নিউইয়র্ক ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পর্দার বাইরের হাজারো তিথির গল্প এটি

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
  • / ৭৭ বার পঠিত

ভিকি জাহেদ পরিচালিত ‘তিথিডোর’ নাটকটি কোনো নির্দিষ্ট তিথির গল্প না। আমাদের সমাজের অনেক তিথির প্রতিনিধিত্ব করেছেন মেহজাবিন। একটি নাটক বা সিনেমা তখনই জনপ্রিয় হয়, যখন সেই নাটক বা সিনেমার গল্প আপনার জীবনের গল্প মনে হবে। নাটকে মেহজাবিনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সাথে আপনার জীবনের ঘটনার মিল খুঁজে পাবেন। এ ছাড়াও নাটকটির সিনেমেটোগ্রাফি, সংলাপ, মেকআপ এবং লাইট সবই ছিল অসাধারণ।

নাটকের শুরুতেই কয়েকটা ডায়ালগের পর নায়ক নায়িকার মুখের উপর গরম চা ছুঁড়ে মারে। এখান থেকে নাটকের ক্লাইমেক্স শুরু। ঠিক এই শটের পর নায়িকা পৃথিবীর সব থেকে কঠিন বাস্তব কথাটা বলে, ‘বেঁচে থাকার শক্তি নাই,মরে যাওযার সাহস নাই’। আত্মহত্যার দড়ি হাতে নিয়েই এই ডায়ালগ দেয় মেহজাবিন। আর আত্মহত্যার দড়িটি হাতে ধরিয়ে দেয় সেই ভালোবাসার মানুষটিই। মনের মানুষ যখন নীরবে মন নিয়ে খেলা করে, যখন জানতে পারি, ভালোবাসার মানুষের কাছে আমি খেলনা ছিলাম, ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে যখন ভালোবাসার বদলে অবহেলা পাওয়া যায়, সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু বিয়ের কথা বললেই মুখের উপর গরম চা ছুড়ে মারে, সম্মানের বদলে অসম্মান পাওয়া যায়, সেখানে ভালোবাসা থাকে না। আমাদের সমাজের মেয়েদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে তিথি। ভালোবাসার মানুষ যখন খেলা শেষ করে একসময় দুমড়ে মুচড়ে ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়, ঠিক তখনই টনক নড়ে। আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষের মাঝে পৃথিবী বানিয়ে ফেলি। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে যে মা বাবা ভাই বোন বন্ধু বান্ধব আছে সেটা ভুলে যাই।

তিথিডোর না্টকের একটা অংশে দেখা যায়, নায়িকা প্রতিদিন ডিম দিয়ে ভাত খায়। তার মা তাকে বলে প্রতিদিন ডিম দিয়ে কেন ভাত খাও? বাজারে কিছু নাই? মেহজাবিন রেগে যায়। তার পরের দৃশ্যে দেখায়, মেহজাবিনের ভাতের সাথে ডিমের খোসা মুখে চলে গেছে। সে মুখ থেকে বের করে। আবার ভাত খাওয়া শুরু করে। জীবনে এই ঘটনা তখনই ঘটে যখন একটু একটু করে উপলব্ধি হয় ভালোবাসার মানুষ কতো নিঁখুতভাবে প্রতিমুহূর্তে ঠকিয়ে গেছে। কতোটা অবহেলা, করার পর শুধুমাত্র দেহের কারণে সে পাশে ছিল।

