নিউইয়র্ক ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন

বিশ্বজনতার নজর আমেরিকায় কেন?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: বিশ্বজনতার নজর আমেরিকায় কেন? এই নিয়ে সুইডেন থেকে বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন লিখেছেন রহমান মৃধা
আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতিতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ ধরে এক অতুলনীয় শক্তির প্রতীক হিসেবে বিরাজ করছে। এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে নানা কারণ, যা যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু একটি দেশ হিসেবে নয়, বরং বিশ্ব-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন পৃথিবীর এত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত এই দেশটির দিকে? এ প্রতিবেদনে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করব।
১. রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতৃত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব বহুদিন ধরে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তার নীতিগুলিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার দ্বারা বহুমাত্রিক প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিষয়টি তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সুসংহত করেছে।
২. বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্ব
আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা তাকে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্রময় শিল্প খাত, যেমন প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং ভোগ্যপণ্য বাজারে প্রাধান্য, তার বিশ্বব্যাপী আর্থিক নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি যেমন অ্যাপল, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. সংস্কৃতি এবং মিডিয়া শক্তি
একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আমেরিকার সংস্কৃতি এবং গণমাধ্যমের প্রভাব। হলিউড, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে আমেরিকা সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। তাদের চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত শিল্প শুধু বিনোদন নয়, বরং একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম যা বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধ, ফ্যাশন, এবং জীবনধারায় প্রভাব ফেলছে। এই গণমাধ্যমের প্রচারণা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
৪. শিক্ষা এবং গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু
যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয়। হার্ভার্ড, এমআইটি এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞান উদ্ভাবন হচ্ছে, যা তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এই দেশটিতে পড়াশোনার জন্য আকৃষ্ট হয়, যা তাকে সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানগত বৈচিত্র দেয়।
৫. গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা
এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। যদিও চীন বা রাশিয়া শক্তিশালী অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষমতা রাখে, তাদের গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবের কারণে তারা বিশ্বের কাছে আমেরিকার মত আকর্ষণীয় হতে পারেনি। মানুষ জাতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে নতুন কিছু দেখার এবং উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র তার গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার উদাহরণ দিয়ে অন্য দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ
গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে একটি দেশের দিকে। মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা। আসলেই কি তাই? অরাজকতা, অন্যায়, অত্যাচার থেকে শুরু করে ভালো-মন্দ সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে সেখানে। সেখানেও মানুষ রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করে। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের চারপাশ দিয়ে অনেকের রাত কাটে। আবার অনেকে ঠিক সেই দেশ থেকেই মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে, চমৎকার। প্রশ্ন হচ্ছে- কী এমন জাদু রয়েছে আমেরিকায়? চীনও কিন্তু একটি বেশ জনবহুল দেশ। তাছাড়া উন্নত দেশের সারিতে তাদের বর্তমান ভালো দাপটও বটে। তা সত্বেও আমেরিকার মত না গর্জে বা না বর্ষে! কারণ কী? ভেবেছেন কি কখনও?
বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিস নেই সেখানে। চীন এবং রাশিয়া যত ধনী বা শক্তিশালীই হোক না কেন গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিসের অভাবের কারণে আমেরিকার মত বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারছে না। মানুষ জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সত্যি প্রশংসনীয়। যেমন আমরা নিজেরা ভালো কিছু না করতে পারলেও যখন অন্যেরা করে সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। যেমন বাংলাদেশের কথাই বলি, সবাই যে আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা নয়; তবুও সে দেশ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই অর্থনীতিতে সাফল্য, জনগণের জন্য কিছু করুক বা নাই করুক চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্য যা করার করে। এখন জনগণ যেমন আস্থা হারিয়েছে রাজনৈতিকদের উপর, রাজনীতিবিদরাও জনগণের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে। যার ফলে দেশের ভোট সিস্টেম বিলীন হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে টাকা নিয়েও ভোট দেয়নি, আবার ভোট দিয়েছে অথচ টাকা পায়নি। কয়েকবার এমনটি ঘটেছে, শেষে বিনা ভোটে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। এটাই জয়ী হওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
আমেরিকার আসন্ন নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। অনেক তথ্য জেনেছি। ভাবনা, কী হবে আমাদের অভাগা বাংলাদেশের? কবে আমরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরে পাবো নাকি সঠিক সময় এখনও হয়নি? দেশ অতীতের তুলনায় ভালোই তো আছে। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে। সবাই বেশ ভালোই তো আছে। কী দরকার গণতন্ত্রের, যেভাবে চলছে তাতে সমস্যা কোথায়? তারপর টাকার বিনিময়ে ভোট দিয়ে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে তো সঠিক গণতন্ত্র কখনও হবে না। সেক্ষেত্রে যেমন আছি তেমন থাকায় সমস্যা কোথায়? অথবা যদি সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তবে আমাদের চিন্তাচেতনায় বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে হবে। সে পরিবর্তন সমষ্টিগতভাবে হতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। এটা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ সবার জন্য।
