নিউইয়র্ক ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

তাদের পেশাদারিত্বের আদর্শ অনুস্মরণের আহ্বান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৯০৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): দেশবরেণ্য সাংবাদিক, বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যান, দৈনিক সমকাল-এর সম্পাদক গোলাম সারওয়ার এবং ইংরেজী দৈনিক দ্যা ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন-এর মৃত্যুতে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছেন সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক। দেশের সাংবাদিকতায় ছিলেন এক একজন প্রতিষ্ঠান। তাদের মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতায় অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বক্তারা তাদের বক্তব্যে সাংবাদিকতায় তাদের পেশাদারিত্বের আদর্শ অনুস্মরণের জন্য দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার দিমানেফার তিতির মাতা মমতাজ শিরিনের ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার গত ১৩ আগষ্ট সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দৈনিক যুগান্তর-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে সাংবাদিক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন গত ১ আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকাস্থ স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। অপরদিকে দিমানেফার তিতির মাতা মমতাজ শিরিন গত ১৭ আগষ্ট শুক্রবার বাদ মাগরিব (বাংলাদেশ সময়) রংপুরে নিজবাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে (দেশবাংলা/বাংলা টাইমস মিলনায়তন) গত ১৭ আগষ্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সভার আয়োজন করা হয়। প্রেসক্লাবের সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভা পরিচালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস। সভার শুরুতে মরহুমদ্বয়ের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর সরকার। খবর ইউএনএ’র।
আলোচনায় অংশ নেন প্রেসক্লাবের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, দৈনিক মানব জমিন-এর উপ সম্পাদক মনির হায়দার, প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাকী ও নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুদ্র মাসুদ। ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ সদস্য সৈয়দ ইলিয়াস খসরু ও রশীদ আহমদ ছাড়াও চ্যানেল আই অনলাইন-এর সাংবাদিক শাহ ফারুক রহমান এবং দেশবাংলা ও বাংলা টাইমস’র মৌ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বক্তাদের শোক সভায় বক্তাদের আলোচনায় সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক উঠে আসার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও দেশের সাংবাদিকতা জগতের দিকপাল মরহুম মওলানা আকরাম খাঁ, তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া), অঅব্দুস সালাম, জহুর হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার জাহিদ, গিয়াস কামাল চৌধুরী, তোয়াব খান, বিমান ভট্টাচার্য, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, হেদায়েত হোসেন মোর্শেদ, হাসান শাহরিয়ার প্রমুখের নাম উঠে আসে। যারা দেশের পেশাদারিত্বের সাংবাদিকতা-কে আলোকিত করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মনজুর আহমদ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ সাংবাদিকরা এক যুগ পেরিয়ে দেশের সাংবাদিকতায় নতুন যুগের সৃষ্টি করেছেন, আমরাও এক যুগ পেরিয়ে আরেক যুগের সূচনা করেছি। আমাদের পরবর্তী নতুন প্রজন্ম আরেক যুগের সৃষ্টি করবেন। প্রবাহমান সময়ের সাথে সাথে যুগের সৃষ্টি হয়, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যারা আমাদেরকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, সেই আলো কতটুকু আমরা ধারণ করতে পারছি। তিনি বলেন, গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন তেমনী সাংবাদিক যারা আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তারা মেধা সম্পন্ন সাংবাদিক ছিলেন বলেই, ইউনিয়ন বা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের চেয়ে পেশায় বেশী মনযোগী ছিলেন। সাংবাদিকতায় তাদের মিশন ছিলো। তিনি বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার পেশাগত যেকোন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী ছিলেন। অপরদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন অনৈতিক রিপোর্টং-এ খুব পারদর্শী ছিলেন, তার লেখার হাত খুব ভালো ছিলো। তাদের মুত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের সাংবাদিকতায় আরেকটি যুগে অবসান ঘটলো।
আবু তাহের বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী সাংবাদিক। তারা সাংবাদিকদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের লেখায় মুন্সীয়ানা ছিলো। তিনি ‘সবমেহেরের ছুটি’ শীর্ষক ছোট্ট হেডিং করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার এই রিপোর্টের কারণে একদিনেই দেশের সকল পতিতালয় বন্ধ করে দিয়েছিলো সরকার। তিনি দেশ ও প্রবাশের সাংবাদিকদের দলমতের উর্দ্বে উঠে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।
মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা গতে তারা পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন, সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠান ছিলেন। উভয়কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
