‘পেটে গু থাকিলে জিলাপির মতোও হাগা যায়’

- প্রকাশের সময় : ১২:৫৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
- / ২০৪ বার পঠিত
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু: খোন্দকার আবদুল হামিদ (১৯১৮-১৯৮৩) ইত্তেফাকে ‘স্পষ্টভাষী’ ছদ্মনামে তার উপসম্পাদকীয় কলাম ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ প্রায়ই কিছু বেফাঁস মন্তব্য করতেন, যার একটি ছিল “পেটে গু থাকিলে জিলাপির মতোও হাগা যায়।” তুখোড় এক সাংবাদিকের কথা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জানার কোনো কারণ নেই। পুরোনোরাই কতটুকু মনে রেখেছেন তাতেও সন্দেহ আছে। তিনি যেহেতু আমার এলাকাবাসী, সেজন্যে সাংবাদিক গুরু হিসেবে আমার প্রাত:স্মরণীয় ও প্রাত:নমস্য। তুখোড় এই সাংবাদিক শুধু ইত্তেফাকেই নয় ‘মর্দে মুমিন’ নামে দৈনিক আজাদেও কলাম লিখতেন। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট থেকে ও ১৯৬৫ সালে মুসলিম লীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নের জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে যুব উন্নয়ন মন্ত্রী ও পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
তার উপসম্পাদকীয় কলামের বেফাঁস মন্তব্যটি মনে পড়েছে গতকাল ৯ মে মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ব্যস্ততম অফিস পাড়া ডাউন টাউন ম্যানহাটানের ছোট্ট একটি পার্কে গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি ১৩টি ভাস্কর্য দেখার পর। চারদিকে উঁচু উঁচু অট্টালিকার মাঝখানে মাত্র ১.৮৮ একর আয়তনের ছোট্ট পার্কটিতে দু’বছর আগে শেষবার যখন বসেছি তখন এই ভাস্কর্যগুলো ছিল না। কিন্তু সিটি কর্তৃপক্ষ নিউইয়র্ক থেকে সাড়ে তিন হাজার মাইলের বেশি দূরের পেরুর রাজধানী লিমা থেকে গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যগুলো এনে আমেরিকার স্বপ্নচারী ও মানবতাবাদী রাজনৈতিক নেতা, আমেরিকার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূল প্রবক্তাদের অন্যতম থমাস পেইনের (১৭৩৭-১৮০৯) এর নামে প্রতিষ্ঠিত পার্কে স্থাপন করেছে।
এর পেছনে একটি দিক হচ্ছে সিটির আর্থিক সামর্থ, দ্বিতীয় দিক সিটির সৌন্দর্য বর্ধনে সিটি কর্তৃপক্ষের রুচির নান্দনিকতা। অনেকের অর্থবিত্ত থাকলেও রুচি থাকে না। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটির সর্বত্র রুচির উন্নত স্বাদ সকলে অনুভব করতে পারেন। অতএব, খোন্দকার আবদুল হামিদের ‘–জিলাপির মতো হাগা’ মন্তব্য সবসময় এবং সর্বাংশে সত্য নয়। তাদের রুচির গুণে কাঠের ভাস্কর্যগুলো পার্কের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে, বরং পার্কটি এখন ভাস্কর্যের উদ্যানে রূপান্তরিত হয়েছে। এর আগে পার্কের প্রবেশ পথে একটি মাত্র ভাস্কর্য ছিল, ব্রোঞ্জে তৈরি ৩৩২ বছর আগে নিউইয়র্ক সিটির ২০তম মেয়র আব্রাহাম ডি পেস্টারের (১৬৫৭-১৭২৮) ভাস্কর্য, যেটি ১৮৯৬ সালে তৈরি করেছেন বিখ্যাত ভাস্কর জর্জ এডউইন বিসেল (১৮৩৯-১৯২০)।
কাঠের গুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যগুলো তৈরি করেছেন পেরুর তরুণ ভাস্কর জেমি মিরান্ডা বাম্বারেন। এগুলো তৈরি করতে তাকে একটি গাছও কাটতে হয়নি। কেটে ফেলা গাছের পরিত্যক্ত গুড়ি শেকড়শুদ্ধ উপড়ে সেগুলো তার ভাস্কর আত্মা দিয়ে চাঁদের ১৩টি ছায়াপথের নামে মৃত গাছগুলোতে জীবন সঞ্চার করেছেন। পেরুর রাজধানী লিমার অদূরের পর্বতে অন্তত দুশো বছরের পুরোনো ইউক্যালিপটাস গাছ যখন করাতকলে ফালি ফালি হয়ে যাচ্ছে, তখন কারো কল্পনায়ও আসেনি যে গাছগুলোর শেকড়সহ পরিত্যক্ত অংশগুলো কোটি মানুষ অধ্যুষিত কংক্রীটের জঙ্গলের ফাঁকে এক চিলতে জমিতে লাখো দর্শকের নয়ননন্দিত প্রতীকি মর্যাদার বস্তুতে পরিণত হবে। সুরা মায়েদায় বর্ণিত ঈসা আ: এর মাটি দিয়ে তৈরি পাখিতে ফুঁ দিলে সেটির উড়ে যাওয়ার ঘটনার মতোই অসাধারণ কর্ম সম্পাদন করেছেন ভাস্কর মিরান্ডা বাম্বারেন। তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মৃত গাছগুলো যেন নি:শ্বাস গ্রহণ করছে।
মিরান্ডা বাম্বারেন এর ভাস্কর্যগুলোর ওজন ৮০০ কিলোগ্রাম থেকে ৫,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত এবং ব্যাসার্ধ ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি থেকে ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত। নিউইয়র্কে বসবাসকারী শিল্পবোদ্ধা প্রবাসী বাংলাদেশী এবং যারা নিউইয়র্ক ভ্রমণে আসেন, তারা তাদের আকর্ষণীয় স্থান দর্শনের তালিকায় থমাস পেইন পার্ক রাখতে পারেন। সাবেক টুইন টাওয়ার বা বর্তমান ফ্রিডম টাওয়ার থেকে হাঁটাপথে মাত্র পনেরো মিনিটের দূরত্বে এবং ফেডারেল ইমিগ্রেশন ভবন ‘ফেডারেল প্লাজা’র ঠিক পাশেই অবস্থিত এই পার্ক। লেখকের ফেসবুক থেকে।
লেখক: অনুবাদক। উপদেষ্টা সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ।