মডেল তাসনিয়ার আত্মহত্যা: উচ্চবিলাসী আকাঙ্খার বলি
- প্রকাশের সময় : ০৩:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪৫ বার পঠিত
হক কথা ডেস্ক : শুক্রবার সকালে তার ধানমণ্ডির ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মডেল তাসনিয়া তানজিম ওরফে তাসনিয়া রহমানের মরদেহ। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় আত্মহত্যা করেছেন তাসনিয়া।
বেপরোয়া ও বিলাসী জীবনের কারণেই কি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তাসনিয়া। তার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতারণা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে প্রকাশ্যে আসতে থাকে। তখনই নিজের ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ফেসবুক লাইভে ও কিছু অনলাইন মাধ্যমে কথা বলেন তাসনিয়া। এসব লাইভে তাসনিয়া প্রকাশ করেন তার সাথে কার কার সম্পর্ক ছিল এবং কাদের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।
এদিকে তদন্তে উঠে আসে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসেনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন তাসনিয়া। পরবর্তীতে পিবিআইয়ের তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয় এই মামলা এবং প্রকাশ পায় তারা বেশ কয়েকবছর ধরে প্রেম করছিলেন। মাত্র চার মাস পর একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ইফতেখারুল আলম নামের এক ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে পর্নো ছবি ছড়ানোর অভিযোগে সাইবার মামলা করেছিলেন তাসনিয়া। কিন্ত সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে ইফতেখারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাসনিয়ার।
করেছেন বিদেশ ভ্রমণও। বিভিন্ন সময়ে তার থেকে অন্তত বিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলা করেন ইফতেখারের বিরুদ্ধে। সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় তাসনিয়া পেশাদার ব্ল্যাকমেইলিং এ জড়িত। মূলত ধন্যাঢ্য পুরুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। আরেক তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের তদন্তেও উঠে আসে একই চিত্র। এছাড়াও শোবিজ অঙ্গনের আরেক মডেল ইশরাত পায়েলের স্বামীর সাথেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তাসনিয়া। এসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর গেল বছর তাসনিয়া রহমান প্রযোজক ও নির্মাতা জসীম আহমদকে তা ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করে তাদের মধ্যকার ২০২০ সালের একটি পুরনো মামলাকে সামনে নিয়ে এসে অনলাইনে মানহানীকর বক্তব্য দিতে থাকেন। এ সময় জসীম আহমেদের আইনজীবিরা সংবাদ সম্মেলন করে সাইবার আইনে মামলার আবেদনের কথা জানান। আইনজীবি ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম গণমাধ্যমে বলেন, তাসনিয়া সিরিয়ালি ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করেন। নানা বিতর্কের পর বেশকিছুদিন ধরেই তাসনিয়া রহমান তার ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রাম আইডি ডিএক্টিভেট করে আড়ালে চলে যান। সম্প্রতি ইউল্যাবের আশিম নামের এক ছাত্রের সাথে লিভিং রিলেশনে ছিলেন তাসনিয়া। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে তাসনিয়ার নানা অপরাধ প্রকাশ্য আসতেই আশিম তাকে ছেড়ে গেলে লাইভে এসে আত্মহত্যার ঘোষণা দেন তিনি। লাইভে আশিম সম্পর্কে তাসনিয়া জানান, আশিমের সাথে আমার একটা বাসা নেয়া ছিল। এখানে আশিম দায়িত্ববোধ থেকে সরে গেছে। আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে গেছিলাম কিন্তু আশিম পুরো দায়িত্ব থেকে সরে গেছে। আমাদেরত স্বামী স্ত্রী হিসেবে চুক্তি আছে, আমি এটা তার ভাই আর মাকেও বুঝিয়েছি। তারা কোনো সাহায্য করেনি। শোবিজে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে বেপরোয়া জীবনের নিয়ন্ত্রণ টানতে না পেরে করুণ পরিণতি বরণ করে নিতে হলো তাসনিয়া রহমানকে। উচ্চবিলাসী আকাঙ্খা, হতাশা, অর্থসংকট ও বিচ্ছেদের কারণেই আত্মহত্যা করেছেন তাসনিয়া, এমনটাই মনে করছেন শোবিজের মানুষেরা। সূত্র : মানবজমিন।