জন্মস্থানেই অস্তিত্ব সংকটে পোড়াবাড়ির চমচম
![](https://hakkatha.com/wp-content/uploads/2024/05/hakkathafav.png)
- প্রকাশের সময় : ১১:৫২:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ১১৪ বার পঠিত
টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের মিষ্টিপট্টিতে টাঙ্গাইলের প্রসিদ্ধ চমচম স্বল্পপরিসরে পাওয়া গেলেও পোড়াবাড়িতে অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। পোড়াবাড়ির প্রসিদ্ধ চমচমের যৌবনকালে গ্রামের ঘরে ঘরে শুধু চমচম তৈরি হতো। টাঙ্গাইল ধেকে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন- মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
যুগ যুগ ধরে রসনাবিলাসী বাঙালীর তৃপ্তিদায়ক মিষ্টান্ন চমচম। চমচম বলতে বাঙালী একবাক্যে বুঝে নেয় টাঙ্গাইল তথা পোড়াবাড়ির প্রসিদ্ধ চমচমের কথা। রাষ্টীয় বা সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠান কিংবা বন্ধুদের আড্ডাও চমচম ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না। টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়িতে উৎপাদিত সেই বিখ্যাত চমচম বর্তমানে তার জন্মস্থানেই নিরুদ্দেশ হওয়ার পথে। টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের মিষ্টিপট্টিতে টাঙ্গাইলের প্রসিদ্ধ চমচম স্বল্পপরিসরে পাওয়া গেলেও পোড়াবাড়িতে অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। পোড়াবাড়ির প্রসিদ্ধ চমচমের যৌবনকালে গ্রামের ঘরে ঘরে শুধু চমচম তৈরি হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মাত্র ১০-১২টি বাড়িতে চমচম তৈরি করা হয়।
প্রসিদ্ধ চমচমের গোড়াপত্তন: টাঙ্গাইল শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে ধলেশ্বরীর শাখা নদী এ্যালনজানীর বাম তীর ঘেঁষে সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি ইউনিয়ন তথা পোড়াবাড়ি গ্রাম। ধলেশ্বরী নদীটি দাইন্যা ইউনিয়নের চারাবাড়ি ঘাট থেকে বাঁক নিয়ে দক্ষিণে চলে যাওয়ার আগে পোড়াবাড়ির দিকে এ্যালনজানী শাখা নদী তৈরি করেছে। প্রাচীনকালে প্রমত্তা ধলেশ্বরীর বাম তীরে চারাবাড়ি নামক স্থানে গড়ে ওঠে জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। ব্রিটিশরা সবে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু করেছে। ওই সময়ে ¯্রােতঃস্বিনী ধলেশ্বরী নদীর ঘাটে স্টিমার, লঞ্চ ও মালবাহী বড় বড় নৌকা নোঙর ফেলতো। নোঙর করা লঞ্চ-স্টিমার থেকে নেমে দেশি-বিদেশি হরেক রকমের মানুষ চারাবাড়ি ও টাঙ্গাইল শহরে কেনাকাটা করত। কেউ সাদা চামড়ার, কেউ কালো, কেউবা লম্বা অথবা বেঁটে। এদের কেউ আবার শৌখিন পর্যটক, ব্যবসায়ী অথবা বেনিয়া-আমলা। দেশি-বিদেশি বণিক ও বেনিয়ারা টাঙ্গাইল থেকে পাট কেনার জন্য এসে পোড়াবাড়ির চমচম নিয়ে বাড়ি ফিরত। ধলেশ্বরী নদীর ঘাট চারাবাড়িতে থাকলেও পাশের পোড়াবাড়িই ছিল প্রসিদ্ধ চমচমের আঁতুড়ঘর। ধলেশ্বরী নদীর মাতৃস্নেহে গড়ে উঠে মোহনীয় মিষ্টি চমচম। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এ চমচম দেশ-বিদেশে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করে নেয়। পোড়াবাড়ির এ চমচমই অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। মূলত: পোড়াবাড়ির চমচমের পোড়া ইটের মতো রঙ ও সুস্বাদু কড়া মিষ্টি এবং আবরণের ভেতর গোলাপি আভাযুক্ত নরম অংশ রসনাবিলাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। ওই সময়টাই ছিল পোড়াবাড়ির চমচমের যৌবনকাল। ওই সময় পোড়াবাড়িতে ৩২টি মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ মণ চমচম তৈরি ও বিক্রি হতো। চমচম ও বিভিন্ন রকম মিষ্টি তৈরির জন্য পোড়াবাড়ির প্রায় দুইশ পরিবার যুক্ত ছিল।
