নিউইয়র্ক ১২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মানব সমাজের জঘন্যতম অপরাধ হচ্ছে হত্যাকান্ড!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩
  • / ৪৮ বার পঠিত

সাঈদ তারেক : শাহরিয়ার কবিরের মেয়েটার গলায় ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যার খবরে দেখলাম কেউ কেউ উল্লাস বা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সোস্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায় নানা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য। কেউ বলেছেন আল্লাহর বিচার। বোঝা যায় এদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবির বা সরকারবিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এরা মনে করেন শাহরিয়ার কবির জামায়াতের সিনিয়র নেতাদেরকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছেন, শাহরিয়ার কবিররা পনের বছর বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গুম খুনের মদতদাতা।

এই ভদ্রলোককে আমি চিনি স্বাধীনতার আগে থেকেই। তখন তেমন আলাপ পরিচয় ছিল না, স্বাধীনতার পর সরকারি মালিকানাধীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ শুরু করলে জানাশোনা হয়। ভালই সম্পর্ক ছিল। তার লেখা ‘ওদের জানিয়ে দাও’ বইটি পড়ে বেশ আপ্লুত হয়েছিলাম। কবির একসময় চীনপন্থী রাজনীতি করতেন। সশস্ত্র কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল কিনা জানি না তবে ওই বইতে তিনি বাম রাজনীতির সশস্ত্র ক্যাডারদের উদ্দেশ্যে কিছু সাবধানতামূলক কথা বলেছিলেন। বেশ চৌকষ সাংবাদিক ছিলেন। নানা আইডিয়া উদ্ভাবন করে বিচিত্রার পাঠকপ্রিয়তায় ভাল ভুমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন ঢাকায়। তার সে সময়কার ভুমিকা নিয়ে নানা রসালো কথা আছে। কেউ বলেন পাকিস্তানী সেনাদের জন্য মুরগী সরবরাহের ব্যবসা করতেন বা হানাদারদের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। এসব বিষয়ে আমার কাছে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন তাকে নিয়ে এমন কোন কথা শুনিও নি। শুরু হয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে যুক্ত হবার পর থেকে। ’৯০এর পর সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় যখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধুচন্দ্রিমাকাল চলছে, তেমন প্রেক্ষাপটে এই নির্মূল কমিটির আবির্ভাব। স্বাধীনতার পরের সরকার কিছু দাগী অপরাধী ব্যতিত ’৭১এ পাকবাহিনীর সহযোগীদের ছেড়ে দিলে পরবর্তী দীর্ঘকাল এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য ছিল না। ঘাতক বা দালাল কথাটাও ততদিনে মানুষ প্রায় ভুলে গেছিল। ফলে হঠাৎ এই নির্মূল কমিটির আবির্ভাব বেশ চমকের সৃস্টি করে। শাহরিয়ার কবির দিনে দিনে একজন সোচ্চার এবং সক্রিয় নেতা হিসেবে এই সংগঠনে জায়গা করে নেন। এরা ’৭১এ ভূমিকার দায়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করতে থাকে।

নির্মূল কথাটা বিনাশ উৎপাটন বা হত্যাকান্ডের সমার্থক। আর মানব সমাজে যতগুলো অপরাধ আছে তার মধ্যে জঘন্যতম হচ্ছে ‘হত্যাকান্ড’। সভ্য সমাজে কোন মানুষের মানুষকে হত্যার অধিকার নেই, এমনকি নিজেকেও। এই হত্যা হতে পারে ধর্মের নামে গলায় ছুড়ি চালিয়ে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, ক্রসফায়ারের নামে গুলী চালিয়ে বা ক্রোধ আবেগ শত্রুতাবশত: খুন। মানুষ যেহেতু কোন মানুষের জীবন দিতে পারে না, সেহেতু কারও জীবন সংহারের অধিকারও কারও থাকতে পারে না। বিশ্বের অনেক সভ্য দেশে মৃত্যুদন্ড নেই। অপরাধীর জন্য কারেকশন সেন্টার। দাগী অপরাধীর জন্য এমন কঠিন শাস্তি যা তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও কঠিন।

সাঈদ তারেক

আমি একটা ব্যপার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- হত্যাকান্ডের মত অপরাধের শাস্তি মানুষ কিছুটা ইহজীবনেই পেয়ে যায়। এই শাস্তি হয় তার ওপর দিয়ে যায় না হয় সন্তানসন্তুতি পরিবার পরিজন, এমনকি পরের প্রজন্ম বা বংশ পরম্পরায় বয়ে চলে। আমি এমন অনেক দেখেছি বিচারের নামে হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত, হাকিম উকিল পুলিশ বা জল্লাদ- ঠান্ডা মাথার খুনী ক্রসফায়ারের খুনী, জীবনের কোন পর্যায়ে গিয়ে এমন কঠিন অসুখে পরেছেন যা মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও ভয়ংকর। পঙ্গু বিকলাঙ্গ হয়ে বিছানায় শুয়ে ধুকেধুকে মারা গেছেন। কেউ নিজে বা কারও স্ত্রী পুত্র কন্যা অপঘাতে মৃত্যুবরন করেছে- সড়ক দূর্ঘটনায় পানিতে ডুবে আগুনে জ্বলে বা গলায় দড়ি দিয়ে। অনেকের ঔরসজাত ছেলে-মেয়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। মানুষের হাক বলে একটা কথা আছে- এটা আমি বিশ্বাস করি। কখন কার হাক কার ওপরে গিয়ে পরে বলা যায় না। এ জন্যই বিচারকাজের সাথে জড়িতদেরকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বলা হয়, দশজন অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক একজন নিরাপরাধ যেন শাস্তি না পায়।

শাহরিয়ার কবিররা তিন দশকের ওপর ’৭১এর ঘাতক দালালদের ফাঁসি বা হত্যা চেয়ে আসছেন। বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকারকে দিয়ে কিছু লোককে হত্যাও করিয়েছেন। লিঞ্চিং মব তৈরী করে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই রবে একসময় আকাশ-বাতাশ এক করেছেন। আমি বলছি না ’৭১এ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কারও সাজা হতে পারবে না। শুধু ’৭১ না, ’৭২ থেকে ’৭৫ এবং পরবর্তীকালের, এমনকি আওয়ামী লীগের হাল আমলেও সরকারি দল এবং বাহিনীর হাতে যে হাজার হাজার মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে নির্যাতনে পঙ্গ হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে- সকল অপরাধের বিচার হতে হবে। কিন্তু আমি কখনই খুনের বদলা খুন এই নীতি সমর্থন করি না।

কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের কাম্য না। মেয়ের অপঘাত মৃত্যুতে বাবা শাহরিয়ার কবিরের মর্মবেদনা আমি বুঝি। তাকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে। আগেই বলেছি, মানুষ হত্যার সাথে যারা জড়িত থাকে কোন না কোনভাবে এই জীবনেই তার প্রায়শ্চিত্ব কিছুটা করে যায়। কখনও কখনও এই প্রায়শ্চিত্য থাই পাহাড়ের মত বুকে চেপে বসে! বাবা হিসেবে আর একজন বাবার জন্য রইলো সমবেদনা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মানব সমাজের জঘন্যতম অপরাধ হচ্ছে হত্যাকান্ড!

প্রকাশের সময় : ০৭:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩

সাঈদ তারেক : শাহরিয়ার কবিরের মেয়েটার গলায় ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যার খবরে দেখলাম কেউ কেউ উল্লাস বা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সোস্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায় নানা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য। কেউ বলেছেন আল্লাহর বিচার। বোঝা যায় এদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবির বা সরকারবিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এরা মনে করেন শাহরিয়ার কবির জামায়াতের সিনিয়র নেতাদেরকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছেন, শাহরিয়ার কবিররা পনের বছর বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গুম খুনের মদতদাতা।

এই ভদ্রলোককে আমি চিনি স্বাধীনতার আগে থেকেই। তখন তেমন আলাপ পরিচয় ছিল না, স্বাধীনতার পর সরকারি মালিকানাধীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ শুরু করলে জানাশোনা হয়। ভালই সম্পর্ক ছিল। তার লেখা ‘ওদের জানিয়ে দাও’ বইটি পড়ে বেশ আপ্লুত হয়েছিলাম। কবির একসময় চীনপন্থী রাজনীতি করতেন। সশস্ত্র কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল কিনা জানি না তবে ওই বইতে তিনি বাম রাজনীতির সশস্ত্র ক্যাডারদের উদ্দেশ্যে কিছু সাবধানতামূলক কথা বলেছিলেন। বেশ চৌকষ সাংবাদিক ছিলেন। নানা আইডিয়া উদ্ভাবন করে বিচিত্রার পাঠকপ্রিয়তায় ভাল ভুমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন ঢাকায়। তার সে সময়কার ভুমিকা নিয়ে নানা রসালো কথা আছে। কেউ বলেন পাকিস্তানী সেনাদের জন্য মুরগী সরবরাহের ব্যবসা করতেন বা হানাদারদের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। এসব বিষয়ে আমার কাছে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন তাকে নিয়ে এমন কোন কথা শুনিও নি। শুরু হয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে যুক্ত হবার পর থেকে। ’৯০এর পর সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় যখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধুচন্দ্রিমাকাল চলছে, তেমন প্রেক্ষাপটে এই নির্মূল কমিটির আবির্ভাব। স্বাধীনতার পরের সরকার কিছু দাগী অপরাধী ব্যতিত ’৭১এ পাকবাহিনীর সহযোগীদের ছেড়ে দিলে পরবর্তী দীর্ঘকাল এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য ছিল না। ঘাতক বা দালাল কথাটাও ততদিনে মানুষ প্রায় ভুলে গেছিল। ফলে হঠাৎ এই নির্মূল কমিটির আবির্ভাব বেশ চমকের সৃস্টি করে। শাহরিয়ার কবির দিনে দিনে একজন সোচ্চার এবং সক্রিয় নেতা হিসেবে এই সংগঠনে জায়গা করে নেন। এরা ’৭১এ ভূমিকার দায়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করতে থাকে।

