নিউইয়র্ক ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আমি কথা রাখতে পারিনি……..

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০
  • / ১১৮ বার পঠিত

হাবিব রহমান: ব্যবসায়ী, স্টারলিং বাংলাবাজার বিজনোস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, বাংলাবাজার জামে মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীনের সাথে আমার এই ছবিটি (নীচে) গত ফেব্রæয়ারী মাসে নবীর শহর মদীনায় তোলা। তাঁর সাথে তোলা এটাই আমার শেষ ছবি। আমাকে সেদিন বার বার বলেছিলেন তাঁর স্বপ্নের কথা। কিভাবে তার মসজিদটি ৬ তালা করবেন তার কথা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অনেকগুলো বাড়ী কোন কিছুই তাঁর কম ছিলোনা। শেষ সময়ে তার একটাই চিন্তা ছিলো কিভাবে মসজিদটি তিনি একটি সুরম্য ভবনে পরিণত করবেন। তার এই স্বপ্ন পুরনে কিছু লোক বাঁধা সৃষ্টি করছিলো এটাই ছিলো তার মনের গোপন কস্ট।
নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাস শুরুর দিকে সবাই পাগলের মত বাজার করছিলো। জিনিষপত্রের দাম যে যার মত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। গিয়াস ভাই’র ছিলো বিরাট ডিসকাউন্ট স্টোর। প্রচুর মালের মওজুদ গড়ে তুলে ছিলেন তিনি। কিন্তু কোন পণ্যের দাম তিনি বাড়াননি। বিশেষ করে ন্যাপকিন, টিস্যু পেপার, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, পানি প্রচুর মওজুদ করেছিলেন তিনি। আমাকে বলতেন, সাপ্লাই কমে গেছে। বেশী দাম দিয়ে কিনছি। কিন্তু তার পরেও আমি আগের দামেই বিক্রি করছি। লাভ না হয় না হলো, লোকসান তো হচ্ছেনা! মানুষের এই বিপদের সময় তাদের উপর তো জুলুম করতে পারিনা!
সম্ভবত ১৮ মার্চ ২০২০। গিয়াস ভাই আমাকে কল দিলেন। বল্লেন- হাবিব ভাই তাড়াতাড়ি আসেন। আমার এখানে রিপোর্ট করতে সাংবাদিক এসেছে। নিউইয়র্ক পোস্টের দু’জন সাংবাদিক এসেছিলো সেদিন। তারা অনেকক্ষণ ছিলেন। দোকান ঘুরে ঘুরে দেখলেন। কথা বল্লেন। ছবি তুল্লেন। গিয়াস ভাই তাদের বল্লেন- আমার গোদামে আরো স্টক আছে। এসব নিত্য পণ্য দ্রব্য আমি ন্যায্য দামে জনগনের কাছে বিক্রি করবো। মুনাফাখোরি করবোনা।
