৯/১১ এবং মিতালী মুখার্জীর কনসার্টে মিতালী!

- প্রকাশের সময় : ১১:১৭:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
- / ১২৫৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশেই বাংলাদশীরা আজ তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন সগৌরবে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পীদেরও তাই প্রভাব বা সুযোগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নিউইয়কের্র এই মৌসুমকে বলা হয়, বাংলা কমিউনিটির উৎসব মৌসুম। এখানকার বিভিন্ন স্তরের বাঙালীদের ভেতরে অধিকাংশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই সময়টায় হয়ে থাকে। তাই উচ্চবিত্ত আয়োজক বাঙালীরা বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এই সময়টাতে। তাই এই সময়ে ঢাকার শোবিজ তারকাদের জনপ্রিয় শিল্পীদের একাংশ ঢাকার চেয়ে বেশি থাকেন নিউইয়র্কে। মাত্র কিছুদিন আগে পারফর্ম করে গেলো ব্যান্ডদল এলআরবি, পারফর্ম করেছে ব্যানড্দল চিরকুট। এছাড়া ফোবানা সম্মেলনসহ এর আগে পরে একাধিক শিল্পীর কনসার্ট হয়ে থাকে এই সময়টায়।
ঢাকা থেকে আমার নিউইয়র্কের দীর্ঘ জার্নি ছিল, ১০ সেপেম্বর। তাই ঘড়ির কাঁটার নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ইমিগ্রেশন হলো যেদিন আবুধাবিতে সেদিন ক্যালেন্ডারে তারিখ ৯/১১ নামের ভয়ংকর আমেরিকার আমেরিকার কালো দিন। আবুধাবিতে মধ্যরাতে এক মহিলা আমেরিকান ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে প্রায় কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই আমাকে আমন্ত্রণ জানালো। আমি খানিকটা অবাকই হলাম। কারণ যাত্রাপূর্বে অনেকেই ভয় দেখিয়েছে। এমনকি এই কালো দিনে এক বছরে শাহরুখ খানও আমেরিকান ইমিগ্রেশনে ছাড় পায়নি। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই তৈরি করেন ‘মাই নেম ইজ খান’। তবে সে সময় অনেদিন পেরিয়ে গেছে।
এরপর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নেমে শহরের লং আইল্যান্ডে এক বাড়িতে কিছুটা বিশ্রাম নিতেই খবর এলো নিউইয়র্কের এস্টোরিয়র ক্লাব সানাম’ এ গাইবেন মিতালী মুখার্জী। তাই স্বাভাবিকভাবেই ছুটলাম সেখানে। এয়ার জেটলক মাথার ভেতরে তখনও কাটেনি। প্রায় দিন সমান ব্যবধানে রাত দিনের কাটাকাটি খেলা চলছে মাথার ভেতরে।
মিতালী মুখার্জি একে একে ক্লাব সানাম এ গাইছেন তিনি তার জনপ্রিয় বাংলা ও হিন্দি গান। পুরো অনুষ্ঠানটি একটি অনলাইন টিভি লাইভ স্ট্রিমিং করছে। সেই চ্যানেলটিই মূলত অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা। কথা হলো তার সাথে। তারা জানালেন, পুরো মৌসুমে বাংলা গানের শিল্পীদের তারা আমন্ত্রন জানান এবং বাংলা কমিউনিটির প্রধান বিনোদন হিসেবে এই অনুষ্ঠানগুলো তারা লাইব সম্প্রচারের উদ্যোগ নেন।
মিতালী মুখার্জী গেয়ে চলেছেন তার অসাধরণ কন্ঠলালিত গান। নিউইয়র্কের এই অচেনা শহরে ক্লাব সানাম এ ঢুকে তখন মনে হচ্ছিল আমি শিল্পকলা একাডেমীর কোনা হলরুমে গান শুনছি। দর্শকরা বিমোহিত হয়ে বারবার শিল্পীকে নানান গানের জন্য অনুরোধ করছিলেন। ভালবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, কিংবা দিনকি রাতে, যেটুকু সময় এমন জনপ্রিয় গানের নস্টালজিয়া নিচ্ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী বিভিন্ন বয়সী দর্শকেরা। সপ্তাহের ছুটির দিন। তাই হলরুম ভর্তি দর্শক। সেখানে উপস্থিত হওয়া এক তরুন দর্শক পারভেজ জানালেন, বছরের এই মৌসুমটার জন্য আমি অপেক্ষা করি। কারন সরাসরি বাংলা গানের আসর জমে এই একটি মৌসুমেই। তাই চলতি সময়ের সব কটি অনুষ্ঠানের টিকেট আমি কেটে রেখেছি। সব কটি অনুষ্ঠানেই আমি হাজির থাকবো।
এদিকে মিতালী মুখার্জী তার একটি গানের মাঝে একটি গান গাইবার জন্য সহশিল্পী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী তানভীর শাহিনকে আমন্ত্রন জানালেন। কিন্তু সেই সময় শিল্পী তানভীর শাহিন হলরুমে উপস্থিত ছিলেন না বলে আসতে পারলেন না। অনুষ্ঠান শেষে হলরুমে শিল্পীরা ভক্তকূলের সাথে ফটোশুটে অংশ নিলেন। এরপর দিন আলাদা ভাবে সময় নিয়ে আড্ডা দিলাম শিল্পীর সাথে। ৯/১১ তে গান গাইলেন। বিষয়টা কি একটু আলাদা মনে হয় না আপনার কাছে ?
মিতালী: না, কারণ আমার সাথে আমেরিকা সফর নিয়ে ৯/১১ নিয়ে কিছু ব্যাপার ঘটে। ভয়ংকর এই দিনে এই হল রুমেই আমার একক অনুষ্ঠানের রুম বুক ছিল। তার আগের দিন অরগানাইজার খুব খুশী, কারণ সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। অত:পর অনুষ্ঠান বাতিল। কিন্ত কাকতালীয় ভাবে পরের বছর ঠিক একই দিনে অর্থায় ৯ সেপ্টেম্বরেই আমার জন্য এই হরুমটা বুকড করা হলো। আমি গাইলাম। এরপর মাঝে বেশ কবছরের বিরতির পর এবছরেই সেই একই দিনে অর্থাৎ ২০১৫ সালে ৯ সেপ্টেম্বরেই আমার শো হলো। এটা হয়তো খুবই কাকতালীয়। তবে এ দিনের দু:সহ স্মৃতির কথা চিন্তা করে আমরা ১ মিনিটের নীরবতা পালন করি।
এদেশের বাংলা কমিউনিটিতে অনুষ্ঠান করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে মিতালী মুখার্জী বলেন, আমারও ভালো লাগলো। কারণ কোনো শিল্পীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো দর্শকদের রেসপন্স। সেটা আমি বাংলাদেশী দর্শকদের কাছে পুরোপুরি পেয়ে থাকি। কারন পৃথিবীর অনেক দেশে আমি অনেক ভাষায় গান করেছি। কিন্তু বাংলা ভাষার দর্শকদের ভেতরে গান নিয়ে আলাদা এক প্রেম আছে।
প্রশ্ন রাখলাম, এই যে আজকের অনুষ্ঠানে বাঙালী দর্শকদের মুগ্ধ করলেন। বাংলা কমিউনিটিতে এই শিল্প চর্চা মেইনস্ট্রীমে কতটা প্রভাব ফেলবে..?
দেখুন আমার কাছে, বাংলাদেশ আমার ফাসট হোম। কারণ বাংলাদেশী দর্শকের জন্য আজকের আমি। পৃথিবী জুড়ে এই বাঙালীদেরই তো আমি গান শুনিয়ে এলাম সারাজীবন। হিন্দি গানও আমি করেছি। কিন্তু বাংলা গানের শিল্পী হিসেবেই আমায় বিশ্ব চিনেছে। আমি মনে করি এই চর্চা আরো বাড়াতে হবে। এছাড়া এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই হবে বাংলাদেশিদের জাগরন ঘটবে।
নিজের গানের সহশিল্পী প্রসঙ্গে মিতালী মুখার্জী বলেন, তানভীর শাহিনের সাথে এর আগেও আমি গেয়েছি। আমি মনে করি, শাহিনের মতো এমন শিল্পীরাই প্রতিনিয়ত বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে বিভিন্নভাবে। তবে আমার কাছে মনে হয়, আরো খানিকটা সাংগঠনিক ভাবে এই সকল অরগানাইজার ও শিল্পীদের কাজ করা উচিত।
এদিকে নিউইয়র্কে বাঙালী কমিউনিটিতে এরই ভেতরে টাইম টিভি ও টিবিএন টুয়েন্টিফোরের মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশী শিল্পী রবি চৌধুরী, ইমরান, ইলিয়াস, পড়শীসহ একাধিক শিল্পীরা এখন নিউউয়র্কে অবস্থান করছেন। তারাও পুরো মৌসুমজুড়েই একাধিক অনুষ্ঠানে গাইবেন।
এদিকে নিউইয়র্কের পাশেই আরেক সিটি কানেক্টিকাট এ একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নচিকেতা এখানে রয়েছেন। এখানেও বাংলাদেশীরাই আয়োজন করেছেন এই অনুষ্ঠান। তাই কৃতজ্ঞতা নিয়েই নচিকেতা বললেন, ‘বাংলা গানের পুরো দায়িত্ব বাংলাদেশীদের হাতেই। তারাই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ক্যানভাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ এখন দেশের বাইরে সারা বিশ্বে বাংলা কালচারকে বাংলাদেশীরাই প্রমোট করছে।
এভাবেই বাংলা গান বা বাংলা সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রবাসী বাঙালীরাই। গ্লোবাল ভিলেজের পথিক হয়ে তারাও খানিক বাংলা গানের ব্যানার ফেস্টুন হাতেই এগুচ্ছেন বিশ্বের হাইওয়েতে। (দৈনিক ইত্তেফাক)