নিউইয়র্ক ০১:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

করোনায় প্রতিদিন যা দেখছি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:২৫:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০
  • / ১১৩ বার পঠিত

কাজী আসাদ: করোনাকালীন এই সময়টাতে নিউইয়র্কে অবস্থান করায় প্রতিদিন এখানকার নিউজ চ্যানেলগুলো দেখছি। সবগুলো নিউজ চ্যানেলই গত প্রায় দুই মাস ধরে তাদের নিয়মিত গতানুগতিক প্রোগ্রামে পরিবর্তন এনে সারাক্ষণ মূলত: করোনাভাইরাস পেন্ডেমিক কাভার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও এই সময়ের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, ডাক্তারবৃন্দ সর্বক্ষণ তাদের ধারণা, মতামত, চিন্তাভাবনা ইত্যাদি শেয়ার করছেন। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের মোট মৃতের সংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি শুধু আমেরিকাতেই, এ পর্যন্ত মৃত মোট ৫৬,০০০ আর আক্রান্ত প্রায় দশ লক্ষ। কিন্তু একটিবারের জন্য একজনকেও এটা নিয়ে হা হুতাশ করতে দেখলাম না। একটিবারের জন্য একজনও বলল না, হায় হায় এখন কি উপায় হবে? এই মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা এখন কার স্মরণাপন্ন হব?
শুরু থেকেই এটাকে ভয়ংকর একটা মেডিক্যাল ক্রাইসিস হিসাবে ধরে নিয়ে কিভাবে তা সমাধান করা যায় এরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে এবং তাদের সমস্ত কথাবার্তা ঠিক এই ধারাতেই চলছে। করোনাভাইরাসটি আসলে কি, কিভাবে সংক্রমণ ঘটায়, কতটা মারাত্বক, কাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি, এটাকে কি কি পদ্ধিতিতে প্রতিহত করা যায়, জনগণকে কি কি করতে হবে, ট্রাম্প প্রশাসন ঠিকঠাক মত নেতৃত্ব দিতে পারছে কি পারছে না, ভ্যাকসিনের কি অবস্থা, অর্থনীতির উপর কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, আগামীতে কি কি সম্ভাবনা আছে এইসব বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে। আর এ দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি করা মডেলটির প্রজেকশনের সাথে বাস্তব অবস্থার তুলনা দেখিয়ে যাচ্ছে। বাস্তব অবস্থা মোটামুটি সেই প্রজেকশনের পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের দেখানো ডায়াগ্রাম এর আক্রান্ত/মৃত্যুর ইনডিকেটরটি ক্রমে উপরের দিকে উঠে শীর্ষ বিন্দুকে স্পর্শ করে কয়েকদিন ফ্ল্যাট থেকে বর্তমানে নীচের দিকে নেমে আসছে। সংশ্লিষ্ট সবাই আস্থার সাথে বলছেন যে তাদের মিটিগেশন পদক্ষেপগুলো কাজ করছে।
ভাইরাসটির সংক্রমণ সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনার পর এখন এরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করার দিকে অগগ্রসর হচ্ছে। সতর্কতার সাথে এবং সোস্যাল ডিসটেন্সিং সহ অন্যান্য করণীয়গুলো অব্যাহত রেখে তারা পর্যায়ক্রমে স্টে হোম আদেশ শিথিল করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
তবে রিওপেনিং এর ব্যাপারে এদের মধ্যে মতভেদ আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রিপাবলিক্যানরা আগামি নির্বাচনের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এখনই খুলে দেয়ার পক্ষে আর জনস্বাস্থকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ডেমক্র্যাটরা এর বিরোধী। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা এখনই রিওপেন করার বিপক্ষে মত দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, এখনই অর্থনীতি খুলে দেয়া ঠিক হবে না। দিলে মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং মডেলটির পরিবর্তন ঘটবে। তারপরও অল্প কয়েকটি ষ্টেট ইতিমধ্যেই কিছু কিছু কার্যক্রম খুলে দিয়েছে; কেউ কেউ অতিসত্বর খুলতে যাচ্ছে। আবার কোন কোন ষ্টেট এখনই খুলতে রাজী না, তারা আরও অপেক্ষা করার পক্ষে। বিশেষ করে যে ষ্টেটগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি। কারণ পরিমিত টেষ্ট, হাসপাতাল ক্যাপাসিটি, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ইত্যাদির ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এবং সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা আরও কমিয়ে না আনা পর্যন্ত তারা খোলার পক্ষে নয়। সকলেই একমত যে, খুলে দেয়ার পর আবারো ভাইরাসটির পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে এবং এরকম কিছু ঘটলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলেই এও জানে যে, একটা ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই মুহূর্তে অর্থনীতি খুলে দেয়া ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটাই এদের এখনকার আলোচনার প্রধান বিষয়। -ফেসবুক থেকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

