আমি ‘ভাইবার’ আমাকে মৃত্যুদন্ড দিলেন কেন!
- প্রকাশের সময় : ০৪:৩২:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ নভেম্বর ২০১৫
- / ১১৬৪ বার পঠিত
শাহাব উদ্দিন সাগর: আমি ‘ভাইবার’। আমি সারা বিশ্বের মানুষের ফ্রি কথা বলার মাধ্যম। আমার সৃষ্টি মানুষের কল্যাণে। আমি মানুষের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করি! আমি দূর প্রবাসে থাকা পিতার ফেলে আসা সন্তানের সঙ্গে সংযোগ ঘটাই, পিতা পুত্রের সঙ্গে কথা বলার সময় ছবি দেখে দেখে কথা বলার মাধ্যম মাত্র। পিতা যখন সন্তানকে চুমা দিয়ে ঘুম পাড়ায় সুদূর থেকে তখন আমি শীতল হই। এটা কি আমার অপরাধ! আমার জন্ম বাংলাদেশে নয়, আমি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিনি। তাহলে আমার মৃত্যুদন্ড হবে কেন? আমি (ভাইবার) বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আত্মীয় বা স্বজন নই। তাদের মৃত্যুদন্ডের পথ সুগম করেছে মাননীয় আদালত, কিন্তু সেটার জন্য আমাকে (ভাইবার) মৃত্যুদন্ড দিয়ে বাংলাদেশে বন্ধ করা হয়েছে। ভাইবার যদি মানুষের মতো কথা বলতে পারতো, তাহলে হয়তো এভাবেই নিজের ক্ষোভের কথাই বলতো। আর ওয়াটসআপ বলেছে; মনে রাখবেন ‘অন্ধ করে কিন্তু প্রলয় বন্ধ করা যাবে না’। ফেইসবুক বলেছে, আমারও কিন্তু কোন দোষ নেই। তারপরও আমাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে!
বাস্তবতা হলো এই। কিন্তু প্রশ্ন হলো! বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার নাকি ডিজিটাল সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর করতে হলে যে ভাইবার, ওয়াটসআপ, ফেইসবুককে অবাধ ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে সেটা কি সরকার বুঝে!
ধরে নিলাম সংস্কৃতি জগতের মানুষ হওয়ার কারণে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম হয়তো বুঝলেন না এসব কিছুর। কিন্তু তথ্য বিশেষজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় যিনি কি না অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাস করেন তিনি বুঝলেন না! বিষ্ময় সেখানে। প্রশ্ন সেই জায়গায়!
১. সরকারের দায়িত্বশীলদের অনেকেই বলেছেন সাইবার নিরাপত্তার কথা। সাকা এবং মুজাহিদের মামলার রিভিউর আদেশের শুনানীর সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ না রাখলে হয়তো বড়ো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারতো! প্রশ্ন হলো প্যারিসে এতো বড়ো ঘটনা ঘটলো সেখানে কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ছিল!
২. আমি বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে দেখতাম বড়ো বড়ো শপিং মলে প্রবেশের সময় আমাদের নিরাপত্তার কথা বলে দেহ তল্লাশী করা হতো মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। তখনই প্রশ্ন জাগতো আপনাদের মার্কেটের নিরাপত্তা আপনারা নিশ্চিত করবেন, আমরা ক্রেতা সাধারণ আমারা পণ্য কিনতে গিয়ে এতো তল্লাশীর শিকার হবো কেন? কিন্তু পরবর্তীতে আমি নিউইয়র্কে এসে অন্তত শতাধিক শপিং মলে প্রবেশ করেছি, বিশ্বাস করুন কোথায়ও মেটাল ডিটেকটরের মুখোমুখি হতে হয়নি। কারণ পুরো মলের এবং মলের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মলের পক্ষ থেকে করা হয়। আমি বলতে চাই; নিরাপত্তার কারণে যদি সরকার তথ্য প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাহলে তা করতে হবে জনগণের অগোচরে। ভাইবার, ফেইসবুক বন্ধ করে নয়।
৩. বিদেশে বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বসবার করেন। বর্তমান সময়ে তাদের অধিকাংশই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষকতায় বিশেষ করে ভাইবার, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে। প্রতিদিন এত সংখ্যক মানুষ তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন! সেটা কি উপলব্ধি করার মতো নয়! সরকার বললে দেশের স্বার্থে হয়তো এ ধরনের সিন্ধান্ত। কিন্তু এক কোটি মানুষ কি দেশের মানুষ নয়! তাদের রেমিটেন্সের কি বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল হয় না?
৪. নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্টীটের হাটবাজার সুপার মার্কেটের সামনে দীর্ঘদিন ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন বাউল দাদা। নাম, দস্তখত জানেন না। তিনিও কিন্তু ক্ষুব্ধ হয়েছেন এ ধরনের সিন্ধান্তে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দিনে দুই চারবার বাংলাদেশে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি ভাইবারের মাধ্যমে কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতি বড়োই বেমানান’। বাউল দাদার মতো নিউইয়র্কের অসংখ্য মানুষ যে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন এ ধরনের পদক্ষেপে তা কাছ থেকে না দেখলে বুঝা যাবে না।
৫. সরকার বলেছে, সাময়িক সময়ের জন্য এসব মাধ্যম বন্ধ ছিল, আবার বলেছে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকবে। কিন্তু এর পরও যে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে প্রযুক্তি বোদ্ধাদের অনেকে নানা মাধ্যমে ফেইসবুক, ভাইবার ব্যবহার করেছেন সরকার কি তা জানে! প্রশ্ন হলো; প্রযুক্তি বোদ্ধাদের আটকাতে পারলেন না সাধারণের গলায় কাটা দিলেন, আম জনতার উপর চটি ঘুরালেন, এর পরিনতি কি ভাবা দরকার না?
শাহাব উদ্দিন সাগর, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক। ২০ নভেম্বর ২০১৫।