চমচম তৈরির কথা: টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের মিষ্টিপট্টি ও পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইলের প্রসিদ্ধ চমচম তৈরিতে ধলেশ্বরী নদীর পানি, গরুর খাঁটি দুধ, দেশি চিনি (লালচিনি), লাকড়ির চুলা, তেঁতুল কাঠের লাকড়ি ইত্যাদি উপকরণ লাগে। পপ্রমে দুধ তেঁতুলের লাকড়ি দিয়ে জ্বাল করে ছানা তৈরি করতে হয়। তৈরিকৃত ছানা দিয়ে বিভিন্ন আকারের (সাইজ) কাঁচা চমচমের আকার দেওয়া হয়। অন্য চুলায় ধলেশ্বরীর পানির সঙ্গে লাল চিনি মিশিয়ে তেঁতুলের লাকড়ি দিয়ে জ্বাল করে ‘সিরা’ তৈরি করা হয়। এই সিরা তৈরির তাপই প্রসিদ্ধ চমচমের মূল কৌশল। সিরার তাপ বুঝে তার মধ্যে কাঁচা চমচম দিয়ে আবার সামান্য জ্বাল দিতে হয়। পরে চুলা থেকে নামিয়ে চমচমসহ সিরা ধীরে ধীরে ঠান্ডা করতে হয়। সবশেষে চমচম থেকে বাড়তি সিরা ঝেড়ে চমচমের ওপর দুধের তৈরি মাওয়া ছড়িয়ে দিতে হয়। ফলে তৈরি চমচমের বাইরের অংশ কিছুটা শক্ত হলেও ভেতরের অংশ মৌমাছির চাকের মতো হয়ে একেবারে নরম হয়। চমচম তৈরির ইতিহাস টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির প্রসিদ্ধ চমচম প্রথম কে তৈরি করেছেন তা নিশ্চিত করে কেউ জানাতে পারেননি। জনান্তিকে জানা যায়, স্থানীয় দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম পোড়াবাড়িতে চমচম তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে পোড়াবাড়িতে চমচম তৈরি হতো। দশরথ গৌড়ের পর তার আত্মীয় রাজা রামগৌড়, নারায়ণ গৌড়, কোশাই দেব, দুই সহোদর মদন হালুই ও কোকন হালুই, মোহন লাল, শিব শঙ্কর গৌড়, প্রকাশ চন্দ্র দে সরকার প্রমুখ পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করতেন। এদের মধ্যে পাকিস্তান আমলে নারায়ণ গৌড় পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করে উপমহাদেশে প্রসিদ্ধ হন। বাঙালীদের মধ্যে চমচম তৈরি করে প্রসিদ্ধ হওয়ায় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তাকে ‘বাঙালী হালুই কর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা পোড়াবাড়ির চমচম। ছবি: যায়যায়দিন
ত্রিশ দশকের শেষের দিকে আসামের রামেন্দ্র ঠাকুর, তীর্থবাসী ঠাকুর টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারে মিষ্টি তৈরি ও ব্যবসা শুরু করেন। এরপর থেকেই টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার ‘মিষ্টিপট্টি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে তাদের তৈরি মিষ্টি কখনোই পোড়াবাড়ির চমচমকে গুণে-মানে টপকাতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পোড়াবাড়ি গ্রামের গোড়াপত্তনের পেছনে মুঘল সুবেদার ইসলাম খাঁ নিয়োজিত শাসক পীর শাহজামানের কৃতিত্ব ছিল। ১৬০৮ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যে ইসলাম খাঁ কাগমারী পরগনার শাসনভার শাহ জামানের ওপর র্অর্পণ করেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে ধলেশ্বরী নদীর বাম তীরে চারাবাড়িতে লঞ্চ ও স্টিমার ঘাট স্থাপন করেন। সেখানে গড়ে ওঠে ব্যবসাকেন্দ্র। একসময় চারাবাড়ির গ্রামের দক্ষিণ অংশে ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বাজার ও বসতবাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে ওই এলাকাকে পোড়াবাড়ি বলা হতো। কালক্রমে ওই পোড়াবাড়ি এলাকাই চমচমের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং পোড়াবাড়ি গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
