নিউইয়র্ক ১১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাস্তবতা মেনে নিন, উত্তেজনা কমান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১৩ বার পঠিত

সাঈদ তারেক: বিরোধটা ছিল শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের জনগনের। ১৬ বছরে ইতিহাসের নিকৃস্টতম স্বৈরাচার কায়েম করে গুম খুন বেশুমার লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়ে সর্বশেষ হাজার দেড়েক মানুষ খুন করে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। দুনিয়ার কোন দেশে ঠাঁই না হওয়ায় মানবিক কারনে ভারত সাময়িক আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু মহাপ্রভূ ইস্যূতে গোটা ভারতবর্ষজুড়ে যে মাতম শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে তারা নিজেরাই যেন একটা পক্ষ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ইস্যু ধামাচাপা পড়ে বিরোধে জড়িয়ে গেছে দুই দেশ!
এটা একেবারেই অনাকাংখিত ছিল। দেড় দশকে শেখ হাসিনা ভারতের অনেক কাজ করে দিয়েছেন। নিজেই বলেছে ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে। মনে রেখেছে। মনে রেখেছে বলেই সাড়া বিশ্বে অচ্ছুৎ বিবেচিত হলেও একমাত্র ভারতই তাকে ঠাঁই দিয়েছে। মনে করা হতো শেখ হাসিনা ছিলেন ভারতের আশীর্ব্বাদধন্য। বিরোধীরা বলতো সেবাদাস। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারতীয় মিডিয়ায় শেখ হাসিনার জন্য আহাজারী বিশেষ করে গত কয়েকদিনে মহাপ্রভূ ইস্যুতে অভূতপূর্ব মাতমে মনে করা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে নাম কা ওয়াস্তে রেখে দেশটা যেন কার্যত তারাই চালিয়েছে! কিছু কিছু মিডিয়ার বিচিত্র সব লম্ফঝম্ফ দেখে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা এখন গৌন। গুজব বানোয়াট অসত্য বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে একেবারে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরী করা হয়েছে। কেউ বলছে ভারত হামলা করে বাংলাদেশ দখল করে নেবে, কেউ খবর দিচ্ছে সার্জিকেল স্ট্রাইকের। কেউ চাইছে চট্টগ্রাম নিয়ে নিতে কেউ বা পশ্চিমের লাগোয়া কোন কোন জেলা! সোস্যাল মিডিয়া খুললে রীতিমত যুদ্ধের দামামা। আনন্দবাজার হিন্দুস্তান টাইমস হিন্দু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মত পত্রিকা এই গুজব যুদ্ধে শামিল! মিছিল বিক্ষোভ দুতাবাসে হামলা পতাকা পোড়ানো বানিজ্য বন্ধ ভিসা বন্ধ হোটেল বন্ধ এমনকি বাংলাদেশী রোগীদের জন্য চিকিৎসাও বন্ধ! ভাবখানা এমন এসব করেই ইউনূস সরকারকে ফেলে দিয়ে শেখ হাসিনাকে এনে আবার বসিয়ে দেওয়া যাবে! সেদিন এক পন্ডিতকে ভবিষ্যৎবাণী করতে শুনলাম এই মাত্র কয়েকটা দিন, জানুয়ারীতে ট্রাম্প গদীতে বসলেই আওয়ামী লুটেরাদের দু:খের রজনী শেষ হবে!
সাঈদ তারেক

‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ একটা পুরনো রাজনৈতিক ইস্যু। বাংলাদেশে এই ইস্যুটার ব্যবহার বেড়ে যায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকলে। আবার সংখ্যালঘু নেতারাই বলেন সংখ্যালঘু নির্যাতনটা বাস্তবিকভাবে কার্যকর হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে সকল ধর্মাবলম্বি একত্রে পাশাপাশি বাস করে আসছে, কখনও কোন সমস্যা হয় নাই। এখানে শুধু ধর্মবিশ্বাষের কারনে কোন ভিনধর্মীকে হত্যা করা হয় না। মন্দিরে পুজাপাঠ অবস্থায় কোন পন্ডিত বা সেবায়েতকে খুন করার নজীর নাই। এ দেশে কোন মন্দিরের নীচে মসজিদ আবিষ্কার হয় না। মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ বানানো হয় না। বা কোন পূজা-অর্চনাকারিকে লাথি মেরে মন্দির থেকে বের করে দেওয়া হয় না। সারা দেশে অসংখ্য মন্দির মন্ডপ আছে, অধিকাংশ একেবারেই অরক্ষিত। পথের ধারের এইসব উপাসনালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বা রাতের আধারে কোন দুষ্টু লোক যদি ঢিল মেরে মূর্তির ক্ষতিসাধন করে সেটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা না। পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎকে যখন কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাকে কেউ সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে নেই। তেমনি রাজনৈতিক কারনে বা অন্যায় অপরাধের দায়ে কোন সনাতন ধর্মবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিলে তাকেও সংখ্যালঘু নির্যাতন বলার অবকাশ নাই। পি কে সাড়ে তিন হাজার কোটী টাকা মেরে ভারতে পালিয়েছে, তাকে ধরে এনে জেলে ঢোকালে কি তা সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে!
