‘মাননীয়’ জঙ্গীরা আমাদের মারবেন না
![](https://hakkatha.com/wp-content/uploads/2024/05/hakkathafav.png)
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৪:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ নভেম্বর ২০১৫
- / ১৮১২ বার পঠিত
শাহাব উদ্দিন সাগর: জঙ্গী। এর আভিধানিক অর্থ কি? জঙ্গী শব্দটা এখন এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে (পশ্চিমা মিডিয়ার কল্যাণে) যে, জঙ্গী বলতেই নেতিবাচক একটা ধারণা সাধারণ মানুষের মনে চলে আসে। ডক্টর জাকের নায়েক তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন আদতে জঙ্গী শব্দের অর্থ কি?
মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকেই জঙ্গী শব্দের অভিধানিক অর্থ না জেনেই জঙ্গী জঙ্গী বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। জঙ্গী শব্দটা এসেছে ‘জঙ্গ’ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে যুদ্ধ। আর জঙ্গী বলতে সেই ব্যক্তিকেই বুঝায় যিনি যুদ্ধ করেন। আরো একটা ব্যাপার অনেকেই জানে না যে, জঙ্গী একটা বংশগত পদবীও হতে পারে। যেমন, প্রথম ক্রুসেডারদের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদানকারী ইমামদ্দীন জঙ্গী। তাঁর সুযোগ্য পুত্র নুরউদ্দীন জঙ্গী। এছাড়াও নুরউদ্দীন জঙ্গীর স্ত্রী বেগম জঙ্গী নামেও পরিচিত ছিলেন। মুলত জঙ্গী ছিল তাঁদের বংশীয় পদবী। যদিও নূরউদ্দীন জঙ্গীর পুত্র একটা আস্ত কুলাঙ্গার ছিল। কিন্তু এরকম কুলাঙ্গার মুসলিম জাতির মধ্যে সবযুগেই বিদ্যমান। এইসব কুলাঙ্গারদের কারণে যুগে যুগে আমাদের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। যাই হোক, যোদ্ধা বা জঙ্গী পদবী এই উপমহাদেশেও প্রচলিত। যেমন ‘নায়েক’ পদবী। এই সংস্কৃত শব্দটার অর্থও যোদ্ধা। কিন্তু আজ ‘মুজাহিদদের’ বলা হচ্ছে জঙ্গী। যদিও দেখা যাচ্ছে যে, জঙ্গী মানে খারাপ কিছু না। জঙ্গী মানে যোদ্ধা।
কিন্তু সেই জঙ্গী শব্দটা বাংলাদেশে এখন মুলত আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু। স্কুল ছাত্র থেকে শুরু করে মৃত্যু পথযাত্রী সবাই ‘জঙ্গী’ শব্দটার সঙ্গে কম বেশি পরিচিত। এ শব্দটা পরিচিতের পেছনে মূখ্য ভুমিকা রেখেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই এবং শাইখ আবদুর রহমানের উত্থানের পরই বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গী শব্দটির সঙ্গে মোটামোটি পরিচিত হয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলে থাকে।
গেল ৮/১০ বছর ধরে জঙ্গী শব্দটির সঙ্গে মানুষ এতো বেশি পরিচিত যে, চায়ের টং দোকান থেকে শুরু করে ডাইনিং টেবিলে আলোচনায় স্থান পায় এ শব্দটি। কারণ বাসে পেট্রল বোমা বা অগ্নিসংযোগ আর হেফাজতের শাপলা চত্তরের ঘটনার পরতো আরো বেশি প্রচলিত শব্দ ‘জঙ্গী’। এখন কি ব্লগার, কি রাজনৈতিক কর্মী, কি পুলিশ কর্মকর্তা খুন হলে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বলা হয় এর সঙ্গে ‘জঙ্গী’রা জড়িত বা এর সঙ্গে ‘জঙ্গী’ সম্পৃক্ততা আছে। রাজনৈতিক এ কাদাছোড়াছোড়ি ব্যাপক ভাবনার জন্ম দেয়। খুন বা অঘটনের সময় আপনার বড়ো রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষ দেন; জনগন হয়তো একটা সময় বুঝে নেবে কারা সঠিক বলছে। কেউ যদি সঠিক না বলে তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে আস্থাকুডে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু জঙ্গীদের গর্তে নিক্ষিপ্ত করবে কে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
কয়েকদিন আগে টাইম টেলিভিশনের নিয়তিম সংবাদ পত্র পর্যালোচনাভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রেস ভিউতে এসেছিলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক প্রবাসের প্রধান সম্পাদক জনাব ওলায়িউল আলম। বাংলাদেশের জঙ্গী প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন‘ ধরুন সরকারের কথায় ব্লগার হত্যায় জামায়াত-বিএনপি জড়িত আর সরকার বলছে জামায়াত আর বিএনপি জঙ্গী’ সরকারের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে সারা দেশে কতো বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী আছে; তারা যদি সত্যি সত্যিই জঙ্গীর মতো হয়ে উঠে তাহলে সরকার কি গদিতে থাকতে পারবে?। জনাব ওয়ায়িউল আলমের প্রশ্নের উত্তর খোঁজতে আসলে বেশিদূর যেতে হবে না; কারণ সিরিয়া এবং মিশরের ঘটনা যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বা এক দল অন্য দলকে ‘জঙ্গী’ বানাতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছে তা সবাই জানেন।
আমার কথা সেখানে নয়; সরকার বলছে, কিছু দল বাংলাদেশে জঙ্গী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সেদিকে নাই গেলাম কিন্তু ‘মাননীয়’ জঙ্গীরা কেন আপনার আমাদের মতো নিরীহ মানুষকে খুন করছেন! উপরের সংজ্ঞার সঙ্গে তো আপনাদের কার্যক্রমের মিল নেই। আমরা হয়তো মুক্ত মনের মানুষ, আমরা বই প্রকাশ করি, আমরা ব্লগে লিখি এ জন্য কি আমাদের খুন করবেন! ‘মাননীয়’ জঙ্গীরা আপনার কি চান; দেশে অস্থিশীলতা, সরকার পতন, সরকারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে!, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে! বলুন তাতে আমাদের কি দোষ!