একাকীত্ব যে কি ভয়ানক, নিসঙ্গতা যে কি নিষ্ঠুর সেটা এর মধ্যে দিয়ে না গেলে বোঝা কঠিন। ঠিক এই সময়ে মানসিক ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু আমরা সেটা করি না। রোগীর অবস্থা যখন করুণ, রোগী যখন আইসিইউতে, তখন আর কি করার থাকে বলেন? বর্তমান সমাজে সবাই ব্যাস্ত। কেউ কারও কথা শোনার সময় নেই। কিন্তু মানসিক ডাক্তার ঠিকই আপনার কথা শুনবে। আপনাকে চিকিৎসা দেবে। ঔষধ দেবে। মানসিক ডাক্তার ফেরেস্তার মতো আপনাকে সাহায্য করবে। তিথিডোর নাটকে মানসিক ডাক্তারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত। মেহজাবিনের জীবনের কোনো সুখ দুঃখের কথা না শুনেই তিনি একবাক্যে বলেন, you are sweet young lady lacking confidence. মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব বোঝা তোমার ঘাড়ের উপর দেওয়া আছে। সেই জন্য তুমি কুঁজো হয়ে বসে আছো। এই কুঁজো হয়ে বসে থাকাটাই হলো কনফিডেন্ট বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। বাস্তব জীবনে এটাই হয়। আমরা এ্কজন মানুষ খারাপ বলে পৃথিবীর সবাই আমাকে খারাপ বলবে এটা ভাবা শুরু করি। একজন কষ্ট দিয়েছে বলে সবাই কষ্ট দেয় বলে ভেবে নিই। এরপর পৃথিবীর সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিই।

যাদের পরিবারে বাবা মা বা ভাইবোনের কোনো টান থাকে না। আর্থিক অসঙ্গতি থাকে। সবমিলিয়ে যখন পেরে ওঠে না, তখন জীবন নামের নদীতে এই যে অনর্থক স্রোত, মায়ের চোখ রাঙ্গানি, বাবার বিরক্তি, ভাইয়ের তাচ্ছিল্য আত্মহত্যার কাছে নিয়ে যায়। ফলে নাটকের ব্যবহৃত ‘বেঁচে থাকার শক্তি নেই আবার মরে যাওয়ারও সাহস নেই।’ যেনো যাপিত জীবনের জীবন্ত এক রূপ ফুটিয়ে তুলে।

নাটক – তিথিডোর; পরিচালনা – ভিকি জাহেদ; অভিনয় – মেহজাবিন, প্রান্তর দস্তিদার, আবুল হায়াত, শামীমা নাজনীন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

পর্দার বাইরের হাজারো তিথির গল্প এটি

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

ভিকি জাহেদ পরিচালিত ‘তিথিডোর’ নাটকটি কোনো নির্দিষ্ট তিথির গল্প না। আমাদের সমাজের অনেক তিথির প্রতিনিধিত্ব করেছেন মেহজাবিন। একটি নাটক বা সিনেমা তখনই জনপ্রিয় হয়, যখন সেই নাটক বা সিনেমার গল্প আপনার জীবনের গল্প মনে হবে। নাটকে মেহজাবিনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সাথে আপনার জীবনের ঘটনার মিল খুঁজে পাবেন। এ ছাড়াও নাটকটির সিনেমেটোগ্রাফি, সংলাপ, মেকআপ এবং লাইট সবই ছিল অসাধারণ।

নাটকের শুরুতেই কয়েকটা ডায়ালগের পর নায়ক নায়িকার মুখের উপর গরম চা ছুঁড়ে মারে। এখান থেকে নাটকের ক্লাইমেক্স শুরু। ঠিক এই শটের পর নায়িকা পৃথিবীর সব থেকে কঠিন বাস্তব কথাটা বলে, ‘বেঁচে থাকার শক্তি নাই,মরে যাওযার সাহস নাই’। আত্মহত্যার দড়ি হাতে নিয়েই এই ডায়ালগ দেয় মেহজাবিন। আর আত্মহত্যার দড়িটি হাতে ধরিয়ে দেয় সেই ভালোবাসার মানুষটিই। মনের মানুষ যখন নীরবে মন নিয়ে খেলা করে, যখন জানতে পারি, ভালোবাসার মানুষের কাছে আমি খেলনা ছিলাম, ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে যখন ভালোবাসার বদলে অবহেলা পাওয়া যায়, সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু বিয়ের কথা বললেই মুখের উপর গরম চা ছুড়ে মারে, সম্মানের বদলে অসম্মান পাওয়া যায়, সেখানে ভালোবাসা থাকে না। আমাদের সমাজের মেয়েদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে তিথি। ভালোবাসার মানুষ যখন খেলা শেষ করে একসময় দুমড়ে মুচড়ে ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়, ঠিক তখনই টনক নড়ে। আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষের মাঝে পৃথিবী বানিয়ে ফেলি। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে যে মা বাবা ভাই বোন বন্ধু বান্ধব আছে সেটা ভুলে যাই।