নাজমুল আহসান বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন তাদের কর্মের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশাকে মর্যাদাশীল করেছেন। তারা কিংবদন্তী সাংবাদিক। তিনি বলেন, গোলাম সারওয়ার হেডলাইনে চমক দিতে পারতেন। তবে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক ছেড়ে দেয়ায় কষ্ট পেয়েছিলাম, বিস্মিত হয়েছি। অপরদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে খুব স্বজ্জন মানুষ ছিলেন, ইন্টারেস্টিং পার্সন ছিলেন। তাদের নিয়ে নিউইয়র্কেই অনেক স্মৃতি রয়েছে। পেশায় নতুন সাংবাদিকদের তাদের জীবনী পড়া উচিৎ।
রতন তালুকদার বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার মহৎ, মহান, সৎ, বর্ষিয়ান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সাহিত্য মাগাজিনে আধুনিকতা আনেন। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার মুখে প্রধানমন্ত্রীকে তোষামোদী করা দৃষ্টিকটু লেগেছে।
মনির হায়দার বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনরা দেশের সাংবাদিকতায় নির্ভরযোগ্য অভিভাবক ছিলেন। তার স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সকলকে আসমানের মতো ছায়া দিতেন। তাদের মধ্যে কোন অহংকার ছিলো না, সিনিয়রিটি ভাব ছিলো না। সিনিয়রদের মতো নবীন সাংবাদিকদেরও গুরুত্ব দিতে তাদের অসাধারণ গুণ ছিলো। নতুনদের কাজ শেখানোর ব্যাপারে তাদের তুলনা অতুলনীয়। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন তাদের কথা মনে থাকবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকরা মরহুম গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনের পেশাদারিত্বের আদর্শ অনুসরণ করতে পারলেই তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হবে।
হাসানুজ্জামান সাকী বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আমার কাছে পিতৃতুল্য মানুষ, আমি তার সন্তানতুল্য। তিনি ছিলেন বার্তা সম্পাদকদের সম্পাদক।
দিদার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার শিক্ষকের মতো ছিলেন। কোন রিপোর্টারকে এসাইনমেন্টে পাঠানোর আগে তাকে ব্রীফ করে দিতেন। শুনেছি সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুবুল সংবাদ-এর বার্তা সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে প্রায় প্রতিরাতেই প্রথম পাতা মেকআপ-এর আগে হেড লাইনের ব্যাপারে গোলাম সারওয়ারকে ফোন দিতেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনরা উচু মানের সাংবাদিক হিসেবে নিজেহদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তারা সৎ, সাহসী আর দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাদের পেশাদারিত্বের আদর্শ ধরে রাখতে হবে। তাতে প্রবাস ও দেশের মানুষ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশাও উপকৃত হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

তাদের পেশাদারিত্বের আদর্শ অনুস্মরণের আহ্বান

প্রকাশের সময় : ০৯:২৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৮

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): দেশবরেণ্য সাংবাদিক, বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যান, দৈনিক সমকাল-এর সম্পাদক গোলাম সারওয়ার এবং ইংরেজী দৈনিক দ্যা ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন-এর মৃত্যুতে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছেন সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক। দেশের সাংবাদিকতায় ছিলেন এক একজন প্রতিষ্ঠান। তাদের মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতায় অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বক্তারা তাদের বক্তব্যে সাংবাদিকতায় তাদের পেশাদারিত্বের আদর্শ অনুস্মরণের জন্য দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার দিমানেফার তিতির মাতা মমতাজ শিরিনের ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার গত ১৩ আগষ্ট সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দৈনিক যুগান্তর-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে সাংবাদিক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন গত ১ আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকাস্থ স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। অপরদিকে দিমানেফার তিতির মাতা মমতাজ শিরিন গত ১৭ আগষ্ট শুক্রবার বাদ মাগরিব (বাংলাদেশ সময়) রংপুরে নিজবাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে (দেশবাংলা/বাংলা টাইমস মিলনায়তন) গত ১৭ আগষ্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সভার আয়োজন করা হয়। প্রেসক্লাবের সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভা পরিচালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েস। সভার শুরুতে মরহুমদ্বয়ের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর সরকার। খবর ইউএনএ’র।
