একজন ফেসবুকে লিখেছেন যে, ‘একজন অফিসার এর কৃতকর্মের জন্য সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র যখন বিক্ষোভে উত্তাল তখন পুরো পুলিশ বিভাগের শতশত সদস্যদের জাতির প্রতি এমন ক্ষমা প্রদশর্নের আহব্বান সত্যিই মানবিকতা ও সভ্যতার উজ্জ্বল নিদর্শন। অপরাধ একজন পুলিশের। ক্ষমা চাইছেন সকল পুলিশের সদস্যগন। আমেরিকা পুলিশ অফিসাররা হাটুগেরে ক্ষমা চাইছে জনগণের কাছে। এটাই সভ্যতা।’
করোনাভাইস নিয়ে লিখতে গিয়ে সঙ্গত কারণেই ফ্লয়েড হত্যার কথা উঠে আসলো এজন্য যে, গত শনিবার নিউইয়র্কে এই হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন সিটি মেয়র বিল ডি বøাজিও কন্যা সিয়ারা। এক বেআইনি সমাবেশে অংশগ্রহনের অভিযোগে সিয়ারা-কে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং “ডেক্স এপিয়ারেন্স” টিকিট দিয়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। গত ৩০ মে শনিবার রাত ১০.৩০ মিনিটে এাি ঘটনা ঘটে। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে সিয়ারা লোয়্যার ম্যানহাটানের ১২ স্ট্রীট এবং ব্রডওয়ের উপর অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়। এতে ট্রাফিক যানজট হয়। পুলিশের উপর্যুপরি অনুরোধেও বিক্ষোভকারীরা সরে যেতে অস্বীকার করলে অনেকের সাথে মেয়র কন্যাও গ্রেফতার হন। তিনি এসময় পুলিশের কাছে তার পিতার পরিচয় দেয়া থেকে বিরত থাকেন। একেই বলে আইনের শাসন। কথায় বলে না, চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। তাই আইনের শাসনের দেশেও কিছু বেআইনী কারবারের লোক থাকে বলে মাধ্যে মধ্যে এমন অঘটন ঘটে। যার খেসারত দিতে হয় সমগ্র জাতি-কে।
যাক বলছিলা করোনাভাইরাসের কথা। প্রাণঘাতি এই রোগের আভির্বাবের ফলে বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে যা ঘটছে তা দেশবাসীর মতো সকল প্রবাসীদেরও ভাবিয়ে তুলছে। ছুটি না লকডাউন, গার্মেন্টস খোলা না বন্ধ, গাড়ী-ঘোড়া চলবে কি ছলবে না এমন নানান লুকোচুরি ঘটনায় এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে চরম পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ। এমন আশংকাই সচেতর আর অভিজ্ঞ মহলের। সেই ক্ষেত্রে সকল কাজের মতো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেষ পর্যন্ত কি ‘শেষ ভরসার আশ্রয় স্থল’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয় নিতে হবে কি? আর যতি তাই নিতে হয় তাহলে সরকারের বিশাল মন্ত্রী পরিষদ আর মেয়রদের কাজ কি? প্রশাসনের কাজ কি? তাই প্রশ্ন জাগে ‘হোয়াইট হাউসে করোনার হানা, গণ ভবন নিরাপদ তো?’ (বাংলা পত্রিকা)
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

হোয়াইট হাউসে করোনার হানা, গণ ভবন নিরাপদ তো?