তিথিডোর না্টকের একটা অংশে দেখা যায়, নায়িকা প্রতিদিন ডিম দিয়ে ভাত খায়। তার মা তাকে বলে প্রতিদিন ডিম দিয়ে কেন ভাত খাও? বাজারে কিছু নাই? মেহজাবিন রেগে যায়। তার পরের দৃশ্যে দেখায়, মেহজাবিনের ভাতের সাথে ডিমের খোসা মুখে চলে গেছে। সে মুখ থেকে বের করে। আবার ভাত খাওয়া শুরু করে। জীবনে এই ঘটনা তখনই ঘটে যখন একটু একটু করে উপলব্ধি হয় ভালোবাসার মানুষ কতো নিঁখুতভাবে প্রতিমুহূর্তে ঠকিয়ে গেছে। কতোটা অবহেলা, করার পর শুধুমাত্র দেহের কারণে সে পাশে ছিল।

একাকীত্ব যে কি ভয়ানক, নিসঙ্গতা যে কি নিষ্ঠুর সেটা এর মধ্যে দিয়ে না গেলে বোঝা কঠিন। ঠিক এই সময়ে মানসিক ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু আমরা সেটা করি না। রোগীর অবস্থা যখন করুণ, রোগী যখন আইসিইউতে, তখন আর কি করার থাকে বলেন? বর্তমান সমাজে সবাই ব্যাস্ত। কেউ কারও কথা শোনার সময় নেই। কিন্তু মানসিক ডাক্তার ঠিকই আপনার কথা শুনবে। আপনাকে চিকিৎসা দেবে। ঔষধ দেবে। মানসিক ডাক্তার ফেরেস্তার মতো আপনাকে সাহায্য করবে। তিথিডোর নাটকে মানসিক ডাক্তারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত। মেহজাবিনের জীবনের কোনো সুখ দুঃখের কথা না শুনেই তিনি একবাক্যে বলেন, you are sweet young lady lacking confidence. মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব বোঝা তোমার ঘাড়ের উপর দেওয়া আছে। সেই জন্য তুমি কুঁজো হয়ে বসে আছো। এই কুঁজো হয়ে বসে থাকাটাই হলো কনফিডেন্ট বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। বাস্তব জীবনে এটাই হয়। আমরা এ্কজন মানুষ খারাপ বলে পৃথিবীর সবাই আমাকে খারাপ বলবে এটা ভাবা শুরু করি। একজন কষ্ট দিয়েছে বলে সবাই কষ্ট দেয় বলে ভেবে নিই। এরপর পৃথিবীর সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিই।

যাদের পরিবারে বাবা মা বা ভাইবোনের কোনো টান থাকে না। আর্থিক অসঙ্গতি থাকে। সবমিলিয়ে যখন পেরে ওঠে না, তখন জীবন নামের নদীতে এই যে অনর্থক স্রোত, মায়ের চোখ রাঙ্গানি, বাবার বিরক্তি, ভাইয়ের তাচ্ছিল্য আত্মহত্যার কাছে নিয়ে যায়। ফলে নাটকের ব্যবহৃত ‘বেঁচে থাকার শক্তি নেই আবার মরে যাওয়ারও সাহস নেই।’ যেনো যাপিত জীবনের জীবন্ত এক রূপ ফুটিয়ে তুলে।

নাটক – তিথিডোর; পরিচালনা – ভিকি জাহেদ; অভিনয় – মেহজাবিন, প্রান্তর দস্তিদার, আবুল হায়াত, শামীমা নাজনীন।