২০ মার্চ নিউইয়র্ক পোস্ট তাদের পত্রিকায় একটা বিশাল রিপোর্ট ছাপে। দোকান ভর্তি নিত্যপণ্য দ্রব্যের ছবি সহ। শিরোনাম ছিলো ‘Bronx Shop flush with Toilet paper while big store is wipes clean corona virus out break’। নিউজে ছিলো গিয়াস ভাই এর প্রশংসা। পত্রিকাটা হাতে পেয়েই আমাকে ফোন। বল্লেন- হাবিব ভাই, তাড়াতাড়ি আসেন, দেখেন আপনার গিয়াস ভাইকে নিয়ে পত্রিকায় কি লিখেছে!
যাওয়ার পর তার থেকে একটা কপি নিলাম। বল্লাম এই সততার স্বীকৃতি আপনার একার নয়। আমাদের পুরো কমিউনিটির। নিউজটা আমি বাংলা পত্রিকায় ছাপবো। ইতিমধ্যে পরিস্থিতির কারণে পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে যায় (দু’টি ছাড়া নিউইয়র্কের সকল প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ)। গত ৩০ মার্চ গিয়াস ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। নিউজটা আমি আর ছাপতে পারিনি।
হাসপাতালে যাবার একদিন আগে আমাকে আবার কল। গেলাম এবং দেখলাম তিনি নিজের বসার জন্য আলাদা একটা বিরাট অফিস নিয়েছেন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখালেন। দেয়ালে ঝুলানো তার অসংখ্য ক্রেস্ট, অ্যাওয়ার্ড, পত্রিকার রিপোর্ট ইত্যাদি। বল্লাম এই অফিসটা আমরা জম্পেশ করে উদ্বোধন করবো। বড় পার্টি দিতে হবে। গিয়াস ভাই হাসলেন। অফিসটা আর উদ্বোধন হয়নি। তার আগেই তিনি নিয়তির ডাকে হারিয়ে গেলেন।
আসার সময় গিয়াস ভাই আমাকে ডেকে বললেন- হাবিব ভাই, আমার একটা ছোট্ট উপকার করে দিতে হবে। জানতে চাইলাম কি উপকার। তিনি তার অফিসের ড্রয়ার থেকে একটি ক্রেস্ট এবং একটি সাইটেশন বের করে আমার হাতে দিলেন। ক্রেস্ট-টি টাইম টিভি আর সাইটেশনটি কাউন্সিল মেম্বার রাফায়েলের দেয়া। দু’টোতেই তার নামের বানানে একটা অক্ষর ভুল আছে। আমি বললাম- ভাববেন না। আমি ঠিক করে এনে দেবো। গিয়াস ভাই নেই। আমি কার কাছে এগুলো ঠিকক করে ফিরিয়ে দিবো!
গিয়াস ভাই এত তাড়াতাড়িতো আপনার যাবার কথা ছিলোনা! এতস্বপ্ন আপনি বুকে লালন করেছিলেন এগুলো আপনি বাস্তবায়ন না করেই কেন চলে গেলেন! আপনার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে আমাকে সাথী হিসাবে চিয়েছিলেন। আমিও কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন আপনি হারিয়ে গেলেন, এমনি অবেলা আর অসময়ে। যখন বিদায় বেলায় আপনার মুখটিও একবার দেখার অধিকার রইলোনা? কেন গিয়াস ভাই? কেন?
১০,এপ্রিল ২০২০

