বাংলাদেশ নিয়ে বোঝাপড়া ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের
- প্রকাশের সময় : ০৯:০১:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৮৫৩ বার পঠিত
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছিল। গত বছরের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পক্ষে ভারত সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করলেও যুক্তরাষ্ট্র ছিল বরাবরই হতাশ। নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের নামে চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নিজেদের অবস্থান নিয়ে বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের কৌতূহল উপচে পড়ছে দুই প্রভাবশালী দেশের এ ইস্যুতে চলমান আলাপ-আলোচনার প্রতি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রসঙ্গ। গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের প্রতি দৃষ্টি দেন দুই নেতা। কীভাবে সব নাগরিককে আরও ক্ষমতাবান করা যায় সেটা ছিল এ ইস্যুতে তাদের আলোচনার মূল বিষয়। তবে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের এ আলোচনা যে পরিসমাপ্তি লাভ করেনি তার প্রমাণ মেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ফিল রেইনারের মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘এটা একটা চলমান আলাপ-আলোচনা। আমরা দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় এ বিষয়টা (সব নাগরিককে ক্ষমতায়ন) দেখেছি। আমরা এটাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং এটা ঊর্ধ্বে তুলে ধরা অব্যাহত রাখব।’ ফিল রেইনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক।
বাংলাদেশ নিয়ে এ আলোচনা শুধু মোদি-ওবামার মধ্যেই সীমিত নয়। এটা মাঠপর্যায়েও বিস্তৃত হয়েছে। ০৪ ফেব্রুয়ারী বুধবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করা নিয়ে ব্যস্ততার এক ফাঁকে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গিয়েছিলেন ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণের চায়ের নিমন্ত্রণে। সেখানে চা খেতে খেতে আলোচনা হয় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে।
পঙ্কজ সরণের সঙ্গে আলোচনায় মার্শা কি তাদের অবস্থান পরিবর্তনের কোনো আভাস দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকায় ভারতীয় এক কূটনীতিক বলেন, ‘দুই নেতার (মোদি-ওবামা) আলোচনায় বাংলাদেশ, মিয়ানমার অপরাপর দেশের প্রসঙ্গ উঠে আসা খুবই স্বাভাবিক। মার্শা বার্নিকাট নতুন এসেছেন এবং সৌজন্যমূলক আলোচনা হয়েছে। আমাদের মধ্যে অবস্থান যাই থাকুক নিজেরা আলোচনা করে থাকি। আমরা আরও বেশি বোঝাপড়ার চেষ্টা করি। এতে কোনো অসুবিধা নাই। আমরা বিরোধী দলের সঙ্গেও আলোচনা করি। আমাদের আলোচনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের দুই বড় দল কী করে সে বিষয়। এখানকার বিষয় এখানেই নিষ্পত্তি করতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের আলোচনা কতটা গভীরে গিয়েছিল তা নিয়ে ঢাকার আগ্রহ ব্যাপক। ৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দিল্লি-ওয়াশিংটন আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। বার্নিকাট সেখানে ওবামার সুরেই কথা বলেছেন।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে। তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা দিল্লি সফর করে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ওই সময়ের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকের পরও মতপার্থক্য থেকে যায়। তারপর বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচন হয়ে যায়। ভারত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘সাংবিধানিক নির্বাচন’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে। ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের পর মোদির সরকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ঢাকায় পাঠিয়ে বার্তা দেয় যে, বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে বিজেপি সরকার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না বলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলকে আশ্বস্ত করেন সুষমা স্বরাজ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনার নতুন সরকারের কর্মকর্তাদের পর্যায়ে খানিকটা বোঝাপড়া হলেও রাজনৈতিক পর্যায়ে টানাপোড়েন থেকে যায়।
বাংলাদেশে গত এক বছর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন এক বছর পর আবার সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন শিগগিরই। সেখানে রাজনৈতিক পর্যায়ে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করবেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন ভারত সফরে রয়েছেন। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে এই ত্রিমুখী আলোচনা নিয়ে কৌতূহল প্রবল। দিল্লি ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এটা চলমান আলাপ-আলোচনা। জনগণকে ক্ষমতায়ন করার আলোচনা। মজিনার আলোচনার ধারাবাহিকতায় এবারও আলোচনা হচ্ছে। তবে এখন আলোচনাটা চলছে আরও জোরেশোরে এটাই পার্থক্য। (দৈনিক যুগান্তর)