করোনায় প্রতিদিন যা দেখছি

প্রকাশের সময় : ০৬:২৫:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০

কাজী আসাদ: করোনাকালীন এই সময়টাতে নিউইয়র্কে অবস্থান করায় প্রতিদিন এখানকার নিউজ চ্যানেলগুলো দেখছি। সবগুলো নিউজ চ্যানেলই গত প্রায় দুই মাস ধরে তাদের নিয়মিত গতানুগতিক প্রোগ্রামে পরিবর্তন এনে সারাক্ষণ মূলত: করোনাভাইরাস পেন্ডেমিক কাভার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও এই সময়ের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, ডাক্তারবৃন্দ সর্বক্ষণ তাদের ধারণা, মতামত, চিন্তাভাবনা ইত্যাদি শেয়ার করছেন। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের মোট মৃতের সংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি শুধু আমেরিকাতেই, এ পর্যন্ত মৃত মোট ৫৬,০০০ আর আক্রান্ত প্রায় দশ লক্ষ। কিন্তু একটিবারের জন্য একজনকেও এটা নিয়ে হা হুতাশ করতে দেখলাম না। একটিবারের জন্য একজনও বলল না, হায় হায় এখন কি উপায় হবে? এই মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা এখন কার স্মরণাপন্ন হব?
শুরু থেকেই এটাকে ভয়ংকর একটা মেডিক্যাল ক্রাইসিস হিসাবে ধরে নিয়ে কিভাবে তা সমাধান করা যায় এরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে এবং তাদের সমস্ত কথাবার্তা ঠিক এই ধারাতেই চলছে। করোনাভাইরাসটি আসলে কি, কিভাবে সংক্রমণ ঘটায়, কতটা মারাত্বক, কাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি, এটাকে কি কি পদ্ধিতিতে প্রতিহত করা যায়, জনগণকে কি কি করতে হবে, ট্রাম্প প্রশাসন ঠিকঠাক মত নেতৃত্ব দিতে পারছে কি পারছে না, ভ্যাকসিনের কি অবস্থা, অর্থনীতির উপর কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, আগামীতে কি কি সম্ভাবনা আছে এইসব বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে। আর এ দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি করা মডেলটির প্রজেকশনের সাথে বাস্তব অবস্থার তুলনা দেখিয়ে যাচ্ছে। বাস্তব অবস্থা মোটামুটি সেই প্রজেকশনের পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের দেখানো ডায়াগ্রাম এর আক্রান্ত/মৃত্যুর ইনডিকেটরটি ক্রমে উপরের দিকে উঠে শীর্ষ বিন্দুকে স্পর্শ করে কয়েকদিন ফ্ল্যাট থেকে বর্তমানে নীচের দিকে নেমে আসছে। সংশ্লিষ্ট সবাই আস্থার সাথে বলছেন যে তাদের মিটিগেশন পদক্ষেপগুলো কাজ করছে।
ভাইরাসটির সংক্রমণ সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনার পর এখন এরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করার দিকে অগগ্রসর হচ্ছে। সতর্কতার সাথে এবং সোস্যাল ডিসটেন্সিং সহ অন্যান্য করণীয়গুলো অব্যাহত রেখে তারা পর্যায়ক্রমে স্টে হোম আদেশ শিথিল করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
তবে রিওপেনিং এর ব্যাপারে এদের মধ্যে মতভেদ আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রিপাবলিক্যানরা আগামি নির্বাচনের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এখনই খুলে দেয়ার পক্ষে আর জনস্বাস্থকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ডেমক্র্যাটরা এর বিরোধী। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা এখনই রিওপেন করার বিপক্ষে মত দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, এখনই অর্থনীতি খুলে দেয়া ঠিক হবে না। দিলে মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং মডেলটির পরিবর্তন ঘটবে। তারপরও অল্প কয়েকটি ষ্টেট ইতিমধ্যেই কিছু কিছু কার্যক্রম খুলে দিয়েছে; কেউ কেউ অতিসত্বর খুলতে যাচ্ছে। আবার কোন কোন ষ্টেট এখনই খুলতে রাজী না, তারা আরও অপেক্ষা করার পক্ষে। বিশেষ করে যে ষ্টেটগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি। কারণ পরিমিত টেষ্ট, হাসপাতাল ক্যাপাসিটি, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ইত্যাদির ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এবং সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা আরও কমিয়ে না আনা পর্যন্ত তারা খোলার পক্ষে নয়। সকলেই একমত যে, খুলে দেয়ার পর আবারো ভাইরাসটির পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে এবং এরকম কিছু ঘটলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলেই এও জানে যে, একটা ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই মুহূর্তে অর্থনীতি খুলে দেয়া ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটাই এদের এখনকার আলোচনার প্রধান বিষয়। -ফেসবুক থেকে।