কবে ক্ষমতা ছাড়ছেন’ ‘ক্ষমতা ছাড়বো কেন’
- প্রকাশের সময় : ০৭:১৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৪৪ বার পঠিত
‘কবে ক্ষমতা ছাড়ছেন’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন নিউইয়র্কের একটি রেস্টুরেন্টে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। পাশে স্ত্রী সেলিনা মোমেন। টেবিলে বসে নাস্তা করা অবস্থায় যার সঙ্গে মন্ত্রী কথা বলছেন তিনি হলেন সাংবাদিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপ প্রেস সেক্রেটারী মুশফিকুল ফজল আনসারী।
কুশল বিনিময়ের এক ফাঁকে ওই সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘কবে ক্ষমতা ছাড়ছেন?’ তার এই প্রশ্ন এবং মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আর ওই ভাইরাল ছবি ও নিউজে নেটিজেনরা নানান মন্তব্য করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন। হাজার হাজার লাইক ও শেয়ার পড়েছে ওই সচিত্র খবরে। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করতেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ে কাজ করেছেন। এখন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখান থেকে প্রকাশিত সাউথ এশিয়া পার্সপেক্টিভ জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক। ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাব এবং হোয়াইট হাউজ প্রেস ক্লাবের সদস্য। জাতিসংঘ সংবাদদাতা সমিতিরও সদস্য তিনি। তার সম্পাদনায় ‘জাস্ট নিউজ’ নামে অনলাইন পোর্টালও রয়েছে।
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন মানুষদের কাছে খুবই পরিচিত মুখ। হোয়াইট হাউস, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও জাতিসংঘের প্রেস ব্রিফিংগুলোতে নিয়মিত কভার করেন এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপনের মধ্য দিয়ে এই পরিচিতি লাভ করেন। তবে সরকার-সমর্থকরা যে তার প্রতি বিরূপ সেটাও গোপন নয়। তাকে (আনসারী) সাইজ করতে সরকার সমর্থিত একজন বাংলাদেশী সাংবাদিককে হোয়াইট হাউস, পররাষ্ট্র দফতরে এসাইন্ট করা হয়। কয়েকদিন আগে ওই সাংবাদিক ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের জ্বালাও পোড়াও এবং গুম-খুন’ নিয়ে প্রশ্ন করায় তার প্রশ্নের অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে এড়িয়ে যান পররাষ্ট্র দফতরের মুখপত্র।
গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) নিউইয়র্কের বাঙালীপাড়া জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্তোঁরায় সকালের নাশতা খেতে আসেন মুশফিকুলর ফজল আনসারী। তার সঙ্গে ছিলেন আরো কয়েকজন। এ সময় হঠাৎ রেস্টুরেন্টে হাজির হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন। সাংবাদিক মুশফিকুল নাস্তা করছেন শুনেই মুশফিকুলের টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুশল বিনিময় করেন। চেয়ার টেনে বসে বেশ গল্প জুড়ে দেন। স্ত্রী ছাড়াও তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন। উল্লেখ্য, ড. মোমেন আর আনসারী উভয়েই সিলেট জেলাবাসী।
রেস্তোরায় আনসারীর সঙ্গে নাস্তা করছিলেন ভার্জিনিয়ার ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদ খান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, সাংবাদিক মুশফিকুল তার কয়েক বন্ধুসহ নবান্ন রেস্টুরেন্টে বসে সবেমাত্র নাশতা খেতে শুরু করেছিলেন। ঠিক তখনই সেখানে সস্ত্রীক হাজির হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। তিনি সোজা মুশফিকুলের টেবিলের সামনে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। মন্ত্রী আমেরিকান জীবনের নানা অধ্যায়ের গল্প করেন। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ফোবানা গঠনের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মুশফিকুল ফজল আনসারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কবে ক্ষমতা ছাড়ছেন?’ জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়বো কেন? এবার নির্বাচন হবে নির্বাচনের মতো। মন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ‘আমেরিকায় কি নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা ছাড়ে?’ তখন সাংবাদিক মুশফিক বলেন, ‘এই তুলনা (আমেরিকার তুলনা) করবেন না। দেশের (বাংলাদেশ) সব প্রথা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব কেতাবি কথা বলে কী লাভ? বরং প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারেন ক্ষমতা থেকে সরে পড়েন। অবস্থা কিন্তু ভালো না। বিপদে পড়ে যাবেন। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। বরং এখনই বিদায় নিলে দেখা যাবে কিছু করা যায় কি-না। পাল্টা উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না আমরা এসব নিয়ে চিন্তা করছি না। তবে হ্যাঁ পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, কারও সাথে ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনাও করা যায় না। সবাই পেছনে লেগে থাকে। সেদিন আমার এক বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার বাড়িতে গেলাম। আমার আরেক বন্ধু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও সেখানে এসেছিল। সেটা নিয়ে কত কথা!’ এর প্রেক্ষিতে মুশফিকুল বলেন, ‘আপনার দল আওয়ামী লীগই দেশটাকে এই জায়গায় নিয়ে গেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও সাংবাদিক মুশফিকের কথপোকথনের অংশ বিশেষ নিম্নরূপ:
ড. মোমেন: কেমন আছেন?
মুশফিক: ভালো আর কই? আপনি এখানে কী করেন?
ড. মোমেন: খাইতে এসে আপনাকে দেখে আসলাম।
মুশফিক: তা ভালো করেছেন? তবে ক্ষমতা ছাড়ছেন কবে?
ড. মোমেন: ক্ষমতা ছাড়ব কেন?
মুশফিক: অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. মোমেন: যুক্তরাষ্ট্রে কী নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা ছাড়ে?
মুশফিক: কিসের মধ্যে কী! দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছেন? ভালোয় ভালোয় উনিসহ ক্ষমতা ছেড়ে দেন। না হলে কিন্তু বিপদ ভয়াবহ। আর তখন কোন কিছু করা যাবেনা। বরং এখনই ছেড়ে দিলে এক্সিটের বিষয়ে ভাবা যেতে পারে।
ড. মোমেন: দেখা যাক কি হয়।
এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন নাস্তা খেতে স্ত্রী ও সঙ্গীদের নিয়ে অন্য একটি টেবিলে বসেন। সচিত্র এই খবর এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারে ভাইরাল। ইউটিউবে এই খবর নিয়ে ইউটিউবাররা নানান মন্তব্য-বক্তব্য প্রচার করছেন।