নিউইয়র্ক ০৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

দুঃসময়ের কান্ডারি তাজউদ্দীন আহমদ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:০৪:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
  • / ৭০ বার পঠিত

ড. মো. আনিসুজ্জামান: করোনার বৈশ্বিক মহামারিতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক জীবনে প্রচন্ড আঘাত হেনেছে। অসৎ, অযোগ্য কিছু প্রতারকের অর্থলিপ্সা উদগ্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সমাজের নৈতিক অধঃপতিত জীবনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। অর্থ কোনো সমস্যা নয়, সামরিক স্বৈরশাসকের আস্ফাালন সমাজকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কিছুসংখ্যক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার, ঠিকাদার, আড়তদার, মজুদদার, আমলা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিষিয়ে তুলেছেন। চুরি, বাটপারি, প্রতারণা কোনো অনৈতিক পথ বাকি নেই। কিছুসংখ্যক মানুষের অপকর্মের দায় সমাজের সবার ওপর চেপে বসেছে।
দুর্দিন-দুঃসময়ে নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগ্যতা ও দূরদর্শিতা পপ্রাণের সময়। জনগণের সামাজিক মন স্পষ্ট হয় দুর্দিনে। বাংলাদেশে বহুবার মহামারি হয়েছে। কলেরা, গুটিবসন্ত ছিল স্থানিক। সারা দেশে একসঙ্গে সংক্রমণ হয়নি। করোনার মতো বহুমাত্রিক মহামারি বাংলাদেশে কখনো আসেনি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মানুষ চরম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রায় এক কোটি বাঙালী ঘরবাড়ি ফেলে শূন্য হাতে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। লুট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, নির্যাতনে বিপন্ন মানুষের নীরব কান্না বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিচ্ছিন্নভাবে প্রাণ রক্ষায় তৎপর। অসংগঠিত রাজনৈতিক নেতাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ অল্প সময়ের ব্যবধানে সংগঠিত করে, সরকার গঠন করে দক্ষতা, যোগ্যতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রকার সংশয়, সন্দেহ প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পথ মসৃণ ছিল না। যুদ্ধকালীন জটিল পরিস্থিতিতে সবার লক্ষ্য ছিল সব কিছুর আগে দেশ স্বাধীন করতে হবে। বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র ও জটিল পরিস্থিতিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাজউদ্দীন আহমদের সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে। সরকার গঠন, দপ্তর বণ্টন, মুক্তিবাহিনী গঠন, ট্রেনিং, অস্ত্র সংগ্রহ, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, বৈশ্বিক কূটনৈতিক তৎ্পরতা, শরণার্থী শিবির, মানুষ রক্ষা করা, যুদ্ধ পরিচালনা, মুক্তাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা কোনোটি থেকে কোনোটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাজউদ্দীন আহমদ সব কিছু সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় ক্ষণজন্মা তাজউদ্দীন আহমদের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনো বিতর্ক হয়নি।
বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া দেশকে স্বনির্ভর করতে চেয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থনৈতিক রূপরেখায় স্বনির্ভরতার ছাপ স্পষ্ট। বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া দেশ কিভাবে চলবে, স্বাধীনতার পর সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, দরিদ্রকে আমরা ভাগ করে নেব। করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির চরম মন্দাদশায় দরিদ্রকে ভাগ করে নেওয়ার প্রশ্নটি আবার সামনে এসেছে। তাজউদ্দীন আহমদ মনে করতেন নিরপেক্ষ বৈদেশিক সাহায্য বলে কিছু নেই। সব সাহায্যের মধ্যেই কিছু না কিছু শর্ত থাকে। সাহায্যনির্ভর জাতির কোনো আত্মসম্মান থাকে না।
তাজউদ্দীন আহমদ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস করতেন না। অল্প বয়সে সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন কিন্তু পরিণত বয়সে সমাজতান্ত্রিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থা থাকলেও কমিউনিজমে তাঁর চিন্তা পৌঁছেনি এমনটিই মনে করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তাজউদ্দীন আহমদ বাঙালি জাতিকে স্বনির্ভর জাতি হিসেবে পরিণত করার জন্য কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলতেন। তাঁর স্বনির্ভর অর্থনৈতিক চিন্তার ভিত্তি ছিল কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপান্তরের দিকে। ১০ জনের সম্পদ একজনের পকেটে থাকার চেয়ে ১০ জনের পকেটে থাকাই উত্তম।
তাজউদ্দীন আহমদ মানুষ ভালোবাসতেন। তাঁর চিন্তা ও কর্মের প্রেরণা ছিল মানুষ। এই মানুষ কোনো বিশেষ শ্রেণির মানুষ নয়। ধনী, দরিদ্র, বাঙালী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী- সবাই তাঁর কাছে সমান। কোনো বিশেষ শ্রেণি-গোষ্ঠী তাঁর কাছে কখনো কোনো বিশেষ মর্যাদা পায়নি। বাংলাদেশ ছিল তাঁর পরিবার। পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তিনি সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন। সবার ওপর মানুষকে সত্য বলে তিনি জানতেন। মানুষের সুখ ও স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্রের বিকল্প কিছু নেই। মানুষের ওপর তাঁর সর্বোচ্চ আস্থা থাকায় মাত্র ৪৬ বছর বয়সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্বদানে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার সূচনালগ্নেই তাজউদ্দীন আহমদের পরিকল্পনা পাকিস্তানীজমের কাছে পরাজয় ঘটে। শত্রæপক্ষ তাঁকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। বাঙালী জাতির কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম রূপকার তাজউদ্দীন আহমদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের নির্মমভাবে জেলের ভেতরে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ক্ষণজন্মা এই মহান নেতাসহ জাতীয় নেতাদের হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন করে বাঙালী জাতির ঋণ শোধ করার সময় বহু আগেই এসেছে। বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হলেই ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সঙ্গী তাজউদ্দীন আহমদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে মানবজাতির সামনে এই বার্তাই করোনা দিয়েছে। কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাঙাীল জাতির মুক্তি সম্ভব। (কালের কন্ঠ)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

