সামছুল ইসলাম মজনু: দীর্ঘদিন যাবৎ দেশে ছেড়ে প্রবাসে আছি কিন্তু কেন জানি বাংলাদেশের ভাল খবরে পুলকিত হই একই সাথে মন্দ খবর শুনলে শিহরিত হই। সব সময় বাংলাদেশের ভাল শুনতে চাই এটাই আমাকে আশান্বিত করে। একটা মানুষ হিসাবে জন্মভূমিকে কখনও ভুলতে পারে না। দীর্ঘ আটাশ বছরের পদযাত্রায় অনেক কিছুর সাক্ষী, যদিও অনেকে আসেন ক্ষনিকের বিনোদনের জন্য। সততার সাথে উন্নত জীবনের তাগিদে এই প্রবাস জীবন বেঁচে নিয়েছি। এখানে কেহ বা সফল হয়েছে কেউ বা নয়, এটা আমার কাছে এই মুহুর্তে মুখ্য নহে, তবে দেশ প্রেমিকের পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হয়েছি এটা বলতে দ্বিধা নাই, আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এ লেখা।
বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থান হয়, এই স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক রয়েছে আমি সেখানে যাব না, তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই, সবার মধ্যেই দেশ প্রেম আছে হয়ত দৃষ্টিকোণ ভিন্ন, দেশ প্রেম থাকাটাই স্বাভাবিক এটাই কাম্য। আমরা যারা দীর্ঘ সময় প্রবাসে আছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়া নিয়াছি এবং প্রশ্ন করা হয় কোনটা আগে আমি বাংলাদেশকেই বেঁচে নিব, যদিও বিষয়টা খুব কঠিন তবুও বলবো জন্মভূমির প্রতি রয়েছে দূর্বলতা, আর তারাই সূত্র ধরে আজকের এই লেখা।
বাংলাদেশের ভৌগলিক রাজনীতিতে একটা অশান্তি বিরাজ করছে যা নাকি এতদিন আমরা মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিনকে নিয়া দেখেছি। অত্র অঞ্চলে একেক রাষ্ট্র একেক ভূমিকা রাখছে, কেউ বা নিজের প্রভার বিস্তার করার চেষ্টায় মত্ত্ব আবার অন্যরা নিজেদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার চেষ্টা, তার উপর রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ।
ভাষার ভিত্তিতে রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল বিতর্কিত কারণ বাংলাদেশের প্রধান ভাষা বাংলা হলেও বাংলা ভাষাভাষী বিশাল পরিমাণ লোক এখনো বাংলাদেশের বাহিরে রয়ে গেছে, যদি একটু পিছনের দিকে তাকাই তাহলে সহজেই দেখতে পাই বৃহত্তর সিলেটের কাছাড় হতে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা তদানিন্তন বার্মা তথা আজকের মিয়ানমারের আরকান রাজ্য যা নাকি রাখাইন হিসেবে বর্তমানে পরিচিত, তার সবটাই বাংলা ভাষা ভাষী লোকের সংখ্যাই বেশী অথাৎ বাংলাবাসী যদিও ধর্মীও দৃষ্টিকোণে আমরা সবাই বিভক্ত এক্ষেত্রে এই সব বাঙালীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতো তা হলে কি হতো? উত্তরটা এ মুহুর্তে আমার জানা নাই, ভাল মন্দ হিসাব করে চুলচেরা বিশ্লেষণের যোগ্যতা আমার নেই, তবে আজকের লেখনিতে আমি ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে আমার এই লেখা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেকোন রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি, যখন এটার উপর আঘাত আসে তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়া প্রশ্ন উঠে আসে এখানেও রয়েছে রাজনৈতিক বির্তক। যেভাবেই লিখা লিখতে চাই না কেন, দেখা যাচ্ছে কেন জানি বির্তকের মাঝে জড়ায়ে পড়তেছি এসকল বির্তককে পাশ কাটিয়ে ‘অনিশ্চিত গন্তব্যের বাংলাদেশ’ সেটার অনুকূলে কিছু লিখাই আমার উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা সতের কোটি, ছোট্ট একটা দেশ, মাত্র ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল যার আয়তন, পরম করুনাময় আল্লাহ আমাদের প্রতি সহায় হউন এই কামনা দিবা নিষি। এই ঘনবসতির দেশে সর্বস্থরে দুর্নীতিবাজ বা দুর্নীতি পরায়ন, সুষম বন্টনের অভাব, শেষ ভরসাস্থল বিচার ব্যবস্থায় রয়েছে বিশৃঙ্খলা, যদিও এগুলো ঠিক ঠাক থাকত, তবে হয়ত সুষম বন্টনের মধ্যে হলেও কিছুটা উত্তরণের পথ বাহির করা যেত। এখানে দিনে দিনে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী দারিদ্র সীমার নিচ থেকে আরো অবনতি হচ্ছে। অপুষ্টি অনাহারে বেড়ে উঠছে বেশীর ভাগ, রয়েছে অসংখ্য সমস্যা।
ভাটির দেশ বাংলাদেশ, শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রয়োজন অথচ কোন পানির প্রবাহ নাই, খাল বিল প্রায় পানি শুন্য থাকে শুষ্ক মৌসুমে। অথচ বর্ষাকালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি প্রবাহ, পানির উৎস স্থলের সাথে আলোচনা করে একটা সমাধানের উপায় বাহির করার চেষ্টা করা হলেও প্রতিবেশী দেশের অসহযোগিতার কারণে এটার সমাধান হচ্ছে না। আবার বর্ষাকালে পানির এত চাপ যার ফলশ্রুতিতে সমগ্র উত্তর বঙ্গে বন্যায় ভেসে যায় এর প্রভাবে কৃষি পণ্যের উৎপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আবার এদিকে দক্ষিণ পূর্বাচলে বষায় নদীতে সাগরের পানি উঠে আসে তাতে করে পানি তার গতি হারিয়ে এখানেও বন্যার মাঝে থাকতে হয়। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় পানি নিষ্কাষন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি এবং অবহেলা। এক্ষেত্রে যদি নদী, বিল খালের সংস্কার করা গেলে হয়ত এ অবস্থা থেকে রেহায় পাওয়া যেত, বর্ষাকালে দেখা যায় মেট্রোপলিটন শহরে বসবাস করেও নৌকাই হয়ে উঠে একমাত্র বাহন।