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

আমি কথা রাখতে পারিনি……..

প্রকাশের সময় : ০৯:২৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০

হাবিব রহমান: ব্যবসায়ী, স্টারলিং বাংলাবাজার বিজনোস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, বাংলাবাজার জামে মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীনের সাথে আমার এই ছবিটি (নীচে) গত ফেব্রæয়ারী মাসে নবীর শহর মদীনায় তোলা। তাঁর সাথে তোলা এটাই আমার শেষ ছবি। আমাকে সেদিন বার বার বলেছিলেন তাঁর স্বপ্নের কথা। কিভাবে তার মসজিদটি ৬ তালা করবেন তার কথা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অনেকগুলো বাড়ী কোন কিছুই তাঁর কম ছিলোনা। শেষ সময়ে তার একটাই চিন্তা ছিলো কিভাবে মসজিদটি তিনি একটি সুরম্য ভবনে পরিণত করবেন। তার এই স্বপ্ন পুরনে কিছু লোক বাঁধা সৃষ্টি করছিলো এটাই ছিলো তার মনের গোপন কস্ট।
নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাস শুরুর দিকে সবাই পাগলের মত বাজার করছিলো। জিনিষপত্রের দাম যে যার মত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। গিয়াস ভাই’র ছিলো বিরাট ডিসকাউন্ট স্টোর। প্রচুর মালের মওজুদ গড়ে তুলে ছিলেন তিনি। কিন্তু কোন পণ্যের দাম তিনি বাড়াননি। বিশেষ করে ন্যাপকিন, টিস্যু পেপার, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, পানি প্রচুর মওজুদ করেছিলেন তিনি। আমাকে বলতেন, সাপ্লাই কমে গেছে। বেশী দাম দিয়ে কিনছি। কিন্তু তার পরেও আমি আগের দামেই বিক্রি করছি। লাভ না হয় না হলো, লোকসান তো হচ্ছেনা! মানুষের এই বিপদের সময় তাদের উপর তো জুলুম করতে পারিনা!
সম্ভবত ১৮ মার্চ ২০২০। গিয়াস ভাই আমাকে কল দিলেন। বল্লেন- হাবিব ভাই তাড়াতাড়ি আসেন। আমার এখানে রিপোর্ট করতে সাংবাদিক এসেছে। নিউইয়র্ক পোস্টের দু’জন সাংবাদিক এসেছিলো সেদিন। তারা অনেকক্ষণ ছিলেন। দোকান ঘুরে ঘুরে দেখলেন। কথা বল্লেন। ছবি তুল্লেন। গিয়াস ভাই তাদের বল্লেন- আমার গোদামে আরো স্টক আছে। এসব নিত্য পণ্য দ্রব্য আমি ন্যায্য দামে জনগনের কাছে বিক্রি করবো। মুনাফাখোরি করবোনা।
২০ মার্চ নিউইয়র্ক পোস্ট তাদের পত্রিকায় একটা বিশাল রিপোর্ট ছাপে। দোকান ভর্তি নিত্যপণ্য দ্রব্যের ছবি সহ। শিরোনাম ছিলো ‘Bronx Shop flush with Toilet paper while big store is wipes clean corona virus out break’। নিউজে ছিলো গিয়াস ভাই এর প্রশংসা। পত্রিকাটা হাতে পেয়েই আমাকে ফোন। বল্লেন- হাবিব ভাই, তাড়াতাড়ি আসেন, দেখেন আপনার গিয়াস ভাইকে নিয়ে পত্রিকায় কি লিখেছে!
যাওয়ার পর তার থেকে একটা কপি নিলাম। বল্লাম এই সততার স্বীকৃতি আপনার একার নয়। আমাদের পুরো কমিউনিটির। নিউজটা আমি বাংলা পত্রিকায় ছাপবো। ইতিমধ্যে পরিস্থিতির কারণে পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে যায় (দু’টি ছাড়া নিউইয়র্কের সকল প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ)। গত ৩০ মার্চ গিয়াস ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। নিউজটা আমি আর ছাপতে পারিনি।
হাসপাতালে যাবার একদিন আগে আমাকে আবার কল। গেলাম এবং দেখলাম তিনি নিজের বসার জন্য আলাদা একটা বিরাট অফিস নিয়েছেন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখালেন। দেয়ালে ঝুলানো তার অসংখ্য ক্রেস্ট, অ্যাওয়ার্ড, পত্রিকার রিপোর্ট ইত্যাদি। বল্লাম এই অফিসটা আমরা জম্পেশ করে উদ্বোধন করবো। বড় পার্টি দিতে হবে। গিয়াস ভাই হাসলেন। অফিসটা আর উদ্বোধন হয়নি। তার আগেই তিনি নিয়তির ডাকে হারিয়ে গেলেন।
আসার সময় গিয়াস ভাই আমাকে ডেকে বললেন- হাবিব ভাই, আমার একটা ছোট্ট উপকার করে দিতে হবে। জানতে চাইলাম কি উপকার। তিনি তার অফিসের ড্রয়ার থেকে একটি ক্রেস্ট এবং একটি সাইটেশন বের করে আমার হাতে দিলেন। ক্রেস্ট-টি টাইম টিভি আর সাইটেশনটি কাউন্সিল মেম্বার রাফায়েলের দেয়া। দু’টোতেই তার নামের বানানে একটা অক্ষর ভুল আছে। আমি বললাম- ভাববেন না। আমি ঠিক করে এনে দেবো। গিয়াস ভাই নেই। আমি কার কাছে এগুলো ঠিকক করে ফিরিয়ে দিবো!
গিয়াস ভাই এত তাড়াতাড়িতো আপনার যাবার কথা ছিলোনা! এতস্বপ্ন আপনি বুকে লালন করেছিলেন এগুলো আপনি বাস্তবায়ন না করেই কেন চলে গেলেন! আপনার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে আমাকে সাথী হিসাবে চিয়েছিলেন। আমিও কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন আপনি হারিয়ে গেলেন, এমনি অবেলা আর অসময়ে। যখন বিদায় বেলায় আপনার মুখটিও একবার দেখার অধিকার রইলোনা? কেন গিয়াস ভাই? কেন?
১০,এপ্রিল ২০২০