নিউইয়র্কের প্রেসনোট : বিজ্ঞাপনের ব্যবসাই পত্রিকা প্রকাশের মূল কারণ

- প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ১১৬৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক থেকে দেড় ডজনাধিক বাংলা পত্রিকা প্রকাশের পর আরো নাকি পত্রিকা প্রকাশের পথে। আজ-কালের মধ্যে নতুন আরো একটি পত্রিকা বাজারে আসছে এবং আরো একটি ফ্রি পত্রিকা বাজারে আসার প্রস্তুতি চলছে বলে কমিউনিটিতে গুজব রয়েছে। উত্তর আমেরিকায় অগ্রসরমান বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এতো প্রিন্ট মিডিয়ার প্রকাশনা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তারমধ্যে কমিউনিটির মিডিয়া জগতের বিজ্ঞাপন বাজারে একের পর এক যোগ হচ্ছে ঢাকার টিভিগুলো। সেই সাথে রয়েছে স্থানীয় অন্তত ৫টি টিভি মিডিয়া।
নিউইয়র্কে বাংলা মিডিয়ার প্রসারের মূলে রয়েছে বিজ্ঞাপন ব্যবসা! বলতে দ্বিধা নেই সাংবাদিকতার নামে ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ পথে যেনোতেনোভাবে পত্রিকা প্রকাশের নামে বিজ্ঞাপন আদায় করে ব্যবসাই হচ্ছে হাল আমলের সাংবাদিকতা। আর এতো মিডিয়ার দাপটে ধ্বংসের পথে মিডিয়া ব্যবসা। পাশাপাশি ‘বিজ্ঞাপনের মূল্য’ নেমে এসেছে লজ্জাজনক পর্যায়ে। অথচ মিডিয়া প্রকাশ বা সাংবাদিকতা হচ্ছে একটি ‘ক্রিয়েটিভ’ ও ‘সম্মাজনক’ পেশা। আশির দশকে বিকাশমান নিউইয়র্কে বাংলা পত্রিকার পদচারণা শুরু হয় তখন থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত চেষ্টা চলছিলো প্রবাসের সাংবাদিকতায় ‘ক্রিয়েটিভ’ ও ‘সম্মান’ ধরে রাখা। পরবর্তীতে যখন কমিউনিটিতে ফ্রি পত্রিকা’র যাত্রা শুরু হলো তখন থেকেই নিউইয়র্কের বাংলা সাংবাদিকতায় ব্যাপক পরিবর্তণ ঘটে। সচেতন পাঠকদের প্রশ্ন ‘মিডিয়া কেন ফ্রি হবে’ উপেক্ষা করে প্রকাশিত হতে থাকে ফি পত্রিকা। ফলে বিজ্ঞাপন প্রাপ্তীতে সঙ্কট দেখা দেয়ায় একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি সাপ্তাহিক ফি হতে বাধ্য হয়।
নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়াগুলোর সাম্প্রতিককালের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুরু থেকেই ফ্রি পত্রিকা প্রকাশের সাথে জড়িতরা ইতিপূর্বে নিউইয়র্কের কোন না কোন বাংলা মিডিয়ায় ‘সাংবাদিক কাম জ্ঞিাপন কালেক্টর’ হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে তারা ভালোভাবেই বিজ্ঞাপনের বাজারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় দেখেছেন বিজ্ঞাপন পেলেই তো পত্রিকা প্রকাশ করা যায়। পত্রিকার সম্পাদক/প্রকাশক হওয়া যায়। কমিউনিটিতে সম্মান পাওয়া যায়, খবরদারীও করা যায়। আর কি? তাদের সাথে কমিউনিটির এক শ্রেনীর ‘আইডেনটিটি ক্রাইসি’ধারী কাঁচা অর্থের মালিক নেপথ্যে উৎসাহও দিচ্ছেন। তারাও কাউকে কাউকে মিডিয়ার মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এসব প্রেক্ষাপটে হাতেগোনা ৪/৫টি পত্রিকা ছাড়া অন্য সকল পত্রিকায় খবরের চেয়ে বিজ্ঞাপনের হারই (নামেমাত্র মূল্যে) বেশী। যা প্রকৃত সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে না কি?
