প্রসঙ্গ : আল জাজিরা’র রিপোর্ট
- প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / ১০৭ বার পঠিত
শেখ সিরাজ: মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, ইরাকে আমেরিকার হামলা, ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ, সংঘাত- আল জাজিরা’র সব রিপোর্ট-ই আমাদের কাছে, আমাদের দেশের মানুষের কাছে বরাবরই সত্য এবং অথেনটিক বলে মনে হয়। কিন্তু অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার ভাইদের নিয়ে করা একটি ‘অনুসন্ধানী রিপোর্ট’ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন, আলোচনা সমালোচনা। কেউ কেউ অনুসন্ধানী এই রিপোর্টকে বলছেন ‘ডকুমেন্টরী’। কিন্তু কেউ রিপোটের সাবজেক্ট বা লক্ষ্য বা বিষয় বস্ত নিয়ে কথা বলছেন না। শুধু ঢালাও ভাবে বলা হচ্ছে, এটা রাষ্ট্র বিরোধী। এটা দেশ বিরোধী রিপোর্ট। এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! এটা দেশের জন্য মানহানিকর রিপোর্ট ইত্যাদি! ইত্যাদি!
কিন্তু, কেউ একবার রিপোর্টটি ভালভাবে এবং নৈর্বক্তিকভাবে দেখলে করবেন যে, এটা ‘বাংলাদেশের’ বিরুদ্ধে কোন রিপোর্ট নয়। রিপোর্টটি বাংলাদেশের ‘সেনা বাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে’- যিনি সরকারকে কব্জায় করে, সরকারকে জানিয়ে বা না জানিয়ে অথবা সরকারকে আড়ালে রেখে তার ভাইকে ব্যবসা পাইয়ে দিচ্ছেন, জেল থেকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় নিজের আরেক ভাইকে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন, সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ কেনার ব্যাপারে ভাইকে টুপাইস পাইয়ে দিচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
রিপোর্টের একটি জায়গায়ও বলা হয়নি যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বা তার আত্মীয় স্বজন এখান থেকে কোন কমিশন নিচ্ছেন। বা কোন যোগসাজস আছে!
বরং অভিযুক্ত সেনা প্রধানের ভাই বিদেশে বসে দাবী করছেন যে তার সাথে সরকারের উচ্চ মহলে যোগসাজোস আছে। সেনা গোয়েন্দাদের সাথে তার যোগাযোগ আছে! মন্ত্রী ডিজিডিএফআই-এর সাথে তার সখ্যতা অনেক গভীর।
তার এই দাবীগুলো সরকারকে তদন্ত করে দেখতে হবে। ‘বিদেশে বসে সেনা প্রধানের ভাই কিভাবে নিজের এবং নিজের ভায়ের নাম, পদ ও পদবী ব্যবহার করে কি অনাচার করছেন! তিনি ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ পদবী’কে ব্যবহার করে কিভাবে নিজের ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরী করছেন ‘এ সবের ই তদন্ত হতে পারে!
শেখ সিরাজ
কথিত অপরাধী হারিসের দাবিকে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ সরকার কেন মনে করছেন রিপোর্টটি তাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গেছে? এটা মনে করার কোনই কারণ নেই। কারণ এটা কথিত অপরাধীর দাবী। অন্যদের নয়! আল জাজিরা শুধু তথ্য তুলে ধরেছে মাত্র। তদন্ত করার দায়িত্ব সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর জামিল ও তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধি অবশ্য বিষয়টি বাংলাদেশকে তদন্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল এ বিষয়টি তদন্তের দাবী জানিয়েছে! তবে বাংলাদেশের একাধিক দৈনিক পত্রিকায় বাংলাদেশ সরকার এবং সেনা সদর দপ্তরের বক্তব্য প্রকাশের সাথে নিজেদের মত প্রকাশ করে বলেছেন যে, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকায় অনেক সংবাদ তারা ছাপতে পারেন না বা অনেক সংবাদ সেলফ সেন্সর করতে হয়। অথচ সংবাদটি না ছেপে আজ শুধু প্রতিবাদটি ছাপতে হচ্ছে!
অন্য আরও একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, জেনারেল আজিজ এবং তাঁর অপরাধী ভাইদের কীর্তিকাহিনী জনসাধারণের ইতিমধ্যেই জানা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এখন যদি সরকার বিষয়টি তদন্ত না করেন বা এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ না দেখান সেক্ষেত্রে জনগন ‘রং ম্যাসেজ’ পাবে। সরকারের উচিত কাজটি করা।
আল জাজিরা এই রিপোর্টটি বা প্রতিবেদনটিতে ১৬/১৭ বা ১৮টি বিষয়ের অবতারণা করেছেন। এগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে তারা অনেক তথ্য অনেক ভিডিও সংযুক্ত করেছে। সরকারের উচিত এগুলো বিচার বিশ্লেষন করা ।
আমরা শুনেছি, সরকার ঐ টিভির বিরুদ্ধে মামলা করবেন। সেটা করতেই পারেন। কিন্তু জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত হতে হবে। যদিও সরকারের পক্ষে এটা কঠিন হবে। তবুও হতে হবে। আল জাজিরার এই রিপোর্ট সরকার এবং জেনারেল আজিজকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে! তাই বিষয়টি অত্যন্ত ‘সেনসেটিভ ’ এবং কঠিন কাজ।
তাছাড়া জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র তো আছেই। তারাও গভীরভাবে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। সুতরাং সরকারকে এটা করতেই হবে।
তাই সরকারের উচিত হবে, একটি কমিশন গঠন করে সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্ত করা। এবং তা জনসম্মুখে তুলে ধরা। এবং সরকারের স্বার্থেই তা করা দরকার। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)