ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে বিশ্বের সব বড় বড় গণমাধ্যম। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় স্থগিতের আহ্বান উপেক্ষা করে গত শনিবার (১১ এপ্রিল) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকরের পর, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা, এপি, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, এবিসি নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল, ইয়াহু নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইস, দ্যা হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জি নিউজ, টেলিগ্রাম, গালফ নিউজ, সৌদি গেজেট, দ্যা স্টার ডট কম এবং আরব নিউজসহ বিশ্বের নাম করা সব গণমাধ্যম।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় বলা হয়, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নেতার ফাঁসি। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনা করতে রাজি হননি। আলজাজিরার খবরে আরো বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে দুটি ট্রাইব্যুনাল এক ডজনেরও বেশি লোককে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এদের বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামির সিনিয়র নেতা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি। এতে ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লাহর ফাঁসির কথাও উল্লেখ করা হয়। বিবিসি শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতিকের ফাঁসি কার্যকর’।
বিবিসি বাংলার শিরোনাম ছিল, ‘জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি‘। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে মুহাম্মদ কামাররুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো।
এপি শিরোনাম করেছে “যুদ্ধাপরাধের মামলায় বাংলাদেশে ইসলামী দলের শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।”
এএফপি শিরোনাম করেছে, যুদ্ধাপরাধের মামলায় বাংলাদেশে ইসলামী নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নিউইয়র্ক টাইমস খবরটির শিরোনাম করেছে, “যুদ্ধাপরাধের মামলায় বাংলাদেশে ইসলামী দলের শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর”।
দ্য ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল কামারুজ্জামানের ছবিসহ তার ফাঁসির খবরটি প্রকাশ করেছে। শিরোনাম ছিল, ‘যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসলামী রাজনীতিকের ফাঁসি কার্যকর করেছে বাংলাদেশ’।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন শিরোনাম করেছে “বাংলাদেশ হ্যাংগস টপ জামায়াত লিডার ফর ১৯৭১ ওয়ার ম্যাসাকার”। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি অনলাইন ভার্সনে তাৎক্ষণিকভাবে নিউজটি প্রচার করে।
ওয়াশিংটন পোস্টও নিউইয়র্ক টাইমসের ন্যায় একই শিরোনাম করেছে।
পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ডন পত্রিকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, শনিবার রাত ১০.৩০-এ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ফাঁসি স্থগিত করার জন্য শেষ মিনিটের আবেদন সত্ত্বেও বাংলাদেশ তা কার্যকর করে। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বিচারকাজে আন্তর্জাতিক মানদন্ড পূরণ করা হয়নি। ডন শিরোনাম করেছে ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতার ফাঁসি’।
গালফ নিউজে বলা হয়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসলামপন্থী নেতার ফাঁসি। এতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট রিভিউ আবেদন খারিজ করার পর ৬৩ বছর বয়স্ক কামারুজ্জামানকে ফাসি দেয়া হয়।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর প্রকাশ করে জানায়, এর ফলে তার সমর্থকদের মধ্যে ক্রুদ্ধপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বলা হয়, রায়ের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে তার দল হরতালের ডাক দিয়েছিল। গার্ডিয়ানের শিরোনাম ছিল, ‘যুদ্ধাপরাধের মামলায় ইসলামী দলের নেতার ফাঁসি কার্যকর করেছে বাংলাদেশ’।
এবিসি শিরোনাম করেছে “বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ইসলামী নেতার ফাঁসি কার্যকর।”
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের শিরোনাম “বাংলাদেশে শীর্ষ ইসলামী নেতার মৃত্যু কার্যকর।”
আরব নিউজে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে। আরব নিউজ শিরোনাম করেছে “গণহত্যার অভিযোগে সিনিয়র জামায়াত নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শিরোনাম “বাংলাদেশে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর।”
হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম করেছে “১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের মামলায় বাংলাদেশে শীর্ষ ইসলামী নেতার ফাঁসি কার্যকর।”
এনডিটিভি লিখেছে, “বাংলাদেশে ইসলামী নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি।
দ্য হিন্দুর শিরোনাম “বাংলাদেশে শীর্ষ জামায়াত নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর।”
ভারতের এই সময় নিউজ পোর্টালের শিরোনাম ছিল ‘জামায়াতে নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি’। এতে বলা হয়, ‘গত সোমবারই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। সেই আর্জি খারিজ হওয়ায়, রাষ্ট্রপতির কাছে আর প্রাণভিক্ষা চাননি এই জামায়াতে নেতা। তাই আদালতের রায় কার্যকর করা ছিল সময়ের অপেক্ষা। শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জামায়াতে ইসলামির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কামারুজ্জামান একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হলে, তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।’
জি নিউজ-এর শিরোনাম ছিল ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধী আরও এক রাজাকারের ফাঁসি আজ’
আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘জামাত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি’।
এতে বলা হয়, ‘একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ নেতা মহম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করল বাংলাদেশ সরকার।’ এতে আরো বলা হয়, ‘গত কয়েক দিন ধরেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছিল। জেলের মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল। শেরপুরে কামারুজ্জামানের পরিবার তাঁর শেষকৃত্যের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত তাঁর আপিল খারিজ করার পরেপ্র্রাণভিক্ষা চাওয়া না-চাওয়া নিয়ে তিনি কালক্ষেপ করছিলেন। কাল সকালে দুই ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে আসেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল আজ জানান, ‘আসামি প্রাণভিক্ষা করতে রাজি নন।’ দৈনিক নয়া দিগন্ত/দৈনিকসংগ্রাম)