নিউইয়র্ক ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নৈতিকতা-মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা জঙ্গি সৃষ্টি করছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:১৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৮৪০ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদ দমনে মিডিয়ার ভূমিকা শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন-নৈতিকতা-মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা জঙ্গি সৃষ্টি করছে। দেশে বিগত দিনে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। প্রগতিশীল চেতনার উন্মেষ ঘটাবে এমন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা। তারা আরো বলেন-অভিভাবদের নিজ নিজ সন্তানদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং তাদের প্রতি নজরদারি বহাল রাখাও জরুরি। তারা আরো বলেন-জঙ্গি নির্মূলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দসহ পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে। এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেছেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান এবং সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীর (এটিএন বাংলা ইউএসএ)।
আলোচনা সভায় আলোচিত বিষয়ো ওপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দিপু মনি। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে একাংশ)-এর মহাসচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শাবান মাহমুদ, দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম. এ. মালেক, কলামিষ্ট ও টক শো আলোচক সুভাষ সিংহ রায়, দৈনিক ইত্তেফাক-এর বিশেষ প্রতিনিধি ফরাজী আজমল হোসেন, সাপ্তাহিক ঠিকানা সম্পাদক লাবলু আনসার, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শামসুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী প্রমুখ।
আলোচনা সভায় ডা. দিপু মনি বলেন, আমরা সাফল্যের সঙ্গে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করছি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অর্থ এবং অস্ত্রের যোগানদাতাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেসব দেশে জঙ্গি হামলা হয়েছে, সে সব দেশে কেউ বলেনি- গণতন্ত্রহীনতার কারণে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটছে। শুধু আমাদের দেশে বিএনপির নেতারা এই অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিকরা কোনো দলীয় মতাদর্শের উপর ভিত্তি না করে তারা যেনো তথ্যের উপর ভিত্তি করে সংবাদ লিখেন-এ কথা উল্লেখ করেন তাঁর বক্তব্যে।
ওমর ফারুক বলেন, জঙ্গিবাদ একটি ভাইরাসের নাম। ভাইরাস যেমন সর্বাত্মকভাবে মোকাবেলা করতে হয়, তেমনি জঙ্গিবাদকেও সবাই মিলে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যক কর্মীরা প্রায় সময়ই মালিকদের চাপে থাকেন । মিডিয়ার মাালিক কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শাবান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুযোগ নিয়ে অনেকে হলুদ সাংবাদিকতা করেছেন। সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং সমাধানের পথ বলে দিবেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পাওে, তবে তা যেনো লেখায় প্রকাশ না পায় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পারিবারিক শিক্ষার প্রতি আমাদের আরো গুরুত্ব দিবে হবে। সর্বোপরি আমাদের দেশপ্রেম বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা জঙ্গি বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে পারেন। গণ সচেতনা সৃষ্টি হয় এমন প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। রাষ্ট্রের স্বার্থে, মৌলিক অধিকারের স্বার্থে, উন্নয়ন ও প্রগতির স্বার্থে, সর্বোপরি জঙ্গি নির্মূলে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
এম. এ. মালেক বলেন, আমার মূল কথা জঙ্গিবাদ শব্দটিতেই আছে। জঙ্গি এবং বাদ। আমাদেরকে যে কোনো উপায়ে জঙ্গিকে বাদ দিবে হবে। এর সচেতনতা সংবাদিকদের তৈরি করতে হবে।
সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিন থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের চাষাবাদের শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে অনেক গরল আছে। সাংবাদিকরাই পারেন সরলভাবে কাজ করতে। জঙ্গিবাদ দমনে সাংবাদিকরা জনমত গঠন করতে পারেন।
ইলিয়াস খান বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে মুসলমানদের। এ শুধু জঙ্গিবাদের কারণে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলে অপশক্তি সেই সুযোগ নিবেই। তিনি বেশ কয়েকটি মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তার বক্তব্যে।
