শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিতণ্ডা

- প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২
- / ৩৩ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : ঢাকাই সিনেমার আঁতুড় ঘর এফডিসিতে চলছে নির্বাচনী উৎসব। শিল্পীদের নির্বাচন আগামী ২৮ জানুয়ারি। দুটি প্যানেলে নির্বাচন হচ্ছে। একটি বর্তমান কমিটি মিশা-জায়েদ প্যানেল। আরেকটি কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল।
নির্বাচনকে ঘিরে এফডিসিতে চলছে তর্ক-বিতর্ক। নির্বাচনকে ঘিরে রয়েছে চাপা উত্তেজনাও। এমনকি শিল্পীদের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শিল্পীদের আচরণ হতে হবে মার্জিত। পক্ষ বিপক্ষে তির্যক আক্রমণ ছোড়া হচ্ছে তা মোটেও কাম্য নয়। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিমুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা আরো ঘটলে হয়তো নির্বাচন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
নির্বাচনী প্রচারণায় বিরক্ত প্রকাশ করেছেন সিনিয়র শিল্পীরাও। এসব ছাপিয়ে প্রার্থীদের চাওয়া, অবাধ একটি নির্বাচন। তাদের মতে, নির্বাচনে তর্ক-বিতর্ক থাকে। থাকে পক্ষ-বিপক্ষ। কিন্তু দিন শেষে সবাই এক।
শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যে ধরনের নোংরা রাজনীতি হচ্ছে তাতে আরো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার খবর আছে আমাদের কাছে। যদি এমন হয় তাহলে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হতে পারে। আমরা একটি উৎসবমুখর নির্বাচন চাই। রাজনীতিমুক্ত নির্বাচন চাই।
জায়েদ মিশা প্যানেলে লড়ছেন অরুণা বিশ্বাস। তিনি নির্বাচনকে বিতর্কিত না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি কোনো জাতীয় নির্বাচন নয়। আমি মনে করি এটি শিল্পীদের মিলন মেলা। জয়-পরাজয় সব কিছুতেই আনন্দ। বাইরে থেকে আপনারা গালিগালাজ করে এনার্জি নষ্ট করেন কেন?
বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক আলমগীরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শিল্পীরা সমাজের দর্পণ। আমাদেরকে অনেকে অনুসরণ করেন। আমরা যদি নিজেদের মধ্যেই একে অন্যের বিরুদ্ধে কটুকথা বলি তা শুনতে খারাপ লাগে। নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। একটি মিলনমেলা।
সিনিয়র এই নায়কের সাথে সহমত পোষণ করেন জনপ্রিয় নায়িকা ববিতাও। তিনি জানান, এখানে ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্লোগানের দরকার নেই। দিনশেষে আমরা সবাই এক।
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন জায়েদ খান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবার টার্গেট হচ্ছি আমি। যে কাজ করে তার পিছনে সবাই কথা বলে। সিনিয়র শিল্পীরা আমার সম্পর্কে যেসব বলছে, তার জন্য আমি খুবই বিব্রত হচ্ছি। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে আগে বলতেন, আমি নির্বাচন থেকে সরে যেতাম। ব্যক্তিগত কারণে খুন হবার ঘটনাও আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব আমি এখন নিতে পারছি না।
গতবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি ১৮৪ জন চলচ্চিত্র শিল্পী। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য হয়েও তারা বর্তমান কমিটির আপত্তির মুখে হারান ভোটাধিকার। তারপর থেকেই চলছিল আইনি লড়াই। ১৮৪ জনের পক্ষে ১৮ জন আদালতে মামলা করেছিলেন। ১০ দিনের মধ্যে ১৮৪ জন সদস্যের ভোটাধিকার ফেরত দিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত, এমনটা দাবি শিল্পীদের।
তবে এ খবর ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি জানান, সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার খবরটি সঠিক নয়। আদালত এমন কোনো নির্দেশনা দেননি। সমিতির সদস্য হতে হলে একজন শিল্পীকে অন্তত পাঁচটি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। সমিতির গঠনতন্ত্রে এমনটাই উল্লেখ আছে। কিন্তু গঠনতন্ত্র না মেনে সমিতিতে একাধিক শিল্পীকে পূর্ণ সদস্যপদ দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগের ভিত্তিকে তদন্ত করে বর্তমান কমিটি। সেখানে প্রায় ২০০ জন শিল্পীর সদস্যপদে অনিয়মের সন্ধান পান বলেও জানান জায়েদ খান। এটাকে নির্বাচনে ইস্যু না করার কথা বলেন তিনি।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পরই শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ কার্যকরী কমিটির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মকবুল হোসেন আরমান নামের এক সদস্য। সমিতির ২৪০ জন সদস্যের চাঁদার রশিদ না দেয়ার অভিযোগে তিনি ৮ জানুয়ারি রাতে এই জিডি করেন।
তবে জায়েদ খান জানান, একজন এসে ২৪০ জন সদস্যের রশিদ দাবি করেন। কিন্তু একজনকে এত ব্যক্তির রশিদ দেয়া অনৈতিক ও নিয়মের বাইরে। তাদের প্যানেলকে চাপে রাখার জন্য অন্য প্যানেল এই কাজটি করেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
এবার প্যানেল পরিবর্তন করে নতুন প্যানেলে নির্বাচন করছেন অনেকেই। সে তালিকায় আছে ইমন ও নিরবের মতো তারকারা। ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে জায়েদ-প্যানেলে ছিলেন নিরব। তবে এবার তিনি লড়ছেন কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ জানান, আমরা শিল্পীদের অধিকার আদায়ের জন্য নির্বাচন করছি। কিন্তু বিপক্ষ প্যানেল নির্বাচনকে কলুষিত করতে চাচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। ২৮ তারিখ নিশ্চয়ই শিল্পীরা তাদের যোগ্য নেতাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
হককথা / এমউএ