নির্মূল কথাটা বিনাশ উৎপাটন বা হত্যাকান্ডের সমার্থক। আর মানব সমাজে যতগুলো অপরাধ আছে তার মধ্যে জঘন্যতম হচ্ছে ‘হত্যাকান্ড’। সভ্য সমাজে কোন মানুষের মানুষকে হত্যার অধিকার নেই, এমনকি নিজেকেও। এই হত্যা হতে পারে ধর্মের নামে গলায় ছুড়ি চালিয়ে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, ক্রসফায়ারের নামে গুলী চালিয়ে বা ক্রোধ আবেগ শত্রুতাবশত: খুন। মানুষ যেহেতু কোন মানুষের জীবন দিতে পারে না, সেহেতু কারও জীবন সংহারের অধিকারও কারও থাকতে পারে না। বিশ্বের অনেক সভ্য দেশে মৃত্যুদন্ড নেই। অপরাধীর জন্য কারেকশন সেন্টার। দাগী অপরাধীর জন্য এমন কঠিন শাস্তি যা তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও কঠিন।

সাঈদ তারেক

আমি একটা ব্যপার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- হত্যাকান্ডের মত অপরাধের শাস্তি মানুষ কিছুটা ইহজীবনেই পেয়ে যায়। এই শাস্তি হয় তার ওপর দিয়ে যায় না হয় সন্তানসন্তুতি পরিবার পরিজন, এমনকি পরের প্রজন্ম বা বংশ পরম্পরায় বয়ে চলে। আমি এমন অনেক দেখেছি বিচারের নামে হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত, হাকিম উকিল পুলিশ বা জল্লাদ- ঠান্ডা মাথার খুনী ক্রসফায়ারের খুনী, জীবনের কোন পর্যায়ে গিয়ে এমন কঠিন অসুখে পরেছেন যা মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও ভয়ংকর। পঙ্গু বিকলাঙ্গ হয়ে বিছানায় শুয়ে ধুকেধুকে মারা গেছেন। কেউ নিজে বা কারও স্ত্রী পুত্র কন্যা অপঘাতে মৃত্যুবরন করেছে- সড়ক দূর্ঘটনায় পানিতে ডুবে আগুনে জ্বলে বা গলায় দড়ি দিয়ে। অনেকের ঔরসজাত ছেলে-মেয়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। মানুষের হাক বলে একটা কথা আছে- এটা আমি বিশ্বাস করি। কখন কার হাক কার ওপরে গিয়ে পরে বলা যায় না। এ জন্যই বিচারকাজের সাথে জড়িতদেরকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বলা হয়, দশজন অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক একজন নিরাপরাধ যেন শাস্তি না পায়।

শাহরিয়ার কবিররা তিন দশকের ওপর ’৭১এর ঘাতক দালালদের ফাঁসি বা হত্যা চেয়ে আসছেন। বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকারকে দিয়ে কিছু লোককে হত্যাও করিয়েছেন। লিঞ্চিং মব তৈরী করে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই রবে একসময় আকাশ-বাতাশ এক করেছেন। আমি বলছি না ’৭১এ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কারও সাজা হতে পারবে না। শুধু ’৭১ না, ’৭২ থেকে ’৭৫ এবং পরবর্তীকালের, এমনকি আওয়ামী লীগের হাল আমলেও সরকারি দল এবং বাহিনীর হাতে যে হাজার হাজার মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে নির্যাতনে পঙ্গ হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে- সকল অপরাধের বিচার হতে হবে। কিন্তু আমি কখনই খুনের বদলা খুন এই নীতি সমর্থন করি না।

কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের কাম্য না। মেয়ের অপঘাত মৃত্যুতে বাবা শাহরিয়ার কবিরের মর্মবেদনা আমি বুঝি। তাকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে। আগেই বলেছি, মানুষ হত্যার সাথে যারা জড়িত থাকে কোন না কোনভাবে এই জীবনেই তার প্রায়শ্চিত্ব কিছুটা করে যায়। কখনও কখনও এই প্রায়শ্চিত্য থাই পাহাড়ের মত বুকে চেপে বসে! বাবা হিসেবে আর একজন বাবার জন্য রইলো সমবেদনা।