ছোট বেলায় চাচা- মামার হাত ধরে গ্রামের উম্মুক্ত জায়গায় লাঠি খেলা দেখতে যেতাম। দুই পাড়ার লোকজন অংশ নিতো এ খেলায়। দু‘জন খেলা শুরু করতেই চারদিকে ঘিরে খেলা দেখতাম। খেলার রেফারি অংশগ্রহণকারীদের আগেই বলে দিতেন ‘লাঠি ঘোরানো যাবে, কিন্তু দর্শকদের গায়ে লাগা যাবে না‘ আর যদি তাই হয় তাহলে গুনতে হবে জরিমানা’। সরকার-বিরোধীপক্ষ যারা ক্ষমতায় যেতে চান বা ‘মাননীয়’ জঙ্গীরা যারা ফায়দা হাসিল করতে চান আপনাদের সবাইকে বলছি আপনাদের লাঠি আপনারা ঘুরান, দয়া করে আমাদের গায়ে লাগাবেন না। আমরা আম জনতা, আমরা মুক্ত মনের মানুষ, আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাই।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন আমি জঙ্গীদের ‘মাননীয়’ বলেছি; আমাদের দেশে এ শব্দটা খুবই প্রচলিত। সরকারের প্রধান, মন্ত্রী এমপিদে সম্বোধন করা হয় মাননীয় বলে, সচিবদের সম্বোধন করা হয় মাননীয় বলে, বিরোধী দল বা বড়ো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্বোধন করা হয় মাননীয় বলে। কারণ সাদামাটাভাবে মাননীয় বলতে আমরা যা বুঝি যাদের কাছে অসীম ক্ষমতা বা সাধারণ মানুষের উপর ‘চটি’ ঘোরানোর ক্ষমতা আছে তারাই মাননীয়। সরকার বাহাদুর যেহেতু ‘জঙ্গী-জঙ্গী’ বলে মুখে ফেনা তুলছে এবং কার্যত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ আছে সুতরাং জঙ্গীরাও খুবই শক্তিশীল। আর তারা শক্তিশালী বলেই তারা ‘মাননীয়’।
আর সেই মাননীয় জঙ্গীদের বলছি; আপনারাতো মুসলমান। মানুষ হত্যা মহা পাপ, কেন এ ঘৃণ্য কাজটুকু করছেন। গুপ্ত হত্যা কাপুরুষতা। আপনার ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আমরা নিরীহ মানুষ, দু‘কলম লিখছি মাত্র। এটাতে যদি আপনাদের গাত্রদাহ হয়! আপনাদের শেকড় একদিন উপড়ে যাবে। মাননীয় সরকার প্রধান; কথায় নয় কাজে মিল করুন। জঙ্গী নির্মূলে জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপি বা অন্য দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে তা আমলে নিন। অন্যতায় ‘জঙ্গী’ নামক ক্যানসার ছড়ালে বাংলাদেশের সর্বাঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার সমুহ আশঙ্কা আছে। আর সে দায়ভার সরকারকেও নিতে হবে। আমি মনে করি জঙ্গীবাদ তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতার যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সরকারের আমলে নেয়া উচিত। আর এ ক্ষেত্রে নিন্দুকেরা হয়তো আমার সমালোচানও করতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকি বলে তাদের পক্ষে বলছি সেটা মোটেও ঠিক নয় বাস্তবতার নিরিখেই এ কথা বলছি। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, মুক্ত চিন্তার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন তাদের দ্রুত নিরাপত্তা দিন সরকার বাহাদুর।
মুর্দা কথায় ‘জঙ্গী দমনের দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করলে পরিণতি ভালো হবে না। আকাশে ঢিল ছুঁড়লে তা মাটিতে পড়বেই। বিরোধী দমনের চেয়ে এ মহুর্তে সরকারের উচিৎ জঙ্গী দমন। আর ‘মাননীয়‘ জঙ্গীরা আমাদের মারবেন না। তবে ধর্ম নিয়ে যারা লিখেন, মানুষের বিশ্বাসে যারা আঘাত হানেন তাও খারাপ কাজ, সুতরাং আপনারও সাবধান। ০৬ নভেম্বর’২০১৫