আলোচনায় অংশ নেন প্রেসক্লাবের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, দৈনিক মানব জমিন-এর উপ সম্পাদক মনির হায়দার, প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাকী ও নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুদ্র মাসুদ। ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ সদস্য সৈয়দ ইলিয়াস খসরু ও রশীদ আহমদ ছাড়াও চ্যানেল আই অনলাইন-এর সাংবাদিক শাহ ফারুক রহমান এবং দেশবাংলা ও বাংলা টাইমস’র মৌ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বক্তাদের শোক সভায় বক্তাদের আলোচনায় সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক উঠে আসার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও দেশের সাংবাদিকতা জগতের দিকপাল মরহুম মওলানা আকরাম খাঁ, তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া), অঅব্দুস সালাম, জহুর হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার জাহিদ, গিয়াস কামাল চৌধুরী, তোয়াব খান, বিমান ভট্টাচার্য, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, হেদায়েত হোসেন মোর্শেদ, হাসান শাহরিয়ার প্রমুখের নাম উঠে আসে। যারা দেশের পেশাদারিত্বের সাংবাদিকতা-কে আলোকিত করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মনজুর আহমদ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ সাংবাদিকরা এক যুগ পেরিয়ে দেশের সাংবাদিকতায় নতুন যুগের সৃষ্টি করেছেন, আমরাও এক যুগ পেরিয়ে আরেক যুগের সূচনা করেছি। আমাদের পরবর্তী নতুন প্রজন্ম আরেক যুগের সৃষ্টি করবেন। প্রবাহমান সময়ের সাথে সাথে যুগের সৃষ্টি হয়, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যারা আমাদেরকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, সেই আলো কতটুকু আমরা ধারণ করতে পারছি। তিনি বলেন, গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন তেমনী সাংবাদিক যারা আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তারা মেধা সম্পন্ন সাংবাদিক ছিলেন বলেই, ইউনিয়ন বা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের চেয়ে পেশায় বেশী মনযোগী ছিলেন। সাংবাদিকতায় তাদের মিশন ছিলো। তিনি বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার পেশাগত যেকোন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী ছিলেন। অপরদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন অনৈতিক রিপোর্টং-এ খুব পারদর্শী ছিলেন, তার লেখার হাত খুব ভালো ছিলো। তাদের মুত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের সাংবাদিকতায় আরেকটি যুগে অবসান ঘটলো।
আবু তাহের বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী সাংবাদিক। তারা সাংবাদিকদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের লেখায় মুন্সীয়ানা ছিলো। তিনি ‘সবমেহেরের ছুটি’ শীর্ষক ছোট্ট হেডিং করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার এই রিপোর্টের কারণে একদিনেই দেশের সকল পতিতালয় বন্ধ করে দিয়েছিলো সরকার। তিনি দেশ ও প্রবাশের সাংবাদিকদের দলমতের উর্দ্বে উঠে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।
মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা গতে তারা পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন, সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠান ছিলেন। উভয়কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
নাজমুল আহসান বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেন তাদের কর্মের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশাকে মর্যাদাশীল করেছেন। তারা কিংবদন্তী সাংবাদিক। তিনি বলেন, গোলাম সারওয়ার হেডলাইনে চমক দিতে পারতেন। তবে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক ছেড়ে দেয়ায় কষ্ট পেয়েছিলাম, বিস্মিত হয়েছি। অপরদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে খুব স্বজ্জন মানুষ ছিলেন, ইন্টারেস্টিং পার্সন ছিলেন। তাদের নিয়ে নিউইয়র্কেই অনেক স্মৃতি রয়েছে। পেশায় নতুন সাংবাদিকদের তাদের জীবনী পড়া উচিৎ।
রতন তালুকদার বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার মহৎ, মহান, সৎ, বর্ষিয়ান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সাহিত্য মাগাজিনে আধুনিকতা আনেন। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার মুখে প্রধানমন্ত্রীকে তোষামোদী করা দৃষ্টিকটু লেগেছে।
মনির হায়দার বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনরা দেশের সাংবাদিকতায় নির্ভরযোগ্য অভিভাবক ছিলেন। তার স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সকলকে আসমানের মতো ছায়া দিতেন। তাদের মধ্যে কোন অহংকার ছিলো না, সিনিয়রিটি ভাব ছিলো না। সিনিয়রদের মতো নবীন সাংবাদিকদেরও গুরুত্ব দিতে তাদের অসাধারণ গুণ ছিলো। নতুনদের কাজ শেখানোর ব্যাপারে তাদের তুলনা অতুলনীয়। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন তাদের কথা মনে থাকবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকরা মরহুম গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনের পেশাদারিত্বের আদর্শ অনুসরণ করতে পারলেই তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হবে।
হাসানুজ্জামান সাকী বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আমার কাছে পিতৃতুল্য মানুষ, আমি তার সন্তানতুল্য। তিনি ছিলেন বার্তা সম্পাদকদের সম্পাদক।
দিদার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার শিক্ষকের মতো ছিলেন। কোন রিপোর্টারকে এসাইনমেন্টে পাঠানোর আগে তাকে ব্রীফ করে দিতেন। শুনেছি সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুবুল সংবাদ-এর বার্তা সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে প্রায় প্রতিরাতেই প্রথম পাতা মেকআপ-এর আগে হেড লাইনের ব্যাপারে গোলাম সারওয়ারকে ফোন দিতেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ও মোয়াজ্জেম হোসেনরা উচু মানের সাংবাদিক হিসেবে নিজেহদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তারা সৎ, সাহসী আর দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাদের পেশাদারিত্বের আদর্শ ধরে রাখতে হবে। তাতে প্রবাস ও দেশের মানুষ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশাও উপকৃত হবে।