একাত্তর টিভি, নুরুল হক নুরের ডাক ও উৎসাহ-উদ্বেগ

- প্রকাশের সময় : ১০:২২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০২০
- / ৮৮ বার পঠিত
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ: গত কয়েকদিন ধরে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের ৭১ টিভি বর্জনের ডাক নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যমে বেশ উত্তাপ দেখা যাচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে বাহাস চলছে। একাত্তর টিভি চ্যানেলটি জন্ম থেকে আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে। সাংবাদিকতার মানদন্ডে একাত্তর কতটা উত্তীর্ণ তা নিয়ে বিশদ বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। টকশোর নামে বিশিষ্টজনদের ডেকে নিয়ে অপমান অপদস্ত করার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে স্টেশনটির বিরুদ্ধে। এমনকি রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে টকশো অতিথিকে টিভি থেকে বের হওয়ার পরই প্রভাবশালী মহলকে দিয়ে হেনস্থা করার কয়েকটি ঘটনা ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বেশ আলোচিত হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ‘এজেন্ডা টিভি’ হিসেবেও অভিহিত করেন। ভুয়া টেলিফোন সংলাপ প্রচার করে ভিন্নমতের রাজনীতিকদের অপদস্থ ও হয়রানির সহায়ক ভুমিকায়ও দেখা যায় ৭১ টিভিসহ আরও কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনকে।
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
একজন সংবাদকর্মী ও সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠনে ক্ষুদ্র দায়িত্বের জায়গা থেকে আমার স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে- কোন সংবাদমাধ্যমের কন্ঠ স্তব্ধ করার যে কোন দাবি বা হুমকির আমি ঘোরতর বিরোধী। নিন্দনীয়। দল, মত পথ নির্বিশেষে এর প্রতিবাদ করে থাকি, করে যাবো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমকে প্রতিদিন, প্রতি মূহুর্তে পাঠক-দর্শকের কাছে পরীক্ষা দিতে হয়। গণমাধ্যমের মূল দায়বদ্ধতার জায়গা পাঠক-দর্শক। সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কোন সংবাদমাধ্যম যদি রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিদ্বেষ উস্কে দেয়, আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক হয়ে ওঠে বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অনাচার-অবিচারের সহায়ক ভুমিকায় নামে তা গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার পাঠক-দর্শকের অবশ্যই আছে। এটা তার মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে মানুষ সংবাদপত্র কিনে বা ডিসের বিল দিয়ে টিভি দেখে। ওই পাঠক-দর্শকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোন সংবাদমাধ্যম প্রিয় দেশ, গণতন্ত্র, জাতিসত্তা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে ন্যাক্কারজনক ভুমিকায় নেমেছে, তা হলে তিনি নিজে বর্জন করে অন্যকে সজাগ করতে পারবেন না কেন? এটা আমার বোধগম্য নয়। তাঁর ডাকে সাড়া দিতে কাউকেতো বাধ্য করছেন না, সে ক্ষমতাও নেই।
নুরের ৭১ টিভি বর্জনের ডাককে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকে। তাদের উদ্বেগাকুল বক্তব্য বিবৃতি দেখা যাচ্ছে। এতে আমার সমস্যা নেই। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য তাদের দরদী বক্তব্য বিবৃতি দেখে ভালোই লাগছে।
বন্ধুদের প্রতি বিনীত জিজ্ঞাসা- অতীতে শাহবাগ থেকে আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, দিনকাল, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ ভিন্নমতের মিডিয়া বন্ধ করা এমনকি আক্রমণ করার ডাক দিয়ে দিনের পর দিন যখন উন্মত্ততা প্রকাশ করা হয়েছিল তখন আপনাদের ভুমিকা কী ছিল? তখনতো সমর্থন করে কলম ধরেছেন, টকশোতে যুক্তির খৈ ফুটিয়েছেন। আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি গায়ের জোরে বন্ধ করে দিয়ে হাজারো সাংবাদিককে রাস্তায় ঠেলে দেওয়া এবং নয়া দিগন্ত ও সংগ্রাম অফিসে দফায় দফায় ফ্যাসিবাদী আক্রমণ হলে, আগুন দিলে পুলকিত হতে দেখেছি। সম্পাদক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান, আবুল আসাদদের চ্যাং-দোলা করে তুলে নিলে মিষ্টিমুখ করেছেন। বড়ই বিচিত্র আপনাদের চেতনা ও অনুভূতি! গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও আক্রান্ত হলে বিচলিত বোধ করেন না, বেচায়েন হয়ে যান বর্জনের ডাকে।
নুরুল হক নূর ৭১টিভি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি বা হামলা করার উস্কানী দিয়েছেন- এমনটাতো চোখে পড়েনি। তা হলে কি বন্ধ ও আক্রমণের চেয়ে বর্জনের ডাক অতিশয় বিপজ্জনক ব্যাপার!
এই যে কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জে সত্য সংবাদ প্রকাশ করে একজন সাংবাদিক খুন হলেন, তার নিন্দা করে একটি বিবৃতি পর্যন্ত দেখলাম না। গোটা গণমাধ্যমজুড়ে অরাজকতা, ডিজিটাল আইন দিয়ে দলন-দমন, ত্রাস সৃষ্টিতেও এতটা সোচ্চার দেখা যায় না।
অনেকের স্মরণ থাকার কথা, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০০ মেয়াদে দৈনিক ইনকিলাবের কয়েকটি সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় কবি শামসুর রহমান, সৈয়দ হক, রামেন্দু মজুমদারসহ চার বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে ইনকিলাব বর্জনের ডাক দেন। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপন না দেওয়ার জন্য সকল বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছিলেন তারা। তখন সেটা হালাল ছিল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সহায়ক ছিল, মোটেই হুমকি ছিল না! সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অপছন্দের টিভি ও সংবাদপত্রের সাংবাদিককে সংবাদ সম্মেলনে ও বড় অফিসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে গত এক দশকজুড়ে, এতে টু শব্দটি পর্যন্ত করতে দেখা যায় না। নুরুল হক নূর যদি বলেন, তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ…….। কী জবাব দেবেন?
আসুন, ৭১ টিভির স্বাধীনতার জন্য যেমন সোচ্চার হবো, তেমনি বন্ধ সকল গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি এবং সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়নসহ সংবাদমাধ্যমর স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
(মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র ফেসবুক থেকে)