এদিকে আবার ইতিমধ্যে দশ লাখের ও অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনুপ্রবেশ ঘটছে বাংলাদেশে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলছে বাঙালী মুসলমান নিধণ, বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে নিরহ মানুষদের হত্যা করছে মিয়ানমারের আধা সামরিক সরকার। যুবক/যুবতীদের পৈাসাচিক আচরণ করে ক্ষান্ত নয় তারা তাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ ছিন্ন করে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালে প্রচার করছে। অমানুষিক নির্যাতনে বাঁচার জন্য হাজার হাজার নয় লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গাদের যারা আসছে তাদের বেশীর ভাগই বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকের অনুপস্থিত। পর্যালোচনা করে এবং পরিবারের লোকের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, এই সকল যুবকরাই সেনাবাহিনীর প্রথম টার্গেট। একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাইলে যুব সমাজকে ধ্বংশ করলেই যথেষ্ট, যুব সমাজই মূল চালিকা শক্তি। এতে করে সহজেই অনুন্নেয় এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য দীর্ঘ প্রয়াস চলছে। আজ সারা বিশ্বে হোলিকাষ্টের ঘটনার জন্য সমালোচিত হিটলার ও তার বাহিনী, যে পরিমাণ ইহুদিকে সেদিন হত্যা করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণ মিয়ানমারের মুসলিম বাঙালীকে হত্যা করা হচ্ছে, যারা প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে অথচ দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা বিশ্ব নিশ্চুপ। বাংলাদেশ একা কিভাবে সামাল দিবে এই বিপুলসংখ্যক শরনার্থীদের খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। এমনিতেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশকে জঙ্গি তকমা দেয়া হয় তার উপর এই রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে যদি জিগাংসার সৃষ্টি হয় এবং সত্যই এরা যদি জঙ্গি কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে যায় তখন কিভাবে সামাল দেয়া হবে আর বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য হায়েনাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয় তখন কোথায় যাব আমরা?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য চাই মেধা সম্পন্ন কূটনৈতিক তৎপরতা, চরম দূভাগ্যের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারী দল বা বেসরকারী দল কেহই আমার কাছে মনে হয় কূটনৈতিক তৎপরতায় পারদর্শী নহে, সঠিক পররাষ্ট্রনীতি থাকলেও দেখা যায় এই কূটনৈতিক তৎপরতা যেন শুধুমাত্র চাটুকারিতায় ভরা, আসলে সুষ্ঠ নীতিমালা রয়েছে কিনা তা প্রশ্নাতিত আমাদের ফেলানীকে গুলি করে মারা হয়, আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা পাই না, আমাদের সংস্কৃতির আকাশ শিকল বন্দী তার উপর ইদানিং আমাদের আকাশ সীমায় কয়েকবার মিয়ানমারের হেলিকপ্টার টইল দেয় কোথাও কি আমরা শক্ত ভূমিকা রাখতে পেরেছি। উল্লেখ্য আজকের বিশ্বে ছোট্ট রাষ্ট্র ইসরাইল তার কূট চাল/কূটনৈতিক তৎপরতা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশকে একে একে তার তল্পিবাহক বানাচ্ছে, যার সর্বশেষ চেষ্টা চলছে স্বাধীন কুর্দিস্থান তৈরী করা, এতে করে তৈল গ্যাস সমৃদ্ধ অঞ্চলকে নিজের করায়ত্ব করা।
রাজনীতিতে রয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা অবস্থা, গণতন্ত্রের লেবাসে চলছে স্বৈরতন্ত্র, কিভাবে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যায় সে চেষ্টায় মত্ত্ব, বিরোধী পক্ষের কথা বলা বা প্রতিবাদ করার কোন জো নাই, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে সারা দেশের মানুষ সোচ্চার হলেও দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল, তার কোন কর্ণপাত করতেছে না, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সম্মিলিত প্রয়াসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়াছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
আমার রাজনৈতিক পরিচয়ে আমি হয়ত একটা দলের পক্ষে বলব, কিন্তু নিজেকে নিরপেক্ষ রেখে যদি পর্যালোচনা করি তবুও নিন্দুকেরা হয়ত আমার সমালোচনা করবেন। পাঠকের কাছে এই প্রশ্নগুলো রেখে আজকের লিখার ইতি টানতে চাই, যেভাবেই বলুন না কেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে বা যাবে আপনি আমার সাথে একমত না হয়ে পারবেনা না, লিখার সাথে সহ মত পোষণ করে আপনিও কিছু লিখেন। ধন্যবাদ।
ব্রায়ারউড, নিউইয়র্ক।