মানুষ জাতি চাপে পড়ে সমস্যার সমাধান খোঁজে। আমরা যদি সত্যিই চাপের মধ্যে পড়তাম তবে সমাধান বের করতাম। আমার মনে হয় মুষ্টিমেয় কিছু লোক চাপের মধ্যে আছে, সর্বাঙ্গীনভাবে চাপ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না। সেক্ষেত্রে প্রথম যে কাজটি করতে হবে আমাদের সবাইকে সেটা হলো চাপ সৃষ্টি করা নিজেদের ভেতর থেকে। যেমন একটি ডিম বাইরের চাপে ভেঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় অথচ তার ভেতরের চাপে সৃষ্টি করে একটি জীবন। আমাদেরকে নিজ নিজ জায়গা থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে পরিবর্তনের জন্য আর সেটা হতে পারে আমাদের বিবেককে কলুষযুক্ত করা। এটা যদি করতে পারি তবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ শুধু নিজেকে নয়; গোটা বিশ্বকে প্রকৃত গণতন্ত্রের পথ দেখাতে পারবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কামালা হ্যারিস এবং ট্রাম্পের নেতৃত্ব বিশ্লেষণ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব:
১. বাণিজ্যনীতি: ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত বাণিজ্য চুক্তি এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ও সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে। তার পুনঃনির্বাচন হলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার কঠোর হতে পারে। বিশেষত, তৈরি পোশাক খাতের মতো প্রধান রপ্তানি খাতে শুল্কের পরিমাণ বা বিধিনিষেধ বাড়ানো হতে পারে।
২. অভিবাসন নীতি: ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন নীতি ছিল কঠোর, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে অভিবাসী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ শিক্ষার জন্য বা কাজের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তাই এ ধরনের নীতিগুলি তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
কামালা হ্যারিস বা ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের প্রভাব:
১. বহুপাক্ষিক সহযোগিতা: ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব, বিশেষত কামালা হ্যারিস, সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা এবং উন্নন সহায়তা প্রকল্পে আরও সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২. বাণিজ্য এবং মানবাধিকার: ডেমেক্র্যাটিক প্রশাসন সাধারণত মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গুরুত্ব দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও সহায়তা উভয়ই বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক হতে পারে, যদিও এর ফলে সরকারকে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ মোকাবেলা করতে হতে পারে। তবে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রচারে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য কোনটি ভালো?
বাংলাদেশের জন্য সাধারণত ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়, কারণ তারা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং মানবাধিকার উন্নয়নের ওপর জোর দেয়। কামালা হ্যারিসের মত নেত্রী, যিনি একজন অভিবাসী পরিবারের সন্তান, অভিবাসন ও বৈশ্বিক মানবাধিকার বিষয়ে সহানুভূতিশীল হতে পারেন। এটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষত বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসন কঠোর হওয়ার কারণে। তবে, ট্রাম্পের কৌশলগত নীতি, যেমন চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান, বাংলাদেশের জন্য কিছু সুবিধাও আনতে পারে। এটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি করতে পারে যা অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের স্বার্থে আসতে পারে।
ভারতের প্রভাব থেকে স্বাধীনভাবে চলা এবং ড. ইউনুসের প্রশাসন:
ভারতের প্রভাব থেকে স্বাধীনভাবে চলা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশাসন বিশেষত ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো ব্যক্তিদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে, কামালা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা বাংলাদেশের ওপর তাদের প্রভাবের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
১. কামালা হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব:
বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও কৌশলগত ভারসাম্য: ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব সাধারণত বহুপাক্ষিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করে এবং মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং সুশাসনের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়। কামালা হ্যারিসের মত একজন নেত্রী, যিনি অভিবাসী পটভূমি থেকে উঠে এসেছেন, বৈশ্বিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার গুরুত্ব বোঝেন এবং ছোট ও মাঝারি দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে সমর্থন করতে পারেন। বাংলাদেশ যদি ভারতের প্রভাব থেকে কিছুটা স্বাধীনভাবে কৌশলগত অবস্থান নিতে চায়, তবে হ্যারিসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সমর্থন প্রদান করতে পারে।
ড. ইউনুসের প্রশাসনের জন্য গুরুত্ব: ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব সাধারণত মানবাধিকার এবং সুশাসনের পক্ষে থাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো ব্যক্তিদের প্রশাসনিক উদ্যোগের পক্ষে সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইউনুসের মত ব্যক্তিত্ব, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত এবং নোবেল বিজয়ী, তার অবস্থান নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক সমালোচনা বা চাপ আসলে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের অধীনে তা বেশি গুরুত্ব পেতে পারে।
২. ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান নেতৃত্ব:
রক্ষণশীল এবং স্বার্থমুখী নীতি: ট্রাম্প প্রশাসন সাধারণত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে প্রাধান্য দেয় এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলোতে আগ্রহ কম থাকে। এর মানে, ভারতের মতো শক্তিশালী মিত্র দেশগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসন থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন পেতে পারে না, বিশেষ করে যদি এ ধরনের সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বা অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে না মেলে।
ড. ইউনুসের পরিস্থিতি: ড. ইউনুসের মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে যে কোনো ধরনের সমালোচনা বা অভ্যন্তরীণ চাপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের মতো দৃঢ় হবে না। ট্রাম্প সাধারণত মানবাধিকার বা গণতন্ত্র নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চান না, বিশেষত যদি তা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত না হয়।
উপসংহার:
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানে কামালা হ্যারিস বা ডেমেক্র্যাটিক নেতৃত্বের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি বহুপাক্ষিক সমর্থন ও স্বাধীনতার সুযোগ দিতে পারে। বিশেষ করে ভারতের চাপ থেকে কিছুটা স্বাধীনভাবে চলা এবং ড. ইউনুসের মতো ব্যক্তিত্বের প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রভাব বজায় রাখতে, ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন হলে, বাংলাদেশের পক্ষে এই ধরনের কৌশলগত স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে, কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য সাধারণত অর্থনৈতিক এবং পপ্রতিরক্ষা নীতির উপর কেন্দ্রীভূত থাকে।
সুতরাং, ভারতের প্রভাব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে পথচলার জন্য এবং ড. ইউনুসের মত ব্যক্তিত্বের প্রশাসনিক সুরক্ষার জন্য কামালা হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব এই মুহূর্তে অধিকতর সহায়ক হতে পারে। (ভোরের কাগজ)
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

e-mail: rahman.mridha@gmail.com

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন

বিশ্বজনতার নজর আমেরিকায় কেন?

প্রকাশের সময় : ০১:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

হককথা ডেস্ক: বিশ্বজনতার নজর আমেরিকায় কেন? এই নিয়ে সুইডেন থেকে বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন লিখেছেন রহমান মৃধা
আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতিতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ ধরে এক অতুলনীয় শক্তির প্রতীক হিসেবে বিরাজ করছে। এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে নানা কারণ, যা যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু একটি দেশ হিসেবে নয়, বরং বিশ্ব-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন পৃথিবীর এত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত এই দেশটির দিকে? এ প্রতিবেদনে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করব।
১. রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতৃত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব বহুদিন ধরে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তার নীতিগুলিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার দ্বারা বহুমাত্রিক প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিষয়টি তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সুসংহত করেছে।
২. বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্ব
আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা তাকে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্রময় শিল্প খাত, যেমন প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং ভোগ্যপণ্য বাজারে প্রাধান্য, তার বিশ্বব্যাপী আর্থিক নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি যেমন অ্যাপল, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. সংস্কৃতি এবং মিডিয়া শক্তি
একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আমেরিকার সংস্কৃতি এবং গণমাধ্যমের প্রভাব। হলিউড, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে আমেরিকা সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। তাদের চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত শিল্প শুধু বিনোদন নয়, বরং একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম যা বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধ, ফ্যাশন, এবং জীবনধারায় প্রভাব ফেলছে। এই গণমাধ্যমের প্রচারণা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
৪. শিক্ষা এবং গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু
যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয়। হার্ভার্ড, এমআইটি এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞান উদ্ভাবন হচ্ছে, যা তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এই দেশটিতে পড়াশোনার জন্য আকৃষ্ট হয়, যা তাকে সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানগত বৈচিত্র দেয়।
৫. গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা
এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। যদিও চীন বা রাশিয়া শক্তিশালী অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষমতা রাখে, তাদের গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবের কারণে তারা বিশ্বের কাছে আমেরিকার মত আকর্ষণীয় হতে পারেনি। মানুষ জাতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে নতুন কিছু দেখার এবং উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র তার গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার উদাহরণ দিয়ে অন্য দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ
গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে একটি দেশের দিকে। মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা। আসলেই কি তাই? অরাজকতা, অন্যায়, অত্যাচার থেকে শুরু করে ভালো-মন্দ সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে সেখানে। সেখানেও মানুষ রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করে। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের চারপাশ দিয়ে অনেকের রাত কাটে। আবার অনেকে ঠিক সেই দেশ থেকেই মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে, চমৎকার। প্রশ্ন হচ্ছে- কী এমন জাদু রয়েছে আমেরিকায়? চীনও কিন্তু একটি বেশ জনবহুল দেশ। তাছাড়া উন্নত দেশের সারিতে তাদের বর্তমান ভালো দাপটও বটে। তা সত্বেও আমেরিকার মত না গর্জে বা না বর্ষে! কারণ কী? ভেবেছেন কি কখনও?
বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিস নেই সেখানে। চীন এবং রাশিয়া যত ধনী বা শক্তিশালীই হোক না কেন গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিসের অভাবের কারণে আমেরিকার মত বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারছে না। মানুষ জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সত্যি প্রশংসনীয়। যেমন আমরা নিজেরা ভালো কিছু না করতে পারলেও যখন অন্যেরা করে সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। যেমন বাংলাদেশের কথাই বলি, সবাই যে আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা নয়; তবুও সে দেশ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই অর্থনীতিতে সাফল্য, জনগণের জন্য কিছু করুক বা নাই করুক চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্য যা করার করে। এখন জনগণ যেমন আস্থা হারিয়েছে রাজনৈতিকদের উপর, রাজনীতিবিদরাও জনগণের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে। যার ফলে দেশের ভোট সিস্টেম বিলীন হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে টাকা নিয়েও ভোট দেয়নি, আবার ভোট দিয়েছে অথচ টাকা পায়নি। কয়েকবার এমনটি ঘটেছে, শেষে বিনা ভোটে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। এটাই জয়ী হওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
আমেরিকার আসন্ন নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। অনেক তথ্য জেনেছি। ভাবনা, কী হবে আমাদের অভাগা বাংলাদেশের? কবে আমরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরে পাবো নাকি সঠিক সময় এখনও হয়নি? দেশ অতীতের তুলনায় ভালোই তো আছে। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে। সবাই বেশ ভালোই তো আছে। কী দরকার গণতন্ত্রের, যেভাবে চলছে তাতে সমস্যা কোথায়? তারপর টাকার বিনিময়ে ভোট দিয়ে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে তো সঠিক গণতন্ত্র কখনও হবে না। সেক্ষেত্রে যেমন আছি তেমন থাকায় সমস্যা কোথায়? অথবা যদি সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তবে আমাদের চিন্তাচেতনায় বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে হবে। সে পরিবর্তন সমষ্টিগতভাবে হতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। এটা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ সবার জন্য।
মানুষ জাতি চাপে পড়ে সমস্যার সমাধান খোঁজে। আমরা যদি সত্যিই চাপের মধ্যে পড়তাম তবে সমাধান বের করতাম। আমার মনে হয় মুষ্টিমেয় কিছু লোক চাপের মধ্যে আছে, সর্বাঙ্গীনভাবে চাপ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না। সেক্ষেত্রে প্রথম যে কাজটি করতে হবে আমাদের সবাইকে সেটা হলো চাপ সৃষ্টি করা নিজেদের ভেতর থেকে। যেমন একটি ডিম বাইরের চাপে ভেঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় অথচ তার ভেতরের চাপে সৃষ্টি করে একটি জীবন। আমাদেরকে নিজ নিজ জায়গা থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে পরিবর্তনের জন্য আর সেটা হতে পারে আমাদের বিবেককে কলুষযুক্ত করা। এটা যদি করতে পারি তবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ শুধু নিজেকে নয়; গোটা বিশ্বকে প্রকৃত গণতন্ত্রের পথ দেখাতে পারবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কামালা হ্যারিস এবং ট্রাম্পের নেতৃত্ব বিশ্লেষণ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব:
১. বাণিজ্যনীতি: ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত বাণিজ্য চুক্তি এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ও সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে। তার পুনঃনির্বাচন হলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার কঠোর হতে পারে। বিশেষত, তৈরি পোশাক খাতের মতো প্রধান রপ্তানি খাতে শুল্কের পরিমাণ বা বিধিনিষেধ বাড়ানো হতে পারে।
২. অভিবাসন নীতি: ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন নীতি ছিল কঠোর, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে অভিবাসী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ শিক্ষার জন্য বা কাজের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তাই এ ধরনের নীতিগুলি তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
কামালা হ্যারিস বা ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের প্রভাব:
১. বহুপাক্ষিক সহযোগিতা: ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব, বিশেষত কামালা হ্যারিস, সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা এবং উন্নন সহায়তা প্রকল্পে আরও সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২. বাণিজ্য এবং মানবাধিকার: ডেমেক্র্যাটিক প্রশাসন সাধারণত মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গুরুত্ব দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও সহায়তা উভয়ই বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক হতে পারে, যদিও এর ফলে সরকারকে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ মোকাবেলা করতে হতে পারে। তবে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রচারে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য কোনটি ভালো?
