আমেরিকার রক্ষণশীল চরিত্র
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৩:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
- / ৪৯৮ বার পঠিত
সুলতানা রহমান: ছেলের বন্ধুর মা তার মার্সেডিস স্টার্ট দিতে দিতে বললো- সুলতানা, আমি কি দেখতে ‘চিপ ওম্যান’? প্রশ্ন শুনে আমার ভ্রু কুচকে গেলো। তার চোখে তাকিয়ে বললাম- একেবারেই না, তুমি এ্যালিগেন্ট শুধু দেখতে না, মনের ভেতর থেকেও তুমি দারুন সম্ভ্রান্ত, বনেদি। জানতে চাইলাম এমন প্রশ্নের কারন কি। তারপর সে যা বললো তাতে লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে গেলো!
ছেলের বন্ধুর মা স্প্যানিশ আর বাবা আইরিশ। দুজনার বয়সের ব্যবধানটা চোখে লাগলেও তাদের দাম্পত্য জীবন প্রায় ১৮ বছরের। এবং দুজনেরই প্রথম বিয়ে। তাদের পারিবারিক বন্ধন, মূল্যবোধ অভাবনীয়। এই সেদিন ছিলো বউয়ের জন্মদিন। এ্যালবার্ট সিনিয়র বউকে সারপ্রাইজ দিতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফার্স্ট বানিয়েছে, ঠিক যেমন রেসিপি দিয়ে তার শ্বাশুড়ি বানাতো মেয়ের জন্য। মায়ের হাতের রান্না শুধু বাঙালী না, সারা দুনিয়ার মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। বছর চারেক আগে মৃত মায়ের হাতে বানানো নাশতার মতো নাশতা খেয়ে বউ আবেগাপ্লুত হয়ে গেলো, রেসিপি কিভাবে পেলো জানতে চাইতেই বললো- স্বপ্নে পেয়েছি।
কয়েকমাস আগে এলবার্ট সিনিয়র বউয়ের নামে নিউজার্সীতে একটি বাড়ি কিনেছে, সে মরে গেলে বুড়ো বয়সে বউকে যেনো অন্য কারো দ্বারস্থ হতে হয়! ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দুজন মিলে এখন সেই বাড়ি মনের মতো করে মেরামত করছে, সাজাচ্ছে। আমিও একদিন বাড়ি রং করার কামলা দিয়ে এসেছি!
আমার ছেলের বন্ধুদের মধ্যে যে কজনার বাবা-মাকে চিনি, সবার মধ্যেই দেখেছি পরিবারের প্রতি একনিষ্ঠতা, পারিবারিক বন্ধন, তা সে যে জাতপাতেরই হোক না কেন। আমি একা মা দেখে সবাই আমার ছেলেটাকে একটু বেশিই আদর করে। এদের মধ্যে অ্যালবার্ট দম্পতি এখন আমার পরিবারের অংশ, ফ্রেইন্ড এবং সিস্টার দুয়ে মিলে আমরা পরষ্পরকে ডাকি ফ্রাইস্টার! ঢাকায় থাকতেও ছেলের বন্ধুর মায়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলাম যা এখনো আছে, আর নিউইয়র্কে এসে নিজে নিজে বন্ধু বানানোর সময় সুযোগ হয়নি, ছেলের সূত্রেই ফ্রাইস্টার পাওয়া। তাদের নিয়ে জীবনের অনেক গল্প জমে গেছে। কিছু কিছু ফেসবুকে শেয়ার করেছি। সেই সূত্রে কেউ কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। ছেলের বন্ধুর মা কাউকে কাউকে এ্যাক্সেপ্টও করেছে খুশি মনে। এদের মধ্যে একজনের নামের শেষাংশের রহমান দেখে সে ভেবেছে আমার আত্বীয়স্বজন। আমার রেফারেন্সে সৌজন্যতামূলক কিছু কথাবার্তার পর সেই মি. রহমান লিখেছে, আই মিস ইউ! আমি তোমার জীবনের বেস্ট ফ্রেইন্ড হতে চাই!
এই পর্যন্ত শুনেই আমি বাকী কাহিনী অনুমান করে নিলাম। বললাম- এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের নাম ‘মুহম্মদ’। এ তালিকায় সম্ভবত দ্বিতীয় অবস্থানে রহমান।
সে বললো- এপর্যন্ত হলেও একটা কথা ছিলো, সে আমাকে এমন এমন টেক্সট পাঠানো শুরু করলো যেনো আমি তার গার্ল ফ্রেইন্ড! বলে দিলাম- আমি ম্যারেইড, বাচ্চা আছে। তবু সে টেক্সট করতে লাগলো। শেষমেষ ব্লক করে দিলাম। এরপর আরেকটা ফেইক আইডি টেক্সট করা শুরু করলো। প্রত্যাখ্যান করায় লিখলো- ইউ আর অ্য স্টুপিড ওম্যান! সুলতানা, ডু আই লুক লাইক সো চিপ দ্যাট এ্যা ম্যান হু ডাজন্ট নো মি, ক্যান থিঙ্ক ইন সাচ এ্যা ওয়ে? তোমাদের কালচারে পুরুষরা কি মেয়েদের এতোই সস্তা ভাবে?
আমি কি করে তাকে বলি- আমাদের কালচারে পুরুষদের স্বভাবই হলো টোকা দিয়ে দেখা বাজে কিনা! আর তাদের কাছে আমেরিকা মানে ‘ফ্রি সেক্স’ এর দেশ। পথে ঘাটে হাটে মাঠে মানুষ সারাদিন বুঝি এ নিয়েই পরে থাকে। নিউইয়র্কর মতো শহরে যৌনপেশা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ-এ অনেকে চিন্তাও করতে পারবেনা! আর তোমাদের যে পরিবার আছে, মূল্যবোধ আছে, বিবাহিত নারী-পুরুষ মানে যে পরষ্পরের প্রতি দায়বদ্ধ, এমন কি ধর্মীয় ভাবে তারা যে এতো কট্টর আর গোড়া-এসব তো আমরা জীবনেও শুনিনি। হলিউডের সিনেমা আর টিভি সিরিয়াল দেখে আমরা জেনেছি- আমেরিকা মানে বিয়ার, ডলার আর সেক্স! আর স্বল্প বসনা নারী মানে বোধ হয় যে কারো সম্ভোগের জন্য কাতর।
মুক্ত সমাজ মানে যা খুশি তাই নয়, বরং অনেক বেশি দায়বদ্ধ সমাজ। সারা পৃথিবীতেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর একটি রক্ষণশীল চরিত্র আছে, আমেরিকা তার ব্যতিক্রম নয়!