নিউইয়র্কের প্রেসনোট : সাংবাদিকদের বিভক্তি ও কমিউনিটির প্রকৃত চিত্র
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০১৫
- / ৮৬২ বার পঠিত
সম্প্রতি কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরকালে বিএনপি’র বিক্ষোভে নবেল বিজয়ী বাংলাদেশী অধ্যাপক ড. ইউনূসের কথিত অংশগ্রহণ নিয়ে নিউইয়র্ক ও বাংলাদেশের একাধিক মিডিয়ায় যে হলুদ সাংবাদিকতার অনভিপ্রীত সাংবাদিকতার চর্চা হয়েছে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। এই দুটো ঘটনাই সাংবাদিকতাকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, আপামর সাংবাদিক সমাজকেও হেয় প্রতিপন্ন করেছে। সাংবাদিকতা কখনোই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা সাংবাদিকতার প্রায় সিকি শতক পার হয়ে গেছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি বির্ণিমানে বাংলা সাংবাদিকতার ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষ করে নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের ব্যবসার প্রসার, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের উন্নয়ন ও ধর্মীয় চেতনার বিকাশে বাংলা সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শুধু তাই নয়, এই সুদীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সক্রিয় ভূমিকা দেশে-বিদেশে সম্প্রসারিত হয়ে ইতিবাচক ফলাফল অর্জণে সক্ষম হয়েছে মূলত: নিউইয়র্ক ভিত্তিক বাংলা সাংবাদিকতার কারণে। তা সত্ত্বেও দূর্ভাগজনক হলেও সত্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিউইয়র্কের বাংলা সাংবাদিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।
কেন এই অবস্থা? সম্প্রতি প্রবাসে বিভিন্ন মিডিয়ার পাঠক, দর্শক, পৃষ্ঠপোষক ও শুভান্যুধায়ীদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ের মতবিনিময়ের পর চারটি সত্য বেড়িয়ে এসেছে। তা হচ্ছে- প্রবাসে বাংলা সাংবাদিকতায় সাংবাদিকতার মূল নীতিমালা অনুসরণ করা হয়না। যে দেশে মূলধারার সাংবাদিকতাকে পৃথিবীর সর্বত্রই শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয়, সেই দেশেই বাংলা সাংবাদিকতার ব্যাপারে পাঠক-দর্শকদের নেতিবাচক উপলব্দি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। প্রচুর পাঠক-দর্শকের অভিযোগ নিউইয়র্কে বাংলা সাংবাদিকতা চর্চায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়। অপরাধী কিম্বা ঘটনার নায়ক বিত্তশালী, বিজ্ঞাপনদাতা অথবা সম্ভাব্য বিজ্ঞাপনদাতা হলে তার সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ/প্রচারের ধরণই পাল্টে যায়। অথচ আমেরিকান মুলধারার সংবাদপত্রে কখনই কোন অপরাধীর অনুকূলে সংবাদ প্রকাশ বা প্রচারের কোন নজির নেই। প্রকাশের ধরণ ভিন্ন রকম হতে পারে, কিন্তু মূল ঘটনা কখনই আড়াল করা হয় না।
নিউইয়র্কের বাংলা সাংকবাদিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনেকেই সাংবাদিকতার মূল নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও হাতেগোনা কয়েকজনের অপসাংবাদিকতায় জাড়িয়ে পড়া সকলেই দূর্নামের শিকারে বাধ্য হচ্ছেন। সাংবাদিকতা বিবেক নির্ভর পেশা। দূর্ভাগ্যজনকহলেও সত্য কয়েকজনের বিবেক মিথ্যের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার নূন্যতম নীতিমালার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি একাধিক সামাজিক অপরাধী নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়ার মালিকও হয়ে গেছেন। এদের অধীনে চাকরী করতে বাধ্য হচ্ছেন কিম্বা হয়েছেন দীর্ঘ দিনের বর্ণাঢ্য, সৃজনশীল সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। প্রবাসে বাংলা সাংবাদিকতায় সংশ্লিষ্টদের অনৈক্যের সুযোগকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতৃবর্গ। এরা কথায় কথায় সাংবাদিকদের এই ঘোষিত/অঘোষিত অনৈক্যকে জিইয়ে রাখতে নানা কৌশল ও ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় নেয়। এরমধ্যে রয়েছে বিজ্ঞাপন বন্টনে নীতিমালার অভাব ও বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে দ্বিধা-দন্দ্ব ও মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষেত্র বিশেষে সৌজন্য প্রদর্শনে চরম অনিহা প্রকাশ।
সাংবাদিকতা শুধু ব্যবসা নয়, বিবেক নির্ভর পেশাও। ব্যবসা করার আরো অনেক ক্ষেত্র আছে। শুধু সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে যেকোন উপায়ে অর্থ আয়ের চেষ্টা প্রকৃত সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেই চলবে। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, নিউইয়র্কের মিডিয়া সংশ্লিস্ট কতিপয় ব্যক্তি এই সত্যটি অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তণ দরকার। সাংবাদিকতার নূন্যতম নীতিমালা এবং সত্য প্রকাশে কোন প্রকার আপোষ না করার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজ কমিউনিটি বিণির্মানে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে পারেন। ১৬ অক্টোবর’২০১৫
(সাপ্তাহিক পরিচয়)