নিউইয়র্ক ০২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

করোনায় থাবায় বিপন্ন সংবাদপত্র

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০
  • / ১৫৭ বার পঠিত

হাবিবুর রহমান: কোভিড-১৯ ভাইরাসটি সারা পৃথিবীর গণ মাধ্যমকে যে সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তার ধাক্কা এসে লেগেছে নিউইয়র্কের সংবাদপত্র শিল্পেও। দু’টি বাদে নিউইয়র্কের সবকটি সংবাদপত্রের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর তাদের ক’টি আবার আলোর মুখ দেখবে তা সত্যিই ভাবার বিষয়। সংবাদপত্রের আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। লক ডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অফিস-আদালত সহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবার কারণে ট্রাভেল এজেন্সীগুলোও অস্তিত্ব সংকটে। রমজান মাসে প্রবাসের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মেতে উঠে ইফতার পার্টিতে। সংবাদপত্রগুলোর পাতায় পাতায় থাকে এসব অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। এবার আইন করে জনসমাবেশ বন্ধ ঘোষণা করায় কোন ইফতার পার্টি আর হচ্ছেনা। সামারের আগমনী গান ভাসছে বাতাসে। এর আগে লক ডাউন উঠলেও সোস্যাল ডিসটান্স বজায় রাখার প্রয়োজনে পিকনিক অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনাও কম। সবাই ধারনা করছেন করোনার প্রভাব ঘুচে বিশ্বটা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে অনেক। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সহসা আগমন ঘটবে না প্রবাসে। আয়োজন হবেনা তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। সবদিক বিবেচনা করে বলা যায় সামনে মিডিয়াগুলোর জন্য একটা অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে।
খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশের অনেক সংবাদপত্রেরই প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে গেছে। দু’ একটি সংবাদপত্র বন্ধও ঘোষণা করা হয়েছে। এমনিতেই অনিশ্চয়তা আর সংকট পিছু ছাড়ছে না সংবাদকর্মীদের। তা আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে সর্বগ্রাসী করোনা। এই রমজান মাসেও ঢাকায় একটি দৈনিকের ২০ জন সংবাদকর্মীকে একসঙ্গে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
করোনায় থাবায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের সংবাদপত্রও। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস টুডে’ বিক্রি করে দিচ্ছি তাদের রিয়েল এস্টেট। রূপার্ট মারডকের অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া গ্রæপ নিউজ কর্পোরেশন তাদের আঞ্চলিক ৬০টি সংবাদপত্রের ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে। ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে অনলাইনে যাওয়ার পথে নিউসাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, কুইন্সল্যান্ডের মত পত্রিকারগুলো। ব্রিটেনে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে মানচেস্টার টাইম, গেøাবাল রিমার্ক সহ ২০টি পত্রিকা। টাইম, গার্ডিয়ানের মত কাগজের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমেছে করোনার দাপটে।
অন লাইন হোক আর প্রিন্ট ভার্সন হোক এই করোনা সংকটের সময়ও সংবাদকর্মীরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বশেষ খবরাখবর পৌছে দিচ্ছেন জনগণের কাছে। কিন্তু তাদের ব্যক্তি জীবন আর পারিবারিক জীবন উভয়ই মুখামুখি চরম সংকটের। একদিকে বেতন ভাতার অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে স্বাস্থ ঝুঁকি। তাদের নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা, নেই ঝুঁকিভাতা। বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের জন্য প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও গণমাধ্যম কর্মীরা এর আওতায় নেই। স্বাস্থকর্মীদের মত গণমাধ্যম কর্মীরাও কাগজে কলমে ‘এসেনসিয়াল কর্মী’ বিবেচিত হলেও তাদের জন্য এই দূর্যোগে নেই কোন বিশেষ বীমার ব্যবস্থা। করোনায় স্বাস্থকর্মীরা কেউ আক্রান্ত হলে রয়েছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার বীমা ব্যবস্থা। আর মৃত্যু হলে এটি হবে ৫ গুণ। কিন্তু সাংবাদিকের বেলায় এ ধরনের কোন ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই।
শত বছরের মুদ্রণ গণমাধ্যমের ইতিহাসে এবারের সংকট নজীরবিহীন। করোনা উত্তর সময়েও এই সংকট উত্তরণে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, সংবাদপত্রের প্রকাশনা কিভাবে অব্যাহত থাকবে তা এখন থেকেই ভাবতে হবে। করোনা থেকে বাঁচলেও গণ মাধ্যমকর্মীরা আগামীতে তাদের জীবিকা বাঁচাতে পারবেন কিনা এ প্রশ্নই এখন সামনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, নিউইয়র্ক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