বাংলাদেশের জন্য সাধারণত ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়, কারণ তারা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং মানবাধিকার উন্নয়নের ওপর জোর দেয়। কামালা হ্যারিসের মত নেত্রী, যিনি একজন অভিবাসী পরিবারের সন্তান, অভিবাসন ও বৈশ্বিক মানবাধিকার বিষয়ে সহানুভূতিশীল হতে পারেন। এটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষত বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসন কঠোর হওয়ার কারণে। তবে, ট্রাম্পের কৌশলগত নীতি, যেমন চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান, বাংলাদেশের জন্য কিছু সুবিধাও আনতে পারে। এটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি করতে পারে যা অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের স্বার্থে আসতে পারে।
ভারতের প্রভাব থেকে স্বাধীনভাবে চলা এবং ড. ইউনুসের প্রশাসন:
ভারতের প্রভাব থেকে স্বাধীনভাবে চলা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশাসন বিশেষত ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো ব্যক্তিদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে, কামালা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা বাংলাদেশের ওপর তাদের প্রভাবের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
১. কামালা হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব:
বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও কৌশলগত ভারসাম্য: ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব সাধারণত বহুপাক্ষিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করে এবং মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং সুশাসনের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়। কামালা হ্যারিসের মত একজন নেত্রী, যিনি অভিবাসী পটভূমি থেকে উঠে এসেছেন, বৈশ্বিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার গুরুত্ব বোঝেন এবং ছোট ও মাঝারি দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে সমর্থন করতে পারেন। বাংলাদেশ যদি ভারতের প্রভাব থেকে কিছুটা স্বাধীনভাবে কৌশলগত অবস্থান নিতে চায়, তবে হ্যারিসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সমর্থন প্রদান করতে পারে।
ড. ইউনুসের প্রশাসনের জন্য গুরুত্ব: ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব সাধারণত মানবাধিকার এবং সুশাসনের পক্ষে থাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো ব্যক্তিদের প্রশাসনিক উদ্যোগের পক্ষে সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইউনুসের মত ব্যক্তিত্ব, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত এবং নোবেল বিজয়ী, তার অবস্থান নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক সমালোচনা বা চাপ আসলে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের অধীনে তা বেশি গুরুত্ব পেতে পারে।
২. ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান নেতৃত্ব:
রক্ষণশীল এবং স্বার্থমুখী নীতি: ট্রাম্প প্রশাসন সাধারণত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে প্রাধান্য দেয় এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলোতে আগ্রহ কম থাকে। এর মানে, ভারতের মতো শক্তিশালী মিত্র দেশগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসন থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন পেতে পারে না, বিশেষ করে যদি এ ধরনের সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বা অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে না মেলে।
ড. ইউনুসের পরিস্থিতি: ড. ইউনুসের মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে যে কোনো ধরনের সমালোচনা বা অভ্যন্তরীণ চাপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের মতো দৃঢ় হবে না। ট্রাম্প সাধারণত মানবাধিকার বা গণতন্ত্র নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চান না, বিশেষত যদি তা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত না হয়।
উপসংহার:
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানে কামালা হ্যারিস বা ডেমেক্র্যাটিক নেতৃত্বের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি বহুপাক্ষিক সমর্থন ও স্বাধীনতার সুযোগ দিতে পারে। বিশেষ করে ভারতের চাপ থেকে কিছুটা স্বাধীনভাবে চলা এবং ড. ইউনুসের মতো ব্যক্তিত্বের প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রভাব বজায় রাখতে, ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন হলে, বাংলাদেশের পক্ষে এই ধরনের কৌশলগত স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে, কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য সাধারণত অর্থনৈতিক এবং পপ্রতিরক্ষা নীতির উপর কেন্দ্রীভূত থাকে।
সুতরাং, ভারতের প্রভাব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে পথচলার জন্য এবং ড. ইউনুসের মত ব্যক্তিত্বের প্রশাসনিক সুরক্ষার জন্য কামালা হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব এই মুহূর্তে অধিকতর সহায়ক হতে পারে। (ভোরের কাগজ)
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

e-mail: rahman.mridha@gmail.com