![](http://hakkatha.com/wp-content/uploads/2020/09/Tangail-Get.jpg)
১৯৬০ সালে তৎকালীন টাঙ্গাইল মহকুমার যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হলে ঢাকা-টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহসহ দেশের অন্যসব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। ফলে টাঙ্গাইলের চমচমের সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। চমচমের সেকাল একাল চল্লিশের দশকে পোড়াবাড়িসহ টাঙ্গাইলের পশ্চিমাঞ্চল ছিল চরাভূমি। ওই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র পেশা ছিল কৃষি। ওই এলাকায় গরু, মেষ, ঘোড়া, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি গবাদি পশুপালন করা হতো। সে সময় গরুর দুধ সহজলভ্য ও সস্তা ছিল। পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির বয়োবৃদ্ধ কারিগররা জানান, তাদের পূর্ব-পুরুষের আমল থেকে এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ছোটবেলায় দেখেছেন, এক হাঁড়ি দুধ দু’পয়সা থেকে ৪ পয়সায় বিকিকিনি হতো। চিনি পাওয়া যেত ৩ আনা থেকে ৫ আনা সের দরে। ওইসব চিনি রেশনে দেয়া হতো। আর চমচম বিক্রি হতো ৬ আনা থেকে ৮ আনা সের দরে। এর পরপরই যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে চর জেগে উঠতে থাকে। প্রমত্তা ধলেশ্বরী নদী তার বুকের সুধা ঢেলে দিয়েছিল চমচম তৈরির জন্য, সেই ধলেশ্বরী বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিচ্ছে তার ব্যাপ্তি। বন্ধ হয়ে গেছে চারাবাড়ি-পোড়াবাড়ির সঙ্গে নৌকা যোগাযোগ। ফলে পোড়াবাড়ি তার ঐতিহাসিক ঐতিহ্য হারিয়েছে। নিস্তব্ধ হয়ে মুখ থুবরে পড়েছে ঐতিহ্যের অতীত। ধলেশ্বরী ও এ্যালনজানী নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেছে প্রসিদ্ধ চমচমের প্রধানতম কাঁচামাল ধলেশ্বরীর মিঠা পানি। অর্ডার পেলে এখনো কারিগররা ধলেশ্বরী নদীর পানি এনে প্রসিদ্ধ চমচম তৈরি করে সরবরাহ করেন। তবে তার খরচ প্রচলিত বাজার দরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পড়ে। বর্তমানে পোড়াবাড়িতে ৪টি ও চারাবাড়িতে ৫টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। এছাড়া পোড়াবাড়ি গ্রামে মাত্র ১০-১২টি পরিবার মিষ্টি তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু আগে ষাটের দশকে পোড়াবাড়ির প্রসিদ্ধ চমচমের দাম ছিল সের প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা। চমচম ছাড়াও রসগোল্লা, অমৃত, কালোজাম, পানতোয়া, সন্দেশ, রাজভোগ, রসমালাই, লালমোহন, ক্ষীর মোহন নামীয় মিষ্টি দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। বর্তমানে চমচমের আগের সেই স্বাদ না থাকলেও মূল্য কেজি প্রতি ২০০-৩২০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্টরা যা বলেন অতি মুনাফালোভী কিছু মিষ্টি ব্যবসায়ীর কারণে টাঙ্গাইলের প্রসিদ্ধ চমচম ঐতিহ্য হারিয়ে অস্তিত্ব হারানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। দক্ষ কারিগরের অভাবেও চমচমের গুণগত মান কমে গেছে। ফলে খুদে ব্যবসায়ীরা পেশায় টিকে থাকতে ভেজাল চমচম তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছে। ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে করোনা মহামারি। করোনাভাইরাসের কারণে তিন মাস মিষ্টি তৈরি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন। বাঙালী হালুই করের নাতি (মেয়ের ঘরের) গণেষ চন্দ্র গৌড় জানান, ১০০ বছর ধরে তাদের পরিবার চমচম শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বাঙালী দাদুর কাছে তার চমচম তৈরিতে হাতেখড়ি। দাদুর দেওয়া দোকান ‘আদি পোড়াবাড়ি মিষ্টান্ন ভান্ডার’ তিনি পরিচালনা করছেন। বাজার খারাপ হওয়ায় তিনি দোকানের অর্ধাংশ রেখে বাকি অর্ধাংশে মনোহারী দোকান করেছেন। তিনি জানান, পোড়াবাড়ির চমচমের মূল রহস্য ধলেশ্বরী নদীর মিঠা পানি, গরুর খাঁটি ঘন দুধ, লাল চিনি ও দুর্লভ তেঁতুলের লাকড়ি এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ। এসব সামগ্রী না পাওয়ায় সেই প্রসিদ্ধ চমচম তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চারাবাড়ি-পোড়াবাড়ি শহর থেকে দূরে ও অপর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেও এ শিল্পটিতে জনসমাগম কমে গেছে। মহান স্বাধীনতার পরেও তিনি প্রতিদিন ২-৩ মণ চমচম বিক্রি করতেন। বর্তমানে প্রতিদিন ২০-২২ কেজি চমচম বিক্রি করাও দুরূহ। পোড়াবাড়ি গ্রামে বাড়িতে চমচম তৈরি করেন বাঙালী হালই করের অপর নাতি (মেয়ের ঘরের) সাধন গৌড়। তিনি জানান, চমচমের আগের বাজার নেই। আগে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহর থেকে চমচম তৈরির অর্ডার পেতেন। বর্তমানে জেলার বাইরের কোনো অর্ডার নেই। পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক না পাওয়ায় তিনি চমচম তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
টাঙ্গাইল জেলা হোটেল রেস্তোরা ও মিষ্টির দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও মিষ্টিপট্টির জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক স্বপন ঘোষ জানান, মিষ্টিপট্টিতে তাদের চারটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। শ্রমিক ও কারিগরসহ ১১৭ জন ব্যক্তি তাদের কারখানায় কাজ করে। করোনার প্রভাবের আগে দৈনিক ১০-১২ মণ মিষ্টি বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন দুই মণ বিক্রি করাও কষ্টসাধ্য। করোনা মহামারির কারণে এ শিল্প ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। সরকারি সুবিধা দেওয়ার জন্য সমিতির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ফরম পূরণ করে নিলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
খ্যাতিমানদের প্রিয় চমচম এ দেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তির প্রিয় ছিল পোড়াবাড়ির চমচম। তাদের খাদ্য তালিকায় চমচম ঠাই পেত বলে জানা গেছে। বিশেষ করে রসনাবিলাসী খ্যাতিমান রাজনীতিবিদগণ পোড়াবাড়ির চমচমের প্রতি খুব দুর্বল ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন-শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাদু সম্রাট পিসি সরকার, নবাব আলী চৌধুরী, জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ, প্রমথ নাথ চৌধুরী প্রমুখ।
শেষ কিন্তু শেষ নয় প্রসিদ্ধ পোড়াবাড়ির চমচম শুধু রসনা তৃপ্তিতেই নয়, ঐতিহ্যেও বিশ্বে অনন্য। এ চমচম তৈরির কারিগররা বংশ পরম্পরায় এর ঐতিহ্য ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ যাবৎকালে পোড়াবাড়ির চমচম শিল্প কোনো প্রকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। ফলে জন্মস্থানেই নিরুদ্দেশ হচ্ছে প্রসিদ্ধ পোড়াবাড়ির চমচম। দেশের এ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সহযোগিতার দাবি করেছেন। (দৈনিক যায়যায়দিন)