সর্বাধিক শহরে দেবী’র প্রদর্শনী’র রেকর্ড ॥ গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড বুকে স্থান দাবী

- প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮
- / ১১২৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশ ও কলকাতার বিপুল জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী জয়া আহসান অভিনিত ও প্রযোজিত ‘দেবী’ সিনেমা’র আরো সফল প্রদর্শীর হলো নিউইয়র্কে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মহাসমারোহে চলেছে ‘দেবী’। তারই সেলিব্রেশন হলো গত ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে আয়োজিত দেবী’র বিশেষ এক প্রদর্শনীর মাধ্যমে। এদিকে সর্বাধিক শহরে দেবী’র প্রদর্শনীর রেকর্ড গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড বুকে স্থানের জন্য দেবীর পরিবেশক বায়েস্কোপ ফিল্মস দাবী জানিয়েছেন। অপরদিকে নিউইয়র্কের মিডিয়ার সাথে খোলামেলা আলোচনায় দেবী’র নায়িকা জয়া আহসান বলেছেন, বাংলাদেশের ছবি হারিয়ে যায়নি। আমরা চাইলেই ভালো ছবি করতে পারি। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ভালো ছবি তৈরীর জন্য একমাত্র বাংলাদেশ সরকার-ই শক্তিশালী প্রযোজক। খবর ইউএনএ’র।
যুক্তরাষ্ট্রের বায়েস্কোপ ফিল্মসের আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটির একটি রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশী মিডিয়ার সাথে খোলামেলা আলোচনায় অভিনেত্রী জয়া আহসান সহ সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন। এর আগে জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলে ছবিটি প্রদর্শিত হয়। দেবী ছবির বিশেষ এই প্রদর্শনীতে জয়া আহসান উপস্থিত ছিলেন এবং সিনেমা হলে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকদের সাথে সরাসরি কথা বলেন, শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেেেশর স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও বৃদ্ধিজীবীসহ সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেনকে।
মিডিয়ার সাথে জয়া আহসানের সাথে মুখোমুখি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ মিন মোমেন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। হাসানুজ্জামান সাকির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বায়েস্কোপ ফিল্মসের স্বত্তাধিকারী ডা. রাজ হামিদ ও নাউসাবা রুবনা রশীদ।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসুদ মিন মোমেন ও সাদিয়া ফয়জুননেসা তাদের বক্তব্যে জয়া আহসানের অভিনয়ের প্রশংসা এবং তাকে দেশের ‘অ্যাম্বেসেডর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সেই সাথে জয়া আহসান তার অভিনয়ের মধ্যদিয়ে আরো এগিয়ে যাবেন, বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী আরো তুলে ধরবেন, আরো ভালো ভালো ছবি করবেন সেই প্রত্যাশা করেন। ডা. রাজ হামীদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রে দেবী ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি শহরে ছবিটির অন্তত ১২০টির মতো প্রদর্শনী হয়েছে। লুজিয়ানার ব্যাটন রুজ ও কলোরাডোর ডেনভার শহরে প্রথম কোনো বাংলা ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। মিশিগানের ডেট্রয়েটে দশ বছর পর বাংলা ছবি প্রদর্শিত হলো। অনুষ্ঠানে দেবী’র সেলিব্রেশনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ভারতীয় পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর পরবর্তী ছবি বিজয়া’র প্রমোশনেও অংশ নেন জয়া আহসান। ছবিটিতে তিনি মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। জয়া জানান, গত বছর ভারতে ‘বিসর্জন’ ছবিটি মুক্তি পায়। দুই বাংলার গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি সেদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ছবিটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভারতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এবার ওই ছবির সিক্যুয়েল তৈরি হয়েছে ‘বিজয়া’। জয়া অভিনীত ‘বিজয়া’ জানুয়ারিতে ভারত ও বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। যুক্তরাষ্ট্রেও ছবিটি একই সময় মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ছবিটির ট্রেইলর সব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ‘বিজয়া’ দেখার জন্য জয়া আহসান সকলের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ অভিনয়শিল্পী রেখা আহমেদ, রিচি সোলায়মান, খাইরুল ইসলাম পাখি, সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি, টিভি উপস্থাপিকা ফাতেমা শাহাব রুমা, সংবাদ পাঠিকা সাদিয়া খন্দকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে খোলামেলা বক্তব্যে জয়া আহসান বলেন, এখনো ভালো ছবির দর্শক রয়েছে, ভালো ছবির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ আর কলকাতার বাঙালীরা ছাড়াও লন্ডন-আমেরিকার মতো প্রবাসে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলা ছবির দর্শক আছে। তারা সিনেমা হলে গিয়ে ভালো ছবি দেখেন। দেবী ছবি তার প্রমাণ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দেবী’র ৯০টি শো প্রদর্শিত হয়েছে, যা বাংলা ছবির জন্য একটি মাইলফলক। এতে আমি ভীষণ আনন্দিত-খুশী। এজন্য আমেরিকার দর্শকদের কাছে আমি ঋনী। প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেন, গেরিলা, চোরাবালি’র মতো আরো অনেক ছবি আছে যেগুলো দর্শক-প্রিয়তা পেয়েছে। আরো ভালো ছবি বানাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তর জয়া আহসান বলেন, বাংলাদেশ আর কলকাতা দু’ জায়গাতেই অভিনয় করার পরিবেশ রয়েছে এবং আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। তবে বাংলাদেশ আমার প্রিয় জায়গা। আর কলকাতার দর্শকরা আমাকে গ্রহণ করার বিষয়টিও আমার আনন্দের বিষয়, সেখানটাও আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে। দু’দেশের দর্শকরা আমাকে পছন্দ করেন। এই জনপ্রিয়তাকে আমি উপভোগ করি।
তিনি বাংলাদেশকে একটি ‘স্যাকুলার কান্ট্রি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর থেকেই আমরা নানা স্ট্রাগল করেছি। ৫২, ৬৯, ৭১ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জনজীবন আর মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এনেছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে জয়া বলেন, আসলে ইতিহাস আর ভাগ্য বাংলা ভাষাবাসীদের বিভক্ত করে ফেলেছে। আর কলকাতা বা ভারতে বাংলাদেশের নাটক-সিনেমা না দেখানো দূর্ভাগ্য। হয়তো এই সমস্যা কেটে যাবে। আকাশ সংস্কৃতি সবার জন্যই খোলা থাকা উচিৎ। এজন্য আমরা কাজ করছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে দেবী ছবির নায়িকা জয়া বলেন, সরকারি অনুদান নিয়ে কম বাজেটে ভালো ছবি বানানো যায়। দেবী-ই তার উদাহরণ। আর ভালো ছবি বানাতে বেশি অর্থেরও প্রয়োজন পড়ে না, ভালো ছবি বানাতে দরকার আগ্রহ ও আন্তরিকতা। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ভালো ছবি বানাতে হলে আপাতত: সরকার ছাড়া আর কোন ভালো প্রজোযক নেই। আর অনুদান দেয়ার কারণে ছবি নিয়ে সরকার মাথাও ঘামায় না, কোন হস্তক্ষেপ করে না। শুধু সময় মতো ছবিটি রিলিজ হলো কিনা তাই সরকার দেখে। তাই দেবী করতে করতে আমরা সরকারের কাছ থেকে কোন সমস্যা বা চাপের মুখে পরিনি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, পশ্চিম বাংলার ছবির গল্পের চেয়ে বাংলাদেশের ছবির গল্পগুলো মৌলিক। ছবির ক্ষেত্রে দু’দেশের দু’রকম জায়গা, দু’রকম পরিবেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমার জন্মভুমি আর পশ্চিম বাংলা আমার কর্মভূমি। আর অন্য দেশের শিল্পী হিসাবে পশ্চিম বাংলা’য় কখনও অবহেলা বা নিগ্রহের শিকার হননি। তারাও আমাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। আমাকে ফিল্ম ফেয়ার পুরষ্কারে ভূষিত করেছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে জয়া আহসান বলেন, অভিনয় ছাড়া আমি আর কিছু জানি না, কিছু করতে পারি না। তবে বাবার ইচ্ছে ছিলো আমি কূটনীতিক হই। কিন্তু ভাগ্য আমাকে অভিনয়ে নিয়ে আসলো। ছবি: নিহার সিদ্দিকী