বিষয়গুলো সবাই বোঝে। তারপরও কেউ যখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এগুলোকে ইস্যু বানায় তা সমর্থন করা যায় না। ভারতের রাজনীতিকরা অনেক অভিজ্ঞ প্রাজ্ঞ। তাদেরকে এই নোংড়া খেলায় ইন্ধন যোগাতে দেখলে অবাক হতে হয়। অবশ্য সে দেশের সরকার কিছুটা রাশ টেনে ধরেছে বলে মনে হচ্ছে। এটা একটা ভাল লক্ষণ। তারা যদি বুঝে থাকেন এইসব কার্ড খেলে শেখ হাসিনাকে এনে বসিয়ে দেওয়া যাবে না, শেখ হাসিনাকে ফিরতে হলে রাজনৈতিকভাবেই ফিরতে হবে বা বাংলাদেশে তাদের স্বার্থগুলো ধরে রাখতে হলে বর্তমান সরকার অথবা যখন যে সরকার থাকে, সর্বোপরি বাংলাদেশের জনগনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে- তাহলে উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক। ভারতের প্রাজ্ঞ রাজনীতিক বা থিংকট্যাংকগুলো তেমন পথ অনুসরনের পরামর্শই দিচ্ছেন। আশা করবো উন্মাদনা উত্তেজনা কমিয়ে সে দেশের সরকার এবং দলগুলো বাস্তবতা মেনে নেবেন।
বছরে ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট, শুধু ট্যুরিজম থেকে বছরে ২৫ হাজার কোটী ভারতীয় রুপী, মেডিক্যাল ট্যুরিজম সাথে রেমিট্যান্স বাবদ কয়েক বিলিয়ন ডলার। ভিসা বন্ধ, চিকিৎসা বন্ধ বাণিজ্য বন্ধু হোটেল বন্ধ, লাভটা কিন্তু আখেরে বাংলাদেশেরই হবে। কত বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে কেউ হিসাব করে দেখতে পারেন। চাল ডাল আলু পেয়াজ রপ্তানীর মত দেশ আরও আছে। বাংলাদেশের মানুষ একেবারে না খেয়ে মরবে না! (লেখকের ফেসবুক থেকে)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাস্তবতা মেনে নিন, উত্তেজনা কমান

প্রকাশের সময় : ০১:২০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সাঈদ তারেক: বিরোধটা ছিল শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের জনগনের। ১৬ বছরে ইতিহাসের নিকৃস্টতম স্বৈরাচার কায়েম করে গুম খুন বেশুমার লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়ে সর্বশেষ হাজার দেড়েক মানুষ খুন করে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। দুনিয়ার কোন দেশে ঠাঁই না হওয়ায় মানবিক কারনে ভারত সাময়িক আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু মহাপ্রভূ ইস্যূতে গোটা ভারতবর্ষজুড়ে যে মাতম শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে তারা নিজেরাই যেন একটা পক্ষ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ইস্যু ধামাচাপা পড়ে বিরোধে জড়িয়ে গেছে দুই দেশ!
এটা একেবারেই অনাকাংখিত ছিল। দেড় দশকে শেখ হাসিনা ভারতের অনেক কাজ করে দিয়েছেন। নিজেই বলেছে ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে। মনে রেখেছে। মনে রেখেছে বলেই সাড়া বিশ্বে অচ্ছুৎ বিবেচিত হলেও একমাত্র ভারতই তাকে ঠাঁই দিয়েছে। মনে করা হতো শেখ হাসিনা ছিলেন ভারতের আশীর্ব্বাদধন্য। বিরোধীরা বলতো সেবাদাস। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারতীয় মিডিয়ায় শেখ হাসিনার জন্য আহাজারী বিশেষ করে গত কয়েকদিনে মহাপ্রভূ ইস্যুতে অভূতপূর্ব মাতমে মনে করা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে নাম কা ওয়াস্তে রেখে দেশটা যেন কার্যত তারাই চালিয়েছে! কিছু কিছু মিডিয়ার বিচিত্র সব লম্ফঝম্ফ দেখে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা এখন গৌন। গুজব বানোয়াট অসত্য বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে একেবারে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরী করা হয়েছে। কেউ বলছে ভারত হামলা করে বাংলাদেশ দখল করে নেবে, কেউ খবর দিচ্ছে সার্জিকেল স্ট্রাইকের। কেউ চাইছে চট্টগ্রাম নিয়ে নিতে কেউ বা পশ্চিমের লাগোয়া কোন কোন জেলা! সোস্যাল মিডিয়া খুললে রীতিমত যুদ্ধের দামামা। আনন্দবাজার হিন্দুস্তান টাইমস হিন্দু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মত পত্রিকা এই গুজব যুদ্ধে শামিল! মিছিল বিক্ষোভ দুতাবাসে হামলা পতাকা পোড়ানো বানিজ্য বন্ধ ভিসা বন্ধ হোটেল বন্ধ এমনকি বাংলাদেশী রোগীদের জন্য চিকিৎসাও বন্ধ! ভাবখানা এমন এসব করেই ইউনূস সরকারকে ফেলে দিয়ে শেখ হাসিনাকে এনে আবার বসিয়ে দেওয়া যাবে! সেদিন এক পন্ডিতকে ভবিষ্যৎবাণী করতে শুনলাম এই মাত্র কয়েকটা দিন, জানুয়ারীতে ট্রাম্প গদীতে বসলেই আওয়ামী লুটেরাদের দু:খের রজনী শেষ হবে!