ফারাজি আজমল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে দায়িত্বশীল সংবাদিকতার অভাব। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে সংবাদিকদের কেউ কেউ লাগামহীন অপসাংবাদিকতা করেছেন। অপ-সাংবাদিকতা আইনী প্রক্রিয়ায় প্রতিরোধ করা হলে এর সমর্থন করা উচিত। তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, জঙ্গিবাদের প্রশ্নে বিএনপির উচিত ছিলো কঠোর অবস্থান নেওয়া। কিন্তু আমরা দেখেছি জঙ্গিবাদের সমর্থক অনেক গোষ্ঠি বিএনপি-জামায়াত জোটের অন্তর্ভুক্ত।
লাবলু আনসার বলেন, যারা দেশ থেকে ঘুরে আসেন তাদেরকে কখনো দেখিনি বলেছেন দেশের অবস্থা খুব খারাপ। কিন্তু নিউইয়র্কে কিছু পত্রিকা খুললে দেখতে পারি দেশের অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের সত্য বলতে হবে। বাংলাদেশের মিডিয়ার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু নিউইয়র্কের পত্রিকাতো সত্য বলতে পারে। তাদের তো কোনো বাধ্যকতা নাই। তিনি বলেন-যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হলে নিউইয়র্কে দু’একটি পত্রিকায় তাদের শহীদ আখ্যা দেয়া হয়েছে। এটা অপ-সাংবাদিকতা।
ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে আমাদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। এ জন্য বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটছে। দেশটি ১৬ কোটি মানুষের। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ সংবাদ মাধ্যমকে বেশি বিশ্বাস করেন। তাই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর জন্য সন্তানদের বিভিন্ন মত-পথের মানুষ তাদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। এ কারনেও কেউ কেউ জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে পড়ছে।
মুজাহিদ আনসারি বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সাংবাদিকদের তুলে ধরতে হবে জঙ্গিরা কী করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলতে মিডিয়াকে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন-নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব হলে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়।
কাজী শামসুল হক বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অল্পতে বলা যায় না । অল্পতে বলতে গেলে অন্ধের হাতি দেখার মতো হয়ে যাবে। শুধু এটুকু বলি সব জায়গাতেই নাটক আছে। জঙ্গি দমন প্রক্রিয়ায়ও নাটক আছে বলে আমি মনে করি।
সভাপতির বক্তব্যে নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের দেশে ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প অনেকদিন থেকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ চলছে। ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। অথচ মানবিক শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মানবিকতার শিক্ষার প্রসার ঘটলে জঙ্গিবাদের অবসান ঘটবে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা যদি নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন তবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করা যায়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক সেলিম সামাদ (এশিয়ান এজ), দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারি সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সৈয়দ রফিকুল জামাল (সিএনই-বিজয় টিভি), রাশেদ আহমেদ (চ্যানেল আই), কানু দত্ত (এটিএন বাংলা), শওকত ওসমান রচি (আজকাল), বেলাল আহমেদ (সম্পাদক-বর্তমান বাংলা), শামীম আহমেদ (ভোরের কাগজ), প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং-এর ইয়াসিন কবির জয় ও সাইফুল ইসলাম কল্লোল, নিহার সিদ্দিকী (ফোকাস বাংলা), আশরাফুল হাসান বুলবুল (আরটিভি), হাসান মাহমুদ (যমুনা টিভি), পুলক আহমেদ (এনটিভি ইউএসএ), আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ রিজু মোহাম্মদ (বাংলা টিভি), শামীম আল আমিন ও রফিকুল ইসলাম (টিবিএন-২৪) পপি চৌধুরী (সম্পাদক-নারী), তপন চৌধুরী (জন্মভূমি), এনামুর রেজা দিপু, শাহাব উদ্দিন সাগর (মুক্তবার্তা ২৪), হাসানুজ্জামান হাসান, কাওসার মোমিন, আলমগীর হোসেন (মুক্তকণ্ঠ), শামসুল আলম (জনতার মুক্তকণ্ঠ), ইমরান আনসারী (দৈনিক নয়া দিগন্ত), এম. এ. হাই স্বপন (মানবজমিন), শামসুল আলম লিটন (আজকাল), রফিকুজ্জামান (দৈনিক নবরাগ), সাইফ উদ্দিন আহমেদ রিপন, শিবলী সাদেক, গোলাম মোস্তফা সংগ্রাম, মোঃ মশিউর রহমান ও তফাজ্জল লিটন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মিডিয়া কর্মী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী শাহানারা রহমান, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলামসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নৈতিকতা-মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা জঙ্গি সৃষ্টি করছে

প্রকাশের সময় : ১১:১৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিউইয়র্ক: আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদ দমনে মিডিয়ার ভূমিকা শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন-নৈতিকতা-মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা জঙ্গি সৃষ্টি করছে। দেশে বিগত দিনে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। প্রগতিশীল চেতনার উন্মেষ ঘটাবে এমন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা। তারা আরো বলেন-অভিভাবদের নিজ নিজ সন্তানদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং তাদের প্রতি নজরদারি বহাল রাখাও জরুরি। তারা আরো বলেন-জঙ্গি নির্মূলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দসহ পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে। এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেছেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান এবং সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীর (এটিএন বাংলা ইউএসএ)।
আলোচনা সভায় আলোচিত বিষয়ো ওপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দিপু মনি। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে একাংশ)-এর মহাসচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শাবান মাহমুদ, দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম. এ. মালেক, কলামিষ্ট ও টক শো আলোচক সুভাষ সিংহ রায়, দৈনিক ইত্তেফাক-এর বিশেষ প্রতিনিধি ফরাজী আজমল হোসেন, সাপ্তাহিক ঠিকানা সম্পাদক লাবলু আনসার, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শামসুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী প্রমুখ।
আলোচনা সভায় ডা. দিপু মনি বলেন, আমরা সাফল্যের সঙ্গে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করছি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অর্থ এবং অস্ত্রের যোগানদাতাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেসব দেশে জঙ্গি হামলা হয়েছে, সে সব দেশে কেউ বলেনি- গণতন্ত্রহীনতার কারণে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটছে। শুধু আমাদের দেশে বিএনপির নেতারা এই অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিকরা কোনো দলীয় মতাদর্শের উপর ভিত্তি না করে তারা যেনো তথ্যের উপর ভিত্তি করে সংবাদ লিখেন-এ কথা উল্লেখ করেন তাঁর বক্তব্যে।
ওমর ফারুক বলেন, জঙ্গিবাদ একটি ভাইরাসের নাম। ভাইরাস যেমন সর্বাত্মকভাবে মোকাবেলা করতে হয়, তেমনি জঙ্গিবাদকেও সবাই মিলে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যক কর্মীরা প্রায় সময়ই মালিকদের চাপে থাকেন । মিডিয়ার মাালিক কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শাবান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুযোগ নিয়ে অনেকে হলুদ সাংবাদিকতা করেছেন। সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং সমাধানের পথ বলে দিবেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পাওে, তবে তা যেনো লেখায় প্রকাশ না পায় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পারিবারিক শিক্ষার প্রতি আমাদের আরো গুরুত্ব দিবে হবে। সর্বোপরি আমাদের দেশপ্রেম বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা জঙ্গি বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে পারেন। গণ সচেতনা সৃষ্টি হয় এমন প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। রাষ্ট্রের স্বার্থে, মৌলিক অধিকারের স্বার্থে, উন্নয়ন ও প্রগতির স্বার্থে, সর্বোপরি জঙ্গি নির্মূলে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
এম. এ. মালেক বলেন, আমার মূল কথা জঙ্গিবাদ শব্দটিতেই আছে। জঙ্গি এবং বাদ। আমাদেরকে যে কোনো উপায়ে জঙ্গিকে বাদ দিবে হবে। এর সচেতনতা সংবাদিকদের তৈরি করতে হবে।
সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিন থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের চাষাবাদের শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে অনেক গরল আছে। সাংবাদিকরাই পারেন সরলভাবে কাজ করতে। জঙ্গিবাদ দমনে সাংবাদিকরা জনমত গঠন করতে পারেন।
ইলিয়াস খান বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে মুসলমানদের। এ শুধু জঙ্গিবাদের কারণে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলে অপশক্তি সেই সুযোগ নিবেই। তিনি বেশ কয়েকটি মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তার বক্তব্যে।
ফারাজি আজমল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে দায়িত্বশীল সংবাদিকতার অভাব। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে সংবাদিকদের কেউ কেউ লাগামহীন অপসাংবাদিকতা করেছেন। অপ-সাংবাদিকতা আইনী প্রক্রিয়ায় প্রতিরোধ করা হলে এর সমর্থন করা উচিত। তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, জঙ্গিবাদের প্রশ্নে বিএনপির উচিত ছিলো কঠোর অবস্থান নেওয়া। কিন্তু আমরা দেখেছি জঙ্গিবাদের সমর্থক অনেক গোষ্ঠি বিএনপি-জামায়াত জোটের অন্তর্ভুক্ত।
লাবলু আনসার বলেন, যারা দেশ থেকে ঘুরে আসেন তাদেরকে কখনো দেখিনি বলেছেন দেশের অবস্থা খুব খারাপ। কিন্তু নিউইয়র্কে কিছু পত্রিকা খুললে দেখতে পারি দেশের অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের সত্য বলতে হবে। বাংলাদেশের মিডিয়ার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু নিউইয়র্কের পত্রিকাতো সত্য বলতে পারে। তাদের তো কোনো বাধ্যকতা নাই। তিনি বলেন-যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হলে নিউইয়র্কে দু’একটি পত্রিকায় তাদের শহীদ আখ্যা দেয়া হয়েছে। এটা অপ-সাংবাদিকতা।
ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে আমাদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। এ জন্য বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটছে। দেশটি ১৬ কোটি মানুষের। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ সংবাদ মাধ্যমকে বেশি বিশ্বাস করেন। তাই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর জন্য সন্তানদের বিভিন্ন মত-পথের মানুষ তাদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। এ কারনেও কেউ কেউ জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে পড়ছে।
মুজাহিদ আনসারি বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সাংবাদিকদের তুলে ধরতে হবে জঙ্গিরা কী করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলতে মিডিয়াকে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন-নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব হলে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়।
কাজী শামসুল হক বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অল্পতে বলা যায় না । অল্পতে বলতে গেলে অন্ধের হাতি দেখার মতো হয়ে যাবে। শুধু এটুকু বলি সব জায়গাতেই নাটক আছে। জঙ্গি দমন প্রক্রিয়ায়ও নাটক আছে বলে আমি মনে করি।
সভাপতির বক্তব্যে নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের দেশে ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প অনেকদিন থেকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ চলছে। ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। অথচ মানবিক শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মানবিকতার শিক্ষার প্রসার ঘটলে জঙ্গিবাদের অবসান ঘটবে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা যদি নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন তবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করা যায়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক সেলিম সামাদ (এশিয়ান এজ), দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারি সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সৈয়দ রফিকুল জামাল (সিএনই-বিজয় টিভি), রাশেদ আহমেদ (চ্যানেল আই), কানু দত্ত (এটিএন বাংলা), শওকত ওসমান রচি (আজকাল), বেলাল আহমেদ (সম্পাদক-বর্তমান বাংলা), শামীম আহমেদ (ভোরের কাগজ), প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং-এর ইয়াসিন কবির জয় ও সাইফুল ইসলাম কল্লোল, নিহার সিদ্দিকী (ফোকাস বাংলা), আশরাফুল হাসান বুলবুল (আরটিভি), হাসান মাহমুদ (যমুনা টিভি), পুলক আহমেদ (এনটিভি ইউএসএ), আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ রিজু মোহাম্মদ (বাংলা টিভি), শামীম আল আমিন ও রফিকুল ইসলাম (টিবিএন-২৪) পপি চৌধুরী (সম্পাদক-নারী), তপন চৌধুরী (জন্মভূমি), এনামুর রেজা দিপু, শাহাব উদ্দিন সাগর (মুক্তবার্তা ২৪), হাসানুজ্জামান হাসান, কাওসার মোমিন, আলমগীর হোসেন (মুক্তকণ্ঠ), শামসুল আলম (জনতার মুক্তকণ্ঠ), ইমরান আনসারী (দৈনিক নয়া দিগন্ত), এম. এ. হাই স্বপন (মানবজমিন), শামসুল আলম লিটন (আজকাল), রফিকুজ্জামান (দৈনিক নবরাগ), সাইফ উদ্দিন আহমেদ রিপন, শিবলী সাদেক, গোলাম মোস্তফা সংগ্রাম, মোঃ মশিউর রহমান ও তফাজ্জল লিটন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মিডিয়া কর্মী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী শাহানারা রহমান, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলামসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।