করোনায় থাবায় বিপন্ন সংবাদপত্র

প্রকাশের সময় : ০৫:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০

হাবিবুর রহমান: কোভিড-১৯ ভাইরাসটি সারা পৃথিবীর গণ মাধ্যমকে যে সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তার ধাক্কা এসে লেগেছে নিউইয়র্কের সংবাদপত্র শিল্পেও। দু’টি বাদে নিউইয়র্কের সবকটি সংবাদপত্রের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর তাদের ক’টি আবার আলোর মুখ দেখবে তা সত্যিই ভাবার বিষয়। সংবাদপত্রের আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। লক ডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অফিস-আদালত সহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবার কারণে ট্রাভেল এজেন্সীগুলোও অস্তিত্ব সংকটে। রমজান মাসে প্রবাসের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মেতে উঠে ইফতার পার্টিতে। সংবাদপত্রগুলোর পাতায় পাতায় থাকে এসব অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। এবার আইন করে জনসমাবেশ বন্ধ ঘোষণা করায় কোন ইফতার পার্টি আর হচ্ছেনা। সামারের আগমনী গান ভাসছে বাতাসে। এর আগে লক ডাউন উঠলেও সোস্যাল ডিসটান্স বজায় রাখার প্রয়োজনে পিকনিক অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনাও কম। সবাই ধারনা করছেন করোনার প্রভাব ঘুচে বিশ্বটা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে অনেক। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সহসা আগমন ঘটবে না প্রবাসে। আয়োজন হবেনা তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। সবদিক বিবেচনা করে বলা যায় সামনে মিডিয়াগুলোর জন্য একটা অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে।
খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশের অনেক সংবাদপত্রেরই প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে গেছে। দু’ একটি সংবাদপত্র বন্ধও ঘোষণা করা হয়েছে। এমনিতেই অনিশ্চয়তা আর সংকট পিছু ছাড়ছে না সংবাদকর্মীদের। তা আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে সর্বগ্রাসী করোনা। এই রমজান মাসেও ঢাকায় একটি দৈনিকের ২০ জন সংবাদকর্মীকে একসঙ্গে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
করোনায় থাবায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের সংবাদপত্রও। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস টুডে’ বিক্রি করে দিচ্ছি তাদের রিয়েল এস্টেট। রূপার্ট মারডকের অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া গ্রæপ নিউজ কর্পোরেশন তাদের আঞ্চলিক ৬০টি সংবাদপত্রের ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে। ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে অনলাইনে যাওয়ার পথে নিউসাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, কুইন্সল্যান্ডের মত পত্রিকারগুলো। ব্রিটেনে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে মানচেস্টার টাইম, গেøাবাল রিমার্ক সহ ২০টি পত্রিকা। টাইম, গার্ডিয়ানের মত কাগজের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমেছে করোনার দাপটে।
অন লাইন হোক আর প্রিন্ট ভার্সন হোক এই করোনা সংকটের সময়ও সংবাদকর্মীরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বশেষ খবরাখবর পৌছে দিচ্ছেন জনগণের কাছে। কিন্তু তাদের ব্যক্তি জীবন আর পারিবারিক জীবন উভয়ই মুখামুখি চরম সংকটের। একদিকে বেতন ভাতার অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে স্বাস্থ ঝুঁকি। তাদের নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা, নেই ঝুঁকিভাতা। বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের জন্য প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও গণমাধ্যম কর্মীরা এর আওতায় নেই। স্বাস্থকর্মীদের মত গণমাধ্যম কর্মীরাও কাগজে কলমে ‘এসেনসিয়াল কর্মী’ বিবেচিত হলেও তাদের জন্য এই দূর্যোগে নেই কোন বিশেষ বীমার ব্যবস্থা। করোনায় স্বাস্থকর্মীরা কেউ আক্রান্ত হলে রয়েছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার বীমা ব্যবস্থা। আর মৃত্যু হলে এটি হবে ৫ গুণ। কিন্তু সাংবাদিকের বেলায় এ ধরনের কোন ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই।
শত বছরের মুদ্রণ গণমাধ্যমের ইতিহাসে এবারের সংকট নজীরবিহীন। করোনা উত্তর সময়েও এই সংকট উত্তরণে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, সংবাদপত্রের প্রকাশনা কিভাবে অব্যাহত থাকবে তা এখন থেকেই ভাবতে হবে। করোনা থেকে বাঁচলেও গণ মাধ্যমকর্মীরা আগামীতে তাদের জীবিকা বাঁচাতে পারবেন কিনা এ প্রশ্নই এখন সামনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, নিউইয়র্ক।