প্রকাশের সময় : ১০:২৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০

সালাহউদ্দিন আহমেদ: প্রাণঘাতক করোনাভাইরাস এখন সমগ্র মানবজাতির সবচেয়ে আতঙ্কের নাম। অচেনা, অজানা, অদেখা করোনা ভাইরাস মাত্র ৬/৭ মাসেই সমগ্র বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ প্রাণ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর খবর- শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজারে। অপরদিকে নিউইয়র্কেও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখ ৫৯ হাজার ১৭ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৬ জনের। বিশ্বে একক দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র। রোববার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭০ হাজার ১৬৫ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৬ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটিতে রোববার সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ২১৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৫৮ জনের। এরপরই রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালী। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৬৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৪০ জনের। মৃত্যুর দিক থেকে ইতালির পরই চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে লাতিন আমেরিকা দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪০ জন, যা আক্রান্তের বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৮৩৪ জনের।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া দেশের মধ্যে রয়েছে ইউরোপের আরও দুই দেশ- ফ্রান্স ও স্পেনও। ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৭৭৪ জন। আর স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২২৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ১২৫ জনের। গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৮৮টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৬৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে আরও ২৮ জনের। সবমিলিয়ে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ৪৪ হাজার ৬০৮ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৬১০ জনের। আর সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৯ হাজার ৩৭৫ জন।
উল্লেখিত তথ্যই বলে দিচ্ছে করোনার করাল আক্রমণে মানবজাতি তথা বিশ্বের কি করুণ অবস্থা। সবচেয়ে অশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বেও সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-এর অফিস কাম বাস হোয়াইট হাউসে-ও করোনা ছোবল মেরেছে। অথচ হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা নিয়ে কতই না হাস্যকর কথা বলেছেন। যাই হোক ‘সাদা ভবনে’ বড় ধরণের অঘটন না ঘটলেও সেখানকার কেউ যে ভালো আছেন, বা চরমভাবে চিন্তিত নন তা বলা যাবে না। অঘটন না ঘটার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। চলতি বছর আমেরিকার নির্বাচনের বছর। করোনার করাল গ্রাস উপক্ষো করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সকল দৃষ্টি এখন আগামী নভেম্বরের নির্বাচন। কিন্তু হোয়াইট হাউস-কে নিরাপদ আর আমেরিকানদের অনিরাপদ রেখে ‘আমেরিকান ফাস্ট’-এর শ্লোগানধারী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে পারবেন? শুধু ক্ষমতায় নয়, সকল ক্ষেত্রেই আমেরিকা-কে ফাস্ট হবে হবে। করোনাভাইরাস-এর আক্রমণ মোকাবেলায় আমেরিকা কি সেই ফাস্ট হতে পেরেছে?
হোয়াইট হাউস

করোনাভাইরাস নিয়ে খোঁজ যুক্তরাষ্ট্র তথা হোয়াইট হাউস চরমভাবে চিন্তিত, সেখানে বাংলাদেশের করোনার তথ্য কি বলছে। উল্লেখিত তথ্য মোতাবেক করোনার করাল গ্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটুক প্রস্তুত? হোয়াইট হাউজে করোনার হানা, আমার প্রশ্ন গণ ভবন নিরাপদ তো? করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই আটান্টিকের এপার থেকে আজ পর্যন্ত হ-য-ব-র-ল অবস্থা লক্ষ্য করছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় দেশে হাসপাতালগুলোর কি চরম অব্যবস্থাপনার খবর। অন্যদের কথা বাদ-ই দিলাম করোনায় আক্রান্ত ডাক্তার, সরকারের সচিব পর্যায়ের মানুষকেও চরম অবহেলায়, বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিতে হচ্ছে! সেখানে আমজনতার কি হবে তা বলাই বাহুল্য। জন্মগতভাবে একজন বাংলাদেশী হওয়ায় অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের মতো মাতৃভূমির জন্য আমারও প্রাণ কাঁদে, কষ্ট লাগে। করোনায় মৃত্যুপুরী হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারী নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাস করেও দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভাবনায় রাত-দিন কাটে। সরকারের দাবী অনুযায়ী বাংলাদেশ যেখানে উন্নয়নশীল দেশের পথে সেখানে স্বাস্থ্য সেবা সহ অন্যান্য নাগরিক সেবার মান দেখে মনে হয় না বাংলাদেশ কাংখিত পর্যায়ে এগুচ্ছে। মনে হচ্ছে সবই চাপাবাজী। তা নাহলে সাংবাদিক সাগর-রুনী দম্পতি হত্যার বিচার কই, কোটি কোটি অর্থ পাচারকারীদের খবর কই, প্রথম-দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেনীর নেতা-নেত্রী নয় জেলা পর্যায়ের নেত্রী পাপিয়াদের দাপট বাড়ে কিভাবে, হত্যা করার মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্বেও এক রাতের মধ্যে সিকদার গ্রæপের দুই ভাই ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে দেশ ত্যাগ করে কি করে? এক ঘটনার বিচার হতে না হতেই আরেক ঘটনায় আগের ঘটনাগুলো গুম হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে দেশটির আইনের শাসন নিয়ে। উন্নত দেশ আর অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখানেই পার্থক্য যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেটুকু আইন আছে তার প্রয়োগ আছে। আর অনুন্নত বা উন্নয়রশীল দেশগুলোতে যেটুকু আইন আছে তার প্রয়োগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়েপোলিস শহর পুলিশ হেফাজতে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর জেরে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে গত ৩/৪দিন ধওে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মিনিয়েপোলিস শহর এখন উত্তাল। লাগাতার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশের পুলিশ বাধায় বিক্ষোভকারীরা একটি থানায় ও দুটি ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিনিয়েপোলিস ও পার্শ্ববর্তী সেইন্ট পল শহরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভের মুখে হত্যার ঘটনায় জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। চলছে আইনী প্রক্রিয়া।
গণ ভবন

খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়েপোলিস শহরে গত ২৫ মে সোমবার পুলিশ হেফাজতে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। তিনি একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এই ঘটনার একটি ভিডিও’তে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। সে সময় ফ্লয়েড বলতে থাকেন, প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, আমাকে মারবেন না। এক পথচারী সে সময় ফ্লয়েডকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ফ্লয়েডের পরিবার জড়িত চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছে। আর এই ঘটনায় সেখানকার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমানোর পাশাপাশি ফ্লয়েড হত্যার দু:খ প্রকাশ করে ব্যতিক্রমী কায়দায় (ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় মাটিতে হাটু গেড়ে মাথা নীচে করে) জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছেন। তারপরও পরিস্থিতি স্বাবাবিক হচ্ছে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। কেনোনা, এমন মৃত্যু কোন সভ্য দেশের পুলিশের কাছে আশা করা যায় না।
ফ্লয়েড হত্যা ঘটনার পর আমেরিকান পুলিশের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে একজন ফেসবুকে লিখেছেন যে, ‘একজন অফিসার এর কৃতকর্মের জন্য সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র যখন বিক্ষোভে উত্তাল তখন পুরো পুলিশ বিভাগের শতশত সদস্যদের জাতির প্রতি এমন ক্ষমা প্রদশর্নের আহব্বান সত্যিই মানবিকতা ও সভ্যতার উজ্জ্বল নিদর্শন। অপরাধ একজন পুলিশের। ক্ষমা চাইছেন সকল পুলিশের সদস্যগন। আমেরিকা পুলিশ অফিসাররা হাটুগেরে ক্ষমা চাইছে জনগণের কাছে। এটাই সভ্যতা।’
করোনাভাইস নিয়ে লিখতে গিয়ে সঙ্গত কারণেই ফ্লয়েড হত্যার কথা উঠে আসলো এজন্য যে, গত শনিবার নিউইয়র্কে এই হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন সিটি মেয়র বিল ডি বøাজিও কন্যা সিয়ারা। এক বেআইনি সমাবেশে অংশগ্রহনের অভিযোগে সিয়ারা-কে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং “ডেক্স এপিয়ারেন্স” টিকিট দিয়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। গত ৩০ মে শনিবার রাত ১০.৩০ মিনিটে এাি ঘটনা ঘটে। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে সিয়ারা লোয়্যার ম্যানহাটানের ১২ স্ট্রীট এবং ব্রডওয়ের উপর অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়। এতে ট্রাফিক যানজট হয়। পুলিশের উপর্যুপরি অনুরোধেও বিক্ষোভকারীরা সরে যেতে অস্বীকার করলে অনেকের সাথে মেয়র কন্যাও গ্রেফতার হন। তিনি এসময় পুলিশের কাছে তার পিতার পরিচয় দেয়া থেকে বিরত থাকেন। একেই বলে আইনের শাসন। কথায় বলে না, চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। তাই আইনের শাসনের দেশেও কিছু বেআইনী কারবারের লোক থাকে বলে মাধ্যে মধ্যে এমন অঘটন ঘটে। যার খেসারত দিতে হয় সমগ্র জাতি-কে।
যাক বলছিলা করোনাভাইরাসের কথা। প্রাণঘাতি এই রোগের আভির্বাবের ফলে বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে যা ঘটছে তা দেশবাসীর মতো সকল প্রবাসীদেরও ভাবিয়ে তুলছে। ছুটি না লকডাউন, গার্মেন্টস খোলা না বন্ধ, গাড়ী-ঘোড়া চলবে কি ছলবে না এমন নানান লুকোচুরি ঘটনায় এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে চরম পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ। এমন আশংকাই সচেতর আর অভিজ্ঞ মহলের। সেই ক্ষেত্রে সকল কাজের মতো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেষ পর্যন্ত কি ‘শেষ ভরসার আশ্রয় স্থল’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয় নিতে হবে কি? আর যতি তাই নিতে হয় তাহলে সরকারের বিশাল মন্ত্রী পরিষদ আর মেয়রদের কাজ কি? প্রশাসনের কাজ কি? তাই প্রশ্ন জাগে ‘হোয়াইট হাউসে করোনার হানা, গণ ভবন নিরাপদ তো?’ (বাংলা পত্রিকা)
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক