নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়ায় পেশাগত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান
- প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮
- / ৮৩০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, মিডিয়ার মধ্যে রেষারেষি নয়, পেশাগত প্রতিযোগিতা বাড়ুক। ব্যক্তির প্রতিযোগিতা দেখতে চাই না। সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই দেখতে চায় সকলে। কমিউনিটি সাংবাদিকতায় অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। নানা প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে সাংবাদিক তথা মিডিয়া কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। বক্তারা আরো বলেন, পাঠকদেরও উচিত ভাল-মন্দ সাংবাদিকতার বিচার করা। সমাজে পরিশীলিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংবাদপত্র পাঠকের মান ও মনন বাড়াতে সাহায্য করে।
নিউইয়র্কের উডসাইডে গুলশান ট্যারেস মিলনায়তনে গত ৫ জুন মঙ্গলবার বিকেলে এই গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের আলোচনাপর পর ইফতার পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রিকার সম্পাদক-মিডিয়া কর্মী এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবী মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। ঢাকা থেকে আগত বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান কমিউনিটি সাংবাদিকতার ওপর বক্তব্য রাখেন। এই গোল টেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান রচি। গোল টেবিল বৈঠকের বিষয় ছিল ‘কমিউনিটি সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও প্রতিবন্ধকতা’।
প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর প্রথম বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ। এরপর বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, জেবিবিএ’র সভাপতি শাহ নেওয়াজ, আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকো, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সম্পাদকম-লীর সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং সাবেক সাসদ সদস্য এম.এম. শাহীন, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক ও আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নাজমুল আহসান, এটর্নী মীর মিজানুর রহমান, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ। আলোচনা সভার পর ইফতার পূর্ব দোয়া পরিচালনা করেন সাপ্তাহিক দেশকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদকম-লীর সভাপতি আবু জাফর মাহমুদ। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুধীজন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মনজুর আহমদ বলেন, বিগত দিনের চেয়ে বর্তমান সময়ে নিউইয়র্কে মিডিয়া জগতে উত্তরণ ঘটেছে। পাঠক বেড়েছে, পত্রিকা বেড়েছে, বিজ্ঞাপন বেড়েছে। পত্রিকা প্রকাশনার কাজ সহজ হয়েছে এবং স্থানীয় লেখকও বেড়েছে। একইসঙ্গে নিম্নমানের পত্রিকাও বের হচ্ছে। পাঠককে ভাল ও মন্দ মানের পত্রিকা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ভালকে গ্রহণ ও খারাপকে বর্জন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের দায়িত্ব অনেক। পরিশীলিত ও বুদ্ধি বৃত্তিক সাংবাদিকতা কমিউনিটিতে বেশি প্রয়োজন। এ ধরনের সাংবাদিকতা বা মিডিয়া পাঠকের মান ও মনন বাড়াতে পারে। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো ও ছুটি-ছাটা নির্ধারণ করা উচিত।
আবু তাহের বলেন, কমিউনিটিতে সাংবাদিকের দায়িত্ব মিল বা অমিল এবং ভাল বা খারাপ তুলে ধরা। গঠনমূলক সাংবাদিকতায় জনমত গঠন করেন সাংবাদিকরা। বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে সাংবাদিকরা এ কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকতার প্রতি মমত্ববোধ থাকতে হবে। এই মহৎ পেশায় শুধু অর্থ খুঁজলে হবে না।
এম. এম. শাহীন বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ববোধ থেকে পত্রিকা বের করেছিলাম। সে সব দিন ছিল অনেক দুঃষহ, কষ্টদায়ক। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এতো বছর পর আমরা কী দেখছি? দেখছি রেষারেষি। তিনি বলেন, কমিউনিটি সাংবাদিকতায় পেশাগত প্রতিযোগিতা দেখতে চাই। ব্যক্তির প্রতিযোগিতা দেখতে চাই না। মিডিয়ায় অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে। তিনি আরো বলেন, নিউইয়র্কে আমরা সাংবাদিকতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখতে চেয়েছিলাম। এখন তা আছে কিনা, জানি না।
ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, কমিউনিটি সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একে-অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কমিউনিটিতে সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের বিভিন্ন সময় নানা সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। পত্রিকা বেশি হওয়ায় বিজ্ঞাপনের বাজার সীমিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মিডিয়ার কারণে ব্যবসা ও শিক্ষার প্রসার ঘটছে।
রতন তালুকদার বলেন, এই কমিউনিটির কাছে সাংবাদিকরা জিম্মি। সাংবাদিকদের অনেক সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হয়। অনেক কিছু ভেবে-চিন্তে লিখতে হয়। বিজ্ঞাপন দাতাদের সঙ্গে সখ্যতা রাখতে হয়। আবার সিরিয়াস কোন ছাপা হলে হুমকি পান সাংবাদিকরা। নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কমিউনিটি সাংবাদিকতায়।
মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, কমিউনিটিতে সাংবাদিকতায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এই প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হলে আমাদের আত্ম-সমালোচনা করতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আব্দুস সালাম বলেন, নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের এক রকম সমস্যা, আর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আরেক রকম সমস্যা। অনেক কষ্ট করে এই প্রবাসে বিভিন্ন মিডিয়া গড়ে উঠেছে। আমি মনে করি, যত প্রতিবন্ধকতা হোক, সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অনেক সময় কমিউনিটিতে মিডিয়া বিভক্তিতে ইন্ধন যোগায়। এক সময় দুটি পত্রিকা প্রকাশ হতো নিউইয়র্কে। ঐ দুটি পত্রিকার কারণে ফোবানা খন্ডিত হয়েছিল। এর দায়ভার আমারও রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ (সাপ্তাহিক বর্তমান বাংলা), যুগ্ম সম্পাদক মনজুরুল হক মনজু (প্রথম আলো), কোষাধ্যক্ষ মশিউর রহমান মজুমদার (সাপ্তাহিক বর্ণমালা), নির্বাহী সদস্য আবু বকর সিদ্দিক (সাপ্তাহিক আজকাল) ও রফিকুল ইসলাম রফিক (টিবিএন-২৪ টিভি), সদস্যদের মধ্যে শাহাব উদ্দিন সাগর (সাপ্তাহিক আজকাল), শামীম আল আমীন (টিবিএন-২৪ টিভি), এ হাই স্বপন (সাপ্তাহিক আজকাল), তাওহিদা সুমি (সাপ্তাহিক আজকাল), এস. এম. সারোয়ার (সাপ্তাহিক প্রবাস), মল্লিকা খান মুনা (অননিউজ২৪.কম), পাপিয়া বেগম (সাপ্তাহিক প্রবাস), আলমগীর হোসেন (সাপ্তাহিক বাংলাদেশ), তফাজ্জল লিটন (প্রথম আলো), সীমা সুস্মিতা (সাপ্তাহিক দেশকণ্ঠ), তাপস কুমার সাহা (সাপ্তাহিক দেশকণ্ঠ)।
এ ছাড়া মিডিয়াকর্মীদের মধ্যে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাকি, টাইম টেলিভিশন-এর পরিচালক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, এটিএন বাংলা ইউএসএ’র কানু দত্ত সহ কমিউনিটি-রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মূলধারার রাজনীতিবিদ মোর্শেদ আলম, বাংলাদেশ সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, ফার্মাসিষ্ট মোশতাক আহমেদ, রিয়েল স্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম, জেবিবিএ’র সভাপতি শাহ নেওয়াজ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী, প্রকৌশলী নির্মল পাল, ডা. শান্তা পাল, এটর্নী মীর মিজানুর রহমান, দোহার উপজেলা সমিতির সভাপতি দুলাল বেহেদু, কমিউনিটি অ্যাক্টভিস্ট কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, শাহ. জে চৌধুরী, ড্রামা সার্কল-এর সভাপতি আবীর আলমগীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।