দুঃসময়ের কান্ডারি তাজউদ্দীন আহমদ

প্রকাশের সময় : ০৮:০৪:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০

ড. মো. আনিসুজ্জামান: করোনার বৈশ্বিক মহামারিতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক জীবনে প্রচন্ড আঘাত হেনেছে। অসৎ, অযোগ্য কিছু প্রতারকের অর্থলিপ্সা উদগ্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সমাজের নৈতিক অধঃপতিত জীবনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। অর্থ কোনো সমস্যা নয়, সামরিক স্বৈরশাসকের আস্ফাালন সমাজকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কিছুসংখ্যক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার, ঠিকাদার, আড়তদার, মজুদদার, আমলা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিষিয়ে তুলেছেন। চুরি, বাটপারি, প্রতারণা কোনো অনৈতিক পথ বাকি নেই। কিছুসংখ্যক মানুষের অপকর্মের দায় সমাজের সবার ওপর চেপে বসেছে।
দুর্দিন-দুঃসময়ে নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগ্যতা ও দূরদর্শিতা পপ্রাণের সময়। জনগণের সামাজিক মন স্পষ্ট হয় দুর্দিনে। বাংলাদেশে বহুবার মহামারি হয়েছে। কলেরা, গুটিবসন্ত ছিল স্থানিক। সারা দেশে একসঙ্গে সংক্রমণ হয়নি। করোনার মতো বহুমাত্রিক মহামারি বাংলাদেশে কখনো আসেনি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মানুষ চরম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রায় এক কোটি বাঙালী ঘরবাড়ি ফেলে শূন্য হাতে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। লুট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, নির্যাতনে বিপন্ন মানুষের নীরব কান্না বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিচ্ছিন্নভাবে প্রাণ রক্ষায় তৎপর। অসংগঠিত রাজনৈতিক নেতাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ অল্প সময়ের ব্যবধানে সংগঠিত করে, সরকার গঠন করে দক্ষতা, যোগ্যতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রকার সংশয়, সন্দেহ প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পথ মসৃণ ছিল না। যুদ্ধকালীন জটিল পরিস্থিতিতে সবার লক্ষ্য ছিল সব কিছুর আগে দেশ স্বাধীন করতে হবে। বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র ও জটিল পরিস্থিতিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাজউদ্দীন আহমদের সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে। সরকার গঠন, দপ্তর বণ্টন, মুক্তিবাহিনী গঠন, ট্রেনিং, অস্ত্র সংগ্রহ, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, বৈশ্বিক কূটনৈতিক তৎ্পরতা, শরণার্থী শিবির, মানুষ রক্ষা করা, যুদ্ধ পরিচালনা, মুক্তাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা কোনোটি থেকে কোনোটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাজউদ্দীন আহমদ সব কিছু সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় ক্ষণজন্মা তাজউদ্দীন আহমদের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনো বিতর্ক হয়নি।
বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া দেশকে স্বনির্ভর করতে চেয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থনৈতিক রূপরেখায় স্বনির্ভরতার ছাপ স্পষ্ট। বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া দেশ কিভাবে চলবে, স্বাধীনতার পর সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, দরিদ্রকে আমরা ভাগ করে নেব। করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির চরম মন্দাদশায় দরিদ্রকে ভাগ করে নেওয়ার প্রশ্নটি আবার সামনে এসেছে। তাজউদ্দীন আহমদ মনে করতেন নিরপেক্ষ বৈদেশিক সাহায্য বলে কিছু নেই। সব সাহায্যের মধ্যেই কিছু না কিছু শর্ত থাকে। সাহায্যনির্ভর জাতির কোনো আত্মসম্মান থাকে না।
তাজউদ্দীন আহমদ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস করতেন না। অল্প বয়সে সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন কিন্তু পরিণত বয়সে সমাজতান্ত্রিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থা থাকলেও কমিউনিজমে তাঁর চিন্তা পৌঁছেনি এমনটিই মনে করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তাজউদ্দীন আহমদ বাঙালি জাতিকে স্বনির্ভর জাতি হিসেবে পরিণত করার জন্য কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলতেন। তাঁর স্বনির্ভর অর্থনৈতিক চিন্তার ভিত্তি ছিল কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপান্তরের দিকে। ১০ জনের সম্পদ একজনের পকেটে থাকার চেয়ে ১০ জনের পকেটে থাকাই উত্তম।
তাজউদ্দীন আহমদ মানুষ ভালোবাসতেন। তাঁর চিন্তা ও কর্মের প্রেরণা ছিল মানুষ। এই মানুষ কোনো বিশেষ শ্রেণির মানুষ নয়। ধনী, দরিদ্র, বাঙালী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী- সবাই তাঁর কাছে সমান। কোনো বিশেষ শ্রেণি-গোষ্ঠী তাঁর কাছে কখনো কোনো বিশেষ মর্যাদা পায়নি। বাংলাদেশ ছিল তাঁর পরিবার। পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তিনি সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন। সবার ওপর মানুষকে সত্য বলে তিনি জানতেন। মানুষের সুখ ও স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্রের বিকল্প কিছু নেই। মানুষের ওপর তাঁর সর্বোচ্চ আস্থা থাকায় মাত্র ৪৬ বছর বয়সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্বদানে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার সূচনালগ্নেই তাজউদ্দীন আহমদের পরিকল্পনা পাকিস্তানীজমের কাছে পরাজয় ঘটে। শত্রæপক্ষ তাঁকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। বাঙালী জাতির কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম রূপকার তাজউদ্দীন আহমদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের নির্মমভাবে জেলের ভেতরে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ক্ষণজন্মা এই মহান নেতাসহ জাতীয় নেতাদের হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন করে বাঙালী জাতির ঋণ শোধ করার সময় বহু আগেই এসেছে। বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হলেই ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সঙ্গী তাজউদ্দীন আহমদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে মানবজাতির সামনে এই বার্তাই করোনা দিয়েছে। কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাঙাীল জাতির মুক্তি সম্ভব। (কালের কন্ঠ)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়