নিউইয়র্ক ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্টি এশিয়ান ঘৃণা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১
  • / ৪৩ বার পঠিত

অনলাইন থেকে: স¤প্রতি আটলান্টায় গুলিতে ছয় এশীয় বংশোদ্ভূত নারীসহ আটজনের মৃত্যুর খবরটি যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন এক আতঙ্ক, ক্ষোভ ও মর্মবেদনা অনুভূত হয়। আর কর্তৃপক্ষের অস্বাভাবিক তৎপরতার কারণে এই অস্বস্তিকর অনুভূতি আরো কয়েক গুণ তীব্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন জর্জিয়া শেরিফের ক্যাপ্টেন সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে বলেন যে ‘গতকাল সত্যিই একটি খারাপ দিন ছিল তাঁর জন্য।’
অনেক এশিয়ান আমেরিকানের কাছে এটা আরো একটা প্রমাণ যে তাদের স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বলেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি এমন ‘কোনো ইঙ্গিত দেয়নি’ যে সে বর্ণবাদী উদ্দেশে কাজটি করেছে; বরং সে যৌন আসক্তির কথা জানিয়েছে এবং বলেছে যে ‘সেই প্রলোভন থেকে নিষ্কৃতির চেষ্টা’ হিসেবেই কাজটা করেছে। সুতরাং এটা চিন্তা করাও কঠিন যে ভাষাকে আরো কতটা অমানবিক করা যায়। বুধবার গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে ৩০ মাইল দূরত্বের এশীয় মালিকানাধীন স্পা ও ম্যাসাজসেবা কেন্দ্রগুলোতে এবং এ হামলা প্রাথমিকভাবে এশীয়দের জীবনই কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আর ঘটনাগুলোও এমন এক দেশে সংঘটিত হয়েছে, যে দেশের এশীয় অভিবাসী বা এশীয় বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর ও ভয়ংকর আচরণের ইতিহাস রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নারীদের অতি যৌনতাড়িত হিসেবে চিত্রিত করার কুৎসতি ইতিহাসও রয়েছে। যেমনÑআমেরিকায় অভিবাসনবিরোধী প্রথম ফেডারেল আইন পতিতাবৃত্তি প্রতিরোধের অজুহাত দেখিয়ে চীনা নারীদেরই লক্ষ্যবস্তু করেছিল। প্রকৃতপক্ষে চীনা পরিবারগুলোকে বসতি স্থাপন থেকে বিরত রাখতেই আইনটি করা হয়েছিল। তাই বাস্তবে যা-ই হোক বা না হোক, বুধবারের ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের যৌনকর্মী হিসেবে বিবেচনা করা হলো। জর্জিয়ার রাজ্য প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য বি এনগুয়ান বলেছেন যে গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, নারীবিদ্বেষ ও বিদেশি আতঙ্কের (জিনোফোবিয়া) সংমিশ্রণেই সংঘটিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যান্টি-এশিয়ান ঘৃণার অপরাধ (হেট ক্রাইম) বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে। যেভাবে উগ্রতা, দুর্ব্যবহার ও সহিংসতা ব্যাপকতর হচ্ছে, এটা যেন তারই প্রতিফলন, যা যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট ভোটের পরবর্তী সময়ে দেখা গিয়েছিল। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এটা একটা বৈশ্বিক প্রকাশও বটে, যা অনেকাংশে কভিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সহিংসতা তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে, যখন মহামারি শুরু হয় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যরা এটাকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে কথা বলা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর দফায় দফায় এসব হামলার ঘটনা ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যেও এই মহামারির শুরুর দিকে অ্যান্টি-এশিয়ান ঘৃণা এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন চীনা-অস্ট্রেলিয়ানও জানিয়েছেন যে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁদের শারীরিকভাবে হুমকি প্রদান অথবা আক্রমণ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় শুধু হামলার নিন্দা করা এবং ‘কুং ফ্লু’-এর মতো বর্ণবাদী পরিভাষা এড়িয়ে চলাই যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টি-এশিয়ান ঘৃণার অপরাধ এবং যথাযথভাবে এসব প্রতিরোধ করতে না পারার ব্যর্থতা অবশ্যই বর্ণবাদ, অভিবাসন ও পুলিশি তৎপরতার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের মধ্যে নিহিত। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কারণগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। আর চীন সরকারের কর্মকান্ডের সঙ্গে চীনা অভিবাসী বা এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এমন নীতি, বক্তব্য ও ভাবমূর্তির বিষয়ে রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম এবং অন্যদের আরো বেশি যতœবান হতে হবে। চীনা নাগরিকদের ওপর কোনো আনুগত্য পরীক্ষা কিংবা (স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলের মতো) নির্বিচারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাও উচিত নয়। বেইজিংয়ের ভাইরাসবিষয়ক তৎপরতা, অর্থনৈতিক নীতি কিংবা গোপন প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রকৃত উদ্বেগ এমনভাবে প্রকাশ করা উচিত, যাতে স্কেপগোটিং (বলির পাঁঠা) বা বর্ণবাদী প্রচারের বিপদকে স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি তা কমিয়েও আনতে পারে।
অপরাধীদের অবশ্য হেট ক্রাইমের প্রাথমিক দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু যাঁরা তাদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ এবং যাঁরা সন্দেহ, বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতার পরিবেশ লালন-পালন করেছেন, তাঁদেরও জবাবদিহি করতে হবে।
সূত্র: সম্পাদকীয়, দ্য গার্ডিয়ান
ভাষান্তর: আফছার আহমেদ

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্টি এশিয়ান ঘৃণা

প্রকাশের সময় : ০১:০০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১

অনলাইন থেকে: স¤প্রতি আটলান্টায় গুলিতে ছয় এশীয় বংশোদ্ভূত নারীসহ আটজনের মৃত্যুর খবরটি যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন এক আতঙ্ক, ক্ষোভ ও মর্মবেদনা অনুভূত হয়। আর কর্তৃপক্ষের অস্বাভাবিক তৎপরতার কারণে এই অস্বস্তিকর অনুভূতি আরো কয়েক গুণ তীব্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন জর্জিয়া শেরিফের ক্যাপ্টেন সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে বলেন যে ‘গতকাল সত্যিই একটি খারাপ দিন ছিল তাঁর জন্য।’
অনেক এশিয়ান আমেরিকানের কাছে এটা আরো একটা প্রমাণ যে তাদের স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বলেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি এমন ‘কোনো ইঙ্গিত দেয়নি’ যে সে বর্ণবাদী উদ্দেশে কাজটি করেছে; বরং সে যৌন আসক্তির কথা জানিয়েছে এবং বলেছে যে ‘সেই প্রলোভন থেকে নিষ্কৃতির চেষ্টা’ হিসেবেই কাজটা করেছে। সুতরাং এটা চিন্তা করাও কঠিন যে ভাষাকে আরো কতটা অমানবিক করা যায়। বুধবার গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে ৩০ মাইল দূরত্বের এশীয় মালিকানাধীন স্পা ও ম্যাসাজসেবা কেন্দ্রগুলোতে এবং এ হামলা প্রাথমিকভাবে এশীয়দের জীবনই কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আর ঘটনাগুলোও এমন এক দেশে সংঘটিত হয়েছে, যে দেশের এশীয় অভিবাসী বা এশীয় বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর ও ভয়ংকর আচরণের ইতিহাস রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নারীদের অতি যৌনতাড়িত হিসেবে চিত্রিত করার কুৎসতি ইতিহাসও রয়েছে। যেমনÑআমেরিকায় অভিবাসনবিরোধী প্রথম ফেডারেল আইন পতিতাবৃত্তি প্রতিরোধের অজুহাত দেখিয়ে চীনা নারীদেরই লক্ষ্যবস্তু করেছিল। প্রকৃতপক্ষে চীনা পরিবারগুলোকে বসতি স্থাপন থেকে বিরত রাখতেই আইনটি করা হয়েছিল। তাই বাস্তবে যা-ই হোক বা না হোক, বুধবারের ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের যৌনকর্মী হিসেবে বিবেচনা করা হলো। জর্জিয়ার রাজ্য প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য বি এনগুয়ান বলেছেন যে গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, নারীবিদ্বেষ ও বিদেশি আতঙ্কের (জিনোফোবিয়া) সংমিশ্রণেই সংঘটিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যান্টি-এশিয়ান ঘৃণার অপরাধ (হেট ক্রাইম) বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে। যেভাবে উগ্রতা, দুর্ব্যবহার ও সহিংসতা ব্যাপকতর হচ্ছে, এটা যেন তারই প্রতিফলন, যা যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট ভোটের পরবর্তী সময়ে দেখা গিয়েছিল। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এটা একটা বৈশ্বিক প্রকাশও বটে, যা অনেকাংশে কভিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সহিংসতা তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে, যখন মহামারি শুরু হয় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যরা এটাকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে কথা বলা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর দফায় দফায় এসব হামলার ঘটনা ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যেও এই মহামারির শুরুর দিকে অ্যান্টি-এশিয়ান ঘৃণা এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন চীনা-অস্ট্রেলিয়ানও জানিয়েছেন যে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁদের শারীরিকভাবে হুমকি প্রদান অথবা আক্রমণ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় শুধু হামলার নিন্দা করা এবং ‘কুং ফ্লু’-এর মতো বর্ণবাদী পরিভাষা এড়িয়ে চলাই যথেষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টি-এশিয়ান ঘৃণার অপরাধ এবং যথাযথভাবে এসব প্রতিরোধ করতে না পারার ব্যর্থতা অবশ্যই বর্ণবাদ, অভিবাসন ও পুলিশি তৎপরতার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের মধ্যে নিহিত। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কারণগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। আর চীন সরকারের কর্মকান্ডের সঙ্গে চীনা অভিবাসী বা এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এমন নীতি, বক্তব্য ও ভাবমূর্তির বিষয়ে রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম এবং অন্যদের আরো বেশি যতœবান হতে হবে। চীনা নাগরিকদের ওপর কোনো আনুগত্য পরীক্ষা কিংবা (স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলের মতো) নির্বিচারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাও উচিত নয়। বেইজিংয়ের ভাইরাসবিষয়ক তৎপরতা, অর্থনৈতিক নীতি কিংবা গোপন প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রকৃত উদ্বেগ এমনভাবে প্রকাশ করা উচিত, যাতে স্কেপগোটিং (বলির পাঁঠা) বা বর্ণবাদী প্রচারের বিপদকে স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি তা কমিয়েও আনতে পারে।
অপরাধীদের অবশ্য হেট ক্রাইমের প্রাথমিক দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু যাঁরা তাদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ এবং যাঁরা সন্দেহ, বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতার পরিবেশ লালন-পালন করেছেন, তাঁদেরও জবাবদিহি করতে হবে।
সূত্র: সম্পাদকীয়, দ্য গার্ডিয়ান
ভাষান্তর: আফছার আহমেদ