২.
নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টিবিএন২৪ চ্যানেল ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় খবর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৮টায় নিয়মিত খবর থাকবে টিবিএন২৪ চ্যানেলে। এ উপলক্ষ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে চ্যানেলটির সিইও আহমাদুল বারভূইয়া টিবিএন২৪-এর নৈশকালীন সংবাদ প্রচারের ঘোষণা দেন। চ্যানেলটি চালু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় এতে সংকবাদ প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হলো। ইতিপূর্বে নিয়মিত রাত ১০টার খবর চালু করেছে টাইম টেলিভিশন। নিয়মিত খবর পরিবেশনের কথা ভাবছে বাংলা টিভি নিউইয়র্ক। কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউইয়র্কের পূর্ণাঙ্গ টিভি চ্যানেল এসটিভি তাদের নিজস্ব স্টুডিও থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি খবর চালু করেছিলো।
৩.
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত চলতি সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য পত্রিকার মধ্যে সাপ্তাহিক পরিচয়-এ প্রকাশিত ‘ভূয়া ও মৌসুমী ট্যাক্স ফাইলিং প্রতিষ্ঠান থেকে সাবধান’, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র ‘ভাষা দিবস নয়, ভ্যালেন্টাইনসে আগ্রহ : দেশীয় সংস্কৃতিতে উদাসীন প্রবাসের নতুন প্রজন্ম’, ‘ট্যাক্স বাকী থাকলে কি করবেন’, ও ‘বাসা ভাড়ার চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ : ১১ বছর পর লিগ্যাল নোটিশ’, ‘সাপ্তাহিক ঠিকানায় প্রকাশিত ‘মুসলিম আমেরিকানদের উপর হামলা বাড়ছে’, ‘সেই মুজিব বিএনপির মঞ্চে’ এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় বার্তা সংস্থা ইউএনএ পরিবেশিত ‘নিউইয়র্কে স্থায়ী শহীদ মিনার : প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ’ শীর্ষক খবর/প্রতিবেদন পাঠকমহলে আলোচিত হয়েছে।
৪.
সাপ্তাহিক ঠিকানা ২৬ বর্ষে পদার্পণ করলো। আজ থেকে ২৫ বছর আগে অমর একুশে মহান শহীদ দিবসে সাপ্তাহিক ঠিকানা’র আতœপ্রকাশ ঘটে। বর্ষপূর্তী উপলক্ষৌ ঠিকানা’র চলতি সংখ্যা বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে ঠিকানা’র জন্য রইল শুভেচ্ছা। এদিকে অসুস্থ্য সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান ও সাপ্তাহিক রানার-এর প্রধান সম্পাদক তাসের মাহমুদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অপরদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনএ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ গত ১ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভি অফিস থেকে নামার সময় সিড়িতে পড়ে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পুরো বেডরেষ্টে রয়েছেন। তার বা পায়ে গুরুতর ফ্যাকচার হয়েছে। আমরা সকল অসুস্থ্য সাংবাদিকের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করছি।
৫.
আজ একুশে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের সফল আসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী (৮ ফাল্গুন)। এদিন ভাষার জন্য রাজপথে আতœসোর্গ করেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা অনেক ছাত্র-যুবা। পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্বাধীনতার আন্দোলন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বাঙালীরা।
কানাডা প্রবাসী দুই বাংলাদেশী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস-কে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানান। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শহীদ দিবসের ইতিহাস, মান-মর্যাদা, গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো’র প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এভাবেই আমাদের একুশ বিশ্ববাসীর একুশে পলিত হয়। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ এবং তাঁদের বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করছি। ২০ ফেব্রুয়ারী’২০১৫ (সাপ্তাহিক পরিচয়)