সাঈদ তারেক

‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ একটা পুরনো রাজনৈতিক ইস্যু। বাংলাদেশে এই ইস্যুটার ব্যবহার বেড়ে যায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকলে। আবার সংখ্যালঘু নেতারাই বলেন সংখ্যালঘু নির্যাতনটা বাস্তবিকভাবে কার্যকর হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে সকল ধর্মাবলম্বি একত্রে পাশাপাশি বাস করে আসছে, কখনও কোন সমস্যা হয় নাই। এখানে শুধু ধর্মবিশ্বাষের কারনে কোন ভিনধর্মীকে হত্যা করা হয় না। মন্দিরে পুজাপাঠ অবস্থায় কোন পন্ডিত বা সেবায়েতকে খুন করার নজীর নাই। এ দেশে কোন মন্দিরের নীচে মসজিদ আবিষ্কার হয় না। মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ বানানো হয় না। বা কোন পূজা-অর্চনাকারিকে লাথি মেরে মন্দির থেকে বের করে দেওয়া হয় না। সারা দেশে অসংখ্য মন্দির মন্ডপ আছে, অধিকাংশ একেবারেই অরক্ষিত। পথের ধারের এইসব উপাসনালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বা রাতের আধারে কোন দুষ্টু লোক যদি ঢিল মেরে মূর্তির ক্ষতিসাধন করে সেটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা না। পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎকে যখন কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাকে কেউ সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে নেই। তেমনি রাজনৈতিক কারনে বা অন্যায় অপরাধের দায়ে কোন সনাতন ধর্মবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিলে তাকেও সংখ্যালঘু নির্যাতন বলার অবকাশ নাই। পি কে সাড়ে তিন হাজার কোটী টাকা মেরে ভারতে পালিয়েছে, তাকে ধরে এনে জেলে ঢোকালে কি তা সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে!
বিষয়গুলো সবাই বোঝে। তারপরও কেউ যখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এগুলোকে ইস্যু বানায় তা সমর্থন করা যায় না। ভারতের রাজনীতিকরা অনেক অভিজ্ঞ প্রাজ্ঞ। তাদেরকে এই নোংড়া খেলায় ইন্ধন যোগাতে দেখলে অবাক হতে হয়। অবশ্য সে দেশের সরকার কিছুটা রাশ টেনে ধরেছে বলে মনে হচ্ছে। এটা একটা ভাল লক্ষণ। তারা যদি বুঝে থাকেন এইসব কার্ড খেলে শেখ হাসিনাকে এনে বসিয়ে দেওয়া যাবে না, শেখ হাসিনাকে ফিরতে হলে রাজনৈতিকভাবেই ফিরতে হবে বা বাংলাদেশে তাদের স্বার্থগুলো ধরে রাখতে হলে বর্তমান সরকার অথবা যখন যে সরকার থাকে, সর্বোপরি বাংলাদেশের জনগনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে- তাহলে উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক। ভারতের প্রাজ্ঞ রাজনীতিক বা থিংকট্যাংকগুলো তেমন পথ অনুসরনের পরামর্শই দিচ্ছেন। আশা করবো উন্মাদনা উত্তেজনা কমিয়ে সে দেশের সরকার এবং দলগুলো বাস্তবতা মেনে নেবেন।
বছরে ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট, শুধু ট্যুরিজম থেকে বছরে ২৫ হাজার কোটী ভারতীয় রুপী, মেডিক্যাল ট্যুরিজম সাথে রেমিট্যান্স বাবদ কয়েক বিলিয়ন ডলার। ভিসা বন্ধ, চিকিৎসা বন্ধ বাণিজ্য বন্ধু হোটেল বন্ধ, লাভটা কিন্তু আখেরে বাংলাদেশেরই হবে। কত বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে কেউ হিসাব করে দেখতে পারেন। চাল ডাল আলু পেয়াজ রপ্তানীর মত দেশ আরও আছে। বাংলাদেশের মানুষ একেবারে না খেয়ে মরবে না! (লেখকের ফেসবুক থেকে)