নিউইয়র্ক ১২:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সংকটেও উজ্জীবিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৪৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ মে ২০১৭
  • / ৬৭৫ বার পঠিত

হোয়াইট হাউস (ওয়াশিংটন): চরম অস্থির ও অস্বস্তিকর একটি সপ্তাহ পার করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষন করার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। নির্বাচিত হবার পর থেকেই তাঁর ভাগ্য রাশি সহায়ক নয়। তবে নানা ঘটনার জন্মদাতা হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের খ্যাতি অনেক আগে থেকেই। সে দিকে গেলে বিস্তর আলোচনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেট দলের চেয়ে  মিডিয়াই এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। দিন দিন উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। অবস্থাটা এমন যেনো ‘কেহ কারো নাহি ছাড়ে’। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ দেখা মিলছে হোয়াইট হাউসের প্রেস কোরে। তবে এটা কতোখানি সাংবাদিকতা আর কতোখানি গোয়েন্দাগিরি সে কু-তর্ক করাই যেতে পারে। মিডিয়ার প্রতি ট্রাম্পের বিরক্তি প্রায় প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। বুধবার (১৭ মে) আমেরিকান কোস্ট গার্ড একাডেমির একটি  অনুষ্ঠানে, ট্রাম্প বলেন ‘ইতিহাসে কোনো রাজনীতিবিদকেই এমন খারাপ ও অন্যায় আচরণের মুখামুখি হতে হয়নি’।
সোমবার (১৫ মে) সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট চায়ের কাপে ঝড় তুলে। রিপোর্টে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প রাশিয়ার কাছে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য তুলে দিয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউসের সাফ জবাব, এমন কিছু ঘটেনি। পরে  প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের ‘পূর্ণ অধিকার’ তাঁর রয়েছে। এক টুইটার বার্তায়  ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও বিমান চলাচল নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য বিনিময় করেছেন তিনি। চেয়েছেন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার আরও সক্রিয় সমর্থন।
গত সপ্তাহে যখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াক ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন এ তথ্য হস্তান্তর করা হয় মর্মে রিপোর্ট ছাপে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। হোয়াইট হাউস বলেছে, পত্রিকাটির প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার প্রেস কোরকে বলেন, ঘটনাটি যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সেটা মিথ্যা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ উভয় দেশের জন্য যেসব অভিন্ন হুমকি রয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন। এর মধ্যে বিমান পরিবহনের বিষয়ও রয়েছে। কোনো পর্যায়ে কোনো রকম গোয়েন্দা তথ্য বা কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়নি। ম্যাকমাস্টার নিজেও বৈঠক কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন।
মঙ্গলবার (১৬ মে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তরফে হোয়াইট হাউস লাল গালিচা সংবর্ধনা লাভ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোগান। ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাকে একজন দৃঢ়চেতা সহযোগী হিসাবে অভিহিত করেন ট্রাম্প। এর্দোগানের বিরোধীরা তখন হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করছিলো। তুরস্ক দূতাবাসের সামনে এই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রুপ নেয়। যাতে প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের নিরাপত্তারক্ষী ও সমর্থকদের যৌথ হামলায় এক পুলিশ অফিসারসহ ১১ জন আহত হয়।
বুধবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় নতুন একটি বিষ্ফোরণ ঘটায় নিউইয়র্ক টাইমস। তাতে বলা হয় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র তৎকালীন প্রধান জেমস কোমিকে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত বন্ধ করতে বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্প। সিএনএন এর সমর্থনে রিপোর্ট করে।
কোমির লেখা এক মেমোতে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারীতে হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক হয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে মাইকেল ফ্লিনের পদত্যাগের এক দিন পরই বৈঠকটি হয়। খবর অনুযায়ী, বৈঠকের পর কোমিকে  ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, আপনি বিষয়টি ছেড়ে দেবেন।’ রিপোর্টে বলা হয়  ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরপরই এ-সংক্রান্ত মেমো লিখেছিলেন কোমি। মেমো (স্মারক) অনুযায়ী, ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত বন্ধ করতে কোমিকে বলেছিলেন  ট্রাম্প।
তবে এই খবরের সত্যতা অস্বীকার করে হোয়াইট হাউস। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট কখনোই কোমিকে তদন্ত বন্ধ করতে বলেননি।
তাতে হালে পানি পায়নি। এনিয়ে চলতে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। ডেমোক্রেটতো বটেই কোনো কোনো রিপাবলিকান আইন প্রণেতারাও এরকম নির্দেশনার ভয়াবহতা নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন। যদি ঘটনার সত্যতা মিলে তবে ‘বিচারের অন্তরায়’ হিসাবে এর প্রতিক্রিয়া ইম্পিচম্যান্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। স্পিকার পল রায়ান অবশ্য ভরসা রাখতে চান  ট্রাম্পের উপর।
তবে একজন বাংলাদেশী সংবাদকর্মী হিসাবে এটি আমার জন্য কোনো ঘটনাই নয়। এরকম নির্দেশনা গোয়েন্দা প্রধানকে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হরহামেশাই দিয়ে চলেছেন। ‘বিচারের অন্তরায়’ বলে কোনো কথা নেই। সরকার প্রধানের ইচ্ছাই এখানে যথেষ্ট। বিচার বিভাগ এবং দূর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করে নিজেদের মামলা বাতিল করে মামলার সারি সারি কেবল বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের উপর।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ‘বিউটি’ এখানেই। মুক্তমতের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। তীর্যক প্রশ্ন তবে শালীনতা বিবর্জিত নয় আবার তৈল মর্দনও নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনগুলো দেখলে মনে হয় যেনো তৈল মর্দনের তীব্র প্রতিদ্বন্দি¦বাতামূলক প্রতিযোগিতা।
সংবাদ সম্মেলনে  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্পের জবাবও আক্রমনাত্মক তাতে সন্দেহ নাই। তবে কাউকে জেলে পাঠিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন এমন নয়। যা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) যুক্তরাষ্ট্র সফররত কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের যৌথ সংবাদ সম্মলনে এএফবিআই প্রধানকে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়টি সরাসরি জানতে চাইলেন এক সাংবাদিক। চার শব্দে উত্তর দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, নো, নো, নেক্সট কুয়েসশ্চন?
সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা হোয়াইট হাউসের আছে বৈকি। হতে পারে অনেকটা যন্ত্রণাকাতর হয়ে। চালু হয়েছে অফ ক্যামেরা ব্রিফিং। প্রশ্নের সুযোগ পছন্দের সংবাদমাধ্যমরা বেশি পেলেও সব ধরনের প্রশ্নই গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা প্রেসসচিব শন স্পাইসার। এমনকি  ট্রাভেল পুলেও সাংবাদিকদের জন্য থাকছে সমতা।
শুক্রবার (১৯ মে) সৌদি আরব সফরের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিদেশের মাটিতে পা রাখলেন প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্প। যাবেন ইসরাইল এবং ভ্যাটিক্যান সিটিতেও। ২৫ মে ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে ভ্যাটিকানে যাবেন ট্রাম্প।
কোনো সংকটই যেনো গায়ে মাখছেন না ট্রাম্প। বিদেশ সফর নিয়ে বেশ উজ্জীবিত তিনি। সফর শুরুর প্রাক্ষালে প্রেসিডেন্ট বলেন, “শান্তির চাবিকাঠি আছে সহিষ্ণুতার মধ্যেই। আমার এই সফর শুরু হবে সৌদি আরবে ঐতিহাসিক এক সম্মেলনে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে। যেখানে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা আসবেন। উগ্রবাদী, সন্ত্রাস আর হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের মুসলিম মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন ভিত্তি তৈরির কাজ শুরু হবে সেখানে। অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের জোট বাঁধতে হবে, যারা সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করে আরব দুনিয়ায় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা আনার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে।”
সৌদি আরবের সাথে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিসহ ৩৮০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ খশিয়ে নেয়া, দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব লাভ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মুসলিম বিশ্বের শক্ত কমিটমেন্ট আদায় আর ইসলামি তাহজীব তমদ্দুনের সাথে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে হোয়াইট হাউস ফিরে প্রেসিডেন্সির ঝুঁকি মোকাবিলায় ট্রাম্প কতোটা উজ্জীবনী শক্তি দেখাতে পারেন সেটাই এখন দেখার পালা। (জাস্ট নিউজ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

সংকটেও উজ্জীবিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ মে ২০১৭

হোয়াইট হাউস (ওয়াশিংটন): চরম অস্থির ও অস্বস্তিকর একটি সপ্তাহ পার করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষন করার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। নির্বাচিত হবার পর থেকেই তাঁর ভাগ্য রাশি সহায়ক নয়। তবে নানা ঘটনার জন্মদাতা হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের খ্যাতি অনেক আগে থেকেই। সে দিকে গেলে বিস্তর আলোচনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেট দলের চেয়ে  মিডিয়াই এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। দিন দিন উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। অবস্থাটা এমন যেনো ‘কেহ কারো নাহি ছাড়ে’। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ দেখা মিলছে হোয়াইট হাউসের প্রেস কোরে। তবে এটা কতোখানি সাংবাদিকতা আর কতোখানি গোয়েন্দাগিরি সে কু-তর্ক করাই যেতে পারে। মিডিয়ার প্রতি ট্রাম্পের বিরক্তি প্রায় প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। বুধবার (১৭ মে) আমেরিকান কোস্ট গার্ড একাডেমির একটি  অনুষ্ঠানে, ট্রাম্প বলেন ‘ইতিহাসে কোনো রাজনীতিবিদকেই এমন খারাপ ও অন্যায় আচরণের মুখামুখি হতে হয়নি’।
সোমবার (১৫ মে) সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট চায়ের কাপে ঝড় তুলে। রিপোর্টে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প রাশিয়ার কাছে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য তুলে দিয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউসের সাফ জবাব, এমন কিছু ঘটেনি। পরে  প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের ‘পূর্ণ অধিকার’ তাঁর রয়েছে। এক টুইটার বার্তায়  ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও বিমান চলাচল নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য বিনিময় করেছেন তিনি। চেয়েছেন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার আরও সক্রিয় সমর্থন।
গত সপ্তাহে যখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াক ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন এ তথ্য হস্তান্তর করা হয় মর্মে রিপোর্ট ছাপে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। হোয়াইট হাউস বলেছে, পত্রিকাটির প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার প্রেস কোরকে বলেন, ঘটনাটি যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সেটা মিথ্যা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ উভয় দেশের জন্য যেসব অভিন্ন হুমকি রয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন। এর মধ্যে বিমান পরিবহনের বিষয়ও রয়েছে। কোনো পর্যায়ে কোনো রকম গোয়েন্দা তথ্য বা কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়নি। ম্যাকমাস্টার নিজেও বৈঠক কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন।
মঙ্গলবার (১৬ মে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তরফে হোয়াইট হাউস লাল গালিচা সংবর্ধনা লাভ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোগান। ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাকে একজন দৃঢ়চেতা সহযোগী হিসাবে অভিহিত করেন ট্রাম্প। এর্দোগানের বিরোধীরা তখন হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করছিলো। তুরস্ক দূতাবাসের সামনে এই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রুপ নেয়। যাতে প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের নিরাপত্তারক্ষী ও সমর্থকদের যৌথ হামলায় এক পুলিশ অফিসারসহ ১১ জন আহত হয়।
বুধবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় নতুন একটি বিষ্ফোরণ ঘটায় নিউইয়র্ক টাইমস। তাতে বলা হয় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র তৎকালীন প্রধান জেমস কোমিকে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত বন্ধ করতে বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্প। সিএনএন এর সমর্থনে রিপোর্ট করে।
কোমির লেখা এক মেমোতে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারীতে হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক হয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে মাইকেল ফ্লিনের পদত্যাগের এক দিন পরই বৈঠকটি হয়। খবর অনুযায়ী, বৈঠকের পর কোমিকে  ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, আপনি বিষয়টি ছেড়ে দেবেন।’ রিপোর্টে বলা হয়  ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরপরই এ-সংক্রান্ত মেমো লিখেছিলেন কোমি। মেমো (স্মারক) অনুযায়ী, ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত বন্ধ করতে কোমিকে বলেছিলেন  ট্রাম্প।
তবে এই খবরের সত্যতা অস্বীকার করে হোয়াইট হাউস। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট কখনোই কোমিকে তদন্ত বন্ধ করতে বলেননি।
তাতে হালে পানি পায়নি। এনিয়ে চলতে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। ডেমোক্রেটতো বটেই কোনো কোনো রিপাবলিকান আইন প্রণেতারাও এরকম নির্দেশনার ভয়াবহতা নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন। যদি ঘটনার সত্যতা মিলে তবে ‘বিচারের অন্তরায়’ হিসাবে এর প্রতিক্রিয়া ইম্পিচম্যান্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। স্পিকার পল রায়ান অবশ্য ভরসা রাখতে চান  ট্রাম্পের উপর।
তবে একজন বাংলাদেশী সংবাদকর্মী হিসাবে এটি আমার জন্য কোনো ঘটনাই নয়। এরকম নির্দেশনা গোয়েন্দা প্রধানকে বাংলাদেশের সরকার প্রধান হরহামেশাই দিয়ে চলেছেন। ‘বিচারের অন্তরায়’ বলে কোনো কথা নেই। সরকার প্রধানের ইচ্ছাই এখানে যথেষ্ট। বিচার বিভাগ এবং দূর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করে নিজেদের মামলা বাতিল করে মামলার সারি সারি কেবল বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের উপর।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ‘বিউটি’ এখানেই। মুক্তমতের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। তীর্যক প্রশ্ন তবে শালীনতা বিবর্জিত নয় আবার তৈল মর্দনও নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনগুলো দেখলে মনে হয় যেনো তৈল মর্দনের তীব্র প্রতিদ্বন্দি¦বাতামূলক প্রতিযোগিতা।
সংবাদ সম্মেলনে  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্পের জবাবও আক্রমনাত্মক তাতে সন্দেহ নাই। তবে কাউকে জেলে পাঠিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন এমন নয়। যা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) যুক্তরাষ্ট্র সফররত কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের যৌথ সংবাদ সম্মলনে এএফবিআই প্রধানকে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়টি সরাসরি জানতে চাইলেন এক সাংবাদিক। চার শব্দে উত্তর দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, নো, নো, নেক্সট কুয়েসশ্চন?
সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা হোয়াইট হাউসের আছে বৈকি। হতে পারে অনেকটা যন্ত্রণাকাতর হয়ে। চালু হয়েছে অফ ক্যামেরা ব্রিফিং। প্রশ্নের সুযোগ পছন্দের সংবাদমাধ্যমরা বেশি পেলেও সব ধরনের প্রশ্নই গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা প্রেসসচিব শন স্পাইসার। এমনকি  ট্রাভেল পুলেও সাংবাদিকদের জন্য থাকছে সমতা।
শুক্রবার (১৯ মে) সৌদি আরব সফরের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিদেশের মাটিতে পা রাখলেন প্রেসিডেন্ট  ট্রাম্প। যাবেন ইসরাইল এবং ভ্যাটিক্যান সিটিতেও। ২৫ মে ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে ভ্যাটিকানে যাবেন ট্রাম্প।
কোনো সংকটই যেনো গায়ে মাখছেন না ট্রাম্প। বিদেশ সফর নিয়ে বেশ উজ্জীবিত তিনি। সফর শুরুর প্রাক্ষালে প্রেসিডেন্ট বলেন, “শান্তির চাবিকাঠি আছে সহিষ্ণুতার মধ্যেই। আমার এই সফর শুরু হবে সৌদি আরবে ঐতিহাসিক এক সম্মেলনে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে। যেখানে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা আসবেন। উগ্রবাদী, সন্ত্রাস আর হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের মুসলিম মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন ভিত্তি তৈরির কাজ শুরু হবে সেখানে। অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের জোট বাঁধতে হবে, যারা সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করে আরব দুনিয়ায় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা আনার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে।”
সৌদি আরবের সাথে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিসহ ৩৮০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ খশিয়ে নেয়া, দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব লাভ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মুসলিম বিশ্বের শক্ত কমিটমেন্ট আদায় আর ইসলামি তাহজীব তমদ্দুনের সাথে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে হোয়াইট হাউস ফিরে প্রেসিডেন্সির ঝুঁকি মোকাবিলায় ট্রাম্প কতোটা উজ্জীবনী শক্তি দেখাতে পারেন সেটাই এখন দেখার পালা। (জাস্ট নিউজ)